জাতীয় সংসদে ২০১৯-২০ অর্থ বছরের জন্য উত্থাপিত বাজেট গতানুগতিক ধারায় প্রণীত হয়েছে বলে মন্তব্য করেছে শ্রমিক কর্মচারী ঐক্য পরিষদ (স্কপ)।
শনিবার (১৫ জুন) গণমাধ্যমে পাঠানো সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে থেকে তাদের এই মন্তব্য জানা গেছে।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, প্রস্তাবিত বাজেটে শ্রমজীবী মেহনতি মানুষের আশা-আকাঙ্খার প্রতিফলন ঘটেনি। এই বাজেট প্রবৃদ্ধি এবং বৈষম্য দুটোই বাড়াবে। মালিকের সম্পদ এবং শ্রমিকের দুর্দশা বৃদ্ধি করবে। বাজেটে শ্রমিকদের জন্য সুস্পষ্ট কোনও বরাদ্দ নেই।
শ্রমিক কর্মচারী ঐক্য পরিষদের নেতারা বলেন, বাজেটের বিশালত্ব নিয়ে অর্থমন্ত্রীর গর্ব থাকলেও এই বাজেটে শ্রমিকরা তাদের কোনও স্থান খুঁজে পাচ্ছে না।
বাজেটে মালিকদের জন্য কর ছাড়, রফতানি প্রণোদনা, ঋণ সহজীকরণ, খেলাপি ঋণ মওকুফ, উদ্যোক্তা তহবিলসহ প্রকাশ্য অপ্রকাশ্য অনেক সুযোগ দেয়া হলেও শ্রমিকের জন্য কিছুই নেই। অথচ এই শ্রমজীবী মানুষ পরোক্ষ করের বিপুল বোঝা বহন করে থাকে।
অর্থমন্ত্রী এবং তার মন্ত্রণালয় দেশের ৬ কোটি ৩৫ লাখ শ্রমজীবী মানুষ যারা কৃষি, শিল্প ও সেবা খাতে শ্রম দিয়ে অর্থনীতির চাকাকে সচল রেখেছে, যাদের শ্রমে রফতানি আয় এবং রেমিটান্স আসে সেই দেশি ও প্রবাসী শ্রমিকদের প্রতিনিধিদের সাথে বাজেট প্রণয়ন প্রক্রিয়ায় কোনও আলোচনা করার প্রয়োজন বোধ করেনি। এই বাজেটে ১,৪৭,০০০ কোটি টাকার বিশাল ঘাটতি রয়েছে। ঘাটতি পূরুণের অন্যতম উৎস হিসাবে ৪৭,০০০ কোটি টাকা ব্যাংকিং খাত থেকে ধার নেয়া হবে। এই টাকা ব্যাংকিং খাত থেকে আদায় করলে ব্যাংকিং খাতের বর্তমান শোচনীয় অবস্থা আরও শোচনীয় হবে।
শিল্প ও স্বাস্থ্য খাতে এই বাজেটে অনেক ইতিবাচক প্রতিশ্রুতি থাকলেও অর্থ বরাদ্দের ক্ষেত্রে তার কোনও প্রতিফলন নেই।
গরিব ও মেহনতি মানুষের জন্য বিনামূল্যে চিকিৎসা সেবার কোনও দিক-নির্দেশনা না থাকাটা হতাশাজনক।
কৃষি খাতেও অর্থ বরাদ্দ তুলনামূলক কম। পাট শিল্প সম্পর্কে বাজেট বক্তৃতায় সোনালী ভবিষ্যতের কথা বলা হয়েছে। কিন্তু পাট শিল্প পুনরুদ্ধারের জন্য ব্যবস্থাপনা সংস্কার প্রয়োজন তা সম্পর্কে কোনও সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা ও অর্থ বরাদ্দ বাজেটে নেই।
নতুন ও উন্নত প্রযুক্তির মেশিনারি দিয়ে পাট শিল্পের উৎপাদন বৃদ্ধির কোনও দিক-নির্দেশনা নেই। পাট শিল্প শ্রমিকদের বকেয়া পরিশোধ ও জাতীয় মজুরি কমিশন বাস্তবায়নের জন্য বাজেটে কোনও বরাদ্দ রাখা হয়নি।
বাজেটে পোশাক খাতের মালিকদের জন্য প্রণোদনার ব্যবস্থা রাখা হলেও পোশাক শিল্পের শ্রমিকদের জন্য কোনও বরাদ্দ রাখা হয়নি। শ্রমিক-কর্মচারী তথা নিম্ন আয়ের মানুষের জন্য রেশনিং বা সামাজিক সুরক্ষার কোনও নির্দেশনা বা নিশ্চয়তা বাজেটে নেই। সামাজিক সুরক্ষা খাতে এই বছর বাজেটে যে বরাদ্দ দেয়া হয়েছে তা মূলত গ্রামাঞ্চলেই ব্যবহৃত হবে।
বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়, প্রস্তাবিত বাজেটকে আরও গণমুখী করা হোক। ব্যাংকিং খাতে ইচ্ছাকৃত ঋণ খেলাপিদের সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করে সেই অর্থ দিয়ে শ্রমিকদের কল্যাণ সাধন করা হোক।
দুর্নীতি রোধে কালো টাকা সাদা করার সুযোগ না রেখে তা আদায় করে উৎপাদন খাতে বিনিয়োগ করা হোক। একই সাথে সর্বস্তরের শ্রমিক কর্মচারীদের জন্য রেশনিং, সুলভ মূল্যে আবাসন, বিনামূল্যে চিকিৎসা সেবা ও দুর্ঘটনায় আহত হলে পুনর্বাসনসহ সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনি নিশ্চিত করা হোক।
পাট শিল্পের পুনর্জীবনের জন্য প্রয়োজনীয় আধুনিক যন্ত্রপাতি ও পুঁজির সংস্থান করা হোক। সরকারি ও ব্যক্তি মালিকানা খাতের বিরাজমান বেতন বৈষম্য নিরসন করা হোক। বাজেটে নতুন শ্রমশক্তির কর্মসংস্থানের জন্য আশ্বাস থাকলেও কিন্তু তার বাস্তবায়ন সম্পর্কে কার্যকর কোন পরিকল্পনার উল্লেখ নাই।
নেতারা সংসদে বাজেট পাসের আগে শ্রমিকদের জন্য প্রয়োজনীয় বরাদ্দ যুক্ত করার আহবান জানান।
এমএ/এসএমএম