• ঢাকা
  • শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল, ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১
প্রকাশিত: নভেম্বর ২, ২০১৯, ০৪:২৬ পিএম
সর্বশেষ আপডেট : নভেম্বর ২, ২০১৯, ০৪:২৯ পিএম

কিশোর আলোর কনসার্টে বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে শিক্ষার্থীর মৃত্যু

স্কুল কর্তৃপক্ষের তদন্ত কমিটি গঠন, শিক্ষার্থীদের ৪ দফা দাবি

স্কুল কর্তৃপক্ষের তদন্ত কমিটি গঠন,  শিক্ষার্থীদের ৪ দফা দাবি
শিক্ষার্থীদের মানববন্ধন কর্মসূচি-ছবি : জাগরণ

কলেজ ক্যাম্পাসে কনসার্টে বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে শিক্ষার্থী নাইমুল আবরার রাহাতের মৃত্যুর ঘটনায় তদন্ত কমিটি গঠন করেছে ঢাকার রেসিডেন্সিয়াল মডেল কলেজ কর্তৃপক্ষ।

শনিবার (২ নভেম্বর) এ কমিটি গঠন করা হয়েছেন জানান কলেজটির অধ্যক্ষ ব্রিগেডিয়ার জেনারেল কাজী শামীম আহমেদ।

শুক্রবার (১ নভেম্বর) বিকালে কলেজ ক্যাম্পাসে দৈনিক প্রথম আলোর সাময়িকী ‘কিশোর আলো’র একটি অনুষ্ঠান চলাকালে বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হন নবম শ্রেণির ছাত্র নাইমুল আবরার (১৫)। এ ঘটনায় আয়োজকদের অব্যবস্থাপনাকে দায়ী করে শিক্ষার্থীরা শনিবার (২ নভেম্বর) কলেজ প্রাঙ্গণে বিক্ষোভ করেছে। 

শিক্ষার্থীরা বলছে, সংশ্লিষ্টদের অবহেলার কারণেই আবরারকে মৃত্যুবরণ করতে হয়েছে। ঘটনার সুষ্ঠু তদন্তের পাশাপাশি অনুষ্ঠানে সিসি ক্যামেরায় ধারণ করা চিত্র আগামী ৭২ ঘণ্টার মধ্যে দেয়ার জন্য প্রথম আলোর কাছে দাবি জানায় শিক্ষার্থীরা। এ ঘটনায় প্রথম আলোর কাছে ৪ দফা দাবিও তুলে ধরে শিক্ষার্থীরা। ফেসবুকে একটা ইভেন্ট খুলে তারা এসব দাবি জানিয়েছে।

শিক্ষার্থীরা যা লিখেছে তা হুবহু তুলে ধরা হলো— “একটা ছেলে মৃত্যুর কোলে ঢলে পরেছে। দুঃখিত মৃত্যু না, তাহসান অর্নবের সুরের মোর্ছনার ভিড়ে একটা ঠাণ্ডা মাথায় খুন হয়ে গিয়েছে। পনেরো বছরের একটা বাচ্চা হারিয়ে গিয়েছে, এই জরুরি খবর জানানোর চেয়ে গান চালানোই জরুরি মনে হয়েছে তাঁদের। একটা মৃত্যুর ১২ ঘণ্টা পেরিয়ে গিয়েছে, কোনও বিজ্ঞপ্তি নেই। নামেমাত্র দায়সারা ‘আমরা দুঃখিত’ বলে প্রোফাইল পিকচার পরিবর্তন করে ভুলে ভরা একটা বিজ্ঞপ্তি দেওয়া পর্যন্তই। (এমনকি ইভেন্ট পেজ ও মূল পেজ থেকে দুইবার পোস্ট ডিলিট করে নতুন করে দেওয়া, একের পর এক কমেন্ট ডিলিট করা চলছেই।) ১২ ঘণ্টা অপেক্ষার পরেও যখন আনিসুল হক নামক ব্যক্তিত্যের কাছ থেকে সদুত্তর পাওয়া যায় না, বরং, ‘ধাতস্থ হলে বলবো’ উত্তর আসে, তখন বোঝাই যায়, তাদের ধাতস্থ হওয়ার অর্থ ঘটনা ধামাচাপা পড়া। ১২ ঘণ্টা পরেও উত্তর না পাওয়ার পর আমরা উত্তর চাইও না। এবার এসেছি নিজেদের দাবি-দাওয়া জানাতে। কিছু সুস্পষ্ট দাবির জন্য ৭২ ঘণ্টা সময় বেধে দেওয়া হয়েছে। তারপর আমরা পিছু হটার কথা ভাববো, তার আগে পর্যন্ত আন্দোলন চলবেই।”

দাবি তুলে ধরে বলা হয়— 

দাবি ১ :  ‘কিশোর আলো’ ২৯ অক্টোবর তাদের পেজ থেকে দেওয়া পোস্টে জানিয়েছিল ‘সিকিউরিটি ফার্স্ট। সিসিটিভি থাকবে। চেক করা হবে’। অন্য আরেকটি পোস্টে ছিল ‘প্রথম আলো সকল ছবি ধারণ ও সংরক্ষণ করবে’। অর্থাৎ তাদের পুরো অনুষ্ঠানের ছবি এখনও তাদের কাছেই আছে। সেই অনুষ্ঠানের সব ছবি, কীভাবে তাকে নিয়ে যাওয়া হয়েছে, কতটা কী হয়েছে, সবকিছুর ছবি মুক্ত করতে হবে। সোশ্যাল মিডিয়া অথবা কোনও ন্যাশনাল টিভি চ্যানেলে।

