• ঢাকা
  • বৃহস্পতিবার, ০২ মে, ২০২৪, ১৮ বৈশাখ ১৪৩১
প্রকাশিত: ফেব্রুয়ারি ২, ২০১৯, ০৮:২৬ এএম

পুঁজিবাজারের স্থিতিশীলতা রক্ষায় প্রয়োজন কঠোর নজরদারি

পুঁজিবাজারের স্থিতিশীলতা রক্ষায় প্রয়োজন কঠোর নজরদারি
শেয়ার বাজারের লোগো

 

পুঁজিবাজারে কঠোর নজরদারি না থাকায় স্থিতিশীলতা রক্ষা হচ্ছেনা। টানা ঊর্ধ্বমুখী আবার টানা নিম্মমুখী সব মিলিয়ে এক ধরনের অস্থিতরতা বিরাজ করছে দেশের পুঁজিবাজারে। কিন্তু সূচক উত্থানের ধারা বেশিদিন স্থিতি হয়না। গেল সপ্তাহের শেষ দুই কার্যদিবসে ছিল বড় ধরনের দরপতন। এই অবস্থায় পুঁজিবাজারের স্থিতিশীলতা রক্ষায় ভালো কোম্পানি তালিকাভুক্তির পাশাপাশি দুর্বল কোম্পানির নজরদারি বাড়ানোর পরামর্শ বিশেষজ্ঞদের।
 
পুঁজিবাজার বিশেষজ্ঞরা বলছেন, নতুন সরকারের কাছে বিনিয়োগকারীদের অনেক প্রত্যাশা। আশার বিষয় হলো এই মেয়াদে আওয়ামী লীগ সরকারের এবারের অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল নিজে পুঁজিবাজারের সঙ্গে যুক্ত। এছাড়া আগের অর্থমন্ত্রী সুবিধা অসুবিধার বিষয়ে তেমন আগ্রহ না থাকলেও এই অর্থমন্ত্রীকে বুঝিয়ে  কোনো সুবিধা নিতে পারবেনা সুবিধাভোগীরা। কারণ তিনি একজন চার্টার্ড  একাউনটেন্টস এবং পুঁজিবাজার সর্ম্পকে অনেক ভালো জানেন। বর্তমান অর্থমন্ত্রী পুঁজিবাজারের স্থায়ী উন্নয়নে পদক্ষেপ নিলে বাজার স্থিতিশীল হবে প্রত্যাশা অনেকের। 

এদিকে, নতুন সরকারের ক্ষমতা গ্রহণের পর থেকে পূঁজিবাজারে দুর্বল কোম্পানির দৌরাত্ম বেড়েই চলছে। অস্বাভাবিক হারে বাড়ছে শেয়ার দর। শিগগিরই এসব কোম্পানির শেয়ারদর বাড়ার কারণ খতিয়ে দেখতে হবে। নইলে আগামী বড় ধরণের বিপর্যয়ের মুখে পড়তে পারে পুঁজিবাজার। আর বাজারকে শক্তিশালী করতে দেশীয় ভালো কোম্পানি থেকে শুরু করে মাল্টি ন্যাশনাল কোম্পানিকে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্তির উদ্যোগ নিতে হবে। তবে ব্যাংকে তারল্য সঙ্কট দেখা দিলে পুঁজিবাজারে এর প্রভাব পড়বে। কারণ ব্যাংক পুঁজিবাজারের অন্যতম স্টেক হোল্ডার। বাজারের স্থিতিশীলতা ধরে রাখতে হলে সবচেয়ে বড় প্রয়োজন দুর্বল কোম্পানির কঠোর নজরদারি। কঠোর হতে হবে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)কে বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা।

এ বিষয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ও পুঁজিবাজার বিশ্লেষক অধ্যাপক আবু আহমেদ বলেন, ডিভিডেন্ড মৌসুম ও নির্বাচন পরবর্তী রাজনৈতিক স্থিতিশিলতার কারণে বাজারের এই উত্থান। তবে মূল বিষয় হচ্ছে বাংলাদেশের পুঁজিবাজার হচ্ছে বিনিয়োগকারী নির্ভর যার কারণে বিনিয়োগকারীরা ঝুকলে এর প্রভাব পড়ে। এই মূহুর্তের বাজারের যে অবস্থা অব্যাহত হবে বলে আমার মনে হয় না। কারণ গত কয়েক বছর ধরে এমন চিত্র চলছে। তবে দেশের অর্থনীতির আকার বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে পুঁজিবাজার যতটা শক্তিশালী হওয়ার কথা ততটা হয়নি। দেশের মিউচুয়্যাল ফান্ডের মার্কেটের উন্নতি হয়নি। এছাড়া সরকারি কোম্পানির শেয়ার পুঁজিবাজারে নিয়ে আসার কথা থাকলেও আসেনি। দেশীয় ভালো ভালো কোম্পানিসহ মাল্টি ন্যাশনাল কোম্পানিগুলোকে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত করার কথা থাকলেও করা হয়নি। আগের অর্থমন্ত্রী কিছুদিন এ বিষয়ে কথা বললেও পরবর্তীতে চুপ রয়েছে। এতে বাজার আগের ধারায় ফিরে যাওয়ার সম্ভাবনা বেশি। 

