• ঢাকা
  • শনিবার, ২৭ এপ্রিল, ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১
প্রকাশিত: নভেম্বর ১০, ২০১৯, ০৯:৪৩ পিএম
সর্বশেষ আপডেট : নভেম্বর ১০, ২০১৯, ০৯:৫৩ পিএম

ঘূর্ণিঝড় বুলবুলের তাণ্ডব

১৬ জেলায় ২ লাখ ৮৯ হাজার হেক্টর জমির ফসল ক্ষতিগ্রস্ত

১৬ জেলায় ২ লাখ ৮৯ হাজার হেক্টর জমির ফসল ক্ষতিগ্রস্ত
বুলবুলের তাণ্ডবে ব্যাপক রবিশস্য ক্ষতিগ্রস্ত হয়

ঘূর্ণিঝড় বুলবুলের প্রভাবে দেশের ১৬ জেলায় ২ লাখ ৮৯ হাজার ৬ হেক্টর জমির ফসল আক্রান্ত হয়েছে বলে জানিয়েছে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর। এর মধ্যে ৫ থেকে ১০ শতাংশ জমির ফসল ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।

রোববার (১০ নভেম্বর) বিকেলে এক ব্রিফিংয়ে অধিদফতর সরেজমিন উইংয়ের পরিচালক কৃষিবিদ চণ্ডীদাস কুণ্ডু এ তথ্য জানান।

তিনি বলেন, ফুলগুলোতে আঘাতের কারণে আমাদের ১৬টি জেলায় ১৮টি ফসল আক্রান্ত হয়েছে। ১৮ লাখ ৫৩ হাজার ৬৯৩ হেক্টর দাঁড়ানো ফসল, এর মধ্যে আমরা দরে নিচ্ছি ১৫ শতাংশ ফসল আক্রান্ত হয়েছে ২ লাখ ৮৯ হাজার হেক্টর জমি। 

আশা করছি, ১ কোটি ৫৩ লাখ মেট্রিক টন চালের উৎপাদন পাবো। সেক্ষেত্রে ক্ষতি হলেও আমাদের ব্যবস্থাপনায় দশমিক ০০১ শতাংশ ক্ষতি হবে। 

ঝূর্ণিঝড় বুলবুলের তাণ্ডবে দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের উপকূলীয় জেলাগুলোতে উপড়ে গেছে বহু গাছ ও বিধ্বস্ত হয়েছে বহু কাঁচা ঘরবাড়ি। 

দৈনিক জাগরণ এর সংবাদদাতাদের পাঠানো খবর-

সাতক্ষীরা সংবাদদাতা জানায়, শ্যামনগরে বুলবুলের আঘাতে হাজার হাজার ঘরবাড়ি বিধ্বস্ত হয়ে গেছে।

শ্যামনগর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) কামরুজ্জামান জানান, উপজেলার গাবুরা ও পদ্মপুকুর ইউনিয়নে প্রায় ৫ হাজার কাঁচা ঘরবাড়ি সম্পূর্ণ বিধ্বস্ত হয়ে গেছে।

উপজেলার বিভিন্ন স্থানে ৭-৮ হাজার ঘরবাড়ি আংশিক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। 

বিভিন্ন স্থানে রাস্তায় গাছ পড়ে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে। পুরো এলাকায় বিদ্যুৎ ও ইন্টারনেট সংযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে।

গাবুরা, পদ্মপুকুর, আটুলিয়া, কাশিমারিসহ বিভিন্ন ইউনিয়নের শতশত চিংড়ি ঘের পানিতে তলিয়ে গেছে। 

খুলনা সংবাদদাতা জানান, ঘূর্ণিঝড়ে খুলনায় তিন হাজারেরও বেশি ঘরবাড়ি বিধ্বস্ত হয়েছে। এর মধ্যে কয়রা উপজেলায় ১ হাজার ৫০০ এবং দাকোপ উপজেলায় ১ হাজার ৭৬৫টি ঘরবাড়ি বিধ্বস্ত হয়েছে।

