• ঢাকা
  • শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল, ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১
প্রকাশিত: এপ্রিল ২৩, ২০১৯, ০৬:৫৩ পিএম
সর্বশেষ আপডেট : এপ্রিল ২৪, ২০১৯, ০১:০৫ এএম

রোহিঙ্গারা ভবিষ্যতে উগ্রবাদে জড়িয়ে যেতে পারে: সিটিটিসি প্রধান 

রোহিঙ্গারা ভবিষ্যতে উগ্রবাদে জড়িয়ে যেতে পারে: সিটিটিসি প্রধান 
বক্তব্য রাখছেন ​​​​​​​ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপির) কাউন্টার টেররিজম অ্যান্ড ট্রান্স ন্যাশনাল ক্রাইম (সিটিটিসি) ইউনিটের প্রধান মনিরুল ইসলাম


ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপির) কাউন্টার টেররিজম অ্যান্ড ট্রান্স ন্যাশনাল ক্রাইম (সিটিটিসি) ইউনিটের প্রধান মনিরুল ইসলাম বলেছেন, রোহিঙ্গাদের বিষয়ে যদি আমরা সতর্ক দৃষ্টি না রাখি এবং তাদের অবস্থান যদি দীর্ঘ মেয়াদী হয় তাহলে তারা ভবিষ্যতে উগ্রবাদে জড়িয়ে যেতে পারে। কারণ এখন যারা আছে তারা বেশির ভাগই শিশু ও নারী। এই শিশুরা যখন অ্যাডাল্ট হবে তখন বিভিন্ন ক্ষোভ থেকে তারা উগ্রবাদে জড়িয়ে পড়তে পারে। তবে এই মুহূর্তে তেমন কোন আশঙ্কা নেই।

মঙ্গলবার রাজধানীর সিরডাপ মিলনায়তনে ‘মিট উইথ মনিরুল ইসলাম’শীর্ষক এক অনুষ্ঠানে এসব  কথা বলেন তিনি। অনুষ্ঠানটির আয়োজন করে বাংলাদেশ ক্রাইম রিপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন (ক্র্যাব)। 

মনিরুল ইসলাম বলেন, শ্রীলঙ্কায় ভয়াবহ সিরিজ বোমা হামলার ঘটনায় বিশ্বজুড়ে ঝিমিয়ে পড়া উগ্রবাদীদের সজাগ করার আশঙ্কা থাকলেও বাংলাদেশে কিছু করতে পারবে না। বাংলাদেশে সুসংগঠিতভাবে কোনো ধরনের ঘটনা ঘটানোর সক্ষমতা তাদের নেই।

তিনি বলেন, বাংলাদেশে আইএস এর কোন খলিফা নাই। এটা ইরাক সিরিয়াতে থাকতে পারে। বাংলাদেশ থেকে কতিপয় লোক আইএস’এ গিয়েছে। তাদের অধিকাংশই গেছে ২০১৪ সালে। এদের পাসপোর্ট এর মেয়াদ ইতোমধ্যে শেষ হয়ে গেছে। সিরিয়া থেকে তাদের বাংলাদেশে ফেরত আসতে গেলে এয়ারক্রাফটে আসতে হবে। সে ক্ষেত্রে বাংলাদেশি আইডেনটিটি লাগবে। পার্শ্ববর্তী দেশের কোন দূতাবাস থেকে ট্রাভেলপাশ সংগ্রহ করতে হবে। এটাকে নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব। 

সিটিটিসি প্রধান আরও বলেন, বাংলাদেশের বেশির ভাগ মানুষ উগ্রপন্থা ও সহিংসতাকে সমর্থন করে না। এক্ষেত্রে মিডিয়ারও গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব রয়েছে যেন জঙ্গিবাদ নিয়ে সংবাদ এমন ভাবে প্রকাশ না করা যাতে তাদের প্রতি মানুষের সহানুভূতি বাড়তে পারে। 

