• ঢাকা
  • শনিবার, ০৪ মে, ২০২৪, ২০ বৈশাখ ১৪৩১
প্রকাশিত: মে ২২, ২০১৯, ০৬:২৭ পিএম
সর্বশেষ আপডেট : মে ২২, ২০১৯, ০৬:২৭ পিএম

‘রিকশা উঠান, কৃষিতে দেশ উন্নত হবে’

‘রিকশা উঠান, কৃষিতে দেশ উন্নত হবে’
সিএনজি চালিত অটোরিকশার মালিক মো. রিয়াজ- ছবি: জাগরণ

ঢাকার উন্নয়নে বড় বাধা রিকশা। ঢাকায় রিকশা চলাচল বন্ধ করলে গ্রাম থেকে আগত রিকশা চালকরা গ্রামেই থাকবেন, এটা কৃষির জন্য মঙ্গলজনক বলে মনে করেন বেশকিছু সিএনজি চালিত অটোরিকশার মালিক মো. রিয়াজ। এই কথাগুলো বোঝাতে তিনি তার মালিকানাধীন কিছু সিএনজি চালিত অটোরিকশার গায়ে লিখে রেখেছেন, ‘রিকশা উঠান, কৃষিতে দেশ উন্নত হবে’; ‘রিকশা দেশের উন্নয়নে বড় বাধা’।

গত ১৫ মে দৈনিক জাগরণ প্রতিবেদক গুলশান ১ নম্বরে চলন্ত অবস্থায় দেখতে পায় একটি সিএনজি চালিত অটোরিকশায় ‘রিকশা দেশের উন্নয়নে বড় বাধা’ লেখাটি। অটোরিকশায় থাকা মালিকের ফোন নম্বরের সূত্র ধরেই যাত্রাবাড়ির ধলপুর থেকে সন্ধান পাওয়া যায় মো. রিয়াজের। ২১ মে দুপুরে রিয়াজের গ্যারেজে বসে দীর্ঘক্ষণ কথা হয় এ প্রতিবেদকের।

রিয়াজ বলেন, এই যে দেখেন, এখন ধানের দাম কম। সেদিন পত্রিকায় দেখলাম, দাম কম দেইখা এক কৃষক তার ক্ষেতে আগুন লাগায়া দিসে। সেই লোকটা নিশ্চয়ই উচ্চমূল্যে শ্রমিক দিয়া কাম করাইসে। এটার একটা প্রভাব পড়ছে। দেখেন, এসব রিকশা চালকরা যদি গ্রামে থাকত, তাহলে কৃষকরা নিয়মিত শ্রমিক পাইত, শ্রমের বাজার এতো চড়া হইতো না।

কিন্তু গ্রামের আয় দিয়ে চলতে পারে না বলেই অনেকে ঢাকায় আসেন রিকশা চালাতে- কথাটি বলা মাত্রই মো. রিয়াজের কণ্ঠস্বর তেতে ওঠে। তিনি বলেন, এইটা একবারে মিথ্যা কথা। অলসগুলা ঢাকায় আসে রিকশা চালাতে। আমার দেশ এমন দেশ, যেখানে যা লাগাবেন, তা-ই হবে। বহুত রিকশাচালক আছে, তারা গ্রামে কৃষিকাজ কইরা খাইতে পারে। কিন্তু করবে না, কষ্ট লাগে। ঢাকায় আইসা রোইদে পুরতে, বৃষ্টিতে ভিজতে, রাস্তাঘাটে ঘুমাইতে-বাথরুম করতে ঠিকই ভাল লাগে। কৃষি কাজ করতে কি নিজের নামে জায়গা লাগে? বর্গা নেওন যায়, বাড়ির উঠান আছে, হাঁস-মুরগি পালন যায়। কেন তারা রিকশা চালাবে?

