• ঢাকা
  • বুধবার, ০৮ মে, ২০২৪, ২৪ বৈশাখ ১৪৩১
প্রকাশিত: এপ্রিল ৭, ২০১৯, ০৩:৩২ পিএম
সর্বশেষ আপডেট : এপ্রিল ১৩, ২০১৯, ০৮:৪৬ পিএম

আসছে পহেলা বৈশাখ

নারীর সাজে হাতভর্তি চুড়ি

নারীর সাজে হাতভর্তি চুড়ি
চারুকলা অনুষদের বিপরীত দিকের ফুটপাতে প্রতিদিনই বসে চুড়ির হাট- কাশেম হারুন

পহেলা বৈশাখকে ঘিরে বাঙালি নারীর লোকজ সাজের সাথে যুক্ত আছে ‘চুড়ি’। আর চুড়ির যুক্ত হচ্ছে অন্যান্য সাজের উপাচারের সঙ্গে। পোশাকের সাথে গহনার মিথষ্ক্রিয়া নারীর সাজকে আরও বাঙময় করে তোলে। তাই অন্যান্য পোশাকের সাথে রঙ মিলিয়ে চলছে চুড়ি কেনার ধুম।

হাতভর্তি চুড়ির ওঠা-নামার শব্দ এক রোমান্টিকতার সৃষ্টি করে। নারীর সাজে রোমান্টিকতা থাকবে এটাই আসল কথা। এখন পহেলা বৈশাখকে ঘিরে চলছে রেশমি চুড়িসহ নানা রকমের চুড়ি কেনার ধুম। বৈশাখ উদযাপনে হাতভর্তি চুড়ি নিয়ে সেজে-গুজে কে কিভাবে যাবে তার অন্তর্গত প্রতিযোগিতা চলছে তো চলছেই। 

বৈশাখি সাজের অন্যতম রোমান্টিক উপকরণ চুড়ি। ইংরেজিতে চুড়িকে বলা হয় ‘ব্যাঙ্গেল’। এ শব্দটির উৎপত্তি বাঙালি থেকে। বাঙালিরাই চুড়ি ব্যবহারে স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করে। চুড়িকে ঘিরে একটা রোমান্টিকতা বাঙালি সমাজে প্রচলিত রয়েছে। কী পহেলা বৈশাখ, কী পহেলা ফাল্গুনে বসন্ত উৎসবে কিংবা ঈদ-পূজা পার্বণ বা ভালোবাসা দিবস যাই হোক, সব পোশাকের সঙ্গে নারীর চাই চুড়ি। তবে পহেলা ফাল্গুনে বসন্ত বরণ ও পহেলা বৈশাখে বর্ষবরণ উৎসবে কাঁচের চুড়ি তো চাই-ই চাই। এটা বাঙালির এক ঐতিহ্যমণ্ডিত সজ্জা।

সাহিত্যেও রয়েছে চুড়ির বন্দনা। জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের কবিতাতেও এসেছে চুড়ি সরবভাবে। ‘আমি চপল মেয়ের ভালোবাসা,/তার কাঁকন চুড়ির কনকন’—নজরুলের প্রেমময় এ বাণী কে না জানে? 

সাজের মধ্যে চুড়ির আলাদা একটি বিষয় রয়েছে। সামন্তযুগে জমিদারপত্নীর ঘরে অবস্থান নির্ণয় করতো তার হাতভরা চুড়ির শব্দ। এমনকি গ্রামে-গঞ্জে মানে মফস্বল এলাকাতেও চুড়ির কদর উৎসব ছাড়াও বিয়েতে প্রচলন ছিল। তখন বিয়ের আগে ছেলে-মেয়ের মধ্যে কথা বলা তো দূরের কথা, দূর থেকে দেখা হওয়ারও কোনও ব্যবস্থা ছিলো না। বিয়ের পরে বাসর ঘর পর্যন্ত আত্মীয়-স্বজনরা চিন্তায় থাকতো ছেলে-মেয়ের মধ্যে পছন্দের বিষয়টি আছে কি না। বাসর ঘরের চারপাশে আত্মীয়-স্বজন ভিড় করতেন নববধূর চুড়ির বিশেষ শব্দ শোনার জন্য। 

