• ঢাকা
  • শনিবার, ২৭ এপ্রিল, ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১
প্রকাশিত: আগস্ট ১৪, ২০১৯, ০৮:৫৭ এএম
সর্বশেষ আপডেট : আগস্ট ১৪, ২০১৯, ০৮:৫৭ এএম

চামড়া নিয়ে কারসাজি

নদী-রাস্তা-ডাস্টবিনে ফেলে, মাটিতে পুঁতে প্রতিবাদ

নদী-রাস্তা-ডাস্টবিনে ফেলে, মাটিতে পুঁতে প্রতিবাদ
চামড়ার দাম না পেয়ে সড়কে চামড়া ফেলে রেখে যাওয়া হয়েছে


চামড়ার দামের দরপতন হওয়ায় অবিশ্বাস্য হলেও এ বছরের চামড়ার দাম অতীতের সব ইতিহাস ভঙ্গ করেছে। যত বড় পশুর চামড়াই হোক না কেন, ২শ’ টাকা থেকে ৪শ’ টাকায় সীমাবদ্ধ চামড়ার দাম। কোরবানির ঈদ উপলক্ষে ক্রয় করা চামড়া এখন ফরিয়াদের গলার কাঁটা হয়ে দাঁড়িয়েছে। অনেক ব্যবসায়ী ক্রয় করা চামড়ার দাম কম হওয়ায় সংগৃহীত চামড়া রাস্তায় ফেলে পালিয়েছে। পাশাপাশি অনেকে চামড়া রাস্তার ডাস্টবিনে নদীতে ফেলে দায় মুক্তি চেয়েছে। আবার অনেকে চামড়া মসজিদের নিয়ন্ত্রিত মাদ্রাসায় দান করেছেন। এছাড়া অনেকে চামড়া মাটি খুড়ে পুঁতে ফেলেছে বলে জানা গেছে। চামড়া নিয়ে একটি মহল সিন্ডিকেট করে দরপতন ঘটিয়েছে। সংশ্লিষ্ট সিন্ডিকেট চামড়া নিয়ে কারসাজি করছে। 

জানা গেছে, কোরবানির পশুর চামড়ার দাম আগে কখনো এতটা কম ছিল এমনটা স্মরণ করতে পারছে না কেউই। গত কয়েক বছর ধরেই চামড়ার দর কম, তবে এবারের বিষয়টি অনেকের কাছে অবিশ্বাস্য। একটি লাখ টাকার গরুর চামড়া ২০০ থেকে ৪০০ টাকা বিক্রির উদাহরণ নিকট-অতীতে আর নেই। অবিশ্বাস্য এই দরপতনে ক্ষুব্ধ হয়ে প্রতিবাদস্বরূপ অনেকে চামড়া মাটিতে পুঁতে রাখছেন। কেউ কেউ ময়লার ভাগাড়ে ফেলে দিয়েছেন।

চামড়ার মৌসুমী ব্যবসায়ীদের অভিযোগ, সিন্ডিকেট করে কাঁচা চামড়ার দাম কমানো হচ্ছে। অন্যদিকে আড়তদাররা বলছেন, চামড়া কেনার পুঁজিই নেই তাদের। এজন্য তারা চামড়া কিনছেন না। আর ট্যানার্স অ্যাসোসিয়েশন বলছে, তারা আরও ১০ দিন পরে চামড়া কিনবেন। এখন যা হচ্ছে এর সঙ্গে তাদের সম্পৃক্ততা নেই।

সরকারি হিসেবে মতে, এবার ঢাকায় প্রতি বর্গফুট গরুর কাঁচা চামড়া ৪৫ থেকে ৫০ টাকা, ঢাকার বাইরে ৩৫ থেকে ৪০ টাকা। খাসির কাঁচা চামড়া সারাদেশে ১৮ থেকে ২০ এবং বকরির চামড়ার দাম ১৩ থেকে ১৫ টাকা নির্ধারণ করে দেয় সরকার। তবে ওই দামে কোথাও চামড়া বিক্রি হয়নি ।

এদিকে গত সোমবার ঈদের দিন চামড়ার ক্রেতা ছিল অনেক কম। আর যেসব মৌসুমি ব্যবসায়ী চামড়া সংগ্রহ করেন তারাও অনেক কম দাম হাঁকেন। তাদের দাম শুনে অনেকে ক্ষুব্ধ হন। দিন শেষে অল্প দামে কেনার পরও প্রতি চামড়া কয়েকশ’ টাকা করে লোকসান গুনতে হচ্ছে বলে দাবি করেছেন ব্যবসায়ীরা।

অপরদিকে চামড়া সংক্রান্ত বিড়ম্বনা থেকে বাঁচতে সুনামগঞ্জের জগন্নাথপুর উপজেলায় একটি মাদ্রাসার সংগ্রহ করা ৯০০ পশুর চামড়া মাটিতে পুঁতে ফেলা হয়েছে। এর একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে। গতকাল মঙ্গলবার উপজেলার সৈয়দপুর-শাহারপাড়া ইউনিয়নের সৈয়দপুর হোসাইনিয়া হাফিজিয়া আরাবিয়া মাদ্রাসার সামনে এসব চামড়া পুঁতে ফেলা হয়।

