• ঢাকা
  • সোমবার, ২৯ এপ্রিল, ২০২৪, ১৬ বৈশাখ ১৪৩১
প্রকাশিত: জুন ১৮, ২০১৯, ০৫:২৩ পিএম
সর্বশেষ আপডেট : জুন ১৮, ২০১৯, ০৫:২৩ পিএম

চলছে জেল জরিমানা মামলা ও প্রতিষ্ঠান সীলগালা

নিষিদ্ধ ৪৮ ভোগ্যপণ্য জব্দে বাজারে বিএসটিআই 

নিষিদ্ধ ৪৮ ভোগ্যপণ্য জব্দে বাজারে বিএসটিআই 

বাজারে ভোগ্য পণ্যের মধ্যে নতুন করে ২২টি এবং আগের ২৬টি পণ্যসহ মোট ৪৮টি নিষিদ্ধ পণ্যের জব্দে সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলোতে একক ও যৌথ অভিযান শুরু করছে বিএসটিআই। তবে পরবর্তীতে ২৬টি পণ্য মানের পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হলে তাদের সেসবের ওপর থেকে নিষেধাজ্ঞা তুলে নেয় বিএসটিআই। এদিকে দ্বিতীয় ধাপে বাকি ৯৩টি পণ্যের মধ্যে ২২টি পণ্য নিম্নমানের হওয়ায় তা নিষিদ্ধ করে বিএসটিআই। চলছে জেল-জরিমানা, মামলা। পাশাপাশি একাধিক প্রতিষ্ঠান সীলগালা করাও হচ্ছে। তারপরও কতিপয় অসাধু ব্যবসায়ী নিষিদ্ধ পণ্য বাজারে বিক্রি ও মজুদ রাখছে। 

জানা গেছে, বাজারে ভেজাল ও নিম্নমানের পণ্যের বিরুদ্ধে অভিযান অব্যাহত রেখেছে নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষ ও বাংলাদেশ স্ট্যান্ডার্ডস অ্যান্ড টেস্টিং ইনস্টিটিউশনের (বিএসটিআই)। গত রমজানকে সামনে রেখে বাজার থেকে ৪০৬টি পণ্যের নমুনা সংগ্রহ করে তার মান পরীক্ষা করেছিল বিএসটিআই। এরপর গত ২ মে প্রথম ধাপে ৩১৩টি পণ্যের মান পরীক্ষার ফল প্রকাশ করে তারা। সেখানে ৫২টি পণ্যকে নিম্নমানের বলে ঘোষণা করা হয়। এ বিষয়ে হাইকোর্টে রিট হওয়ার পর গত ১২ মে ৫২টি ভেজাল ও নিম্নমাণের পণ্য বাজার থেকে যত দ্রুত সম্ভব প্রত্যাহারের নির্দেশ দেন হাইকোর্ট। পরবর্তীতে ২৬টি পণ্য মানের পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হলে তাদের সেসবের ওপর থেকে নিষেধাজ্ঞা তুলে নেয় বিএসটিআই। এছাড়া দ্বিতীয় ধাপে বাকি ৯৩টি পণ্যের মধ্যে ২২টি পণ্য নিম্নমানের হওয়ায় তা নিষিদ্ধ করে বিএসটিআই। নতুন এই ২২টি ও আগের ২৬টি পণ্যসহ মোট ৪৮টি পণ্যের খোঁজে সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলো একক ও যৌথ ভাবে অভিযান পরিচালনা করছে।

এ বিষয়ে বাংলাদেশ নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ মাহফুজুল হক বলেন, আমাদের অভিযান চলছে এবং এটি নিয়মিত পরিচালিত হবে। রমজান ও ঈদের পর থেকে আবার অভিযান শুরু করেছি। এ সকল পণ্যের প্রতিষ্ঠানগুলোকে নির্দেশনা দিয়েছিলাম সরিয়ে নিতে, পরে তাদের বিরুদ্ধে মামলাও করা হয়েছে। এর সফলতাও এসেছে, প্রথম ধাপের ৫২ পণ্যের মধ্যে যে ২৬টির মান ঠিক রয়েছে এগুলো বাদে মানহীন ২৬টি পণ্য বাজারে নেই বললেই চলে। আর এখন আমরা কাজ করছি নতুন ২২টি নিষিদ্ধ পণ্য নিয়ে।