সাংবাদিকদের উদ্দেশ্যে মনিরুল ইসলাম বলেন, সন্ত্রাসবাদের বিষয়ে বস্তুনিষ্ঠভাবে কাজ করতে হবে। যেমন জিহাদ, শহীদ, মুজাহিদ এই শব্দগুলো আপনারা ব্যবহার করবেন না। কারণ এটার একটা ধর্মীয় ইতিবাচক অর্থ রয়েছে। সন্ত্রাসবাদীরা আসলে খুনি। 

শ্রীলঙ্কায় জঙ্গি হামলার বিষয়ে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে মনিরুল ইসলাম বলেন, শ্রীলঙ্কায় কালচার অব ভায়োলেন্স রয়েছে। দীর্ঘদিন ধরে গৃহযুদ্ধ চলেছে। মুসলমানরা সেখানে খ্রিস্টানদের থেকে সংখ্যাগরিষ্ঠ। মুসলিম এবং খ্রিস্টানদের মধ্যে কোন সংঘাত ছিল না। এলটিটিই কখনো কোন ধর্মীয় গ্রুপকে টার্গেট করে হামলা চালায়নি। তারা গভর্নমেন্ট ম্যাকানিজমের সঙ্গে যারা জড়িত তাদের ওপর হামলা করেছে। কোন সিভিলিয়ানদের ওপর হামলা করেনি। শ্রীলঙ্কায় যেটি ঘটেছে সেটি সন্ত্রাসবাদ এ বিষয়ে কোন সন্দেহ নাই। এখানে খ্রিস্টানরাই টার্গেট ছিল। এই হোটেলগুলো খুবই কাছাকাছি। এই সমস্ত জায়গাতে হামলার কারণ আমার ধারণা তারা হামলার ইমপ্যাক্ট বাড়াতে চেষ্টা করেছে।

তিনি বলেন, হামলার পেছনে এখন পর্যন্ত যাদের নাম জানা গেছে তাদের মধ্যে নেতৃত্ব পর্যায়ের লোকও সুইসাইডাল অ্যাটাকার হিসেবে ছিল। এটা একটা ব্যতিক্রমধর্মী ঘটনা। এখানে একজন নেতৃত্ব পর্যায়ের লোকও নিহত হয়েছে। তার মানে ন্যাশনাল তাওহিদ জামাত এদের একটা ভূমিকাও আছে।  

সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে সিটিটিসি প্রধান বলেন, গত ১১ এপ্রিল সরাসরি তাওহিদ জামাতের নাম উল্লেখ করে গির্জা এবং ভারতীয় মিশনে হামলা চালাতে পারে বলে একটি গোয়েন্দা রিপোর্ট দেয়া হয়েছিল। যারা হামলা চালিয়েছে, তারা সবাই সে দেশের নাগরিক বলে জানা গেছে। তাওহিদ জামাতের একটা অংশও আইএসের বায়াত নিয়েছিল। 

সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে মনিরুল বলেন, সহিংস, উগ্রবাদ বা ধর্মভিত্তিক উগ্রবাদের আমদানিকারকেরা প্রথম যুগের যারা ছিল সকলেই গ্রেপ্তার হয়েছে। কেউ কেউ ফাঁসিতে ঝুলেছে। এই আমদানিকারকেরা ছিল সেই আফগানিস্তানের সিভিল ওয়ার যেটা তারা জিহাদ বলেছে। সেই জিহাদে যারা গিয়েছিল মাওলানা আবদুস সালামসহ এই যে হরকাতুল জিহাদে যারা ছিলেন তারা। এদের চিহ্নিত করা হয়েছে। তাদের অধিকাংশই বয়োবৃদ্ধ, কেউ কেউ জেলে আছে। দু-একজন পলাতক। 

অনুষ্ঠানের আরও উপস্থিত ছিলেন ক্রাবের সভাপতি আবুল খায়ের, সাধারণ সম্পাদক দীপু সারোয়ার, সাংগঠনিক সম্পাদক রাশেদ নিজাম, ডিএমপির উপ পুলিশ কমিশনার (মিডিয়া অ্যান্ড পাবলিক রিলেশনস বিভাগের) মো. মাসুদুর রহমান প্রমুখ।

টিএস/আরআই