• ঢাকা
  • শনিবার, ০৪ মে, ২০২৪, ২১ বৈশাখ ১৪৩১
প্রকাশিত: মে ৩০, ২০১৯, ১২:২১ পিএম
সর্বশেষ আপডেট : মে ৩০, ২০১৯, ০১:২৬ পিএম

অর্থনীতির স্বর্ণযুগে পিছিয়ে দেশের বিমা শিল্প

অর্থনীতির স্বর্ণযুগে পিছিয়ে দেশের বিমা শিল্প

 

দেশের অর্থনীতি ক্রমশ বাড়ছে। চলতি বছর দেশজ উৎপাদন (জিডিপি) প্রবৃদ্ধি দাঁড়াবে ৮ শতাংশে। এতে বিমা খাতের অবদান ১ শতাংশেরও নিচে। এবার জিডিপিতে বিমা খাতের অংশগ্রহণ ৪ শতাংশে উন্নীত করার লক্ষ্যমাত্রা নেয়া হয়েছে। কাগজে-কলমেই এই উন্নতি নির্ভর করে চলছে দেশের বিমা খাত। প্রকৃতপক্ষে বিমা শিল্পের কার্যক্রম খুবই করুন। আজও সাধারণ মানুষের  মাঝে বিমা সেবার গ্রহণযোগ্যতা তৈরি হয়নি। বরং এখনো মানুষ মনে করেন বিমা মানে আর অর্থ ফেরতের ভরসা নেই। সরকার বিমা শিল্পকে শক্তিশালী করতে নানা ধরনের পদক্ষেপ নিলেও কোনো কাজ হচ্ছে না। যে যার মতো করে বিমা ব্যবসা করে যাচ্ছে। তৈরি হয়নি কোনো সার্ভিস রোল, গড়ে ওঠেনি কোনো সাংগঠনিক কাঠামো। সংশ্লিষ্ট সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।

সূত্র জানায়, দেশের সব বিমা কোম্পানির জন্য একই ধরনের সাংগঠনিক কাঠামো, বেতন স্কেল ও অভিন্ন সার্ভিস রুল তৈরি করতে পারেনি বিমা খাতের নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ (আইডিআরএ)। শুধুমাত্র বৈঠক ও খসড়া নীতিমালা তৈরি করতেই প্রায় ৯ বছর পার হয়ে গেছে। ২০১১ সালে আইডিআরএ গঠনের আগে দীর্ঘদিন বিমা খাতের নিয়ন্ত্রক হিসেবে তৎকালীন বিমা অধিদফতর থাকলেও এ খাতের সব প্রতিষ্ঠানের জন্য একটি সুষম সাংগঠনিক কাঠামো প্রণয়নের কোনো উদ্যোগ নেয়া হয়নি। পরবর্তীতে আইডিআরএ গঠনের পর যুগোপযোগী ও আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত বিভিন্ন পদ্ধতি ব্যবহারের মাধ্যমে দেশের বিমা খাতের তদারকি ও উন্নয়ন গতিশীল করার প্রচেষ্টা হাতে নেয়া হয়। এর অংশ হিসেবে সংস্থাটি ইন্টারন্যাশনাল অ্যাসোসিয়েশন অব ইন্স্যুরেন্স সুপারভাইজার্সের (আইএআইএস) সদস্য হয়। তবে আইএআইএস প্রণীত ইন্স্যুরেন্স কোর প্রিন্সিপালে (আইসিপি) প্রদত্ত নির্দেশনা বাস্তবায়নের ধারাবাহিকতায় ২০১২ সালে সব বিমা প্রতিষ্ঠানের জন্য একই রকম সাংগঠনিক কাঠামো প্রণয়নের উদ্দেশ্যে একটি কমিটি গঠন করে আইডিআরএ। কমিটি একই রকম সাংগঠনিক কাঠামো প্রণয়নের জন্য সব কোম্পানিকে প্রয়োজনীয় সুপারিশ ও মডেল তৈরি এবং উপস্থাপনের নির্দেশনা দেয়। কিন্তু অদ্যাবধি আর কোনো অগ্রগতি হয়নি।

