• ঢাকা
  • শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল, ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১
প্রকাশিত: নভেম্বর ২৭, ২০১৮, ১০:২১ এএম

কার্ডে জালিয়াতি ঠেকাতে কঠোর বাংলাদেশ ব্যাংক

কার্ডে জালিয়াতি ঠেকাতে কঠোর বাংলাদেশ ব্যাংক


ডেবিট ও ক্রেডিট কার্ডে জালিয়াতি ঠেকাতে কঠোর অবস্থান গ্রহণ করেছে আর্থিক খাতের নিয়ন্ত্রক সংস্থা- বাংলাদেশ ব্যাংকে। এক্ষেত্রে এখনও পর্যন্ত যেসব ব্যাংক তাদের কার্ডগুলো ম্যাগনেটিক স্ট্রিপ থেকে চিপ ও পিনে আনেনি, তাদেরকে আগামী বছরের ২৮ ফেব্রুয়ারির মধ্যে সকল কার্ডে চিপ ও পিন প্রযুক্তি আনার নির্দেশনা প্রদান করেছে।  একইসঙ্গে আগামী ডিসেম্বরে সকল ব্র্যাডেড কার্ডে ম্যাগনেটিক স্ট্রিপ প্রযুক্তির ব্যবহার রহিত করা হয়েছে।

এ ব্যাপারে বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র ও নির্বাহী পরিচালক সিরাজুল ইসলাম জাগরণকে বলেন, কার্ড জালিয়াতি রোধে গত বছরও একটি নির্দেশনা দেওয়া হয়েছিল।  সে নির্দেশনা এখনও পালন করেনি কিছু ব্যাংক। কিন্তু তা চলতে পারেন না।  তিনি বলেন, কার্ড জালিয়াতি ঠেকাতে নতুন করে ব্যাংকগুলোকে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। এ নির্দেশনা না মানলে সংশ্লিষ্ট ব্যাংকের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

বাংলাদেশ ব্যাংক ও সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, বিভিন্ন জাল-জালিয়াতির প্রেক্ষিতে গত বছরের ২৪ আগস্ট বাংলাদেশ ব্যাংকের পেমেন্ট সিস্টেমস বিভাগ থেকে জারি করা প্রজ্ঞাপনে বলা হয়-

১. কার্ডভিত্তিক লেনদেন পরিচালনাকারী সকল ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান হতে ইস্যুকৃত সকল কার্ডের অভ্যন্তরীণ আন্তঃব্যাংক লেনদেন বাংলাদেশ ব্যাংক কর্তৃক পরিচালিত ন্যাশনাল পেমেন্ট সুইচ বাংলাদেশ (এনপিএসবি)-এর মাধ্যমে পরিচালনা বা সম্পন্ন করতে হবে।  ২. ৩১-১২-২০১৭ তারিখের মধ্যে কার্ড-ভিত্তিক সকল ধরনের লেনদেন পার্সোনাল আইডেন্টিফিকেশন নম্বর (পিআইএন)-ভিত্তিক করতে হবে।  ৩. এসএমএস এলার্ট সার্ভিসের মাধ্যমে কার্ডভিত্তিক সকল লেনদেনের তথ্য তাৎক্ষণিকভাবে গ্রাহককে অবহিত করতে হবে। ৪. কার্ড লেনদেনের নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণ ও লেনদেনের অবকাঠামোসমূহ আন্তর্জাতিক মানসম্পন্নকরণের লক্ষ্যে ৩১-১২-২০১৮ তারিখের মধ্যে ব্যাংকগুলোকে পেমেন্ট কার্ড ইন্ডাস্ট্রি-ডাটা সিকিউরিটি স্ট্যান্ডার্ড (পিসিআই-ডিএসএস) সার্টিফাইড হতে হবে।  ৫. ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান কর্তৃক ইস্যুকৃত সকল ব্র্যান্ডেড কার্ড চিপ ও পিন যুক্ত হতে হবে; এর পূর্বে ইস্যুকৃত এ ধরনের সকল ম্যাগনেটিক স্ট্রিপ কার্ডগুলোকে ক্রমান্বয়ে এ প্রযুক্তিতে উন্নীত করতে হবে এবং ৩০-০৬-২০১৮ তারিখের মধ্যে এ প্রক্রিয়া পুরোপুরি সম্পন্ন করতে হবে।  ৬. লেনদেনের সময় এটিএম-এ কার্ড আটকে গেলে অফ-আস (অন্য ব্যাংকের এটিএম বুথে লেনদেনের ক্ষেত্রে) লেনদেনের ক্ষেত্রে অ্যাকুয়ারিং (অর্জনকারী/প্রাপক) ব্যাংক তা ডেস্ট্রয় (ধ্বংস) করে কার্ডের তথ্য ইস্যুয়িং ব্যাংককে (জারিকারী ব্যাংক) সরবরাহ করবে; তবে অন-আস (একই ব্যাংকের এটিএম বুথে লেনদেনের ক্ষেত্রে) লেনদেনের ক্ষেত্রে কার্ড আটকে গেলে ইস্যুয়িং ব্যাংক তা তাদের নিজস্ব অনুসৃত নিয়ম অনুযায়ী সমাধান করবে। উভয়ক্ষেত্রে গ্রাহকের আবেদন প্রাপ্তির ৭ কার্যদিবসের মধ্যে ইসুয়িং ব্যাংক তা নিষ্পত্তি করবে।  ৭. গ্রাহকের কার্ডের তথ্য ও পিন নম্বর কোনক্রমে আপোষ হয়েছে মর্মে প্রতীয়মান/নিশ্চিত হলে তাৎক্ষণিকভাবে সংশ্লিষ্ট অ্যাকুয়ারিং ডিভাইসে ব্যবহৃত কার্ডগুলো চিহ্নিত করে নিজ ব্যাংকের কার্ডগুলোর ক্ষেত্রে গ্রাহককে অবহিত করে কার্ডটি বাতিল করে শিগগির গ্রাহককে নতুন কার্ড প্রদান করতে হবে। গ্রাহক অন্য ব্যাংকের হলে সংশ্লিষ্ট কার্ড প্রদানকারী ব্যাংককে তাৎক্ষণিকভাবে বিষয়টি অবহিত করে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।