ওই মাদ্রাসাটির পরিচালক হাফেজ মাওলানা সৈয়দ ফখরুল ইসলাম বলেন, চামড়া কিনতে আসেনি কেউ। বাধ্য হয়ে চামড়াগুলো মাটিতে পুঁতে ফেলা হয়েছে। চামড়াগুলো সংগ্রহে এবং চামড়ায় লবণ ব্যবহারে ৫০ হাজার টাকা ব্যয় হয়েছে বলে জানান তিনি।
শুধু সৈয়দপুরেই নয়, সিলেট, চট্টগ্রাম, দিনাজপুরসহ দেশের বিভিন্ন জায়গা থেকে খবর পাওয়া গেছে, সেখানেও চামড়ার মূল্য না পেয়ে ক্ষুব্ধ হয়ে অনেকে তা মাটিতে পুঁতে রাখেন। কোথাও কোথাও আবর্জনার ভাগাড়ে ফেলে দেয়া হচ্ছে।

এ বিষয়ে ট্যানারি মালিকদের সংগঠন বাংলাদেশ ট্যানার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি শাহীন আহমেদ জানান, আরও ১০ দিন পর থেকে চামড়া কেনা শুরু করবেন তারা। গতকাল মঙ্গলবার সাংবাদিকদের তিনি বলেন, কিছু মধ্যসত্বভোগী সস্তায় চামড়া কিনছে। ঈদের সময় কয়েক দিন এদের দৌরাত্ম্য থাকে। তবে সরকারের বেঁধে দেওয়া দামেই এরা আমাদের কাছে চামড়া বিক্রি করে, মাঝেমধ্যে একটু বেশি দামও দিতে হয়।’

ট্যানারি মালিকরা চামড়া কেনা শুরু না করা পর্যন্ত এই অস্থিতিশীলতা থাকে। মৌসুমী ব্যবসায়ীরা এক-দুই দিনের মধ্যে তাদের পুঁজি নিয়ে বের হয়ে যেতে চান, আর তখনই মধ্যসত্বভোগীরা সুযোগ নেয়। এই অবস্থা থেকে বেরিয়ে আসতে বাজার ব্যবস্থাপনা ঠিক করার তাগিদ দিয়ে শাহীন বলেন, যুগ যুগ ধরে চলা চামড়া সংগ্রহ প্রক্রিয়া উন্নত করতে হবে। বিভাগীয় শহর ও বড় বড় শহরে কোল্ডস্টোরেজ স্থাপন এবং চামড়া সংরক্ষণের ব্যবস্থাপনা উন্নত করতে হবে। দেশ এগোলেও চামড়া সংগ্রহের প্রক্রিয়া এখনো প্রাচীনযুগের মতো রয়ে গেছে, এটাকে ডেভেলপ করলে এই যে ব্লেইম গেইম, ট্যানারি মালিকরা চামড়া কিনছেন না, দামও দিচ্ছে না, এগুলো আসত না। এসব নিয়ে আমরা শিল্প ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে প্রস্তাব দিয়েছি।

এদিকে চামড়ার উপযুক্ত দাম নিশ্চিত করতে এবং অচল অবস্থার নিরসনে কাঁচা চামড়া রপ্তানির অনুমতি দেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। এতদিন রপ্তানি নীতি আদেশ অনুযায়ী, বাংলাদেশ থেকে কাঁচা চামড়া রপ্তানি নিষিদ্ধ ছিল। বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের নির্ধারিত মূল্যে কাঁচা চামড়া কেনাবেচা নিশ্চিত করতে ব্যবসায়ীদের সহযোগিতাও চেয়েছে সরকার।

গতকাল মঙ্গলবার বিকালে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, নির্ধারিত মূল্যে কোরবানির পশুর চামড়া ক্রয়-বিক্রয় হচ্ছে না। এ বিষয়ে চামড়া শিল্পের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন পর্যায়ের ব্যবসায়ীদের দায়িত্বশীল হওয়ার আহ্বান জানানো হচ্ছে। কাঁচা চামড়ার গুণাগুণ যাতে নষ্ট না হয়, সেজন্য স্থানীয়ভাবে যথাযথ প্রক্রিয়া অনুসরণ করে চামড়া সংরক্ষণের জন্যও বাণিজ্য মন্ত্রণালয় ব্যবসায়ী ও স্থানীয় প্রশাসনের প্রতি অনুরোধ জানিয়েছে।

কাঁচা চামড়া রপ্তানির পথ খুলে দিলে চামড়ার দাম কিছুটা বাড়বে জানিয়ে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব মফিজুল ইসলাম বলেন, আমরা চিন্তাভাবনা করছি। কাঁচা চামড়া রপ্তানি করার অনুমতি দেবো। এটা হলে আশা করছি দামটা আরেকটু বাড়বে। পাশাপাশি দেশীয় শিল্প যাতে ক্ষতিগ্রস্ত না হয়, সেদিকেও আমরা লক্ষ্য রাখছি। কবে নাগাদ সে অনুমতি দেওয়া হবে,এমন প্রশ্নে বাণিজ্য সচিব বলেন, উচ্চ পর্যায়ে আলোচনা করেছি, আমরা হয়ত রপ্তানির অনুমোদন দেব, আজ (বুধবার) অফিস খুললে চামড়াখাতের সঙ্গে জড়িতদের নিয়ে বৈঠক করে কাঁচা চামড়া রপ্তানির অনুমতির ঘোষণা দেওয়া হবে।

এইচএম/আরআই

আরও পড়ুন