• ঢাকা
  • শনিবার, ২৭ এপ্রিল, ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১
প্রকাশিত: জুন ২৪, ২০১৯, ০৯:৫৩ পিএম
সর্বশেষ আপডেট : জুন ২৪, ২০১৯, ০৯:৫৪ পিএম

ডিআইজি মিজানের দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা

ইমিগ্রেশন ও সীমান্তে ওয়ারেন্ট প্রোফাইল

ইমিগ্রেশন ও সীমান্তে ওয়ারেন্ট প্রোফাইল
ডিআইজি মিজান

ঘুষ ও নারী কেলেঙ্কারীর অভিযোগে ডিআইজি মিজানকে দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা জারি করেছেন আদালত। এই নিষেধাজ্ঞার অংশ হিসেবে দেশের আর্ন্তজাতিক বিমানবন্দর, ইমিগ্রেশন ও সীমান্তের চেকপোষ্টে বিশেষ সতর্কতা জারি করা হয়েছে। 

হযরত শাহজালাল বিমান বন্দরসহ দেশের ৩টি আন্তর্জাতিক বিমান বন্দর, বেনাপোল, হিলি, আখাউড়া, সোনা মসজিদ সীমান্তসহ দেশের চেকপোস্ট ইমিগ্রেশন কর্মকর্তাকে বিশেষ বার্তা পাঠানো হয়েছে। পাশাপাশি সীমান্তের অতন্দ্র প্রহরী বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি)সদস্যদেরকে সর্বোচ্চ সর্তক থাকার নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। এরই অংশ হিসেবে সোমবার (২৩ জুন) ঢাকার পুলিশ সদর দফতর থেকে দেশের সীমান্ত এলাকার জেলা পুলিশ সুপার বরাবরে (এসপি) বিশেষ বার্তা দেয়া হয়েছে। 

সোমবার (২৪ জুন) রাতে সতর্কতার বিষয়টি সীমান্ত জেলা এসপি, বেনাপোল ইমিগ্রেশন ও বিজিবি কর্তৃপক্ষ দৈনিক জাগরণকে বিষয়টি নিশ্চিত করেছে।

যশোর বেনাপোলে কর্মরত পুলিশ কর্মকর্তা অপুর্ব হাসান ডিআইজি মিজানের বিষয়ে দৈনিক জাগরণকে বলেন, যোগাযোগ ব্যবস্থা সহজ হওয়ায় বেনাপোল ইমিগ্রেশন ও সীমান্ত পথে বিভিন্ন কৌশলে ভারতে যাওয়ার সুযোগ থাকে। এজন্য বেনাপোল সীমান্তে নজরদারি বাড়ানো হয়েছে। পাশাপাশি বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ বেনাপোল ক্যাম্পের সীমান্ত পথে চোরাচালান ও অবৈধ অনুপ্রবেশ রোধে তারা সবসময় সতর্ক রয়েছেন। 

বেনাপোল ইমিগ্রেশনের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা(ওসি) আবুল বাশার জানান, ঢাকা পুলিশের এসবি (স্পেশাল ব্রাঞ্চ) থেকে একটি নির্দেশনায় ডিআইজি মিজানের বেনাপোল ইমিগ্রেশন হয়ে দেশ ত্যাগ না করতে পারার বিষয়ে সতর্কতা জারি করা হয়েছে।

এদিকে শাহজালাল বিমান বন্দরের সিভিল এভিয়েশন কর্মকর্তা মনিরুল ইসলাম জানান, শুধু ডিআইজি মিজান নয় এ রকম মোষ্ট ওয়ান্টেডদের প্রোফাইল সিভিল এভিয়েশনের কর্মকর্তাদের দফতরে রয়েছে। যে কর্মকর্তাই দায়িত্ব পালন করে থাকেন বর্হিগমনে যাত্রীদের ভিসা যাচাইয়ের সময় সে তালিকা নিয়ে আগে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা হয়ে থাকে। ডিআইজি মিজানের ক্ষেত্রে আরও সতর্ক করে দেয়া হয়েছে।   
  
