• ঢাকা
  • সোমবার, ২৯ এপ্রিল, ২০২৪, ১৫ বৈশাখ ১৪৩১
প্রকাশিত: অক্টোবর ১০, ২০১৯, ১১:০২ এএম
সর্বশেষ আপডেট : অক্টোবর ১০, ২০১৯, ১১:৩১ এএম

যুবলীগের কেন্দ্রীয় সম্মেলন, আলোচনায় যারা

যুবলীগের কেন্দ্রীয় সম্মেলন, আলোচনায় যারা
যুবলীগের লোগো

যুবলীগের কেন্দ্রীয় সম্মেলনকে সামনে রেখে আওয়ামী লীগ ও যুবলীগের মধ্যে আলোচনা শুরু হয়েছে । আগামী ২৩ নভেম্বর সংগঠনের কেন্দ্রীয় সম্মেলনের সম্ভাব্য তারিখ নির্ধারণ করা হয়েছে। ইতিমধ্যেই ওই সম্মেলনে যুবলীগের চেয়ারম্যানসহ অন্যান্য নেতৃত্ব নিয়ে আলোচনায় শুরু হয়েছে।  কে কে আসছেন নতুন  নেতৃত্বে, এরই মধ্যে কয়েক জনের নামও শোনা যাচ্ছে।  

যুবলীগ সূত্রে জানা গেছে, যুবলীগের  সম্মেলনকে সামনে রেখে  বেশ কয়েকজন পদ প্রত্যাশী রয়েছেন। যাদের নাম  অনেক আগে থেকেই তাদের শোনা যাচ্ছিলো। আওয়ামী লীগ সূত্রে জানা গেছে, যুবলীগের সম্মেলনকে ঘিরে ইতিমধ্যেই আওয়ামী লীগের মধ্যে তৈরি হয়েছে একটি বলয়। যারা যুবলীগে চেয়ারম্যান হওয়ার দৌঁড়ে এগিয়ে থাকবে।
       
যুবলীগ নেতারা বলছেন, সংগঠনের মধ্যে যখন শুদ্ধি অভিযান চলছে ঠিক তখন যুবলীগের কেন্দ্রীয় সম্মেলন হতে যাচ্ছে। ফলে সংগঠনের জন্য যারা ত্যাগী ও পরিশ্রমী তারাই আসবে যুবলীগের নেতৃত্বে। সে ক্ষেত্রে আওয়ামী লীগ সরকারের দীর্ঘ ১১ বছরের ক্ষমতায় যারা যুবলীগের থেকেও অপকর্ম, দুর্নীতি থেকে দূরে থেকেছে অর্থাৎ ‘ক্লিন ইমেজের ও সংগঠনের নেতাকর্মীদের জন্য দরদী তারাই আসবে যুবলীগের নেতৃত্বে।

যুবলীগ সূত্রে জানা গেছে, যুবলীগের কেন্দ্রীয় সম্মেলনকে সামনে রেখে চাঙা হয়ে উঠেছেন সংগঠনের নেতা-কর্মীরা। সম্মেলন করার নির্দেশনা আসার পর থেকেই সংগঠনের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতা-কর্মীরা নড়ে-চড়ে বসতে শুরু করেন।  সম্ভাব্য প্রার্থী কারা হতে পারেন তা নিয়ে শুরু হয়ে গেছে জল্পনা-কল্পনা। যুবলীগের শীর্ষ নেতারা আসন্ন কংগ্রেসে আশানুরূপ পদ পেতে তোড়জোর শুরু করে দিয়েছেন। বরাবরের মতো এবারও যুবলীগের নেতারাই চেয়ারম্যান বা সাধারণ সম্পাদক পদে আসবেন বলে আশা করছেন সংগঠনের নেতারা। তবে ছাত্রলীগের কয়েকজন সাবেক নেতাও আসন্ন কমিটিতে পদ পেতে পারেন বলে বিভিন্ন সূত্রে জানা
যাচ্ছে।

যুবলীগ সূত্রে জানা গেছে, যুবলীগের প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান শেখ ফজলুল হক মনির ছেলে ও সংসদ সদস্য শেখ ফজলে নূর তাপসের নাম সংগঠনের চেয়ারম্যান হিসেবে শোনা যাচ্ছে। এছাড়াও যুবলীগের চেয়ারম্যান হিসেবে আওয়ামী লীগ থেকে নির্বাচিত সংসদ সদস্য ও বাংলাদেশ জাতীয় ক্রিকেট দলের অধিনায়ক মাশরাফী বিন মোর্ত্তজার নামও আলোচনায় রয়েছে। এর বাইরেও যুবলীগের চেয়ারম্যান হতে পারেন এমন বেশ কয়েকজন নেতার নাম সংগঠন সূত্রে সামনে আসছে। যারা এখন প্রতিযোগিতায় মাঠে রয়েছেন। এ ছাড়া ফজলে নূর তাপসের বড় ভাই ও যুবলীগের প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান শেখ ফজলুল হক মনির বড় ছেলে শেখ ফজলে শামস  পরশ- এর নামও আলোচনায় রয়েছে।