দাকোপ উপজেলায়  ৩১৫টি চিংড়ির ঘের ও ৪২৫টি পুকুর ভেসে গেছে।

জেলা কন্ট্রোল রুমের বরাত দিয়ে এ তথ্য জানান খুলনার জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ হেলাল হোসেন। 

লক্ষ্মীপুর সংবাদদাতা জানান, লক্ষ্মীপুরে কয়েক হাজার হেক্টর জমির কাঁচা-পাকা আমন ধান।

কৃষি বিভাগের তথ্য অনুযায়ী, লক্ষ্মীপুর সদর, রায়পুর, রামগতি ও কমলনগর উপজেলার প্রায় ২০ হাজার হেক্টর জমির আমন ধান ও তিন হাজার হেক্টর জমির শীতকালীন সবজির ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের অতিরিক্ত উপ-পরিচালক কিশোর কুমার মজুমদার আমন ধান ও শীতকালীন সবজির ব্যাপক ক্ষয়-ক্ষতি হয়েছে। 

গত কয়েকদিন ধরে জেলার বিভিন্ন এলাকায় আমন ধান কাটা শুরু হয়েছে। ১০ ভাগ জমির ধান কাটা হলেও  ৯০ ভাগ জমির ধান এখনও মাঠে রয়েছে।

রামগতিতে অর্ধশত বসতঘর বিধ্বস্ত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। ঝড়ে গাছ ও ঘরের নিচে চাপা পড়ে আহত হয়েছেন অন্তত ১২ জন। মারা গেছে একটি গবাদি পশু। ঝড়ের আঘাতে দেড় শতাধিক কাঁচাঘর আংশিক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। 

চর আবদুল্লাহ ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান কামাল উদ্দিন জানান, সকাল সাড়ে ৮টার দিকে ঘূর্ণিঝড় ‘বুলবুল’ তার ইউনিয়নের চর গজারিয়া ও তেলিরচরে আঘাত হানে। এতে ৪৬টি বসতঘর সম্পূর্ণ বিধ্বস্ত হয়।

ইউনিয়ন পরিষদের কার্যালয়সহ আংশিক ক্ষতিগ্রস্ত হয় দেড়শতাধিক কাঁচাঘর। উপড়ে পড়ে অসংখ্য গাছ-পালা।

গাছ ও ঘরের নিচে চাপা পড়ে চেয়ারম্যান বাজার এলাকার আবদুর রহিমের ছেলে জসিমসহ (২৫) অন্তত ১২ জন আহত হন।

ঝড়ো-হাওয়ায় উঠতি আমন ধানের ব্যাপক ক্ষয়-ক্ষতি হয়েছে।

রামগতি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আবদুল মোমিন জানান, ক্ষতিগ্রস্তদের তালিকা প্রস্তুত করার জন্য সংশ্লিষ্ট জনপ্রতিনিধিদেরকে বলা হয়েছে। তালিকা পেলে তাদের সহায়তা দেয়া হবে। 

লক্ষ্মীপুরের চর গজারিয়ায় গাছ উপড়ে প্রায় শতাধিক বসতঘর বিধ্বস্ত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। এ সময় নারী-পুরুষসহ ১০ জন আহত হয়েছে। 

জেলা প্রশাসক অঞ্জন চন্দ্র পাল বলেন, জেলার দুর্গত মানুষের জন্য ৪৫০ মে. টন চাল, নগদ টাকা ও পর্যাপ্ত শুকনো খাবার মজুদ রাখা হয়েছে।

পিরোজপুর সংবাদদাতা জানান,  নাজিরপুর উপজেলায় সহস্রাধিক ঘর-বাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। পাশাপাশি অসংখ্য গাছপালা উপড়ে ও ভেঙে পড়েছে বলে জানায় কন্ট্রোল রুম।

