• ঢাকা
  • বুধবার, ১৫ মে, ২০২৪, ১ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১
প্রকাশিত: জুলাই ১২, ২০১৯, ১২:০৫ পিএম
সর্বশেষ আপডেট : জুলাই ১২, ২০১৯, ০১:১০ পিএম

অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদে ঘটছে অপ্রীতিকর ঘটনা 

অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদে ঘটছে অপ্রীতিকর ঘটনা 

শত বাধা ও বিপত্তির মাঝেও চলছে বুড়িগঙ্গা নদীর তীরে অবৈধ দখলদারদের স্থাপনা ভেঙে গুড়িয়ে দেয়া অভিযান। শক্তিশালী হলেও দখলদাররা কিছু করার সাহস পায়নি। অভিযানে স্থানীয় সংসদ সদস্য হাজী মো. সেলিমের একাধিক বহুতল ভবন, দুদকের আইনজীবী মোশাররফ হোসেন কাজলের শ্বশুর বাড়িও বাদ যায়নি। কিন্তু অভিযানকারী দলের ওপর হামলার সাহস কেউ করেনি।

বুড়িগঙ্গা নদীর তীর চতুর্থ পর্বের দ্বিতীয় পর্যায়ের অভিযানের তৃতীয় দিনে হামলার ঘটনা ঘটে। বিআইডব্লিউটিএর যুগ্ম পরিচালক এ কে এম আরিফ উদ্দিন জানান, বৃহস্পতিবার (১১ জুলাই) অভিযান চলাকালে বেলা ১১টা নাগাদ শ্মশানঘাটের ইজারাদার ইব্রাহিম আহমেদ রিপন ও তার আরও দুই ভাই উচ্ছেদে বাধা দেন।

এক পর্যায়ে ইব্রাহিম তার দলবল নিয়ে অভিযান পরিচালনাকারী নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটসহ অন্যান্য কর্মকর্তাদের উপর হামলা চালায়। এতে ম্যাজিস্ট্রেট মোস্তাফিজুর রহমানসহ ৫ জনের গায়ে আঘাত লাগে। তবে তা গুরুতর নয়।

অভিযান চলাকালে উপস্থিত পুলিশ সদস্যরা হামলাকারীদেরকে ঠেকাতে ব্যর্থ হলে অতিরিক্ত পুলিশ ডাকা হয়। পরে তারা এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। আটক করা হয় ইজারাদার ইব্রাহিমের ছোট ভাই বাপ্পীসহ তিন জনকে। তবে পালিয়ে যান ইজারাদার। তাকে আটক করা হবে বলে জানিয়েছে পুলিশ। হামলার পর এক ঘণ্টা উচ্ছেদ বন্ধ থাকলেও অভিযান আবার শুরু হয় বলে জানিয়েছেন বিআইডব্লিউটিএর যুগ্ম পরিচালক।

এছাড়া বসিলা এলাকায় নদীর তীর দখলমুক্ত করার অভিযানে বাধা দিতে গিয়ে ছাত্রলীগ নেতা আটক হয়েছেন। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানায়, বুড়িগঙ্গা নদীর পাড়ে উচ্ছেদ অভিযানে বাধা দেয়ায় বছিলা থেকে স্থানীয় ছাত্রলীগের এক নেতাকে আটক করেছে বিআইডব্লিউটিএ। গত ১৯ ফেব্রুয়ারি দুপুরে তাকে আটক করা হয়। 

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, বছিলায় আমিন-মমিন হাউজিংয়ে উচ্ছেদ অভিযান পরিচালনা করে বিআইডব্লিউটিএ। এ সময় কালকিনি পৌরসভা ছাত্রলীগের সহসভাপতি আসাদুজ্জামান ঘটনাস্থলে এসে বাধা দিলে বিআইডব্লিউটিএ তাকে আটক করে। তার বিরুদ্ধে অভিযোগ এনে মামলা করা হচ্ছে।   

