• ঢাকা
  • শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল, ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১
প্রকাশিত: জুন ৬, ২০১৯, ০৬:৫১ পিএম
সর্বশেষ আপডেট : জুন ৬, ২০১৯, ০৬:৫২ পিএম

এটিএম বুথ ব্যবহারে বিদেশিদের ওপর কড়া নজরদারি

এটিএম বুথ ব্যবহারে বিদেশিদের ওপর কড়া নজরদারি

বিদেশি নাগরিকদের এটিএম বুথ ব্যবহারে বাংলাদেশের ব্যাংকগুলো কড়া অবস্থানে গিয়েছে। কিছু কিছু ব্যাংক তাদের বুথে বিদেশিদের প্রবেশ করতেই দিচ্ছে না। কিছু ব্যাংকের এটিএম বুথে বিদেশিদের প্রবেশ করতে দেয়া হলেও তাদের ওপর কড়া নজরদারি রাখেন নিরাপত্তাকর্মীরা।

রাজধানীর ঢাকার গুলশান, বনানী, বারিধারা, পান্থপথ, পশ্চিম রাজাবাজার, উত্তরাসহ আরও কিছু এলাকাতে বিদেশিদের বসবাস রয়েছে। বিশেষ করে গুলশান, বনানী, বারিধারায় বিদেশি নাগরিকদের বসবাসই বেশি। কেউ ভাড়া বাসায় থাকেন, স্বল্প সময়ের জন্য বাংলাদেশে আগত বিদেশিরা হোটেল ভাড়া করে বাস করেন ওইসব এলাকাতেই। এ জন্য ওইসব এলাকার এটিএম বুথগুলোতে কড়াকড়ি সবচেয়ে বেশি। ঢাকার প্রতিটি এলাকার বুথেও কড়াকড়ি আরোপ করেছে ব্যাংকগুলো।

বৃহস্পতিবার (৬ জুন) বিকাল সাড়ে তিনটা থেকে চারটার মধ্যে দুজন বিদেশি নারী ও একজন বিদেশি পুরুষ দলবেঁধে প্রবেশ করেন বনানীতে অবস্থিত আইএফআইসি ব্যাংকের এটিএম বুথে। বুথটির অবস্থান বনানীর ১১ নম্বর সড়কের ২৬ নম্বর বাড়িতে। ওই বুথের নিরাপত্তা কর্মী সাঈদুল ইসলাম দৈনিক জাগরণকে বলেন, দলবেঁধে বুথে ঢোকা এমনিতেই নিষেধ। তার ওপর তিনজন বিদেশি, আমি তো তাদের দেখে ভয়-ই পেয়েছিলাম। তারা যখন আসে, তখন আমি বুথের ভেতরে মোবাইল চার্জে দিচ্ছিলাম। তিনজন বুথে ঢোকার পর ইশারায় বুঝিয়ে দেই, টাকা তোলা যাবে না, মেশিনে সমস্যা আছে। পরে তারা চলে যান।

তিনি বলেন, কোনো বিদেশি বুথে প্রবেশ করতে চান তাহলে তার ওপর কড়া নজরদারি রাখার নির্দেশ রয়েছে। 

আইএফআইসি ব্যাংকের বুথটির সারিতেই পড়েছে সিটি ব্যাংক, ব্র্যাক ব্যাংক, স্ট্যান্ডার্ড চাটার্ড ব্যাংকের এটিএম বুথ। এই সারির বিপরীত সারিতে আছে স্ট্যান্ডার্ড ব্যাংক লিমিটেডের একটি এটিএম বুথ।

সিটি ব্যাংকের বুথের নিরাপত্তাকর্মী জুয়েল বৃহস্পতিবার (৬ জুন) বিকালে দৈনিক জাগরণকে বলেন, আমাদের বুথে বিদেশিদের ঢোকাই নিষেধ করে দিয়েছে। যদি তারা অনেক অনুরোধ করে ভেতরে যেতে চান-ও, তাহলে আমরা তাদের কড়াজরদারির মধ্যে রাখি। তারা কী করছে, তা দেখা হয় দরজা খোলা রাখা হয় ওই সময়। একইসঙ্গে বাড়তি সতর্কতার জন্য দেশের কোনও ব্যক্তি বুথে প্রবেশ করলে তাকেও নজরদারিতে রাখা হচ্ছে।