বিমা খাতের সার্বিক বিষয়ে কথা হয় ইউনাইটেড ইন্স্যুরেন্সের মুখ্য নির্বাহী কর্মকর্তা খাজা মনজুর নাদিমের সঙ্গে। তিনি দৈনিক জাগরণকে বলেন, দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নের এই স্বর্ণযুগে অনেক পিছিয়ে দেশের বিমা শিল্প। বর্তমানে দেশের জিডিপিতে বিমা খাতের অবদান ১ শতাংশের ও নিচে। তবে জিডিপিতে বিমা খাতের অবদান ৪ শতাংশে ঊন্নীত করার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। গ্লোবাল ইন্স্যুরেন্স যদি সরকার বাধ্যতামূলক করে তাহলে বিমা খাতের অবদান বাড়বে। তবে আইডিআরএ বিমা কোম্পানিগুলোর একটি হিসাবের বিষয়টি অত্যন্ত ভালো উদ্যোগ। সব কোম্পানির জন্য অভিন্ন নীতিমালা তৈরি করা জরুরি।    

আইডিআরএ সূত্রে জানা গেছে, গত বছরের আগস্টে সকল বিমা কোম্পানির জন্য একই ধরনের সাংগঠনিক কাঠামো, বেতন স্কেল এবং অভিন্ন সার্ভিস রুল বাস্তবায়নে সক্রিয় হয় আইডিআরএ। নতুন করে গঠন করা হয় এ সংক্রান্ত লাইফ ও নন-লাইফ কমিটি। কমিটির বৈঠকও অনুষ্ঠিত হয়। লাইফ কমিটির সভায় বিমা কোম্পানিগুলোর বর্তমান সার্ভিস রুল ও অর্গানোগ্রাম কর্তৃপক্ষের কাছে দাখিল এবং তাদের মতামত পাঠানোর নির্দেশনা ছাড়াও আরো ৫টি গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়। এই কমিটি দেশের প্রচলিত সার্ভিস রুলস ও অর্গানোগ্রামের সঙ্গে পার্শ্ববর্তী দেশ এবং অন্যান্য দেশের সার্ভিস রুলস ও অর্গানোগ্রাম পর্যালোচনা করবে। একটি খসড়া সার্ভিস রুলস ও অর্গানোগ্রাম প্রস্তুত করে এ বিষয়ে বিশেষজ্ঞদের এবং বিমা কোম্পানির মতামত সংগ্রহ করা হবে। এরপর জাতীয় বিমা নীতি অনুসারে এটি বাস্তবায়নের জন্য কর্তৃপক্ষ থেকে একটি গাইডলাইন জারি করা হবে। জারিকৃত গাইডলাইন সকল বিমা প্রতিষ্ঠান পরিপালনে বাধ্য থাকবে।

এ বিষয়ে আইডিআরএর এক সদস্য নাম প্রকাশ না করার শর্তে দৈনিক জাগরণকে বলেন, অভিন্ন অর্গানোগ্রামের খসড়া গাইড লাইন তৈরি হয়ে গেছে। আমরা শিগগিরই মতামতের জন্য কোম্পানিগুলোতে এটি পাঠাবো। এদিকে, লাইফ বা নন-লাইফ সব কোম্পানিতেই স্নাতক পাস একজন ডেস্ক কর্মকর্তার বেতন ৮ থেকে ১২ হাজারের মধ্যে সীমাবদ্ধ। সরকারি বা বেসরকারি কোনো দপ্তরেই স্নাতক বা সমমান পাস যোগ্যতার কোনো কর্মকর্তা এমনকী কর্মচারীর বেতনও এত কম নেই। এই নিম্নমানের বেতনে মানবেতর জীবনযাপন করছে বিমা কোম্পানির ডেস্ক কর্মকর্তারা। বছরের পর বছর একই বেতনে চাকরি করে এক ধরনের চাপা ক্ষোভ বিরাজ করছে তাদের মাঝে। ডেস্ক কর্মকর্তা বলছেন, সরকার অনুমোদিত অভিন্ন কোনো কাঠামো ও নীতিমালা না থাকার সুযোগ নিচ্ছে বেশ কিছু কোম্পানি। অযৌক্তিকভাবে ছাটাই বা বদলি, সবই চলছে বড় কর্তাদের খেয়াল খুশিমতো। আর গাইডলাইন না হওয়ায় কর্মীদের ভোগান্তি আরো বেগতিক আকার ধারণ করছে।

 

এআই/ এফসি