• ঢাকা
  • রবিবার, ০৫ মে, ২০২৪, ২২ বৈশাখ ১৪৩১
প্রকাশিত: ডিসেম্বর ১, ২০১৮, ০৪:৪৪ পিএম

কর ও সেবা দুটোই শৃঙ্খলায় আনা দরকার

কর ও সেবা দুটোই শৃঙ্খলায় আনা দরকার

 

আয়কর প্রদানে সচেতনতা বাড়াতে প্রতিবছরের মতো এবারও ৩০ নভেম্বর সেগুনবাগিচায় আয়কর দিবস পালন করা হলো। আয়কর দিবসে দেশের উন্নতির জন্য আয়কর দেওয়াকে চাপ হিসেবে না নিয়ে অভ্যাসে পরিণত করার তাগিদ দেন উপস্থিত বক্তারা। উন্নত দেশের স্বপ্নপূরণ করতে হলে আমাদেরকে অবশ্যই কর আদায়ের পরিমাণ বাড়াতে হবে। জনগণকে স্বত:স্ফূর্তভাবে কর প্রদানে উদ্বুদ্ধ করতে হবে। জনগণের এই কর সামাজিক ও অবকাঠামোগত খাতে ব্যয় করা হয়৷ ব্যয় করা হয় জনগণের জীবনমান উন্নয়নে। কাজেই করের পরিধি বাড়ানোর প্রয়োজন আছে৷ নিয়মিত কর প্রদান একজন নাগরিকের নৈতিক দায়িত্বও বটে। 

সম্প্রতি চার দিনব্যাপী করমেলায় আড়াই হাজার কোটি টাকার কর আদায় হয়েছে। প্রতিবছরই করদাতার সংখ্যা বাড়ছে। প্রতিবছর করদাতার সংখ্যা বাড়লেও তাতে সন্তুষ্ট নন আমাদের অর্থমন্ত্রী। তিনি চান, দেশের ১৬ কোটি মানুষের মধ্যে অন্তত ৪ কোটি মানুষ কর দিক। বর্তমানে দেশে আয়কর দিচ্ছেন ৩০ লাখ। গত ১০ বছরে বার্ষিক আয় দ্বিগুণ হলেও ২০২১ সালের মধ্যে ৫০ লাখ মানুষকে করের আওতায় আনার এনবিআরের পরিকল্পনা রয়েছে। তাই নতুন করদাতা শনাক্তকরণে এমনকি গ্রামাঞ্চলেও জরিপ চালানো প্রয়োজন এবং এজন্য দরকার দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা প্রণয়ন ও দক্ষ লোকবল। 

সিপিডি এক গবেষণায় কিছুদিন আগে বলেছিল, দেশে আয়কর দেওয়ার যোগ্য এমন মানুষের সংখ্যা ৮০ লাখের কম নয়। অন্য এক গবেষণায় এ সংখ্যা ১ কোটিরও বেশি বলে উল্লেখ করা হয়েছে। এ বিপুলসংখ্যক মানুষের একটি বড় অংশ আয়করের বাইরে থাকায় দেশের আশানুরূপ উন্নয়নে ব্যাঘাত সৃষ্টি হচ্ছে। অন্যদিকে বিদেশনির্ভরতাও কমানো যাচ্ছে না। 

আমেরিকা, কানাডাসহ ইউরোপের বিভিন্ন দেশ জনগণের প্রদত্ত করের টাকা দিয়ে শুধু উন্নয়ন নয়, আর্থিক নির্ভরশীলতা ও মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়েছে অনেক আগেই। এশিয়ার জাপান, সিঙ্গাপুর, হংকং, ইন্দোনেশিয়া আয়করের সঠিক ব্যবহার করে এগিয়ে গেছে অনেক দূর। সে তুলনায় কর আহরণে আমরা এখনো অনেক পিছিয়ে।

আয়কর প্রদান নিয়ে সাধারণ জনগণের মধ্যে একসময় বড় ধরনের ভীতি ও সংশয় ছিল। আগে দেখা যেত বিশেষ শ্রেণির মানুষই কেবল আয়কর প্রদান করত। কিন্তু সে দুরবস্থা থেকে বাংলাদেশ আস্তে আস্তে বেরিয়ে আসতে শুরু করেছে। সম্প্রতি আমরা দেখছি, আর্থিকভাবে সক্ষমদের মধ্যে কর প্রদানের সংস্কৃতি প্রসার লাভ করছে। অর্থাৎ যারা আয়কর প্রদানের আওতায় আসছে, তারা আয়কর দিতে আগ্রহবোধ করছে। স্ব-উদ্যোগেই এখন মানুষ আয়কর প্রদান করছে। 

উন্নত দেশের জনগণ স্ব-উদ্যোগে কর প্রদান করলেও আমাদের দেশের মানুষ কেন কর প্রদানে গড়িমসি করে? কর প্রদান করে জনগণ রাষ্ট্র থেকে কতটা সুফল পায়? পক্ষান্তরে কর আদায়ে রাষ্ট্র নানা উদ্যোগ-আয়োজনে তৎপর হলেও জনগণকে সেবা প্রদানে কতটুকু তৎপর, সেটা দেখা দরকার। কর আদায়ের মূল উদ্দেশ্য তো জনগণ৷ রাষ্ট্র থেকে জনগণের যে ধরনের সেবা পাওয়া উচিত, সেটা তারা পাচ্ছে না বলেই প্রতীয়মান৷ অবকাঠামো খাতে যে ধরনের ব্যয় ধরা হয়, সেটা তাদের কছে অতিরিক্ত বলেই মনে হয়। সে ব্যয়ের প্রকৃত রিটার্নটা জনগণ তেমন পাচ্ছে না৷ গুণগতভাবে যে রাস্তাঘাট তৈরি হচ্ছে তার মানও ভালো নয়৷ এ প্রবণতা প্রকটভাবে আমাদের দেশে বিরাজমান৷ স্বাস্থ্য, শিক্ষা বা অন্যান্য যেসব সেবা আছে, সেগুলো যদি আরও ভালো হতো, তা হলেও জনগণ সন্তুষ্ট হতো৷ এটা স্বীকার করতেই হবে যে, এসবের সেবার মানও তেমন বাড়েনি৷ 

উন্নতির শিখরে যাওয়ার যে স্বপ্ন সরকার দেখে, দেশের মানুষকে দেখায়Ñ সেটাকে আমরা সাধুবাদ জানাই৷ দেশকে স্বয়ম্ভরের গৌরবে গড়তে ও পরনির্ভরতার নিগড় থেকে বের করে আনতে আয়কর অন্যতম প্রভাবক ভূমিকা পালন করে। মালয়েশিয়া, থাইল্যান্ড, ইন্দোনেশিয়া ও ফিলিপাইনের মতো পূর্ব এশিয়ার দেশগুলোর দিকে তাকালে আমরা দেখতে পাব, ওই সব দেশ জনগণের কাছ থেকে যেমন পর্যাপ্ত কর আদায় করতে সক্ষম হয়েছে, তেমনি তাদেরকে চাহিদামতো সেবাও দিয়েছে। দেওয়া আর নেওয়াই তো পৃথিবীর নিয়ম। জনগণ রাষ্ট্রকে দেবে, রাষ্ট্র জনগণকে দেবে। এই দেওয়া-নেওয়ায় একটা নিয়মশৃঙ্খলা দাঁড়ালেই দেশ তরতর করে সামনে এগিয়ে যাবে।