রিয়াজের দৃষ্টিতে ঢাকায় রিকশা চলাচল করলে বহু ধরনের সমস্যা, তাছাড়া চালক মনের অজান্তেই নিজেও অনেক সমস্যার শিকার হন। এসব হচ্ছে- রিকশাচালকরা সিগনাল মানে না বা বোঝে না, এজন্য হুটহাট লেগে যায় যানজট। তাদের বেশিরভাগের হাত অদক্ষ, এজন্য দুর্ঘটনার শিকার হন তারা এবং যাত্রী। মারাত্মক দুর্ঘটনার শিকার হয়ে রিকশাচালকরা পরিবার, সমাজের বোঝায় পরিণত হবার ঝুঁকিতে থাকে। পরিবারিক বন্ধনের বাইরে থেকে রিকশাচালকরা ঢাকায় মাদকাসক্ত, অবৈধ যৌনকর্ম, জুয়ায় আসক্ত হয়ে বিপথে চলে যান। অল্প উপার্জন হয় বলে রিকশাচালকরা ভাল পরিমাণ অর্থ দিয়ে ন্যূনতম পরিচ্ছন্ন পরিবেশে থাকতে পারেন না, স্বাস্থ্যকর খাবার খেতে পারেন না। বিপরীতে যে পরিশ্রম করেন, সেটা ভয়াবহ ক্ষতিকর। পরিশ্রমের চাপ সইতে না পেরে বহু রিকশাচালক হার্ট অ্যাটাক, হাঁপানি, কিডনির রোগে আক্রান্ত হচ্ছেন। তাছাড়া ঢাকার বেশকিছু রিকশাযাত্রী আছেন, যারা অতিঅল্প দূরত্বও রিকশা ছাড়া বোঝেন না, সেসব যাত্রীরাও শারীরিক সমস্যায় আক্রান্ত হচ্ছেন।

রিয়াজ বলেন, একসময় ঢাকায় যানবাহন কম ছিল, এত মানুষ ছিল না। মানুষের ব্যক্তিগত যানবাহন কম ছিল। কিন্তু এখন দিন বদলাইছে। এখন ঢাকার রাস্তায় কত গাড়ি নামছে, মানুষের নিজস্ব গাড়ি হইছে বহুত। রিকশার এখন কোনো দরকার নাই। তারা গ্রামে যাক, দরকার পড়ে সরকার তাদের পুনর্বাসন করুক। তাদেরকে প্রশিক্ষিত করুক, বিনা বা স্বল্প সুদে ঋণ প্রদান করুক।

বর্তমানে ঢাকার অলস বাসিন্দারা রিকশায় অভ্যস্ত মন্তব্য করে রিয়াজ বলেন, গ্রামের মানুষের দিকে তাকান। তারা এখনও হাঁটে, তাই তারা সুস্থ্। ঢাকার মানুষতো হাঁটতেই চায় না। খালি রিকশা রিকশা করে। ডায়াবেটিস, কিডনি রোগ, প্রেসারের সমস্যা নিয়া ভোগে।

‘ঢাকার রিকশার বিষয়ে শুধু কি এসব লেখা প্রচারই করবেন না কি অন্যকিছুও করবেন’- এ প্রশ্নে রিয়াজ বলেন, কোনো রিকশাচালক যদি আমাকে বলে সে সিএনজি চালাতে চায়, আমি তাকে শেখাব, নিজের পায়ে নিজে দাঁড়াতে সহযোগিতা করব। শোনেন, রিকশাচালক ট্রাক ড্রাইভার হইতে পারে না। কিন্তু সিএনজি অটোচালক হইতে পারে। রিকশা চালানি কোনো কাম হইল? যাদের কাম নাই, অলস, ফাঁকিবাজ তারাই আসে রিকশা চালাতে।

এ প্রসঙ্গে রিয়াজ আরও বলেন, ইচ্ছা আছে, এইটা নিয়া আলোচনা করুম, লিফলেট বানায়া মাইনষেরে দিমু, অনুষ্ঠান করুম। ঢাকা থেকে রিকশা উচ্ছেদ করতে পারলে ঢাকার রাস্তার জন্যও ভাল, রিকশাচালকের জন্যও ভাল।

আরএম/টিএফ