গ্যাসের দাম বাড়ানোর প্রতিবাদে রাজধানী ঢাকাসহ সারাদেশে গণতান্ত্রিক বাম জোটের আহ্বানে রোববার (৭ জুলাই) সকাল ৬টা থেকে শান্তিপূর্ণভাবে হরতাল চলছে। হরতালকে সফল করতে সকাল থেকেই রাজধানীর বিভিন্ন পয়েন্টে বাম জোট ও হরতাল সমর্থনকারী অন্যান্য দলের নেতাকর্মীরা রাজপথে অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ করছে।
সকাল থেকে পল্টন মোড়, জাতীয় প্রেসক্লাব, কাকরাইলের নাইটিঙ্গেল মোড়, গুলিস্তানসহ বিভিন্ন পয়েন্টে বাম জোট নেতাকর্মীরা হরতাল সফল করতে অবস্থান করছেন। শাহবাগ মোড়ে সড়ক বন্ধ করে দিয়েছে প্রগতিশীল ছাত্র জোট। এতে চারপাশে যানজটের সৃষ্টি হয়েছে। পল্টন মোড়ে বিক্ষোভ চলাকালে পুলিশ ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ৪ জনকে টেনে ধরে নিয়ে যায়। কিছুক্ষণ পর তাদের ছেড়ে দেয়া হয়।
পল্টনের বিক্ষোভ সমাবেশ থেকে বাম গণতান্ত্রিক জোটের সাবেক সমন্বয়ক সাইফুল হক বলেন, জনগণ স্বতঃস্ফূর্তভাবে হরতাল পালন করছে। পুলিশ দিয়ে হামলা করে হরতাল ঠেকানো যাবে না।
এদিকে গ্যাসের অযৌক্তিক দাম বাড়ানোর প্রতিবাদে বাম গণতান্ত্রিক জোটের হরতালে সমর্থন দিয়েছে বিএনপি। বিএনপির নেতাকর্মীরা রাজপথে না নামলেও হরতালকে কেন্দ্র করে অন্যান্য দিনের তুলনায় আজ নয়াপল্টন বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে ব্যাপক পুলিশি নিরাপত্তা ও অবস্থান দেখা যাচ্ছে। প্রিজন ভ্যান, রায়ট কার, এপিসি কার, জল কামান, সাদা মাইক্রো বাস, পুলিশ লরিসহ প্রায় ৫/৬টি অতিরিক্ত গাড়ি নয়াপল্টনে প্রস্তত রয়েছে। রয়েছে বিপুল সংখ্যক আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর অবস্থান। তবে নেতাকর্মীদের উপস্থিতি না থাকায় সেখানে কোনো আটকের ঘটনা এখন পর্যন্ত ঘটেনি।
তবে হরতালের মধ্যেও সড়কে পাবলিক পরিবহন চলতে দেখা যাচ্ছে। সিটি সার্ভিসের বাস, সিএনজি অটো রিকশা চলতে দেখা যাচ্ছে। তবে অন্যান্য দিনের তুলনায় কিছুটা কম। প্রাইভেট গাড়ির তেমন দেখা যাচ্ছে না।
এদিকে হরতালের স্বপক্ষে অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ করছে বাম গণতান্ত্রিক জোট। দেশব্যাপী অর্ধদিবস হরতালের অংশ হিসেবে পল্টনে তারা অবস্থান নেয়। এছাড়া রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় অবস্থান নিয়ে জোটের নেতাকর্মীদের বিক্ষোভ করার খবর পাওয়া গেছে।
পল্টনের বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ থেকে দাবি করা হয়, হরতাল পালনের লক্ষ্যে খুলনাসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় আয়োজিত মিছিলে পুলিশ হামলা চালিয়েছে ও গ্রেপ্তার করেছে। পল্টন থেকে মিছিল শুরু হয়ে কাকরাইল, নাইটিঙ্গেল মোড় হয়ে নয়াপল্টন বিএনপি কার্যালয়ের সামনে দিয়ে ফকিরাপুল হয়ে দৈনিক বাংলা মোড় হয়ে পুরান ঢাকার বাহাদুর শাহ পার্কে গিয়ে একটি মিছিল শেষ হয়। মিছিলে বাম নেতা গণসংহতি আন্দোলনের জোনায়েদ সাকি, বাসদের রাজেকুজ্জামান রতন, সিপিবির রুহিন হোসেন প্রিন্স, বাম জোটের সমন্বয়কারী সাইফুল হক, আবদুস সাত্তার, বাংলাদেশ ন্যাপের মহাসচিব গোলাম মোস্তফা ভুঁইয়া, এনডিপি মহাসচিব মঞ্জুর হোসেন ইশা, ন্যাপ নেতা কামাল ভুঁইয়া, শহিদুন্নবী ডাবলু, সাদিয়া ইসলাম ইমনসহ অনেক নেতাকর্মী অংশ নেয়।
রাজধানীর শাহবাগ, পল্টন, প্রেসক্লাব, মিরপুর, ফার্মগেইট, কারওয়ান বাজার এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, ঢিলেঢালাভাবে হরতাল চললেও কোথাও কোথাও হরতালের পক্ষে মিছিল ও নেতাকর্মীরা নিজেদের অবস্থান ধরে রেখেছেন।
এসব স্থানে পুলিশকে জলকামান, প্রিজন ভ্যান নিয়ে অবস্থান করতে দেখা যায়। এদিকে শাহাবাগ মোড়ে হরতালকারীদের অবস্থানে এই এলাকায় যানবাহন চলাচল বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। তবে বৃষ্টির মধ্যে শিক্ষার্থীদের স্কুলে যেতেও ভোগান্তির মধ্যে পড়তে হচ্ছে। এখন পর্যন্ত কোথাও কোনো অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনার খবর পাওয়া যায়নি।
শাহবাগ এলাকায় অনেককে হেঁটেই কর্মস্থলে রওনা হতে দেখা গেছে। মিরপুর ১০ নম্বর গোলচত্বর এলাকায় মিছিল করেছেন বামপন্থী বিভিন্ন সংগঠনের নেতাকর্মীরা।
সকাল ৬টা থেকেই বাংলাদেশ সমাজতান্ত্রিক দল, বাম গণতান্ত্রিক জোট ও বাংলাদেশ কমিউনিস্ট পার্টির নেতাকর্মীরা হরতালের সমর্থনে রাস্তায় অবস্থান নেয়। এ সময় তাদেরকে গ্যাসের দাম বাড়ানোর প্রতিবাদে বিভিন্ন স্লোগান দিতে ও পিকেটিং করতে দেখা গেছে।
মাহমুদুর রহমান মান্নার নেতৃত্বাধীন নাগরিক ঐক্যের নেতা আতিকুর রহমান ও জাহাঙ্গীর হোসেনের নেতৃত্বে ৭০/৮০ জনের একটি মিছিল বাম জোটের পল্টনের অবস্থানে মিছিল নিয়ে যোগ দেয়।
টিএস/ একেএস