• ঢাকা
  • শনিবার, ২৭ এপ্রিল, ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১
প্রকাশিত: এপ্রিল ৯, ২০১৯, ০৫:১৩ পিএম
সর্বশেষ আপডেট : এপ্রিল ৯, ২০১৯, ১১:৫৫ পিএম

জাতীয় পরিচয়পত্র 

বাণিজ্যের পথে হাঁটছে ইসি! 

বাণিজ্যের পথে হাঁটছে ইসি! 

 

বিনামূল্যে বিতরণের লক্ষ্য নিয়ে তৈরি ‘কাগুজে’ জাতীয় পরিচয়পত্র (এনআইডি) হারিয়ে বা নষ্ট হলে এখন আর বিনা খরচে পাওয়া যায় না। ২০১৫ সালে থেকেই এনআইডি হারালে বা নষ্ট হলে নির্ধারিত অর্থ জরিমানা দিয়ে তবেই তা মিলছে। 

হারানো বা নষ্ট হলে এনআইডি পেতে সাধারণভাবে ব্যয় করতে হয় ২৬৬ টাকা (ইসির নির্ধারিত ফি ২০০ টাকা, বাকিটা ব্যাংকিং চার্জ/ভ্যাট)। আর জরুরিভিত্তিতে তা পেতে গেলে ফি গুনতে হয় ৩৬৫ টাকা (ইসির নির্ধারিত ফি ৩০০ টাকা, বাকিটা ব্যাংকিং চার্জ/ভ্যাট)। তবে ইসির সবশেষ উদ্যোগ বাস্তবায়িত হলে নাগরিকদের নষ্ট বা হারানো এনআইডি তুলতে গুণতে হবে ৫০০ থেকে এক হাজার টাকা। এর মাধ্যমে এনআইডি নিয়ে অনেকটাই বাণিজ্যের পথে হাঁটতে চাইছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)।

জানা গেছে, ‘কাগুজে’ লেমিনেটিং এনআইডির পরিবর্তে ‘স্মার্টকার্ড’ বিতরণের লোভ দেখিয়ে এভাবে অর্থ আদায়ের পথে হাঁটছে ইসি। আগামীতে কারো এনআইডি হারিয়ে গেলে বা নষ্ট হলে তাকে ‘কাগুজে’ কার্ডের পরিবর্তে ‘স্মার্টকার্ড ’ দেয়া হবে- এ ধরনের বিধান রেখে জাতীয় পরিচয়পত্র নিবন্ধন অনুবিভাগ (এনআইডি) একটা প্রস্তাব তৈরি করেছে। দফাওয়ারি সংশোধনে ৫০০ থেকে ১ হাজার টাকা পর্যন্ত গুনতে হবে গ্রাহককে। 

এই ফর্মুলাতে স্মার্টকাডের পরিবর্তে আগামীতে কাগুজে মুদ্রিত লেমিনেটেড কার্ড নয়; নাগরিকরা আরেকটি স্মাটকার্ড পাবেন। এক্ষেত্রে হারালে, নষ্ট হলে, সংশোধনেও ওই বিধানটি কার্যকর হবে। জানতে চাইলে নির্বাচন কমিশনের সচিব হেলালুদ্দীন আহমেদ বলেন, বিষয়টি এখনো আমার নজরে আসেনি। আমি নীতি-নির্ধারণী পর্যায়ের সিদ্ধান্তের সঙ্গে সম্পৃক্ত হই। আপনি এনআইডির ডিজি এবং পরিচালক অপারেশনের সঙ্গে এ বিষয়ে কথা বলে অবহিত হতে পারেন। 

নিবন্ধন অনুবিভাগের ডিজি ও স্মাটকার্ড প্রকল্পের প্রকল্প পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মোহাম্মদ সাইদুল ইসলামের কাছে জানতে চাইলে তিনি বিষয়টি প্রথমে এড়িয়ে যান। পরে স্মার্টকার্ড হারালে, নষ্ট হলে বা সংশোধনে ফি নির্ধারণের বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করলে তিনি বলেন, এটা প্রাথমিক স্তরে আছে, এখনো বলার মতো সময় আসেনি। 

ইসি ও এনআইডির দায়িত্বশীল সূত্র জানায়, জাতীয় পরিচয়পত্র, ভোটার তালিকা এবং নির্বাচনী ব্যবস্থাপনায় তথ্য প্রযুক্তির প্রয়োগ সংক্রান্ত কমিটির এক সভার কার্যবিবরণীতে স্মার্টকার্ড বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয়। সেখানে স্মার্টকার্ড হারালে, নষ্ট হলে ও কিংবা সংশোধনের ক্ষেত্রে ফি’র বিনিময়ে আরেকটি স্মার্টকার্ড গ্রাহককে দেয়ার যায় কিনা তা নিয়ে বিস্তারিত আলোচন হয়। ওই সভাতে, বিদ্যমান লেমিনেটেড কার্ডটি হারালে, সংশোধন ও নষ্ট হলে কি পদ্ধতি অনুসরণ করা হচ্ছে সেটিকে সামনে আনা হয়। 