গাড়ির লোকজন জানান, সাথে বুড়িগঙ্গা নদীর তীরে শ্মশানঘাট এলাকায় অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ অভিযান চলার সময় হামলার ঘটনা ঘটেছে। এতে অভিযানে নেতৃত্ব দেয়া নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটসহ ৫ জন আহত হয়েছেন। এই ঘটনায় পুলিশ ৩ জনকে আটক করেছে। গত জানুয়ারি থেকে শুরু হওয়া এই অভিযানে প্রথমবারের মতো এমন ঘটনা ঘটল। গতকাল বৃহস্পতিবার সকালে ধারাবাহিকভাবে উচ্ছেদ ও নদীর জায়গা উদ্ধারে নামে অভ্যন্তরীণ নৌ-পরিবহন কর্তৃপক্ষ বিআইডব্লিউটিএ।

এদিকে বাংলাদেশে কোনো ব্যক্তির বিরুদ্ধে নদ-নদী দখলের অভিযোগ থাকলে তাকে সব ধরনের নির্বাচনে অযোগ্য করার ব্যবস্থা নিতে নির্দেশ দিয়েছে হাইকোর্ট।

একই সাথে এমন অভিযুক্ত ব্যক্তিকে কোনো ব্যাংক থেকে ঋণ না দেয়ার ব্যবস্থা নেয়ারও নির্দেশ দেয়া হয়েছে। একটি রিট মামলায়, হাইকোর্ট ঢাকার উত্তরে তুরাগ নদীকে জীবন্ত সত্তা হিসেবে ঘোষণার পাশাপাশি এসব নির্দেশনা দিয়েছে।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সারাদেশে অবৈধ দখলদাররা প্রভাবশালী এবং তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে জাতীয় নদী রক্ষা কমিশনের ক্ষমতা সীমিত। দূষণ এবং অবৈধ দখলের হাত থেকে নদ-নদী, খাল-বিল বা জলাশয় রক্ষায় বিভিন্ন সমবায় নানান পদক্ষেপের কথা এসেছে। কিন্তু বাস্তবায়ন কতটা হচ্ছে, তা নিয়ে প্রশ্ন থাকছেই।

এবার আদালত সারাদেশে অবৈধ দখলদারদের তালিকা তৈরি করে তা জনসমক্ষে প্রকাশের নির্দেশ দিয়েছে। দেশের সব নদ-নদী, খাল-বিল এবং জলাশয়ের ডিজিটাল ডাটাবেজ তৈরির নির্দেশও এসেছে।

এদিকে নদী নিয়ে রিট মামলার পক্ষের আইনজীবী মনজিল মোরশেদ বলছিলেন, অবৈধ দখলদারদের নির্বাচন করার এবং ব্যাংকের ঋণ পাওয়ার অযোগ্য ঘোষণার বিষয়কক তারা মাইলফলক হিসেবে দেখছেন।

জানা গেছে, নদী রক্ষা কমিশনের ব্যাপারে ২০১৩ সালে যে আইন করা হয়েছে, তাতে কমিশনের হাতে তেমন কোনো ক্ষমতা দেয়া কমিশন শুধু সুপারিশ করা ছাডা কিছু বাস্তবায়ন করতে পারে না। এখন আদালত তুরাগ নদকে জীবন্ত সত্তা ঘোষণার পাশাপাশি জাতীয় নদী রক্ষা কমিশনকে নদ-নদী, খাল-বিল এবং জলাশয়রে আইনগত অভিভাবক হিসেবে ঘোষণা করেছে। সেজন্য আইন সংশোধনের কথাও বলা হয়েছে।

রাজধানীর চারপাশের নদ-নদী দখলমুক্ত করার আভিযানে দ্বিতীয় ধাপের শেষ দিনে উচ্ছেদ অভিযান চালিয়েছে বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ-পরিবহন কর্তৃপক্ষ- বিআইডাব্লিটিএ। সকালে মিরপুরের বেড়িবাধের শিন্নিরটেক এলাকা থেকে অভিযান শুরু হয়। এসময় নদী দখল করে গড়ে তোলা সীমানা প্রাচীর ও ছোট ছোট বেশ কয়েকটি স্থাপনা ভেঙে ফেলা হয়।

এইচ এম/টিএফ

আরও পড়ুন