• ঢাকা
  • রবিবার, ২৮ এপ্রিল, ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১
প্রকাশিত: মে ১৫, ২০২০, ১২:৫৭ পিএম
সর্বশেষ আপডেট : মে ১৫, ২০২০, ১২:৫৭ পিএম

মৃত্যুর হার বেড়েছে দ্বিগুণ

দেশে দ্বিতীয় দফায় সংক্রমণ শুরু

দেশে দ্বিতীয় দফায় সংক্রমণ শুরু

দেশে প্রথম করোনাভাইরাস সংক্রমণের ফলে সৃষ্ট কোভিড-১৯ রোগে আক্রান্ত ব্যক্তি শনাক্ত হয় ৮ মার্চ। এরপর নয় সপ্তাহ ধরে এই ভাইরাসে আক্রান্ত ও মৃতের সংখ্যা ক্রমেই বেড়ে চলেছে। ১০ মে শুরু হয়েছে সংক্রমণের দশম সপ্তাহ। নবম সপ্তাহে (৩ থেকে ৯ মে) দেশে করোনায় আক্রান্ত হয়ে মৃত্যু হয় ৩৯ জনের। দশম সপ্তাহ (১০ থেকে ১৬ মে) শেষ হতে এখনো একদিন বাকি। এই ৬ দিনে মৃত্যুর হার বেড়ে দ্বিগুণ হয়েছে। এ সময়ে মৃত্যু হয়েছে ৬৯ জনের। মৃতের সংখ্যা দিনকে দিন বেড়ে যাওয়ার কারণ হিসাবে স্বাস্থ্য খাতের অবস্থাপনাকেই দায়ী করছেন বিশেষজ্ঞরা।

এরই মধ্যে প্রথম বার আক্রান্ত হয়ে সুস্থ হয়ে ওঠার পরও আবারো করোনা ভাইরাসে সংক্রমিত হয়েছেন কেউ কেউ। যার প্রমাণ অনেক আগেই মিলেছে। রোগতত্ত্ববিদ ও জনস্বাস্থ্যবিদরা বলছেন, নমুনা পরীক্ষার ব্যপ্তি ছড়িয়ে পড়া, সব তথ্য সঠিকভাবে না আসায় এখনো পর্যন্ত আবারো সংক্রমিতের সংখ্যা কত তা বলা যাচ্ছে না। তবে আবারো সংক্রমিত হয়েছেন এমন মানুষের সংখ্যা খুব বেশি না হলেও বিষয়টি ভাবিয়ে তুলেছে তাদের।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্য মতে, দেশে করোনায় আক্রান্ত হয়ে প্রথম মৃত্যু হয় ১৮ মার্চ। ওই দিন মৃত্যু হয়েছিল সত্তরোর্ধ্ব একজনের। ২৮ দিনের ব্যবধানে ১৫ এপ্রিল মৃতের সংখ্যা পৌঁছায় ৫০-এ। মাত্র পাঁচ দিনের ব্যবধানে ২০ এপ্রিল মৃতের সংখ্যা দ্বিগুণ বেড়ে শতকের ঘর ছোঁয়। মোট মৃতের সংখ্যা হয় ১০১। সাত দিনের ব্যবধানে ২৭ এপ্রিল দেড়শ’র ঘরে দাঁড়ায় মৃতের সংখ্যা। প্রাণহানি হয় ১৫২ জনের। ৮ মে দুইশ’র ঘর পেরিয়ে মোট ২০৬ জনের প্রাণহানি হয়েছে বলে জানায় স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। আর চার দিনের ব্যবধানে ১২ মে ২৫০ জনের মৃত্যুর হয়। গতকাল ১৪ মে পর্যন্ত মৃতের তালিকায় নাম উঠেছে মোট ২৮৩ জনের।

সপ্তাহের হিসাবে আক্রান্তের তথ্য বিশ্লেষণ করলে দেখা যায়, প্রথম সপ্তাহে (৮ থেকে ১৪ মার্চ) করোনা আক্রান্তের সংখ্যা ছিল তিনজন। দ্বিতীয় সপ্তাহে (১৫ থেকে ২১ মার্চ) তা ৮ গুণ বেড়ে আক্রান্তের সংখ্যা দাঁড়ায় ২৪ জনে। তৃতীয় সপ্তাহে (২২ থেকে ২৮) তা দ্বিগুণ বেড়ে হয় ৪৮ জনে। চতুর্থ সপ্তাহে (২৯ মার্চ থেকে ৪ এপ্রিল) নতুন করে ২২ জন সংক্রমিত হয়ে মোট আক্রান্তের সংখ্যা দাঁড়ায় ৭০ জনে। পঞ্চম সপ্তাহে (৫ থেকে ১১ এপ্রিল) শনাক্ত হয় ৪১২ জন। ষষ্ঠ সপ্তাহে (১২ থেকে ১৮ এপ্রিল) ১ হাজার ৬৬২ জন নতুন শনাক্ত হয়। আর আক্রান্তের সংখ্যা বেড়ে হয় দুই হাজার ১৪৪ জনে। সপ্তম সপ্তাহে (১৯ থেকে ২৫ এপ্রিল) শনাক্ত হন দুই হাজার ৮৫৪ জন।