বিদ্যমান একটি সাধারণ প্লাস্টিকের কার্ড ভুলের কারণে সংশোধনের প্রয়োজন হলে গ্রাহকরা কত টাকা ফি দেন তা উল্লেখ করা হয়; যার মধ্যে লেমিনেটেড কার্ড সংশোধনের পর নতুন আরেকটি কার্ড পেতে গ্রাহককে প্রথম সংশোধনে ২০০ টাকা, দ্বিতীয় বার ৩০০ টাকা এবং তৃতীয়বার বা পরবর্তী সময়ে যতবার এ প্রক্রিয়ায় যুক্ত হবেন তাকে প্রতিবারে দিতে হচ্ছে ৪০০ টাকা। লেমিনেটেড কার্ডের নিয়মের আলোকে স্মার্টকার্ডের ফি বা চার্জ নির্ধারণ হয় যথাক্রমে ৫০০ টাকা, ৭৫০ টাকা ও ১ হাজার টাকা। 

কমিশন ও এনআইডির তথ্যমতে, এই প্রস্তাবটি এখনো প্রাথমিক অবস্থায় আছে। কমিশনের গ্রিন সিগনাল পেলে প্রস্তাব কমিশন সভায় উত্থাপন করা হবে। 

একাধিক কর্মকর্তার সঙ্গে আলাপে জানা গেছে, স্মার্টকার্ড একটি দুর্লভ ও নাগরিকের পরিচয় নিশ্চিতে খুবই কার্যকরী একটি বস্তু। কিন্তু এরই মধ্যে যারা এ দুর্লভ কার্ডটি হাতে পেয়েছেন তার শতকরা ৫ শতাংশ নাগরিকই ভুল তথ্য সংবলিত কার্ড পেয়েছেন। অথচ অনেকে এই কার্ডটি পাওয়ার আগে বিদ্যমান সাধারণ জাতীয় পরিচয়ের ভুলটি সংশোধন করেছিলেন। 

দেখা গেছে, কার্ড হাতে পেয়েই অনেকের চোখ ছানাবড়া হয়েছে। কারণ এটি পাওয়ার আগে তিনি ভুলটি সংশোধন করেছিলেন। পর দৈনন্দিন কার্য-নির্বাহের জন্য সংশোধিত কার্ড উঠালেও তা তিনি স্মার্টকার্ডের পরিবর্তে সাধারণ লেমিনেটেড কার্ড পান। ইসির এই ভুলের জন্য গ্রাহককে মাশুল গুনতে হয়েছে। একই সঙ্গে পরবর্তী সময়ে দুর্লভ এই কার্ডটি অকার্যকর হওয়ার কারণে তার ঠিকানা হয়েছে হিমঘরে। এসব বিবেচনায় সংশোধিত স্মাটকার্ডের পরিবর্তে আরেকটি স্মাটকার্ড দেয়া যায় কিনা কিংবা কোন প্রক্রিয়া অনুসরণ করলে দুর্লভ এই বস্তুটির ব্যবহার সহজলভ্য হবে, এসব চিন্তা থেকে ফি নির্ধারণের বিষয়ে ঐক্যমতে পৌঁচ্ছে ইসি। 

প্রসঙ্গত, বিদ্যমান সাধারণ আইডি কার্ড নবায়ন থেকে শুরু করে সংশোধন আকার ভেদে ১০০ থেকে ১০০০ টাকা পর্যন্ত নির্ধারণ আছে। যার মধ্যে পরিচয়পত্র নবায়ন ফি ১০০ টাকা, জরুরি নবায়নে ১৫০ টাকা, কার্ড হারালে বা নষ্ট হলে স্বাভাবিক প্রয়োজনে প্রথমবার ২০০ টাকা, জরুরি আবেদনে ৩০০ টাকা, দ্বিতীয় বার সংশোধনে সাধারণ ৩০০ টাকা, জরুরি ৫০০ টাকা এবং পরবর্তী সময়ে যে কোনো আবেদনে জরুরি পেতে গুনতে হয় ১ হাজার টাকা। এছাড়া পরিচয়পত্র সংশোধনের ফি প্রথমবার ২০০, দ্বিতীয়বার ৩০০ ও পরে প্রতিবারই ৪০০ টাকা করে দিতে হয়। পরিচয়পত্রের তথ্য সংশোধনে প্রথমবার ১০০, দ্বিতীয়বার ২০০ ও পরের যে কোনোবার ৩০০ টাকা করে দিতে হচ্ছে। 

এর আগে ২০০৮ সালে ছবিসহ ভোটার তালিকা তৈরির পর থেকে বিনামূল্যে এ সেবা দিয়ে আসছিল ইসির এনআইডি অনুবিভাগ। পরে ২০১৫ সালে এসে সাধারণ জাতীয় পরিচয়পত্রের উপরোক্ত ফি নির্ধারণ করে কমিশন। দেশে বর্তমানে ১০ কোটি ৪২ লাখ ভোটারের তথ্য সংরক্ষিত রয়েছে ইসির তথ্যভাণ্ডারে। বর্তমানে যে লেমিনেটিং করা ম্যানুয়াল কার্ড দেয়া হয়েছে, তার মেয়াদ ১৫ বছর। তবে চলমান স্মার্টকার্ডের মেয়াদ হচ্ছে ১০ বছর। ফলে আগামী ১০ বছর পর এই কার্ড নবায়ন করতে হবে সবাইকে। তখন সবাইকে নবায়ন ফি গুণতে হবে। 


এইচএস/টিএফ