• ঢাকা
  • শনিবার, ২৭ এপ্রিল, ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১
প্রকাশিত: মে ২০, ২০১৯, ১০:১৫ এএম
সর্বশেষ আপডেট : মে ২০, ২০১৯, ১০:২০ এএম

মায়ের সান্নিধ্য পেতে ব্যাকুল শিশু গহীন

মায়ের সান্নিধ্য পেতে ব্যাকুল শিশু গহীন
শিশু গহীন- ফাইল ছবি

 

পৃথিবীতে আসার সপ্তাহ পেরিয়ে যাচ্ছে গহীনের। কখনো হাসি আবার কখনো কান্না। ‘ছোটমনি নিবাসে’ এভাবেই পরিচারিকাদের আদর-মমতায় দিন কাটছে তার। বিছানা তার অপছন্দ। মায়ের সান্নিধ্য পেতে ব্যাকুল শিশু গহীন। তাকে কোলে নিয়ে একটু ঘোরাঘুরি করলেই ঘুমিয়ে পড়ে। রোববার (১৯ মে) পর্যন্ত কোন পরিবার তাকে দত্তক হিসেবে নেয়ার অনুমতি পায়নি। আদালতের কাছে আবেদন করেও বিচারকের নির্দেশ মিলেনি একাধিক পরিবারের কারো। এর ফলে আরও বেশ কিছুদিন ‘ছোটমনি নিবাসের’ খালামনিদের কোলেই বেড়ে উঠছে শিশু গহীন।   

ছোটমনি নিবাসের ওয়ার্ডে দায়িত্বরত মেট্রন নাজমা আক্তারের সাথে কথা বলে এমন তথ্যই পাওয়া গেছে। আজিমপুরের ‘ছোটমনি নিবাসের’ তিন তলায় শিশু ওয়ার্ডে আছে গহীনের। তার মতো পরিবারহীন আরো ২০ জনের স্থান হয়েছে ওয়ার্ডটিতে। রাখা হয়েছে সাড়ি সাড়ি সাজানো ছোট ছোট স্টিলের খাটে।

ছোটমণি নিবাসের পরিচারিকা জানান, গহীনকে কোলে নিয়ে ঘোরাঘুরি করার সময় কোলেই ঘুমিয়ে পড়ছে। পরে বিছানায় রাখতে গেলে আবার উঠে পড়ছে। মাঝে মধ্যে কান্নাও করছে গহীন। প্রতিদিন অসংখ্য লোক আসছে তাকে দত্তক নেয়ার জন্য। যারা খাবার নিয়ে আসছেন, কোলে নিচ্ছেন তাদের দিকে বার বার তাকাচ্ছে সে। হয়ত তাদের মধ্যে খুঁজে ফিরছে মায়ের চিরচেনা মুখটি।

শিশু হাসপাতালের টয়লেট থেকে উদ্ধার হওয়া সেই শিশুকে আজিমপুরে অবস্থিত সমাজসেবা অধিদফতরের ছোটমনি নিবাসে স্থানান্তর করা হয়েছে। গত বৃহস্পতিবার (১৬ মে) দুপুর দেড়টার দিকে শিশু হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ ছোটমনি নিবাসের কর্মকর্তাদের কাছে তুলে দেয় শিশু গহীনকে। পরে অ্যাম্বুলেন্সে করে শিশুটিকে আজিমপুর ছোটমনি নিবাসে নিয়ে যাওয়া হয়।

সর্বশেষ পাওয়া সংবাদ অনুযায়ী, ছোটমনি নিবাসের উপ-তত্ত্বাবধায়ক জুবলি বেগম রানুর সাথে একাধিকবার মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি কখনো বাজারে আছেন, আবার কখানো ব্যস্ত আছি বলে এড়িয়ে যান। 

সমাজসেবা অধিদফতরের মহাপরিচালক গাজী মোহাম্মাদ নূরুল কবির জানান, আপনারা বিকাল তিনটা পর্যন্ত অপেক্ষা করেন। গহীনকে দেখানোর ব্যবস্থা করছি। 

তত্ত্বাবধায়ক জুবলি বেগম রানু বলেন, বিকাল তিনটার দিকে ফোনে যোগাযোগ করে আসবেন বলা হলেও পরে তিনি আর ফোন ধরেননি।

হাসপাতারের বাথরুমে শিশুটির সন্ধান পাওয়ার পর থেকে আদর যত্ন নিয়েছেন শিশু হাসপাতালের ওয়ার্ড মাস্টার রাসেল মাহমুদ ও তার স্ত্রী পলি বেগম। এই দম্পতির ১০ বছর আগে বিয়ে হলেও তারা নিঃসন্তান। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানায় গহীনকে ছোটমণি নিবাসে নিয়ে যাওয়ার সময় পলি কোনভাবেই কোল ছাড়া করতে চাননি। অন্যদিকে শিশুটিকে দত্তক নিতে আবেদনের হিড়িক পড়েছে। অনেকেই আসছেন তাকে দত্তক নিতে। একাধিক আবেদন হওয়াতে গহীনের অভিভাবক কে হচ্ছেন সেটি এখন আদালতই নির্ধারণ করবে।

শিশুটির যেকোন প্রয়োজনে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় সব সময় পাশে থাকবে বলে জানিয়েছেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী। এছাড়া তার পুনর্বাসনের দায়িত্বও সরকারের। 

পুলিশের তেজগাঁও জোনের সহকারি কমিশনার মাহমুদ হাসান জানান, শিশুটির বাবা-মাকে খুঁজতে আমরা চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। তাছাড়া হাসপাতালের সিসির ফুটেজে বোরখা পড়া ২ নারী শিশু কোলে নিয়ে হাসপাতালে প্রবেশ এবং বাথরুমে শিশু ফেলে পালানোর দৃশ্য পাওয়া গেছে। তবে বোরখা পড়া ওই ২ নারীকে শনাক্ত করা যায়নি। এরই মধ্যে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বাচ্চাটির ছবি সহ পোস্ট দেয়া হয়েছে। পরবর্তীতে শিশু আইনে যা সিন্ধান্ত হবে পুলিশ সেটাই মেনে কাজ করবে বলে জানান তিনি।

এইচ এম/টিএফ