উপজেলা কৃষি অফিসার দিগ বিজয় হাজরা জানান, উপজেলায় কৃষকদের প্রায় কোটি টাকার ক্ষয়-ক্ষতি হয়েছে বলে প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে।

উপজেলা এলজিইডি অফিস জানায়, উপজেলায় প্রায় ৩০ কিলোমিটার কাঁচা রাস্তা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রোজী আকতার জানান, উপজেলার ৯টি ইউনিয়নের বিভিন্ন গ্রামে সহস্রাধিক ঘরবাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। পাশাপাশি অসংখ্য গাছপালাও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।

নড়াইল সংবাদদাতা জানান, কালিয়া উপজেলার পূবাঞ্চলের কয়েকটি ইউনিয়নের গ্রামগুলোর অসংখ্য গাছপালা ও বহু কাঁচা ঘরবাড়ি বিধ্বস্ত হওয়াসহ প্রায় ৫ হাজার একর জমির রবি ফসল সম্পূর্ণ বিনষ্ট হয়েছে। 

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা জানান, তাৎক্ষণিকভাবে ক্ষয়-ক্ষতির পরিমাণ নিরুপণ করা সম্ভব হয় নি। 

বরগুনা সংবাদদাতা জানান, পাথরঘাটায় ঘরের নিচে চাপা পড়ে ৫ জন আহত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। এ ছাড়া হাজার হাজার গাছপালা ভেঙে পড়েছে। 

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা হুমায়ুন কবির জানান, ঝড়ের তাণ্ডবে উপজেলার সহস্রাধিক ঘরবাড়ি ভেঙে গেছে। এ ছাড়া গাছপালার ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। ক্ষয়-ক্ষতির তালিকা করা হচ্ছে। 

আমতলী উপজেলায় প্রায় ৮ হাজার হেক্টর আমন ধান ও ২শ’ হেক্টর সবজির ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। দমকা বাতাসে সহস্রাধিক গাছপালা উপড়ে গেছে এবং শতাধিক কাঁচা ঘড়-বাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।

আমতলী উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা সিএম রেজাউল করিম জানান, এ বছর আমতলী উপজেলায় ২৬ হাজার ৪শ’ ৬০ হেক্টর জমিতে আমন ধান ও ২ শ’ ৫০ হেক্টর জমিতে সবজি চাষ হয়েছে। এর মধ্যে উচ্চ ফলনশীল বিআর -২৩, ব্রি-৩৯, ব্রি-৪০ ধান বেশি চাষ হয়েছে। বিআর ২৩ ধানের ফলন ভাল হয়েছে উপজেলায়। বুলবুল-এর প্রভাবে এর ক্ষতি হয়েছে বেশি। রোববার (১০ নভেম্বর) দিনভর ঝড়ো ও দমকা বতাসে অধিকাংশ আমন ধান ক্ষেতে জমে থাকা পানিতে তলিয়ে গেছে। আড়াইশ' হেক্টর সবজির মধ্যে ২শ’ হেক্টর সবজি পানিতে নষ্ট হয়েছে। সবজির মধ্যে রয়েছে- লাউ, লাল শাক, সরিষা, কুমরা, ঢেড়স, পালং শাক ও মুলাসহ বিভিন্ন শাক সবজি।

পটুয়াখালী সংবাদদাতা জানান, বিভিন্ন স্থানে গাছপালা উপড়ে গেছে। বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানসহ কাঁচা ঘরবাড়ি বিধ্বস্ত হয়েছে। ছোট-বড় প্রায় ১৪টি চরের ফসলি জমির শত শত হেক্টর আমন ধান পানিতে তলিয়ে গেছে।

বাউফল উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা পিজুস চন্দ্র দে বলেন, সরকারিভাবে এখন পর্যন্ত ক্ষয়-ক্ষতির পরিমাণ নির্ধারণ করা হয় নি। জনসচেতনতার কারণে বড় ক্ষয়-ক্ষতি হয় নি।

এসএমএম

আরও পড়ুন