• ঢাকা
  • শুক্রবার, ০৩ মে, ২০২৪, ২০ বৈশাখ ১৪৩১
প্রকাশিত: ফেব্রুয়ারি ২১, ২০১৯, ০৯:৫৭ এএম

নতুন রুটে আসছে ইয়াবা, রোহিঙ্গারা প্রধান বাহক

নতুন রুটে আসছে ইয়াবা, রোহিঙ্গারা প্রধান বাহক

 

ইয়াবা প্রবেশের অন্যতম রুট কক্সবাজারের টেকনাফ সীমান্তে কমে এসেছে ইয়াবার চালান। কিন্তু ইয়াবার কোনো ঘাটতি নেই। কারণ আলাদা রুট খুঁজতে মরিয়া হয়ে পড়েছে ইয়াবা কারবারীরা। এরইমধ্যে নতুন রুট দিয়ে ইয়াবা আসার খবর দুশ্চিন্তা কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে আইনশৃঙ্খলাবাহিনীর কাছে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, মাদক বিরোধী অভিযানের মধ্যেও টেকনাফ দিয়ে প্রচুর ইয়াবা প্রবেশ করতো। কিন্তু সম্প্রতি ১০২ আসামি আত্মসমর্পণের কারণে নতুন রুট খুঁজতে শুরু করেছে ইয়াবা কারবারিরা। আর এই কাজে রোহিঙ্গারা প্রধান বাহক হিসেবে কাজ শুরু করেছে।

একাধিক সূত্রে জানা গেছে, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ১ হাজার ১৫১ ব্যবসায়ীদের মধ্যে যারা গডফাদার ছিলেন তাদের বেশিরভাগই পলাতক রয়েছে। সম্প্রতি যারা আত্মসমর্পণ করেছেন তারা প্রায় সবাই টেকনাফের ব্যবসায়ী। কিন্তু উখিয়া ও কক্সবাজারের বেশিরভাগ ব্যবসায়ীরা এখনো ধরা ছোঁয়ার বাইরে রয়েছে। তারাই অর্থলগ্নী করে ইয়াবা ব্যবসা স্বচল রেখেছে। এজন্য রোহিঙ্গা বেছে নেয়া হচ্ছে। তারাই আয়েসী জীবনের আশায় দেশে ইয়াবা আনছে। বর্তমানে যারা ইয়াবা ব্যবসা করছে তাদের বেশিরভাগের নাম জানেনা আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। তবে আত্মসমর্পণকারীদের স্বীকারোক্তিতে পাওয়া প্রায় ১৫০ জনের মতো ব্যবসায়ীকে গ্রেফতার করা গেলে ইয়াবা ব্যবসা আরও কমে আসবে বলে দাবি সংশ্লিষ্টদের।

একাধিক সূত্র জানায়, উখিয়া উপলোর থাইংখালী রাহমতের বিল, পালংখালী, বালুখালী এলাকা ইয়াবা পাচারের রুট হিসেবে বেছে নেয়া হয়েছে। এছাড়াও গভীর সমুদ্রপথে জেলেদের মাধ্যমে চট্রগ্রাম বন্দর, পতেঙ্গাসহ বিভিন্ন জায়গায় যাচ্ছে ইয়াবার চালান। আগে শুধু নাফ নদী বেছে নিলেও বর্তমানে লাইক্ষ্যংছড়িসহ দুর্গম পাহাড়ী এলাকাও ছাড়াও ১২ থেকে ১৫টি রুট বেছে নিয়েছে ইয়াবা কারবারিরা।

বিজিবির একটি সূত্র জানায়, মিয়ানমার সীমান্ত এলাকায় ৪৯টি ইয়াবার কারখানা রয়েছে। কারখানার মালিকরা ওখানকার সীমান্ত রক্ষী বাহিনীর সহযোগিতায় ইয়াবা পৌঁছে দিচ্ছে বিভিন্ন নৌকা ও মুনাফালোভীদের কাছে। সূত্রটি আরো জানায়, জেলে বেশ ধরে গভীর সমুদ্রে মাছ ধরার আড়ালে অদলবদল হচ্ছে ইয়াবা।