অপরদিকে পুলিশ সদর দফতরের পক্ষ থেকে এক বার্তায় বলা হয়েছে, ডিআইজি মিজানের বিষয়ে বাংলাদেশ পুলিশের অবস্থান অত্যন্ত পরিষ্কার ও সুস্পষ্ট। তার বিরুদ্ধে যথাযথ আইনি ব্যবস্থা নিতে আইজিপি সংশ্লিষ্ট সবাইকে নির্দেশ দিয়েছেন। তাকে আইনের আওতায় আনার চেষ্টা চলছে।  
এছাড়া স্বরাষ্ট্রমন্ত্রণালয় থেকে ইমিগ্রেশন কর্মকর্তাদের সতর্ক থাকার নির্দেশ দেয়া হয়েছে যে, বিমান বন্দর ও বেনাপোল আন্তর্জাতিক চেকপোস্ট দিয়ে যাতে ডিআইজি মিজান প্রতিবেশী দেশগুলোতে পালিয়ে যেতে না পারে। সে ব্যাপারে সতর্ক দৃষ্টি রাখতে বলা হয়েছে। এ নির্দেশের পর বেনাপোল আন্তর্জাতিক চেকপোস্ট ইমিগ্রেশনে অতিরিক্ত সতর্কতার পাশাপাশি গোয়েন্দা নজরদারিও বাড়ানো হয়েছে। এ কারণে বেনাপোল চেকপোস্টে তদারকি করছে ইমিগ্রেশন পুলিশ।

ইমিগ্রেশন সূত্র বলেছে, গতকাল দুপুরে ডিআইজি মিজানের বিরুদ্ধে দুদকের মামলা দায়েরের পাশাপাশি আদালত তাকে দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা জারি করে। এরপরই   বেনাপোল ইমিগ্রেশনে সতর্কতা জারি করেছে ইমিগ্রেশন কর্তৃপক্ষ। বেনাপোল চেকপোস্ট ইমিগ্রেশন দিয়ে ভারত-বাংলাদেশের মধ্যে যাতায়াতকারী প্রত্যেক পাসপোর্টযাত্রীকে যাচাই বাছাই করে পরিচয় নিশ্চিত হওয়ার পরেই তাদের যাতায়াতের অনুমতি দিচ্ছে চেকপোস্ট ইমিগ্রেশন কর্তৃপক্ষ।পাসপোর্টের মাধ্যমে ভূয়া নাম ঠিকানা ব্যবহার করে ডিআইজি মিজান যেন পালাতে না পারেন, সে জন্য বহির্গমন ডেক্স অফিসারদের সামনে ছবি দেয়া হয়েছে। কোনো পাসপোর্টধারী যাত্রীর নামের সঙ্গে অপরাধীর নাম মিলে গেলে তাদের ছবি ও ঠিকানা যাচাই-বাছাই করে ছাড়া হচ্ছে। পুলিশের পক্ষ থেকে এ নিষেধাজ্ঞা দিয়ে ছবিসহ বাংলাদেশের সব স্থলবন্দর ও বিমানবন্দরে বার্তা পাঠানো হয়। প্রতিটি পাসপোর্টধারী যাত্রীর চেহারার সঙ্গে ছবি মিলিয়ে ভারত গমনের অনুমতি দেয়া হচ্ছে। ইমিগ্রেশন ছাড়াও নো-ম্যান্সল্যান্ড ও আশেপাশে সতর্ক আছে পুলিশ। এছাড়া সীমান্তের শার্শা ও পোর্ট থানা পুলিশও সতর্ক রয়েছে বলে জানান পোর্ট থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শেখ আবু সালেহ মাসুদ করিম।

সোমবার দুপুরে তিন কোটি ৭ লাখ টাকার সম্পদের তথ্য গোপন ও তিন কোটি ২৮ লাখ টাকা অবৈধভাবে অর্জনের অভিযোগে বাংলাদেশ পুলিশের উপ-মহাপরিদর্শক (ডিআইজি) মিজানুর রহমানের বিরুদ্ধে মামলা করে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। কমিশনের চেয়ারম্যান ইকবাল মাহমুদ সোমবার (২৪ জুন) দুপুরে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন। 