দাবি ২ : কিশোর আলোর গতকাল দেওয়া পোস্ট থেকে ‘নাইমুল আবরার যখন তড়িতাহত হয়, কিশোর আলোর স্বেচ্ছাসেবকেরা তাকে সঙ্গে সঙ্গে নিয়ে যায় পাশে থাকা মেডিক্যাল ক্যাম্প স্টলে। মেডিক্যাল ক্যাম্পে থাকা কর্তব্যরত চিকিৎসক আবরারকে হাসপাতালে নেওয়ার পরামর্শ দেন’। অর্থাৎ সেখানে থাকা ডাক্তারদের কথা ছিল তাকে দ্রুত হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হোক। তবুও তাকে কাছের সোহরাওয়ার্দী মেডিক্যাল কলেজের মতো হাসপাতাল ছেড়ে ইউনিভারসাল মেডিক্যালে নিয়ে যাওয়া হলো। সেই ডাক্তাররা কেন তাকে প্রায় ৪ কিলোমিটার দূরের হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্ত দিলো, সে বিবৃতি জানতে চাই। এমনকি তাদের এই মৃত্যুর দায় স্বীকার করে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ ও ডাক্তারদের প্রকাশ্য ক্ষমা চাইতে হবে। কিশোর আলোকে (বিশেষ করে আনিসুল হককে) বলতে হবে কেন তাকে সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালে নেওয়া হলো না। কেন রাহাতের মৃত্যুর সংবাদ হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে দিতে হলো কলেজকে কিংবা তার পরিবারকে?

দাবি ৩ : প্রথম আলো ও কিশোর আলোকে প্রকাশ্যে প্রেস ব্রিফিং করে ক্ষমা চাইতে হবে। এই মৃত্যুর পুরো দায় স্বীকার করে সেখানে কিশোর আলোর সম্পাদক, সহ-সম্পাদকদের বিবৃতি দিতে হবে। তাদের কারণ দর্শাতে হবে যে কেন তারা এতো বড় ইভেন্টের দায়িত্ব কিছু টিন-এজ ভলান্টিয়ারের (বেশিরভাগেরই কোনও ট্রেনিং নেই। জরুরি অবস্থায় কী করতে হবে, সে সম্পর্ক ট্রেনিং নেই। এমনকি রাহাতকে বিদ্যুতায়িত হওয়া থেকেও ছাড়িয়েছেন একজন সিভিলিয়ান, কোনও ভলেন্টিয়ার নয়।) হাতে দেওয়া কতোটুকু যুক্তিযুক্ত। জোন ২ ও জোন ৩ এর কাছে এই ঘটনা ঘটে। এমনকি অনেকে অভিযোগও করে বিদ্যুতের লাইন খোলা। কিন্তু এর পরেও কেন সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়নি? জোন ৪ নিয়ে কিশোর আলোর ইভেন্ট পেইজে দেওয়া অভিযোগ কেন ডিলিট করে দেওয়া হলো? জোন ২, ৩ ও ৪ এর লিডারদের কারণ দর্শাতে হবে।

দাবি ৪ : গতকাল (শুক্রবার) রাতেই তাদের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। নামেমাত্র তদন্ত কমিটিতে কে কে আছেন, সেখানে আমাদের কলেজ কমিটির কিছু আছে কিনা, নাকি লোক দেখানো কমিটি সেটি নিয়ে প্রশ্ন তুলতে চাই না। তবে মিডিয়ার সামনে তদন্ত কমিটির সম্পূর্ণ রিপোর্ট প্রকাশ করা হোক। আমাদের সব দাবি এর মধ্যেই টিভি মিডিয়ায় প্রচার করা হয়েছে। তবে সেখানে একটি ভিত্তিহীন কথা বলা হয়েছে, সেটি হলো কলেজ কর্তৃপক্ষ নাকি আমাদের সঙ্গে নেই। তাদের বলতে চাই কলেজ কর্তৃপক্ষ আমাদের সঙ্গেই আছেন। আমাদের সম্মানীয় অধ্যক্ষ মহোদয়, ব্রিগেডিয়ার জেনারেল কাজী শামীম ফরহাদ তার সম্পূর্ণ সমর্থন জানিয়েছেন আমাদের প্রতি। যেখানে অধ্যক্ষের সম্মতি আছে সেখানে শিক্ষকদের বাধা দেওয়ার প্রশ্নই আসে না। সময় নিউজের করা নিউজের এই অংশের সঙ্গে আমরা দ্বিমত প্রকাশ করছি। তারা আমাদের পুরো কার্যক্রমে আমাদের পাশেই আছেন। আমাদের কলেজ কর্তৃপক্ষের এখানে কোনও গাফিলতি বা কোনও সমস্যা নেই। বরং আমাদের দাবি সম্পূর্ণ কিশোর আলো ও প্রথম আলোর প্রতি, তারা সকলে এই দাবি মেনে নিলে আমরা আমাদের কার্যক্রমের পরবর্তী পদক্ষেপ নিবো।

কলেজটির অধ্যক্ষ ব্রিগেডিয়ার জেনারেল কাজী শামীম আহমেদ জানিয়েছেন, নবম শ্রেণির ছাত্র নাইমুল আবরার রাহাতের মৃত্যুর ঘটনায় ৩ সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। আগামী সাত দিনের মধ্যে কমিটিকে তদন্ত প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে।

তিনি বলেন, ‘কি আনন্দ’ শিরোনামে আয়োজিত ওই অনুষ্ঠানের জন্য তৈরি করা মঞ্চের পেছনে বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হন আবরার। আয়োজকরা তাকে মহাখালীর ইউনিভার্সেল মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিলে চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন।

এইচএস/এসএমএম