এদিকে, বিএসটিআই এর উপ-পরিচালক (সিএম) মো. রেজাউল হক বলেন, আমরা মোট ৪৮টি পণ্যের বিরুদ্ধে অভিযান পরিচালনা অব্যাহত রেখেছি। আজও আমাদের অভিযান পরিচালিত হচ্ছে। তবে ৪৮ পণ্য হলেও প্রতিষ্ঠান হচ্ছে ৪৭টি। একটি প্রতিষ্ঠানের দুটি পণ্য রয়েছে। পণ্যের মান নিয়ে কোনো ছাড় দেয়া হবে না। পণ্য নিম্নমানের থেকে অব্যাহতি পাওয়া পণ্যগুলোর কিছু লাইসেন্স বাতিল করা বা স্থগিত করা হয়েছিল। তারা আবার নতুন করে লাইসেন্স নেবে। আমরা আদালতের কাছে জানতে চেয়েছিলাম। মান ঠিক থাকা প্রতিষ্ঠানগুলো নতুন লাইসেন্স নিয়ে ব্যবসা পরিচালনা করতে পারবে কি না। তখন আদালত অনুমতি দিয়েছে। মান ঠিক থাকলে অবশ্যই ব্যবসা করবে। আদালত প্রতিষ্ঠান বন্ধ করে দিতে চায় না, তবে জনগণ যেন মানসম্মত পণ্য পায় সেটি নিশ্চিত করতে হবে।

এছাড়া প্রথম ধাপের নিষিদ্ধ পণ্য বাজারে নেই বললেই চলে জানিয়ে এই কর্মকর্তা আরো বলেন, পাড়া মহল্লায় কিছু দোকানে এই পণ্যগুলো এখনও রয়েছে। কিন্তু বড় বাজারগুলোতে নেই। আমাদের অভিযান থেমে নেই, এই নিষিদ্ধ পণ্য যেখানেই পাওয়া যাবে (বিক্রি বা বাজারজাত), তাদের শাস্তি পেতে হবে। আর জনগণ এখন অনেক সচেতন, তারা ভেজাল ও নিম্নমানের পণ্যের বিরুদ্ধে অনেক সোচ্চার হয়েছে।

অপরদিকে বাজারের ৫২ পণ্যের মধ্যে যেহেতু ২৬টির মান ঠিক রয়েছে বলে বিএসটিআই থেকে প্রমাণ করতে পেরেছে, তাই এই ২৬ পণ্যের ওপর আরোপিত নিষেধাজ্ঞা থাকছে না এবং নতুন যে ২২ পণ্যের উপরে বিএসটিআই নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে। তাদের পণ্যও সরানোর বিরুদ্ধে একই ব্যবস্থা আদালত নিবে।

অন্যদিকে, দ্বিতীয় ধাপে বিএসটিআই থেকে রাঁধুনী ব্র্যান্ডের ধনিয়া গুঁড়া ও জিয়ার গুঁড়া নিষিদ্ধ পণ্যের তালিকায় থাকলেও নিউমার্কেট কাঁচা বাজার, পশ্চিম আগারগাঁও কাঁচা বাজার, মিরপুর ১ বাজারসহ বেশ কয়েকটি বাজারেই তা বিক্রি করতে দেখা গেছে। 

এ বিষয়ে মিরপুর ১ বাজারের নোয়াখালী জেনারেল স্টোরের কর্মচারী এক প্রকার ক্ষুদ্ধ হয়ে বলেন, কোন পণ্য নিষিদ্ধ আর কোনটি ভালো আমাদের কিছুই কেউ জানায়নি। এসে জরিমানা করলে করবে। 

পণ্যগুলো বাজার থেকে সরিয়ে নিতে সোচ্চার হয়ে উঠেছেন ব্যবসায়ী সমিতির নেতারাও। এ বিষয় নিউমার্কেট বনলতা ব্যবসায়ী সমবায় সমিতির কর্মকর্তা মাহফুজ বলেন, মানহীন পণ্যের বিষয়ে যখনই আমরা জানতে পেরেছি। আমরা আমাদের বাজারের সব দোকানে নির্দেশ দিয়ে দিয়েছি এ সব পণ্য না রাখার জন্য। এসময় আমাদের সিটি কর্পোরেশনের কর্মকর্তারও ছিলেন। এখনো যদি কেউ এসকল নিষিদ্ধ পণ্য বিক্রি করে তার দায়ভার তাকেই নিতে হবে।