ডিএসই সূত্রে জানা গেছে, চলতি সপ্তাহের শেষ দুই কার্যদিবস ছাড়া অধিকাংশ কার্যদিবসে সূচক বেড়েছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের মুদ্রানীতি প্রণয়নের দিন এবং পরের দিন সূচকে বড় ধরণের পতন হয়েছে। দুদিনে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই)র সূচক কমেছে ১০৩ পয়েন্ট। এর আগে ডিএসইর এক্স সূচক ৫ হাজার ৩৮৫ পয়েন্ট থেকে বেড়ে ৫ হাজার ৮৬৩ পয়েন্টে উন্নীত হয়েছিল। 

অন্যদিকে সূচকের এই উত্থানের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বেড়েছে আর্থিক ও শেয়ার লেনদেন। কিন্তু বর্তমান বাজারে সবচেয়ে লক্ষণীয় বিষয় হলো জেড ক্যাটাগরির দুর্বল কোম্পানিগুলোর দৌরাত্ম বেড়েই চলেছে। জানুয়ারির শেষ সপ্তাহে ডিএসই ৫ কোম্পানিকে সতর্ক করেছে অস্বাভাবিকহারে শেয়ারদর বাড়ার কারণে। সতর্ক করা বিমা তিন কোম্পানি হলো- বাংলাদেশ ন্যাশনাল ইন্স্যুরেন্স কোম্পানি, কর্ণফুলী ইন্স্যুরেন্স, ইস্টার্ণ ইন্স্যুরেন্স। আর বাকী দুটির মধ্যে একটি টেক্সটাইল খাতের সায়হাম টেক্সটাইল মিলস অন্যটি বিডি ওয়েল্ডিং। অথচ জানুয়ারির আগে সাড়ে তিন মাসের একদিনও ডিএসইতে এক হাজার কোটি টাকার শেয়ার লেনদেন হয়নি। এর আগে ২০১৮ সালেও তেমন  কৌশলগত বিনিয়োগকারী ছাড়া তেমন কোনো উন্নতি হয়নি পুঁজিবাজারে।

এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক অর্থ উপদেষ্টা ও বাংলাদেশ সিকিউরিজি অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের সাবেক চেয়ারম্যান মির্জা এবি আজিজুল ইসলাম বলেন, এখন পর্যন্ত পুঁজিবাজারের অবস্থা ঝুঁকিপূর্ণ নয়। নির্বাচন পরবর্তী সময়ের রাজনৈতিক পরিবেশ স্থিতিশীল থাকায় বাজারে লেনদেন বাড়ছে। গত কয়েকদিন বাড়লেও গত দুদিন বাজার  কারেকশন হয়েছে। তবে লক্ষণীয় বিষয় হলো দুর্বল কোম্পানির শেয়ার দর বাড়ছে লাফিয়ে লাফিয়ে। এসব রোধ করতে হবে। এক্ষেত্রে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসইসির নজরদারি বাড়াতে হবে।  

পুঁজিবাজারের সার্বিক অবস্থা নিয়ে কথা হয় বাংলাদেশ ব্রোকারেজ অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি শাকিল রিজভীর সঙ্গে। তিনি বলেন, আমরা গত কয়েক যুগ ধরে দেখে আসছি নির্বাচন পরবর্তী সময়ে হরতালসহ রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা থাকে। এবার কিন্তু সেরকম কিছুই হয়নি। যার কারণে বিনিয়োগকারীরা পুঁজিবাজারের বিনিয়োগকারীদের আগ্রহ বাড়ছে। এছাড়া বর্তমান অর্থমন্ত্রী একজন চার্টার্ড  একাউনটেন্টস সে হিসেবে তিনি পুঁজিবাজারের বিষয়টি ভালভাবে জানেন এবং বুঝেন। তাই এই অর্থমন্ত্রীর কাছে আমাদের প্রত্যাশা অনেক বেশি। 

শাকিল রিজভী আরো বলেন, রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা বজায় থাকলে পুঁজিবাজারের স্থিতিশীলতা টেকসই হবে। তবে পুঁজিবাজারের স্থিতিশীলতার সঙ্গে ব্যাংকের সুদহারের একটা যোগ সাজোশ রয়েছে। ব্যাংকের তারল্য সঙ্কট তৈরি হলে সুদহার বাড়বে। সেক্ষেত্রে পুঁজিবাজারে এর প্রভাব পড়বে।

বিএস