• ঢাকা
  • শনিবার, ২৭ এপ্রিল, ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১
প্রকাশিত: জুলাই ১০, ২০১৯, ০৮:২০ পিএম
সর্বশেষ আপডেট : জুলাই ১০, ২০১৯, ০৮:২০ পিএম

আইইবি’র সেমিনারে বক্তারা

জলবায়ু পরিবর্তনের কারণেই উপকূলে বাড়ছে লবণাক্ততা

জলবায়ু পরিবর্তনের কারণেই উপকূলে বাড়ছে লবণাক্ততা

 

জলবায়ু পরিবর্তন, নদী ভাঙ্গণের কারণে উপকূলীবর্তী অঞ্চলগুলোতে লবণাক্ততা বাড়ছে। মিঠা পানির অভাবে উপকূলীয় অঞ্চলগুলোতে ধান চাষ কমে যাচ্ছে। আবার অনেক কৃষক ফসলের বদলে চিংড়ি অথবা সামুদ্রিক মাছ চাষ করছে। তবে বর্তমান সরকার খাদ্য নিরাপত্তা ও টেকসই কৃষি উন্নয়নের নিশ্চিত করে জাতিসংঘ ঘোষিত টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (এসডিজি) অর্জনের জন্য বদ্ধপরিকর।

আজ বুধবার (১০ জুলাই) ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন, বাংলাদেশ (আইইবি)-এর কৃষিকৌশল বিভাগের উদ্যোগে ‘বাংলাদেশের লবণাক্ত উপকূলীয় অঞ্চলের মাটির উপরিভাগে চাষ যোগ্য ফসলের জন্য পানি সংরক্ষণের সেচ প্রযুক্তির উন্নয়নও অভিযোজন’ শীর্ষক সেমিনারে বক্তারা এসব কথা বলেন। এতে প্রধান অতিথি ছিলেন, আইইবি’র প্রেসিডেন্ট প্রকৌশলী আবদুস সবুর। অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন, বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা কাউন্সিলের পরিচালক সদস্য (এনআরএম) প্রকৌশলী ড. সুলতান আহম্মেদ।

সেমিনারে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন বিএআরআই-এর বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা প্রকৌশলী ড. খোকন কুমার সরকার। এছাড়া আলোচক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন, বিএআরআই-এর সাবেক পরিচালক (গবেষণা) এবং বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা কাউন্সিলের এনএটিপি প্রকল্পের কনসালটেন্ট প্রকৌশলী ড. সিরাজুল ইসলাম। অনুষ্ঠানে আইইবি কৃষিকৌশল বিভাগের সম্পাদক প্রকৌশলী মো.শফিকুল ইসলাম শেখ (শফিক)-এর সঞ্চালনায় সভাপতিত্ব করেন বিভাগের চেয়ারম্যান প্রকৌশলী আবুল কাশেম মিয়া।

বক্তারা বলেন, জলবায়ু পরিবর্তন ও বিশ্বের তাপমাত্রা বৃদ্ধি এখন মানবসভ্যতার প্রতি বিশ্বের অন্য যে কোনো সময়ের তুলনায় বড় হুমকি। আর জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে সর্বোচ্চ ঝুঁকির মুখে থাকা দেশগুলোর একটি বাংলাদেশ। জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে বাংলাদেশের উপকূলবর্তী এলাকাগুলো।

সেসব এলকায় সমুদ্রের পানির উচ্চতা বৃদ্ধির ফলে লোনা পানি বেড়ে যাচ্ছে। ফলে মিঠা পানি কমে যাওয়ায় অনেকে বাধ্য হচ্ছে কৃষিতে পরিবর্তন আনতে। লবণাক্ততা সহ্য করতে পারে এমন প্রজাতির ধান চাষ করছে, অনেকে ধান ছেড়ে চিংড়ি চাষ করছে, কোথাও বা বৃষ্টির পানি ধরে রাখা হচ্ছে। বক্তারা আরো বলেন, জলবায়ু পরিবর্তনজনিত নানা প্রতিকূলতা ও সীমাবদ্ধতা মোকাবেলা করে বাংলাদেশে কৃষির জন্য দূর্যোগপ্রবণ এলাকা তথা হাওর ও উপকূলীয় এলাকার চাষযোগ্য জমিকে উৎপাদন উপযোগী করে ফসল উৎপাদন বৃদ্ধি করে এসডিজির লক্ষ্যমাত্রা পূরনে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখবে।

সে লক্ষ্যে সরকার লবণাক্ত এলাকার উপযোগী লবণ ও খরা সহিষ্ণু জাত উদ্ভাবনে কৃষির গবেষণা প্রতিষ্ঠানগুলোকে যথেষ্ট সুযোগ সুবিধা দিয়ে যাচ্ছেন। উপকূলের উপযোগী ফসলের জাত গবেষণার জন্য গবেষণা প্রতিষ্ঠানসমুহ কাজ করে যাচ্ছে। পাশপাশি লবনাক্ত পানি চাষের অনুপযোগী হওয়ায় উপকূলীয় এলাকায় প্রাপ্ত ভূ-পৃষ্ঠস্থ ও বৃষ্টির পানি সংরক্ষণ করে আধুরিক কলাকৌশলের মাধ্যমে সেচ পদ্ধতি অনুসরণ করা পূর্বক শস্য উৎপাদন করা সম্ভব হচ্ছে।

বিভিন্ন আধুনিক প্রযুক্তি যেমন, রিমোট সেনসিং, প্রিপেইড মিটারিং, সেন্সর ইত্যাদি আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করে শস্যে পরিমাপমত সেচ দেয়া এখন সময়ের দাবি। ইতিমধ্যে বিএডিসি, বিএমডিএ ও ডিএইতে কর্মরত কৃষি প্রকৌশলীগণ বেশকিছু পানি সাশ্রয়ী আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করছে।

বক্তারা বলেন, দূর্যোগপূর্ণ এলাকায় ফসল উৎপাদন সচল রাখতে কৃষি প্রকৌশলী/গবেষকরা তাদের মেধা জ্ঞান ও দক্ষতা দিয়ে পানি সাশ্রয়ী টেকনোলজি উদ্ভাবন ও সম্প্রসারণ করে অত্যান্ত সফলতার সাথে কৃষির ফসল উৎপাদন ব্যবস্থায় অবদান রেখে চলেছে। এসডিজি-২ এবং এসডিজি-৬ এর লক্ষ্যমাত্রা হলো ২০৩০ এর মধ্যে গ্রহণযোগ্য কৃষি ব্যবস্থাপনা উন্নয়নের মাধ্যমে উৎপাদন বৃদ্ধি ও টেকসই করা সেই সাথে পরিমিত পরিমান পানির ব্যবহার নিশ্চিত করা।

একইভাবে বিশ্বের প্রায়ই ৪০ ভাগ মানুষের সুপীয় পানীর যে সমস্যা রয়েছে তাকে একটি মাত্রা পর্যন্ত নামিয়ে আনা। উপকূলীয় এলাকায় এই ধরনের গবেষণা সেসব এলাকায় বসবাসকারী মানুষের ফসল উৎপাদন থেকে শুরু করে খাবার পানি ও গৃহস্থালীসহ অন্যান্য কাজে সুপীয় পানির যে সংকট রয়েছে তা অনেকাংশই কমিয়ে আনবে।

টিএইচ/এসজেড