জানতে চাইলে টেকনাফ বিজিবি-২ এর অধিনায়ক লেফটেনেন্ট কর্নেল আছাদুদ-জামান চৌধুরী বলেন, একসময় যে এলাকার বেশিরভাগ মানুষ নিজেদের পেশা হিসেবে ইয়াবাকে বেছে নিয়েছিল তাদের নিয়ন্ত্রণে আনা বড় চ্যালেঞ্জ। তারপরেও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর তৎপরতায় টেকনাফে ইয়াবা কমে এসেছে। কিন্তু ব্যবসায়ীরাও বসে নেই। তারা রুট পাল্টে ইয়াবা আনার চেষ্টা করছে। যেহেতু নানা সীমাবদ্ধতায় গভীর সমুদ্র ও সীমান্তে শতভাগ নজরদারি দেয়া সম্ভব হয় না। সে সুযোগটা তারা নেয়ার চেষ্টা করবেই। তবে আমরা চেষ্টা করছি। আশা করি ইয়াবা নির্মূল হবেই।

টেকনাফ থানার ওসি প্রদীপ কুমার দাশ বলেন, আগে ঢালাওভাবে ইয়াবা আসলেও এখন টেকনাফে ৭০ শতাংশ ইয়াবার চালান কমে গেছে। এখন অন্য রুটগুলোতে নজরদারি বাড়ানো উচিত।

এদিকে সম্প্রতি ইয়াবার বড় যে চালানগুলো ধরা পড়েছে সেগুলোর বেশিরভাগই গভীর সমুদ্র দিয়ে আনা হয়েছে বলে দাবি আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর। পরে সুবিধা বুঝে এগুলো বিভিন্ন পন্থায় সারাদেশে ছড়িয়ে দেয়া হচ্ছে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সর্বশেষ অভিযানগুলোর দিকেও তাকালেও ইয়াবার রুট পরিবর্তণের চিত্র স্পষ্ট হয়।
 
তথ্য মতে, গত ১৫ ফেব্রুয়ারি কক্সবাজারের কুরুশকুল এলাকায় গভীর সমুদ্রে একটি মাছ ধরার ট্রলারের তল্লাশি করে ১ লাখ পিস ইয়াবা উদ্ধার করে র‌্যাব। এ সময় ৪ জনকে গ্রেফতার করা হয়। তারা হলেন- উখিয়ার এনায়েত উল্লাহ, আবদুর হামিদ, কমিমুল্লাহ ও রশিদুল্লাহ এবং টেকনাফের রশিদুল্লাহ। তারা সমুদ্রপথে বেশ কয়েক চালান আনার কথা স্বীকার করেছে বলে জানিয়েছে র‌্যাব। গত ১৪ ফেব্রুয়ারি উখিয়ার বালুখালী পান বাজার এলাকায় ১৪ হাজার ইয়াবাসহ ২ রোহিঙ্গাকে গ্রেফতার করে র‌্যাব। শুক্রবার বান্দরবনের নাইক্ষ্যংছড়ির পার্শ্ববর্তী রামুর কচ্ছপিয়া ইউনিয়নের হাজিরপাড়া এলাকার একটি খামারবাড়ি থেকে সাড়ে ৪ লাখ ইয়াবা উদ্ধার করে বিজিবি। শনিবার রাতে কক্সবাজার লিংক রোড এলাকায় হানিফ পরিবহনের গ্যাস সিলিন্ডারের ভেতর থেকে ৪০ হাজার পিস ইয়াবা জব্দ করে র‌্যাব।

সংশ্লিষ্টরা ববলছেন, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর তালিকা অনুযায়ী এখনো যারা ধরাছোঁয়ার বাইরে রয়ে গেছে তাদেরকে আইনের আওতায় আনার পাশাপাশি নতুন ব্যবসায়ীদের উপর নজরদারি রাখলে কমে আসবে ইয়াবা।

এএস