• ঢাকা
  • মঙ্গলবার, ৩০ এপ্রিল, ২০২৪, ১৭ বৈশাখ ১৪৩১
প্রকাশিত: মে ২০, ২০১৯, ০৯:০৫ পিএম
সর্বশেষ আপডেট : মে ২০, ২০১৯, ০৯:০৫ পিএম

নদী দখলমুক্ত রাখতে পরিকল্পনা হচ্ছে

নদী দখলমুক্ত রাখতে পরিকল্পনা হচ্ছে

দেশের নদ-নদীগুলোকে দখলমুক্ত রাখতে সরকার পরিকল্পনার প্রণয়ন করতে যাচ্ছে। এরইমধ্যে নানা প্রণোদনামূলক কার্যক্রমও শুরু করেছে নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়। সেই লক্ষ্যে যে পথ-নকশা হয়েছে; সেখানে ৮ ধরনের পদক্ষেপের কথা বলা হয়েছে। পদক্ষেপগুলো হচ্ছে, সারা দেশের পানিসম্পদের সদ্ব্যবহার, নদ-নদী দূষণরোধে ও রক্ষায় শিক্ষার্থীদের সম্পৃক্ত করা, পাঠ্যপুস্তকে নির্দিষ্ট কারিকুলাম সংযোজন করা, আগামীতে নদীগুলো যেন বেদখল না হয়, এ ব্যাপারে জনগণকে সম্পৃক্ত করার পাশাপাশি সংবাদদাতাকে পুরস্কারের ব্যবস্থা করা, জমি ক্রয়ের আগে কোনো নদীর অংশ কি না তা উল্লেখ করতে আইনের ধারা সংযুক্ত রাখার ব্যবস্থা করা, নদীকে দখল-দূষণমুক্ত রাখতে পথচারীদের উচ্ছিষ্ট অংশ যথাস্থানে ফেলতে বাক্স বা ঝুড়ি সংরক্ষণ করা এবং বিষাক্ত বর্জ্য, নির্গত আবর্জনা ও ময়লা ফেলা রোধসহ নদীদূষণ বন্ধে প্রচারপত্র বিলি করা। এছাড়া নদীর বর্জ্য উত্তোলনের জন্য বর্জ্য উত্তোলন উপযোগী জাহাজ কেনা।

সংশ্লিষ্ট সূত্রমতে, নৌ মন্ত্রণালয়ের অধীন ৩২টি নদীবন্দর রয়েছে। স্বাধীনতাপূর্ববর্তী থেকে স্বাধীনতাপরবর্তী সময়ে এগুলোর সীমানা চিহ্নিত করা হয়। ১৯৬০ সালে ঢাকা ও খুলনার বেশ কয়েকটি নদীবন্দরকে স্বীকৃতি দিয়ে গেজেট প্রকাশ করা হয়। এদিকে প্রায় ৫৮ বছর পর মেঘাইঘাট-নাটুয়ারপাড়া নদীবন্দরকে স্বীকৃতি দেয়া হয়েছে এ বছরের ১৩ জানুয়ারি। কিন্তু ঢাকা, নারায়ণগঞ্জ, নগরবাড়ী-কাজীরহাট নরাদহ ও টংগী বাদে ২৮টি নদীবন্দরের সীমানা এখনো চিহ্নিত হয়নি।

এদিকে পুরনো-নতুন নদীর সীমানা নির্ধারণ করা থাকলেও ভূমিদস্যু ও অবৈধ দখলদাররা তা মানতেন না। ‘জোর যার মুল্লুক তার’ এ নীতিতে তারা নদীর পুরো জায়গা নিজের দখলে নিয়ে নিত। ফলে নদী সরু হয়ে স্বাভাবিক নৌযান চলাচল বাধাগ্রস্ত হয়। এছাড়া দখল-দূষণে অনেক নদীর অবস্থা প্রায় মৃত। জলবায়ুর ক্ষতিকর প্রভাব তো আছেই। বিশ্বের ঝুঁকিপূর্ণ দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান শীর্ষে। অথচ জলবায়ু তহবিলের টাকাও ঝুঁকি বিবেচনায় কাজে লাগে না। এমনকী জলবায়ু তহবিলের স্বচ্ছতা নিয়েও রয়েছে নানা প্রশ্ন।

নৌপ্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী সংসদে বলেছিলেন, সরকারের চেয়ে বড় কোনো ক্ষমতাধর নেই। কাজের মাধ্যমে সেটি প্রমাণ দিয়েছেন তিনি। ঢাকা ও নারায়াণগঞ্জ নদীবন্দরের দুই পাশে অবৈধ দখলদারদের উচ্ছেদের মাধ্যমে। অতীতে ছিটেফোঁটা উচ্ছেদ হলেও দখলদারদের রাজত্ব ছিল সবসময়। এবার পরিস্থিতি পাল্টে গেছে পুরোদমে।

