• ঢাকা
  • রবিবার, ২৮ এপ্রিল, ২০২৪, ১৫ বৈশাখ ১৪৩১
প্রকাশিত: এপ্রিল ৪, ২০১৯, ০৮:২২ এএম
সর্বশেষ আপডেট : এপ্রিল ৪, ২০১৯, ০২:২২ পিএম

রমজানে পণ্যের দাম সহনীয় রাখতে  প্রয়োজন কঠোর নজরদারি

রমজানে পণ্যের দাম সহনীয় রাখতে  প্রয়োজন কঠোর নজরদারি
ছবি: সংগৃহীত

রমজানের আগেই নিত্যপণ্য নিয়ে কারসাজির পাঁয়তারা শুরু করেছে একটি চক্র। প্রতিবারই সরকারের নানা হুঁশিয়ারির পরও রমজানের আগেই বেড়ে যায় এসব পণ্যের দাম। ফলে রমজানে দাম না বাড়লেও আগেই বেড়ে যায় নিত্যপণ্যের বাজারমূল্য। বাণিজ্যমন্ত্রী এরইমধ্যে ব্যবসায়ীদের দাম না বাড়ানোর অনুরোধ করেছেন। আর বুধবার (৩ এপ্রিল) প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও দাম না বাড়ানোর আহ্বান জানিয়েছেন। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, পণ্য সরবরাহ স্বাভাবিক রাখার পাশাপাশি সরকারের মনিটরিং সেলের কার্যক্রম আরো জোরদার করতে হবে। এসব পণ্যের অবৈধ মজুদ ও পাইকারি আড়তে বাড়াতে হবে কঠোর নজরদারি।    

জানা গেছে, প্রতিবছর রমজানের আগেই একটি অসাধু চক্র চিনি, ছোলা, তেল, পেঁয়াজ, ডালসহ কয়েকটি নিত্যপণ্যের দাম অস্বাভাবিকভাবে বাড়াতে থাকে। যদিও আন্তর্জাতিক বাজারে এসব পণ্যের দাম নিম্নমুখী। 

মনিটরিং সেলের কর্মকর্তা ও বিশ্লেষকরা মনে করেন, অসাধু ব্যবসায়ীদের সিন্ডিকেট অকেজো রাখতে পারলে আসন্ন রমজানে ওই সব পণ্যের দাম হুট করে বেড়ে যাওয়ার সুযোগ থাকবে না। 
এদিকে, বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের দ্রব্যমূল্য পর্যালোচনা ও পূর্বাভাস সেলের তথ্য অনুযায়ী, বছরে ১৮ লাখ টন চাহিদার বিপরীতে চলতি অর্থবছরের ৯ মাসে ভোজ্য তেল (সয়াবিন, পাম অয়েল) আমদানি হয়েছে ১৪ দশমিক ৬৯ লাখ টন। আরো প্রায় ১৭ দশমিক ৬৬ লাখ টন আমদানির এলসি বা ঋণপত্র খোলা হয়েছে। এর আগের অর্থবছরে অর্থাৎ ২০১৭-১৮ অর্থবছরে ভোজ্য তেল আমদানি হয়েছিল ২১ দশমিক ১৬ লাখ টন। আমদানি পরিস্থিতিতে কোনো সমস্যা না থাকায় প্রতি লিটার বোতলজাত সয়াবিন তেল বিক্রি হচ্ছে ১০৪ টাকা থেকে ১০৬ টাকায়, আর খোলা সয়াবিন বিক্রি হচ্ছে ৮৪ টাকা থেকে ৮৫ টাকায়।

রমজানের আগে বাজার সহনীয় পর্যায়ে রাখার বিষয়ে কথা হয় কনজুমারস এসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ক্যাব) এর সভাপতি গোলাম রহমানের সঙ্গে। তিনি দৈনিক জাগরণকে বলেন, রমজানে নিত্যপণ্য সহনীয় পর্যায়ে রাখতে হলে অবাধ সরবরাহ ব্যবস্থা চালু রাখতে হবে। বিশেষ করে পণ্য চালান যাতে নির্বিঘ্নে গন্তব্যে পৌঁছতে পারে তা নিশ্চিত করতে হবে। এছাড়া পণ্যবাহী ট্রাকে চাঁদাবাজি বন্ধ করতে হবে। আর ঘোষণা আর অনুরোধ করলেই তো আর বাজার সহনীয় পর্যায়ে থাকবে না। সেজন্য প্রয়োজন মনিটরিং সেলের কঠোর নজরদারি। অসাধু ব্যবসায়ীরা যেন অবৈধ মজুদ করে সিন্ডিকেট তৈরি করতে না পারে।

জানা গেছে, বর্তমানে দেশে পেঁয়াজের চাহিদা বছরে ২৪ লাখ টন। এর মধ্যে ৫ লাখ টন পেঁয়াজ লাগে শুধু রমজান মাসেই। রমজানে এই বাড়তি চাহিদাকে টার্গেট করে অসাধু ব্যবসায়ীরা অতিরিক্ত মুনাফার লোভে সিন্ডিকেট করে থাকে। এরইমধ্যে সক্রিয় হতে চলছে এসব চক্র। দেশে পেঁয়াজের মজুদ ও সরবরাহ ভালো থাকার পরও কদিন আগেই দেশি পেঁয়াজের দাম কেজিপ্রতি ৫ টাকা বেড়েছে। প্রতিবছর রমজানের আগেই এই পণ্য ঘিরে সক্রিয় থাকে একটি বড় সিন্ডিকেট। 
এদিকে, বাজার স্থিতিশীল রাখতে রমজানের আগেই পেঁয়াজের আড়ত ও পাইকারি বাজারে অভিযান চালানোর কথা ছিল মঙ্গলবার (২ এপ্রিল) থেকে। তবে তা শুরু হয়নি। জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের কয়েকটি টিম বুধবার (৩ এপ্রিল) থেকে নজরদারি শুরু করেছে। প্রতি বস্তায় পেঁয়াজের দাম ও পরিমাণ লিখে রাখার কথা থাকলেও ব্যবসায়ীরা তা মানছেন না। অধিদপ্তরের টিমগুলো বিষয়টি খতিয়ে দেখার কথা। দেশের যে জায়গায় যে পণ্যের উৎপাদন বেশি সেখানেও যেন কারসাজি না হয় সে বিষয়ে নজর রাখবে প্রতিষ্ঠানটি। এ বিষয়ে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের কঠোর নির্দেশনা রয়েছে।

জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা বলছেন, মাংস, পেঁয়াজ, রসুন, আদা- কোনোটিতেই যেন সিন্ডিকেট করতে না পারে সে বিষয়ে তদারকি করব। আমাদের চারটি করে টিম বাজারে কাজ করছে। প্রথম ধাপেই আমরা বিভিন্ন আড়তে যাব। সিন্ডিকেট করে কেউ যেন দাম বাড়াতে না পারে এর জন্য সর্বোচ্চ তদারকি অব্যাহত রাখা হবে। 

দেশে চিনি উৎপাদনের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সিটি গ্রুপের পরিচালক বিশ্বজিৎ সাহা বলেন, আমাদের কাছে পর্যাপ্ত মজুদ রয়েছে। দাম এখন যেমন আছে, রমজানেও একই রকম থাকবে। বেড়ে যাওয়ার কোনো সুযোগ নেই। আমরা সরকারকে বিষয়টি অবহিত করেছি।

এএইচএস/ এআই/ এফসি