• ঢাকা
  • শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল, ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১
প্রকাশিত: মে ১৮, ২০১৯, ০৬:৩২ পিএম
সর্বশেষ আপডেট : মে ১৯, ২০১৯, ০১:৩২ এএম

বাংলাদেশের পাসপোর্টে রোহিঙ্গাদের বিদেশ গমন 

বাংলাদেশের পাসপোর্টে রোহিঙ্গাদের বিদেশ গমন 

ক্যাম্প থেকে পালিয়ে ঢাকায় এসে বহু রোহিঙ্গা পাড়ি জমাচ্ছেন মালেয়শিয়াসহ বিভিন্ন দেশে।  এ জন্য রাজধানী ঢাকায় আসতে তাদের তিন দালালের হাত বদল হয়। 

বাংলাদেশের ন্যাশনাল আইডি কার্ড ও পাসপোর্ট বানানোর পাশাপাশি ভিসা, বিমান ভাড়া আর দালালিসহ তাদের মোট খরচ ২ লাখ টাকা। তারপরেই বিদেশের মাটিতে বাংলাদেশি নাগরিক হিসেবে উগ্র-রোহিঙ্গাদের শুরু হয় পথচলা। 

বাংলাদেশি পাসপোর্টে রোহিঙ্গাদের বিদেশ গমনের বিষয়ে অনুসন্ধানে নেমে এ সব তথ্য জানা যায়।

বাংলাদেশি নাগরিক না হয়েও অবৈধ উপায়ে পাসপোর্ট বানিয়ে এখন পর্যন্ত কমপক্ষে ২ লাখ রোহিঙ্গা মালয়েশিয়া, দুবাই, চীন ও সিঙ্গাপুরে অবস্থান করছেন বলে জানা গেছে। 

তারা সে সব দেশের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে শ্রমিকের কাজের পাশাপাশি সন্ত্রাসী নানা কর্মেও জড়িয়ে পড়ছে বলে গুরুতর অভিযোগ রয়েছে। 

রোহিঙ্গাদের নিয়ে কাজ করা বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সাউথ-ইস্ট উইংয়ের দায়িত্বশীল একজন কর্মকর্তা জানান, এখন পর্যন্ত প্রায় দুই লাখ রোহিঙ্গা বাংলাদেশের পাসপোর্ট হাতে নিয়ে মালয়েশিয়াসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে অবস্থান করছেন। 

জানা গেছে, তারা খুবই উগ্র এবং জড়িয়ে পড়ছেন নানা ধরনের অপরাধ কর্মে। তাতে করে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি মারাত্বকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। 

গত ১০ মে (শুক্রবার) কক্সবাজারের রোহিঙ্গা ক্যাম্প থেকে পালিয়ে আসা নারী ও শিশুসহ ২৪ রোহিঙ্গাকে ঢাকার খিলক্ষেত এলাকার একটি বাড়ি থেকে আটক করে গোয়েন্দা পুলিশ। এ সময় তাদের কাছ থেকে ৫৬টি বাংলাদেশি পাসপোর্ট জব্দ করা হয়। বিভিন্ন ভূয়া ঠিকানা ব্যবহার করে এ সব পাসপোর্ট রোহিঙ্গাদের নামে তৈরি করা হয়েছে। তা ছাড়া আটক ২৪ রোহিঙ্গার পাসপোর্টও ছিল প্রস্তুতি পর্বে। পাসপোর্টের পর ভিসা হয়ে গেলে তারা মালয়েশিয়া পাড়ি জমাতো এটা ছিল তাদের পরিকল্পনা।

জানা গেছে, কক্সবাজারের রোহিঙ্গা ক্যাম্প থেকে পালিয়ে রাজধানী ঢাকায় আসা, ন্যাশনাল আইডি কার্ড ও পাসপোর্ট বানানো, সর্বশেষ বিমান বন্দরের পাশে নিরাপত্তামূলক স্থানে থাকা এবং নিরাপদে বিমানে ওঠা পর্যন্ত তারা তিনবার দালালের হাত বদল হয়। তাতে সর্বসাকূল্যে একজন রোহিঙ্গার খরচ হয় ২ লাখ টাকা।  

এ মামলার তদন্ত কর্মকর্তা গোয়েন্দা পুলিশ পরিদর্শক লিয়াকত হোসেন, আটক খিলক্ষেতের ওই বাড়ির মালিকের ছেলে ওয়ালিদ হোসেন কাজল ও দালাল আইয়ুব আলীর সঙ্গে কথা বলা সম্ভব হয় দৈনিক জাগরণের এই প্রতিবেদকের। রোহিঙ্গা ক্যাস্প থেকে কিভাবে রাজধানীতে নিয়ে আসা হয়, কার কার কাছে হাত বদল হয়, পরে তাদের কিভাবে বিমানে তুলে দেয়া হয়- সে সম্পর্কে বিস্তারিত জানিয়েছেন তারা। 

তদন্ত সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, রোহিঙ্গা ক্যাম্প থেকে পালিয়ে ঢাকায় আসতে তিন ভাগে দালালদের হাত ধরতে হয়। প্রথম ধাপের দালালরা কক্সবাজারের রোহিঙ্গা ক্যাম্প থেকে বের করে চট্টগ্রাম পর্যন্ত পৌঁছে দেয়। এখান থেকে বেশিরভাগ সময়ে দ্বিতীয় দালালরা ট্রেনে করে রোহিঙ্গাদের ঢাকায় পাঠায়। তৃতীয় দালালরা এ সব রোহিঙ্গাদের ট্রেন থেকে নামিয়ে কখনও যাত্রাবাড়ী, কখনও টঙ্গীতে থাকার ব্যবস্থা করে। পাসপোর্ট-ভিসা করানোর পর তাদের এনে হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমান বন্দরের পাশের এলাকা খিলক্ষেত বা আশুলিয়ায় রাখা হয়। তারপর সুযোগ মতো নির্ধারিত সময়ে তাদের বিমানে উঠিয়ে দেয়া হয়।

দালাল চক্রের সূত্রের বরাত দিয়ে তদন্ত সংশ্লিষ্ট সূত্র আরও জানায়, প্রথম ধাপে রোহিঙ্গা ক্যাম্প থেকে পালিয়ে চট্টগ্রাম নিয়ে আসা পর্যন্ত প্রথম ধাপের দালাল পায় প্রত্যেকের কাছ থেকে ১০ হাজার টাকা। সেখান থেকে নিয়ে ট্রেনে বা বাসে ঢাকায় পাঠানোর সময় দ্বিতীয় ধাপের দালাল নেয় ১০ হাজার টাকা। ঢাকায় পৌঁছার পর রোহিঙ্গাদের নিয়ে নিরাপদে রাখা, ন্যাশনাল আইডি কার্ড ও পাসপোর্ট বানানো, ভিসা লাগানো এবং ভিসা হয়ে গেলে বিমান বন্দরের আশপাশে রাখাসহ বাকি কাজে তৃতীয় ধাপের দালাল নেয় ১ লাখ ৮০ হাজার টাকা। এরপর বিমান বন্দরের কারো সঙ্গে যোগাযোগের মাধ্যমে রাতের ফ্লাইটে বিমানে তুলে দেয়া হয়। 

এমএএম/এসএমএম