অষ্টম সপ্তাহে (২৬ এপ্রিল থেকে ২ মে) ৩ হাজার ৭৯২ জন। নবম সপ্তাহে (৩ থেকে ৯ মে) দেশে নতুন করে করোনা ভাইরাসে সংক্রমিত হয়েছে চার হাজার ৯৮০ জন। দশম সপ্তাহের (১০ থেকে ১৬ মে) পাঁচ দিনে নতুন করে সংক্রমিত রোগী শনাক্ত হয়েছে ৫ হাজার ৯৬ জন। মৃতের সংখ্যা কেন দ্রুত বাড়ছে এ প্রসঙ্গে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য ও বিশিষ্ট রোগতত্ত্ববিদ অধ্যাপক ডা. নজরুল ইসলাম বলেন, আমাদের দেশে সংক্রমণ বেড়েছে, সেই সঙ্গে মৃত্যুও। আমি বলব এই মৃত্যুর সংখ্যা বাড়ার অন্যতম কারণ হলো চিকিৎসা ব্যবস্থার অব্যবস্থাপনা। দেশের চিকিৎসাব্যবস্থা ভালো হলে এই মৃত্যুগুলো আমরা ঠেকাতে পারতাম। হাসপাতালগুলোর অব্যবস্থাপনা যে কতটা তা মিডিয়াতে এবং যারা সেখানে চিকিৎসা নিয়েছেন তাদের মাধ্যমেই ফুটে উঠছে।

জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ডা. চিন্ময় দাসও মনে করেন স্বাস্থ্যব্যবস্থার অব্যস্থাপনার কারণে দেশে মৃত্যুর সংখ্যা বাড়ছে। তিনি বলেন, আমাদের দেশে মৃত্যুর হার এক দশমিক ৫। এটি যে খুব বেশি তা নয়। কিন্তু স্বাস্থ্য খাতের সমন্বয়হীনতায় এ সংখ্যা বাড়ছে। স্বাস্থ্য ব্যবস্থাকে এখন আমরা কোভিড-১৯ নির্ভরশীল করে ফেলছি। সনদ ছাড়া হাসপাতালগুলোতে রোগী ভর্তি হতে পারছে না। স্বাস্থ্য বিভাগ থেকে নির্দেশনা আসার পরও তা অনেকে মানছে না। এমন অবস্থায় রোগীর দুর্ভোগ বাড়ছে। অনেকে চিকিৎসা না পেয়ে মারা যাচ্ছে। আর মৃত্যুর পর কারো নমুনা পরীক্ষায় জানা যাচ্ছে তিনি করোনায় আক্রান্ত ছিলেন। আবার কারো ক্ষেত্রে তা নেগেটিভ আসছে। এই বিশৃঙ্খল অবস্থা যতদিন শৃঙ্খলার মধ্যে আনা না যাবে পরিস্থিতি ভালো হবে বলে মনে হয় না।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা ও রোগতত্ত্ববিদ বলেন, দুই মাসের বেশি সময় পেরিয়ে গেলেও করোনা পরিস্থিতি মোকাবিলায় আমরা এখনো গুছিয়ে কাজ করতে পারিনি। নমুনা পরীক্ষা এখনো পর্যন্ত সব হাসপাতালে করা সম্ভব হয়নি। ফলে টেস্ট হচ্ছে এক জায়গায়। আর চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে আরেক জায়গায়। প্রথম থেকেই যদি সুযোগটাকে কাজে লাগানো যেত, বিশেষজ্ঞদের এই কাজের সঙ্গে সম্পৃক্ত করা যেত- তাহলে এত মানুষ সংক্রমিত হতো না। মৃত্যুও অনেক কম হতো।

সীমিত হলেও দ্বিতীয় দফায় করোনায় সংক্রমণ শুরু : জাতীয় রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (আইইডিসিআর) তথ্য অনুযায়ী, এ পর্যন্ত ছয়জনের দেহে দ্বিতীয়বার করোনায় সংক্রমণের প্রমাণ মিলেছে। এর মধ্যে মাদারীপুরের চারজন। এপ্রিলের শেষের দিকে বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থা জানায়, একবার আক্রান্ত হয়ে সুস্থ হয়ে ওঠার পর দ্বিতীয়বার আবার কেউ এই ভাইরাসে আক্রান্ত হয়নি কিংবা হবে না এমন কোনো প্রমাণ এখনো পর্যন্ত পাওয়া যায়নি। চীন, জাপান, দক্ষিণ কোরিয়ায় একই ব্যক্তির দ্বিতীয়বার আক্রান্ত হয়েছেন এমন প্রমাণও মিলেছে। তবে বিশেষজ্ঞদের কেউ কেউ বলছেন, একজন মানুষ দ্বিতীয়বার করোনায় আক্রান্ত হওয়ার কোনো সম্ভাবনাই নেই। তাদের দাবি পরীক্ষায় ত্রুটির কারণেই দ্বিতীয়বার করোনায় আক্রান্ত হওয়ার কথা শোনা যাচ্ছে।

ঢাকা মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষ ও বিখ্যাত মেডিসিন বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ডা. খান আবুল কালাম আজাদ বলেন, দেশে আবারো সংক্রমণ কতটা হয়েছে তা এখনই বলা যাচ্ছে না। কারণ সেই পরিমাণ তথ্য আমাদের কাছে নেই। এ বিষয়ে শেষ কথা বলার সময় এখনো আসেনি। আমাদের অপেক্ষা করতেই হবে।

আইইডিসিআরের উপদেষ্টা ও সাবেক বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ডা. মোস্তাক হোসেন বলেন, ভাইরাসটি এখন নতুন অবস্থায় থাকায় এর গতি প্রকৃতি সম্পর্কে সবকিছু জানা যাচ্ছে না। সংখ্যাটা কম হলেও দেশে ছয়জনের শরীরে আবারো করোনা ভাইরাসের অস্তিত্ব পাওয়া গেছে। তবুও আমাদের সতর্ক হতে হবে। এখনই হুট করে কিছু বলা যাবে না।

এওয়াই/এসকে

আরও পড়ুন