ওই প্রজ্ঞাপনের বরাতে সোমবার বাংলাদেশ ব্যাংকের পেমেন্ট সিস্টেমস বিভাগ থেকে একটি প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়েছে। বিভাগের উপ-মহাব্যবস্থাপক মাসুমা সুলতানা স্বাক্ষরিত ওই প্রজ্ঞাপন একইদিন ব্যাংকগুলোর ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) বরাবর প্রেরণ করা হয়। প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছে- ২০১৭ সালের ২৪ আগস্ট পেমেন্ট সিস্টেমস বিভাগ থেকে জারি করা প্রজ্ঞাপনের ১ দশমিক ৫ নম্বর ধারা মোতাবেক ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান কর্তৃক ইস্যুকৃত সকল ব্র্যান্ডেড কার্ড চিপ ও পিন যুক্ত করা; ইতোপূর্বে ইস্যুকৃত এ ধরনের সকল ম্যাগনেটিক স্ট্রিপ কার্ডগুলোকে ক্রমান্বয়ে এ প্রযুক্তিতে উন্নীত করা এবং ৩০-০৬-২০১৮ তারিখের মধ্যে এ প্রক্রিয়া পুরোপুরি সম্পন্ন করার নির্দেশনা প্রদান করা হয়েছিল। ব্যাংকগুলো হতে প্রাপ্ত তথ্যানুযায়ী অদ্যাবধি কতিপয় ব্যাংক তাদের ব্র্যান্ডেড ম্যাগনেটিক স্ট্রিপ কার্ডগুলো চিপ ও পিনভিত্তিক করার প্রক্রিয়া সম্পন্ন করেনি মর্মে জানা গেছে।

এ প্রেক্ষিতে, আগামী ৩১-১২-২০১৮ তারিখের পর হতে নতুন ব্র্যান্ডেড কার্ড ইস্যু করার ক্ষেত্রে ম্যাগনেটিক স্ট্রিপ প্রযুক্তির ব্যবহার রহিত করা হলো এবং একইসঙ্গে ২৮-০২-২০১৯ তারিখের মধ্যে আপনাদের প্রতিষ্ঠানের ইতোপূর্বে ইস্যুকৃত ব্র্যান্ডেড ম্যাগনেটিক স্ট্রিপ কার্ডগুলো চিপ ও পিনভিত্তিক করার প্রক্রিয়া জরুরিভিত্তিতে সম্পন্ন করে এ (বাংলাদেশ ব্যাংকের পেমেন্ট সিস্টেমস) বিভাগকে অবহিত করার জন্য পরামর্শ দেয়া যাচ্ছে।

কেএ/ জডেএস