• ঢাকা
  • সোমবার, ২৯ এপ্রিল, ২০২৪, ১৬ বৈশাখ ১৪৩১
প্রকাশিত: জুলাই ২৪, ২০১৯, ১১:০৯ এএম
সর্বশেষ আপডেট : জুলাই ২৪, ২০১৯, ১১:০৯ এএম

ওয়ার্ড পরিক্রমা-৩

জেনেভা ক্যাম্পের বিল্ডিং কোড ছাড়া নির্মিত ভবন যেন মৃত্যুকূপ

জেনেভা ক্যাম্পের বিল্ডিং কোড ছাড়া নির্মিত ভবন যেন মৃত্যুকূপ

ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের (ডিএনসিসি) ৩২ নম্বর ওয়ার্ডটি পূর্বে ছিল অবিভক্ত ডিসিসির ৪৫ নম্বর ওয়ার্ড। লালমাটিয়া এ ব্লক থেকে শুরু করে জি ব্লক পুরোটাই, আসাদগেট নিউ কলোনি, আসাদ এভিনিউ, ইকবাল রোড, স্যার সৈয়দ আহম্মেদ রোড, আওরঙ্গজেব রোড, ঢাকা রেসিডেনসিয়াল মডেল স্কুল এলাকা, জেনেভা ক্যাম্প, হুমায়ুন রোড, বাবর রোড, খিলজী রোড, পিসি কালচার (ক) ব্লক, শ্যামলীর বিশাল অংশ এই ওয়ার্ডের অন্তর্ভুক্ত।

ওয়ার্ডের পূর্ব দিকে সংসদ ভবন, উত্তর-পূর্বে আগারগাঁও, উত্তর দিকে শ্যামলী, উত্তর পশ্চিমে বাইতুল আমান হাউজিং সোসাইটি, পশ্চিম দিকে মোহাম্মদপুর তাজমহল রোড, দক্ষিণ পশ্চিমে শংকর, দক্ষিণে ধানমণ্ডি আর দক্ষিণ-পূর্বে মানিক মিয়া এভিনিউ। 

ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি) ৩২ নম্বর ওয়ার্ডে ব্যাপক উন্নয়ন হলেও জেনেভা ক্যাম্প এলাকায় নানা সমস্যা দৃশ্যমান। মাদকের সঙ্গে বসবাস করছে ৩২ নং ওয়ার্ডের ‘জেনেভা ক্যাম্পের’ বাসিন্দারা। পুলিশ-র‌্যাবসহ প্রশাসন বিভিন্ন সময়ে অভিযান পরিচালনার পরেও বন্ধ হয়নি মাদকের অপতৎপরতা। 

এছাড়া জেনেভা ক্যাম্প ও বিল্ডিং ক্যাম্পে অবৈধভাবে বড় বড় বিল্ডিং তৈরি করে ভাড়া দেয়া হচ্ছে। বিল্ডিংকোড ছাড়া নির্মিত এসব ভবন ভূমিকম্প হলে পরিণত হতে পারে মৃত্যুকূপে।

ক্যাম্পে স্যুয়ারেজ লাইন, গ্যাস, বিদ্যুৎ, পানি, ময়লা-আবর্জনা নিয়ে বিভিন্ন সমস্যা তো লেগেই থাকে। ক্যাম্পের রাস্তাও ময়লা-আবর্জনায় ভরপুর। এলাকাবাসীরা বলছে, রাস্তা নোংরা থাকায় প্রচুর মশা হয়। সন্ধ্যা হতেই মশার কামড়ে থাকা যায় না। 

৩২ নং ওয়ার্ডের জনসংখ্যা প্রায় তিন লাখ। এর মধ্যে বিহারী ক্যাম্পেই লক্ষাধিক মানুষের বসবাস। ক্যাম্পের স্থায়ী বাসিন্দা শহিদুল ইসলাম দৈনিক জাগরণকে বলেন, শুনেছি সরকার বিহারীদের জন্য ফ্লাট নির্মাণ করে পুনর্বাসন করবে। তবে আশ্বাস দিয়েই শেষ। বিহারীদের বাসস্থানের ব্যবস্থা করা হলো না। বিহারীরা ভীষণ কষ্ট করে স্ত্রী-পুত্র সন্তান নিয়ে মানবেতর জীবন যাপন করছে। এক সময় দাতা গোষ্ঠী বিহারীদের জন্য আর্থিক সহায়তা দিয়েছিলো। তা বন্ধ হয়ে যাওয়ায় অনেক পরিবার সমস্যার মুখোমুখি হয়েছে। ক্যাম্পে থাকি জানলেই মানুষ মুখ ফিরে নেয়। কারণ একটাই মাদক ব্যবসা। সন্ত্রাসীরা পেটের তাগিদে কোন গডফাদারের ইশারায় ক্যাম্পে মাদক বিক্রি করছে। এ কারণে ক্যাম্পের মানুষকে অপবাদ টানতে হচ্ছে। 

জেনেভা ক্যাম্পের আরেক বাসিন্দা জীবন ইসলাম দৈনিক জাগরণকে বলেন, স্যার আমাদের এটা জীবন নয়, পানির অভাবে গোসল করতে পারি না। মাঝে মধ্যেই বিদ্যুৎ চলে যায়। তখন ছেলে মেয়েরা গরমে ছটফট করতে থাকে। তিনি বলেন, রোহিঙ্গাদের চেয়ে আমাদের পরিস্থিতি ভয়ানক। আর ঢাকা ওয়াসার লাইনের পানিতে মাঝে মধ্যে দুর্গন্ধতে গোসল পর্যন্ত করা অসম্ভব। পানির জন্য পরিবারের নারী সদস্যদেরও মারাত্মক সমস্যা সৃষ্টি হচ্ছে প্রতিনিয়ত।

এ বিষয়ে ঢাকা উত্তর সিটির ৩২ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর হাবিবুর রহমান (মিজান) বলেন, আমার ওয়ার্ডে  ব্যাপক উন্নয়ন কাজ হয়েছে। কয়েকটি রাস্তা, সংস্কার, মাঠের উন্নয়নের জন্য একনেকে ২০ কোটি টাকার অর্থ বরাদ্দ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। এ সব কাজ হলে বাস্তবে রাজধানীর ৩২ নম্বর ওয়ার্ডে সবুজ ঢাকার দৃশ্য দেখা যাবে। জেনেভা ক্যাম্পের বিষয়ে তিনি বলেন, যেভাবে ক্যাম্পে বিল্ডিং করা হয়েছে, আল্লাহ না করুক কোন সময় ভূমিকম্প আঘাত হানলে অসংখ্য মানুষ মারা যাবে। মাদকের বিষয়ে এই কাউন্সিলর বলেন, মাদকের হাত থেকে দেশ রক্ষার জন্য সবাই চেষ্টা করছে। এখানে ৮০ ভাগ মাদকসেবী এবং ব্যবসায়ীরা অন্য পেশায় চলে গেছে। তবে এখনো ২০ ভাগ মাদকের সাথে জড়িত রয়েছে। তাদের বিষয়ে প্রশাসনকে আরো কঠোর হতে হবে।  তিনি বলেন, রাস্তাঘাট, স্কুল, কলেজের ব্যাপক উন্নয়ন সাধিত হয়েছে।

টিএইচ/টিএফ
 

আরও পড়ুন