উচ্ছেদের এক চিত্রে পাওয়া তথ্যে দেখা গেছে (২০১০-২০১৯ সালের ৩০ এপ্রিল পর্যন্ত), ঢাকা ও নারায়ণগঞ্জ নদীবন্দরের দুই পাশে ১৬ হাজার ২২৫টি স্থাপনা উচ্ছেদ হয়েছে। উচ্ছেদ হওয়া স্থাপনার মধ্যে পাকা ২ হাজার ৫৭৭টি, আধাপাকা ১ হাজার ৬৯৬টি এবং অন্যান্য স্থাপনা ১১ হাজার ৯৫২টি। উদ্ধার হওয়া তীরভূমি ও জায়গার পরিমাণ ৬০১ দশমিক ৩২ একর। ঢাকা নদীবন্দরে উচ্ছেদ চলাকালীন জরিমানা করা হয় ৪১ লাখ ২৪ হাজার ৫০০ টাকা এবং নারায়ণগঞ্জে ২১ লাখ ৯৩ হাজার টাকা। উচ্ছেদে ঢাকা নদীবন্দর এলাকাতে মামলা না হলেও নারায়ণগঞ্জে ৩ জনের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে। বর্তমান প্রতিমন্ত্রীর মেয়াদে ঢাকা ও নরায়ণগঞ্জে ৩ হাজার ২০০ অবৈধ স্থাপনা ও ৯১ একর ভূমি উদ্ধার হয়েছে।

সংশ্লিষ্ট সূত্রমতে, বাংলাদেশে নদীর সংখ্যা কত এখনো তার সঠিক তথ্য নির্ণয় হয়নি। তবে সর্বশেষ ২০১১ সালের বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ডের এক তথ্যে উল্লেখ আছে নদ-নদীর সংখ্যা ৪০৫টি। বিভিন্ন তথ্যের হিসাবে সচল নদীর সংখ্যা ২৩০টি বেশি নয়।

এদিকে নদীর সংখ্যা যাই থাকুক না কেন, নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন নদীবন্দরের সংখ্যা ৩২টি। এদিকে খুলনা, বরিশাল ও চাঁদপুর- অনেক পুরোনো নদীবন্দর হলেও এখনো সেগুলোর সীমানা নির্ধারণ হয়নি।

১৯৭৫ সালে পটুয়াখালী এবং ১৯৮১ সালে বাঘাবাড়ী নদীবন্দর হিসেবে স্বীকৃতি পায়। ১৯৮৩ সালে স্বীকৃতি মেলে আরিচা, দৌলতদিয়া ও নগরবাড়ী-কাজীরহাট নরাদহ নদীবন্দরের। আর ১৯৮৯ সালে নদীবন্দরের স্বীকৃতি পায় নরসিংদী। বাকি নদীবন্দরগুলো ২০০৪ সালের পর থেকে চলতি বছরের ১৩ জানুয়ারি সময়কালের মধ্যে। এসব নদীবন্দর হচ্ছে ভোলা, মীরকাদিম (মুন্সীগঞ্জ), শিমুলিয়া, নওয়াপাড়া, আশুগঞ্জ-ভৈরববাজার, বরগুনা, চরজানাজাত, ছাতক, মেঘনা, কক্সবাজার, ফরিদপুর, ঘোড়াশাল, টেকনাফ, টেকেরঘাট, চিলমারী, মজুচৌধুরীরহাট, সুনামগঞ্জ, দাউদকান্দি ও বাউশিয়া, রূপপুর ও মেঘাইঘাট-নাটুয়ারপাড়া।

এসব নদীবন্দরের মধ্যে কয়েকটির সীমানা চিহ্নিত থাকলেও বেশির ভাগ নদীবন্দরের সীমানা চিহ্নিত হয়নি। আগামীতে তা চিহ্নিত করতে কাজ শুরু করেছে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ। তবে সীমানা চিহ্নিত ও অচিহ্নিত সব নদীবন্দরের জায়গা স্থানীয় প্রভাবশালীরা অবৈধভাবে দখল করে প্রাসাদ ও অট্টালিকা তৈরি করে দিব্যি ব্যবসা করে যাচ্ছেন। এবার তাদের লাগাম টানতে মাঠে নেমেছে নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়।

নদীরক্ষা কমিশন, নৌপরিবহন মন্ত্রণালয় এবং নৌপরিবহন সংসদীয় স্থায়ী কমিটি নদীর জায়গা সংরক্ষণে একাট্টা। নৌপরিবহন প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী বলেন, নদীর তীরসহ নদীগুলোর অংশ বিশেষ দখল করে নদ-নদীর সার্বিক চিত্র বিশ্লেষণ করা হয়েছে। বর্তমান সরকারের এতে পূর্ণ সমর্থন রয়েছে। তাই সারা দেশে নদ-নদীগুলো দখলকারীদের হাত থেকে রক্ষা করা সম্ভব।

নৌপরিবহন সংসদীয় কমিটির সভাপতি মেজর (অব.) রফিকুল ইসলাম বলেন, বাংলাদেশের নদীর অবৈধ দখল এখন থেকেই সম্পূর্ণ বন্ধ করতে হবে। দেশের নদীগুলো আর যেন দখল না হয়, এ ব্যাপারে জনগণকে সম্পৃক্ত করার লক্ষ্যে দখলসংক্রান্ত তথ্য প্রদানকারীকে পুরস্কারের ব্যবস্থা রাখা ভালো ফল আনতে পারে।

নদী রক্ষা কমিশনের চেয়ারম্যান ড. মজিবুর রহমান হাওলাদার বলেন, দেশের নদীগুলো এক সময়ে খরস্রোতা ছিল। চামড়া শিল্পের বিষাক্ত বর্জ্য, পলিথিন, আবর্জনা ও ময়লা নদীদূষণ হচ্ছে। অবৈধ দখল নদীর স্বাভাবিক প্রবাহ বন্ধ হয়ে মৃতপ্রায় নদীতে পরিণত হয়েছে। নদীর জমি নদীকে ফিরিয়ে এবং খনন করে নদীগুলোকে রক্ষা করতে হবে। 

টিএইচ / এফসি