জানা গেছে, প্রথম ধাপের ৫২ পণ্যের নিষিদ্ধ ২৬ পণ্যগুলো হল- দিঘী ব্র্যান্ডের ড্রিংকিং ওয়াটার, আররা ড্রিংকিং ওয়াটার, এসিআই সল্ট, এসিআই ধনিয়া গুঁড়া, মধুমতি আয়োডিন যুক্ত লবণ, নিউজিল্যান্ড ডেইরী প্রোডা. বিডির নুডুলস, প্রাণের কারি পাউডার, তীর সরিষার তেল, জিবি ব্র্যান্ডের সরিষার তেল, ফ্রেস হলুদের গুঁড়া, বাঘাবাড়ী স্পেশাল ঘি, মধুবন লাচ্চা সেমাই, ওয়েল ফুডের লাচ্চা সেমাই, মিঠাই লাচ্চা সেমাই, মধুফুল লাচ্চা সেমাই, মেহেদী বিস্কুট, নিশিতা সুজি, মঞ্জিল হলুদের গুঁড়া, ডলফিন হলুদের ও মরিচের গুঁড়া, সূর্যের মরিচের গুঁড়া, কিং এর ময়দা, গ্রিনল্যান্ডস মধু, রূপসার ফার্মেস্টড মিল্ক, শানের হলুদের গুড়া, মক্কা ব্রান্ডের চানাচুর।

পাশাপাশি দ্বিতীয় ধাপের ২২টি পণ্যের মধ্যে হাসেম ফুডসের কুলসন ব্র্যান্ডের লাচ্ছা সেমাই এবং এস এ সল্টের মুসকান ব্র্যান্ডের আয়োডিনযুক্ত লবণ, প্রাণ ডেইরির প্রাণ প্রিমিয়াম ব্র্যান্ডের ঘি, স্কয়ার ফুড অ্যান্ড বেভারেজের রাঁধুনী ব্র্যান্ডের ধনিয়া গুঁড়া ও জিয়ার গুঁড়া, চট্টগ্রামের যমুনা কেমিক্যাল ওয়ার্কসের এ-৭ ব্র্যান্ডের ঘি, চট্টগ্রামের কুইন কাউ ফুড প্রোডাক্টসের গ্রিন মাউন্টেন ব্র্যান্ডের বাটার অয়েল, চট্টগ্রামের কনফিডেন্স সল্টের কনফিডেন্স ব্র্যান্ডের আয়োডিনযুক্ত লবণ, ঝালকাঠির জে কে ফুড প্রোডাক্টের মদিনা ব্র্যান্ডের লাচ্ছা সেমাই, চাঁদপুরের বিসমিল্লাহ সল্ট ফ্যাক্টরির উট ব্র্যান্ডের আয়োডিনযুক্ত লবণ এবং চাঁদপুরের জনতা সল্ট মিলসের নজরুল ব্র্যান্ডের আয়োডিনযুক্ত লবণ। এসব পণ্যের লাইসেন্স স্থগিত করেছে বিএসটিআই।

এছাড়া থ্রি স্টার ফ্লাওয়ার মিলের থ্রি স্টার ব্র্যান্ডের হলুদের গুঁড়া এবং এগ্রো অর্গানিকের খুশবু ব্র্যান্ডের ঘি নিম্নমানের হওয়ায় কোম্পানি দুটির লাইসেন্স বাতিল করেছে বিএসটিআই। আরো ৮টি প্রতিষ্ঠান বিএসটিআইয়ের কোনো লাইসেন্স ছাড়াই পণ্য বাজারজাত করছিল। তাদের নাম প্রকাশ না করে এসব প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে নিয়োমিত মামলা করা হয়েছে বলে জানিয়েছে বিএসটিআই।

প্রসঙ্গত, বাংলাদেশ স্ট্যান্ডার্ডস অ্যান্ড টেস্টিং ইনস্টিটিউশনের (বিএসটিআই) পরীক্ষায় নিম্নমান প্রমাণিত বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের ৫২টি ভেজাল পণ্য দ্রুত সময়ের মধ্যে বাজার থেকে প্রত্যাহার এবং এসব প্রাণঘাতী ভেজাল পণ্য উৎপাদনকারীদের বিরুদ্ধে আইন অনুযায়ী শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট। এটা বাস্তবায়ন করে আগামী ১০ দিনের মধ্যে প্রতিবেদন দিতে বলেছেন আদালত। একইসঙ্গে এসব পণ্য বাজার থেকে প্রত্যাহারসহ বাজারে যেগুলো আছে সেগুলো জব্দ করে ধ্বংস এবং পরবর্তিতে বিএসটিআইয়ের পরীক্ষায় উত্তীর্ণ না হওয়া পর্যন্ত এসব ভেজাল পণ্য উৎপাদন বন্ধ রাখারও নির্দেশ দিয়েছেন আদালত।

এইচ এম/টিএফ