লুপ্ত ‘বাঈজী’ সংস্কৃতিতেও চুড়ির শব্দ নৃত্য-গীতের সাথে অনুরণন তুলতো। 

প্রাচীনকাল থেকেই চুড়ির ব্যবহার ছিলো। এখন থেকে প্রায় পাঁচ হাজার বছর আগে মহেঞ্জদারো সভ্যতায় নৃত্যরত বালিকার মূর্তিতে চুড়ি দেখা গেছে। তার মানে সৌন্দর্য চর্চায় চুড়ি যুগ যুগ ধরে যে বাঙালি ললনার সৌন্দর্যকে বাড়াতে সাহায্য করছে, তার হিসাব করা মুশকিল। তবে ধাতব যুগ পেরিয়ে জনপ্রিয় রেশমি চুড়ির ইতিহাস প্রায় ১০০ বছর আগের। তখন সম্ভ্রান্ত জমিদার ও নবাব পরিবারে নারীদের হাতে রেশমি চুড়ি থাকাটা ছিল অবধারিত। এখনও সেই রেশমি চুড়ির ছন্দময় শব্দ আমাদের মনকে দোলা দিয়ে যায়। নতুন প্রজন্মের কাছেও রেশমি চুড়ির রয়েছে একই সমাদর। শাড়ি বা সালোয়ার কামিজ, টপস বা কুর্তির সঙ্গে এ চুড়ি সহজেই মানিয়ে যায়। ফ্যাশনসচেতন তরুণীরা পোশাকের সঙ্গে মিলিয়ে নানান ঢঙে পরছেন নকশা করা কাঁচের চুড়ি। 

বাঙালি মেয়েদের উৎসব মানেই শাড়ি, কপালে টিপ আর হাতভর্তি চুড়ি। যে কোনো উৎসবে তাই চুড়ির জনপ্রিয়তা বরাবরই বেশি। বাঙালি নারীর পরনে তাঁতের শাড়ি, খোঁপায় ফুল আর দুহাতভর্তি কাঁচের রেশমি চুড়ি। যে চুড়ি-কন্যার চলনের সঙ্গে সঙ্গে তার চঞ্চলতাকে প্রকাশ করবে রিনিঝিনি শব্দের মধ্য দিয়ে। যে আওয়াজে ছন্দ উঠবে তার সারা বাড়ি, সারা আঙিনা। গৃহবধূ হলে মনকে করবে উতলা। বারবারই ফিরে ফিরে তাকে দেখার সাধ জাগবে মনে।

চুড়ি যারা পড়েন তাদের কাছে রঙ একটি বিষয়। প্রতিটি রঙেরে ভেতর লুকিয়ে আছে এক একটি অর্থ। সেগুলো তরুণীরা ছাড়া কেউ জানে না। যেমন- ‘‘লাল’’ চুড়ির আবেদন হলো- ভালোবাসা। ‘নীল’’ চুড়ি- জ্ঞান। ‘‘বেগুনি’ চুড়ি- স্বাধীনতা। ‘‘সবুজ’’ চুড়ি- বিবাহিত। ‘‘হলুদ’’ চুড়ি- সুখী। ‘‘কমলা’’ চুড়ি- সাফল্য। ‘‘সাদা’’ চুড়ি- নতুন করে শুরু করা। ‘‘কালো’’ চুড়ি- শক্তি। ‘‘রূপালি’’ চুড়ি- তেজ আর ‘‘সোনালি’’ চুড়ি হলো সৌভাগ্যের প্রতীক। 

বাঙালির এ চুড়ির ইতিহাস দীর্ঘদিনের। আগে চুড়ি বাক্সভরে নিয়ে বাড়ি বাড়ি যেতেন ফেরিওয়ালারা। এখন আর তেমন চোখে পড়ে না সেসব দৃশ্য। ওসব ফেরিওয়ালার চুড়ি পরানোরও একটা বিশেষ টেকনিক আয়ত্ত করেছিলেন।

এখন কাঁচের রেশমি চুড়ি হাতের নাগালে। নামও বাহারি। বাজারমূল্যও সহনশীল। প্রতি ডজন ৩০ থেকে ৮০ টাকার মধ্যে মিলবে। পাওয়া যাবে- ঢাকার চকবাজার, নিউমার্কেট, গাউছিয়া, চাঁদনি চক, মৌচাক, আনারকলি, ইর্স্টান প্লাজা, বসুন্ধরা সিটি, যমুনা ‍ফিউচার পার্ক, ফার্মগেট, আজিমপুর, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসি, চারুকলা অনুষদ ও ইডেন কলেজের সামনেও। এছাড়াও যে কোনো গ্রোসারি দোকানে খুঁজলেও পাওয়া যাবে রেশমি চুড়ি। আর যে কোন মেলায় চুড়ির অনিবার্যতাতো থাকছেই।

ছবি : কাশেম হারুন

ডিজি/এসএমএম