• ঢাকা
  • বৃহস্পতিবার, ০২ মে, ২০২৪, ১৮ বৈশাখ ১৪৩১
প্রকাশিত: নভেম্বর ৬, ২০১৮, ০৫:২৫ পিএম

পিরোজপুরের ৭ আসামির বিরুদ্ধে চূড়ান্ত তদন্ত প্রতিবেদন প্রকাশ

পিরোজপুরের ৭ আসামির বিরুদ্ধে চূড়ান্ত তদন্ত প্রতিবেদন প্রকাশ

 

মানবতাবিরোধী অপরাধে পিরোজপুরের ৭ আসামির বিরুদ্ধে চূড়ান্ত তদন্ত প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল।  
আসামিরা হলেন- মহারাজ হাওলাদার ওরফে হাতকাটা মহারাজ (৬৮), আশ্রাব আলী ওরফে আশরাফ আলী হাওলাদার (৬৭), আজাহার আলী হাওলাদার ওরফে আজু মুন্সী (৮৮), আব্দুল মান্নান হাওলাদার ওরফে আব্দুল মান্নান ডিলার ওরফে মান্নান (৭৫)। এদের মধ্যে গত ৩০ অক্টোবর আটক অবস্থায় মারা যান ফজলুল হক হাওলাদার (৭৫)।  বাকি দুই আসামি পলাতক থাকায় তাদের নাম প্রকাশ করেনি তদন্ত সংস্থা।
মঙ্গলবার রাজধানীর ধানমণ্ডিতে তদন্ত সংস্থার কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে সংস্থার প্রধান সমন্বয়ক এম এ হান্নান খান জানান, ‘২০১৬ সালের ১২ এপ্রিল পিরোজপুরের ভাণ্ডারিয়া থানার ৭ আসামির বিরুদ্ধে তদন্ত শুরু করে ট্রাইব্যুনালের তদন্ত সংস্থা।  এ তদন্ত শুরু করেন ট্রাইব্যুনালের কর্মকর্তা বদরুল আলম।  এরপর ৬ নভেম্বর এ মামলার তদন্ত শেষ হয়।  এ মামলায় ৩৩ জনকে সাক্ষী করা হয়েছে।  আসামিদের বিরুদ্ধে অবৈধ আটক, নির্যাতন, অপহরণ, লুণ্ঠন, অগ্নিসংযোগ, ধর্ষণ, হত্যা ও গণহত্যার মোট ৪টি অভিযোগ রয়েছে।
আসামিদের বিরুদ্ধে প্রথম অভিযোগ, ১৯৭১ সালের ৪ জুন পিরোজপুরের ভাণ্ডারিয়া থানার ৩নং ধাওয়া ইউনিয়নের পূর্ব পশারিবুনিয়া গ্রামে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীকে সঙ্গে নিয়ে আসামিরা হামলা চালিয়ে হিন্দু সম্প্রদায়ের ও মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের নিরীহ নিরস্ত্র মুকুন্দু বিহারি মল্লিক ওরফে ধুলাইড্যা, চিত্তরঞ্জন ব্যাপারী, সতিশ চন্দ্র ব্যাপারী, শরৎ চন্দ্র মাঝি, রসিক ঘরামী, উপেন্দ্রনাথ মিস্ত্রি ও অনন্ত চাষিকে অবৈধভাবে আটক ও অপহরণপূর্বক গুলি চালিয়ে হত্যা করে এবং আনুমানিক ৪০/৪৫টি বাড়ির মালামাল লুণ্ঠন করে অগ্নিসংযোগে সম্পূর্ণ ধ্বংস করা হয়।
দ্বিতীয় অভিযোগ, ১৯৭১ সালের ১৬ আগস্ট আওয়ামী লীগের সমর্থক ও মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের হিন্দু সম্প্রদায়কে ধ্বংস করার লক্ষ্যে চরখালী গ্রামে হামলা চালিয়ে অমূল্য রতন হাওলাদারের বাড়ি থেকে স্বর্ণ, গহনা ও মূল্যবান মালামাল লুট করে।  একইসঙ্গে রতন হাওলাদারকে আটক করে ব্যাপক শারীরিক নির্যাতন করা হয়।  এছাড়াও সুরেন হাওলাদারের বাড়িতে লুটপাট ও তার স্ত্রীকে ধর্ষণ করে।
তৃতীয় অভিযোগ, ১৯৭১ সালের ১২ সেপ্টেম্বর শিয়ালকাঠি ইউনিয়নের চরখালী গ্রামে মনোরঞ্জন মিস্ত্রির বাড়িতে হামলা চালিয়ে তাকে ও তার বড় ভাই চন্দ্রকান্ত মিস্ত্রিকে অবৈধ আটক, নির্যাতন ও অপহরণপূর্বক হত্যার উদ্দেশ্যে গুলি করার সময় ২০০ টাকার বিনিময়ে আসামিদের কাছ থেকে মুক্তি পান।
চতুর্থ অভিযোগ, ১৯৭১ সালের ২৭ অক্টোবর সশস্ত্র রাজাকারসহ পিরোজপুর সদরের সরকারি বালক উচ্চবিদ্যালয়ে তৎকালীন স্থাপিত আর্মি ক্যাম্পে স্থানীয় হিন্দুদের ধ্বংস করার লক্ষ্যে হিন্দু প্রধান এলাকা ভাণ্ডারিয়া থানার শিয়ালকাঠি ইউনিয়নের তিনটি গ্রামে ধারাবাহিকভাবে হামলা চালিয়ে হিন্দু সম্প্রদায়ের সত্যরঞ্জন হালদারসহ ১৭ জনকে অবৈধভাবে আটক, অপহরণ ও গুলি করে হত্যা করে।  এরমধ্যে গুণমণি মিস্ত্রি নামে একজনকে আগুনে নিক্ষেপ করে পুড়িয়ে হত্যা করে।  আসামিদের গুলিতে চারজন গুলিবিদ্ধ হয়ে গুরুতর জখম হয়।  পরে এরমধ্যে দুজন চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান।
এসব আসামি ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের সময় কনভেনশন মুসলিম লীগের সমর্থক ছিলেন। বর্তমানে তারা জামায়াতে ইসলামীর সমর্থক।
টিএফ/এফসি