তিনি জানান, রোববার (২৩ জুন) কমিশনের নির্ধারিত বৈঠকে ডিআইজি মিজানের বিরুদ্ধে মামলার অনুমোদন দেয়া হয়। সোমবার (২৪ জুন) কমিশনের রেজুলেশন পাস হয়। দুদকের ঢাকা সমন্বিত জেলা কার্যালয়ে  তার বিরুদ্ধে মামলাটি করেন দুদকের পরিচালক মঞ্জুর মোর্শেদ।মামলা নম্বর- ০১।
ফলে দুদকের সংশোধিত বিধিমালায় প্রথম মামলাটি হলো পুলিশের বিতর্কিত ডিআইজি (উপ-মহাপরিদর্শক) মিজানুর রহমানের বিরুদ্ধে। এর আগে দুর্নীতি সংক্রান্ত যে কোনো মামলা থানায় গিয়ে করতে হতো। রোববার সংশোধিত বিধিমালার গেজেট প্রকাশ হয়। এর ফলে কমিশন যে কোনো ব্যক্তির বিরুদ্ধে মামলা করতে পারবে। গেজেট প্রকাশের পর ডিআইজি মিজানের মামলাটি প্রথম মামলা বলে বলে জানা গেছে।
  
 দুদক সূত্রে জানা গেছে, ডিআইজি মিজানুর, তার স্ত্রী, ভাই ও ভাগ্নের বিরুদ্ধে মামলা করা হয়েছে। একইসঙ্গে তারা যেন দেশ ত্যাগ করতে না পারে সেজন্য ইমিগ্রেশনে পুলিশের কাছে চিঠিও দিয়েছে কমিশন। পুলিশ সদর দফতর আদালতের চিঠি আমলে নিয়ে তাৎক্ষণিক দেশের সকল সীমান্ত চেকপোষ্ট ও বিমান বন্দরের ইমিগ্রেশনে সতর্ক বার্তা পাঠানো হয়েছে। ডিআইজি মিজানের বিরুদ্ধে পুলিশের উচ্চপদে থেকে তদবির, নিয়োগ, বদলিসহ নানা অনিয়ম ও দুর্নীতির মাধ্যমে অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগে অনুসন্ধান শুরু হয় ২০১৮ সালের ৪ জানুয়ারি। প্রায় দেড় বছর অনুসন্ধান করে দুদক অভিযোগের সত্যতা পায়। স্থাবর-অস্থাবর বিভিন্ন সম্পদ ডিআইজি মিজানের মালিকানা, নিয়ন্ত্রণ ও ভোগদখলে রয়েছে। যা তার বৈধ আয়ের সঙ্গে মিল খুঁজে পাওয়া যায়নি।

সর্বশেষ দুদক পরিচালক মঞ্জুর মোর্শেদের নেতৃত্বে তিন সদস্যের টিম মিজানের বিরুদ্ধে জ্ঞাত আয় বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের অভিযোগ অনুসন্ধান করে। এর আগে, বিষয়টির অনুসন্ধান করেন সাময়িক বরখাস্ত হওয়া দুদক পরিচালক খন্দকার এনামুল বাছির। তার আগে ডিআইজি মিজানের বিরুদ্ধে উত্থাপিত অভিযোগ অনুসন্ধান করেন উপপরিচালক ফরিদ আহমেদ পাটোয়ারী।ডিআইজি মিজানের অবৈধ সম্পদ অনুসন্ধানের দায়িত্বে থাকা দুদক পরিচালক খন্দকার এনামুল বাছিরকে (সাময়িক বরখাস্ত) করা হয়। কারণ বাছির অনুসন্ধান করতে গিয়ে ডিআইজি মিজানের কাছ থেকে ৪০ লাখ টাকা ঘুষ নিয়েছেন বলে দাবি করেন। তিনি এ সংক্রান্ত তিনটি অডিও রেকর্ড প্রকাশ করেন। এরপরই মিজান-বাছির ঘুষ কেলেঙ্কারির বিষয়টি অনুসন্ধানে পৃথক একটি কমিটি করে দুদক।

মিজানুর রহমানের বিরুদ্ধে ২০১৮ সালে একটি জাতীয় দৈনিকে ‘তুলে নিয়ে বিয়ে করলেন অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার’ শিরোনামে অনুসন্ধানী প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। পরে বিষয়টি তোলপাড় সৃষ্টি করে। ওই ঘটনায় পুলিশ সদর দফতরসহ দুর্নীতি দমন কমিশনে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। সম্প্রতি দুদকের প্রতিবেদনে তার দুর্নীতির প্রমাণ পাওয়া যায়।

এইচ এম/বিএস