• ঢাকা
  • শনিবার, ২৭ এপ্রিল, ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১
প্রকাশিত: ডিসেম্বর ১০, ২০১৮, ১১:৪৪ এএম

মুন সিনেমা হলের মালিককে শত কোটি টাকা পরিশোধের সময় বাড়ল

মুন সিনেমা হলের মালিককে শত কোটি টাকা পরিশোধের সময় বাড়ল

 

রাজধানী পুরান ঢাকার বহুল আলোচিত মুন সিনেমা হলের মালিককে প্রায় শতকোটি টাকা ক্ষতিপূরণ পরিশোধের সময় বাড়িয়েছে আপিল বিভাগ।
আগামী ৩০ জুনের মধ্যে মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয় ও অর্থ মন্ত্রণালয়কে এই টাকা পরিশোধ করতে আদেশ দেয় সর্বোচ্চ আদালত। বাড়িয়ে দেয়া সময়ের মধ্যে টাকা পরিশোধ না করলে অর্থসচিব ও মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিবকে আদালতে হাজির থাকতে নির্দেশ দিয়েছে আদালত।

রাষ্ট্রপক্ষের সময় বাড়ানোর আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে আজ সোমবার ( ১০ ডিসেম্বর) প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেনের নেতৃত্বাধীন আপিল বেঞ্চ এই আদেশ দেয়। আদালতে রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম। আর মুন হলের পক্ষে ছিলেন আইনজীবী আজমালুল হোসেন কিউসি।

গত ৮ অক্টোবর মুন সিনেমা হলের মালিককে প্রায় ১০০ কোটি টাকা পরিশোধের যে নির্দেশ দিয়েছিল আপিল বিভাগ তা পরিশোধে সম্মত হওয়ার কথা জানান অর্থ মন্ত্রণালয়। অর্থ পরিশোধে ৮ ডিসেম্বর পর্যন্ত সময় দেয়া হয়। এর আগে ১৫ জানুয়ারিতেও একই রকম আদেশ দিয়েছিল আদালত।

গত বছরের ১৫ জানুয়ারি মুন সিনেমা হলের জমি এবং তার ওপর গড়ে তোলা বর্তমান স্থাপনার মূল্য নির্ধারণের নির্দেশ দিয়েছিল আপিল বিভাগ। সেইসঙ্গে একজন 'অভিজ্ঞ ও নিরপেক্ষ' প্রকৌশলীকে দিয়ে সিনেমা হলের জমি ও স্থাপনার মূল্য নির্ধারণ করে প্রতিবেদন দিতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল। এর ধারাবাহিকতায় মূল্য নির্ধারণ করে অধ্যাপক জামিলুর রেজা চৌধুরীর দেয়া প্রতিবেদন আদালতে উপস্থাপন করা হলে মূল্য পরিশোধের এই আদেশ দেয় আপিল বিভাগ। সেইসময় আদালতে রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম এবং ইটালিয়ান মার্বেল কোম্পানির পক্ষে ছিলেন আইনজীবী তৌফিক নেওয়াজ।

জানা গেছে, রাজধানীর পুরান ঢাকার ওয়াইজঘাটে এক সময়ের মুন সিনেমা হলের মূল মালিক ছিল ইটালিয়ান মার্বেল ওয়ার্কস লিমিটেড নামের একটি কোম্পানি। মুক্তিযুদ্ধের সময় ওই সম্পত্তি 'পরিত্যক্ত' ঘোষণা করা হয় এবং পরে শিল্প মন্ত্রণালয় ওই সম্পত্তি মুক্তিযোদ্ধা কল্যাণ ট্রাস্টের অধীনে ন্যস্ত করে। ইটালিয়ান মার্বেলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মাকসুদুল আলম ওই সম্পত্তির মালিকানা দাবি করলেও বিষয়টি আটকে যায়।

এরপর ১৯৭৭ সালে জিয়াউর রহমান একটি সামরিক ফরমান জারি করে। এতে বলা হয়, সরকার কোনো সম্পত্তিকে পরিত্যক্ত ঘোষণা করলে আদালতে তা চ্যালেঞ্জ করা যাবে না। মুন সিনেমা হলের সম্পত্তিও এর আওতায় পড়ে যায়।
কিন্তু ইটালিয়ান মার্বেল ওয়ার্কস এরপর ২০০০ সালে হাইকোর্টে একটি রিট আবেদন করে, যেখানে সংবিধানের ওই পঞ্চম সংশোধনীকে চ্যালেঞ্জ করা হয়। ২০০৫ সালের ২৯ আগস্ট হাইকোর্ট এক ঐতিহাসিক রায় দেয়। রায়ে ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্টের পর খন্দকার মোশতাক আহমদ, বিচারপতি আবু সাদাত মোহাম্মদ সায়েম, মেজর জেনারেল জিয়াউর রহমানের ক্ষমতা গ্রহণ সংবিধান বহির্ভূত ও বেআইনি ঘোষণা করা হয়।

এরপর সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ ২০১০ সালের ২ ফেব্রুয়ারি হাইকোর্টের দেওয়া ওই রায় বহাল রাখে এবং ৯০ দিনের মধ্যে মুন সিনেমা হল ইটালিয়ান মার্বেল ওয়ার্কস লিমিটেডকে ফেরত দিতে মুক্তিযোদ্ধা কল্যাণ ট্রাস্টসহ সরকারের সংশ্নিষ্টদের প্রতি নির্দেশ দেয়। এরপর দীর্ঘদিনেও মালিকানা ফিরে না পেয়ে ২০১২ সালের ১০ জানুয়ারি ইটালিয়ান মার্বেল কর্তৃপক্ষ তখনকার ভূমিসচিব, মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব, মুক্তিযোদ্ধা কল্যাণ ট্রাস্টের ব্যবস্থাপনা পরিচালকসহ ৬জনের বিরুদ্ধে আদালত অবমাননার অভিযোগ দাখিল করে। সেই অভিযোগের শুনানি করেই আপিল বিভাগ সিনেমা হলের জমি ও স্থাপনার মূল্য নির্ধারণের নির্দেশ দেয়।

মা আ/ সাইসে