১ জুন (শনিবার) ঢাকার খিলগাঁওয়ে ডাচ-বাংলা ব্যাংকের এটিএম বুথ থেকে সাড়ে চার লাখ টাকা উত্তোলনের সময় ধরা পড়ে চক্রের দুই সদস্য। পরে তাদের মাধ্যমে পুলিশ  চক্রের আরও চারজনকে গ্রেফতার করে। গত ৩ জুন (সোমবার) তাদের তিন দিনের রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদের অনুমতি দেয় আদালত। তারা হলেন- দেনিস ভিতোমস্কি (২০), নাজারি ভজনোক (১৯), ভালেনতিন সোকোলোভস্কি (৩৭), সের্গেই উইক্রাইনেৎস (৩৩), শেভচুক আলেগ (৪৬) ও ভালোদিমির ত্রিশেনস্কি (৩৭)। তারা ইউক্রেনের নাগরিক।

ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের অতিরিক্ত উপ-কমিশনার শাহিদুর রহমান রিপন গণমাধ্যমকে জানান, আগের চক্রগুলো কার্ড ক্লোন করে বুথ থেকে টাকা চুরি করতো। তবে এ চক্র মেশিনে কার্ড দিয়ে কোনও পিন নম্বর ছাড়াই টাকা উত্তোলন করে।

বনানীর ১১ নম্বর সড়কে অবস্থিত স্ট্যান্ডার্ড চাটার্ড ব্যাংকের এটিএম বুথের নিরাপত্তা কর্মী মোহাম্মদ দুলাল দৈনিক জাগরণকে জানান, বিদেশি জালিয়াতরা ধরা পড়ার পর বুথে বিদেশিদের আসা কমে গেছে। ঘটনার আগে বিদেশিরা প্রায়ই আসত এবং টাকা তুলে নিতো।

বিদেশিদের ব্যাপারে কড়া নজরদারির কথা উল্লেখ করে দুলাল বলেন, বিদেশি আসলে সরাসরি দেখা হবে সে কী করছে, সে যতক্ষণ বুথে থাকবে, ততক্ষণ তার গতিবিধি দেখা হবে। এ ছাড়া দেশি-বিদেশি যে-ই হোক, সানগ্লাস, বোরকা, মাস্ক, হেলমেট পরা কাউকে বুথে প্রবেশ করতে দেয়া হবে না।

গুলশানের ডাচ -বাংলা ব্যাংকের এটিএম বুথের একজন নিরাপত্তাকর্মী নাম না প্রকাশের অনুরোধ জানিয়ে বলেন, বাংলাদেশের কেউ এ পর্যন্ত এ ধরনের ঘটনা ঘটায়নি। বিদেশিরাই এসব করছে। তাদের দেখলেই বুক কেঁপে উঠে।

২০১৬ সালের ফেব্রুয়ারিতে বেসরকারি ইস্টার্ন, সিটি ও ইউনাইটেড কমার্শিয়াল ব্যাংকের (ইউসিবি) চার এটিএম বুথ থেকে তথ্য চুরি করে ক্লোন কার্ড তৈরি করেন বিদেশিরা। ওই সময় ৪০টি কার্ড ক্লোন করে গ্রাহকের ২০ লাখ টাকা তুলে নেয়া হয়। ২০১৮ সালে বনানী এলাকার একটি সুপারশপ থেকে গ্রাহকদের তথ্য চুরি হয়। ক্লোন কার্ড তৈরি করে ৪৯ গ্রাহকের হিসাব থেকে টাকা তুলে নেয়া হয়। ভুক্তভোগীরা ছিলেন ব্র্যাক, দ্য সিটি, ইস্টার্ণ, ইউনাইটেড কমার্শিয়াল ব্যাংক (ইউসিবি) ও ব্যাংক এশিয়ার গ্রাহক।

ঢাকার পান্থপথ, মতিঝিল, জিগাতলা, ধানমন্ডিসহ আরও কিছু এলাকায় অবস্থিত বিভিন্ন ব্যাংকের এটিএম বুথের নিরাপত্তা কর্মীদের কাছ থেকে জানা যায়, বিদেশিদের বুথ ব্যবহারে কড়াকড়ি নজরদারির রাখার  নিদের্শনা রয়েছে তাদের।

আরএম/এসএমএম