সূত্র জানায়, যুবলীগের চেয়ারম্যান কে হবেন এটি আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা ঠিক করে দেবেন। তবে কমিটি নির্বাচনে আওয়ামী লীগের সভাপতিমন্ডলীর সদস্য শেখ ফজলুল করিম সেলিম ও যুবলীগের সাবেক চেয়ারম্যান ও আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর কবির নানকের প্রভাব থাকবে। কারণ দুইজনই আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ হাসিনার ঘনিষ্ঠ জন হিসেবে পরিচিত। এছাড়া তারা দুই জনেই যুবলীগের সাবেক চেয়ারম্যান ছিলেন।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, যুবলীগের সভাপতিমন্ডলীর সদস্য শেখ ফজলুর রহমান মারুফ চেয়ারম্যান হওয়ার দৌড়ে অন্যদের চেয়ে এগিয়ে রয়েছেন। তিনি যুবলীগের সাবেক চেয়ারম্যান এবং বর্তমান আওয়ামী লীগ কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী কমিটির সভাপতিমন্ডলীর সদস্য শেখ ফজলুল করিম সেলিমের আপন ছোট ভাই। এছাড়া শেখ ফজলুল করিম সেলিমের ছোট ছেলে শেখ ফজলে নাঈমও আলোচনায় রয়েছেন। তিনি বর্তমানে যুবলীগ কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সদস্য, তরুণ সমাজের জনপ্রিয় নাঈম পেশায় আইনজীবী। এর বাইরে আলোচনায় রয়েছেন অ্যাডভোকেট সাইদুর রহমান শহীদ তথা শহীদ সেরনিয়াবাতের নাম। সংগঠনের বিভিন্ন কর্মকাণ্ডে তার উপস্থিতি দৃশ্যমান। তিনি আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর কবির নানকের খালাতো ভাই বলে জানা গেছে।
 
এছাড়াও আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য, যুবলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক প্রতিমন্ত্রী মন্ত্রী মির্জা আজমের নামও যুবলীগের চেয়ারম্যান হিসেবে আলোচনায় রয়েছে। যুবলীগের মধ্যে তার জনপ্রিয়তা বেশি। যুবলীগের নেতা-কর্মীদের মধ্যে তিনি অনেক জনপ্রিয় থাকায় আলোচনায় আসছেন বলে অনেকে মনে করছেন। তবে আওয়ামী লীগের রাজনীতি ছেড়ে দিয়ে নতুন করে এই সংগঠনের চেয়ারম্যান হতে তার তেমন আগ্রহ নেই বলে তিনি তার ঘনিষ্ঠদের জানিয়েছেন বলে সূত্রে জানা গেছে। এছাড়া সাধারণ সম্পাদক পদে ঢাকা মহানগর উত্তর যুবলীগের সাবেক সভাপতি ও বর্তমান কেন্দ্রীয় যুবলীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য আবুল বাশারের নাম আলোচনায় রয়েছে। তিনি জনশক্তি রপ্তানিকারকদের সংগঠন বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব ইন্টারন্যাশনাল রিক্রুটিং এজেন্সি ‘বায়রা’র সাবেক সভাপতি। তিনি গত জাতীয় নির্বাচনে ফেনীর সোনাগাজী থেকে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেয়েছিলেন। পরে জোটের শরিক জাতীয় পার্টিকে ওই আসনটি ছেড়ে দেন।   

যুবলীগের হেভিওয়েট নেতাদের মধ্যে একজন নূর নবী চৌধুরী শাওন। যুবলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতিমন্ডলীর সদস্য তিনি। তিনি ঢাকা মহানগর দক্ষিণ যুবলীগের সাধারণ সম্পাদকও ছিলেন। তিনি বর্তমানে যুবলীগ ঢাকা মহানগর দক্ষিণ যুবলীগের বহিষ্কৃত নেতা ইসমাঈল চৌধুরী সম্রাটের রাজনৈতিক গুরু বলে মনে করা হয়। এ কারণে যুবলীগের বর্তমান শুদ্ধি অভিযানেও বেশ আলোচনায় রয়েছেন তিনি। এর আগে নিজ গাড়ির চালক হত্যা মামলাতেও আলোচনায় এসেছিলেন তিনি।  

যুবলীগের কেন্দ্রীয় নেতৃত্বে বাইরে ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণের অনেকের নামই আলোচনায় রয়েছে।  যুবলীগের ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণের সম্মেলনও হতে যাচ্ছে বলে সংগঠন সূত্রে জানা গেছে। ঢাকা মহানগর উত্তর যুবলীগে নেতৃত্ব নিয়ে আলোচনায় রয়েছেন- ঢাকা মহানগর যুবলীগ উত্তরের বর্তমান সাধারণ সম্পাদক ইসমাইল হোসেন। এর বাইরে মহানগর উত্তরে ক্লিন ইমেজের নেতা হিসেবে পরিচিত উত্তরের বর্তমান উপ-দপ্তর সম্পাদক এ এইচ এম কামরুজ্জাম কামরুলের নাম শোনা যাচ্ছে। তিনি ঢাকা মহানগর উত্তর ছাত্রলীগের সাবেক দপ্তর সম্পাদক ছিলেন। তার বিরুদ্ধে কোনো ধরনের সাংগঠনিক অভিযোগও নেই।

কামরুল বিএনপি আমলে বিরোধীদলসহ এরশাদ বিরোধী আন্দোলনের ছিলেন সক্রিয় কর্মী। ২০০১ সালে বিরোধী দলের রাজনীতিতে ধামন্ডি ৩২ নম্বরে রাসেল স্কয়ারে নির্যাতনের শিকার হন। এছাড়া ঢাকা মহানগর উত্তর যুবলীগের বর্তমান ১ম যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক তাসভীরুল হক অনুর নামও শোনা যাচ্ছে। তিনি ঢাকা মহানগর উত্তর ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। ২০০২-২০১০ সাল পর্যান্ত তিনি ঢাকা মহানগর উত্তর ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেছেন। ঢাকা মহানগর উত্তর যুবলীগের নেতা-কর্মীদের কাছে জনপ্রিয়। সাধারণ সম্পাদক পদে তার নাম শোনা যাচ্ছে। এ ছাড়াও উত্তরের সাংগঠনিক সম্পাদক সাহাদাৎ হোসেন সেলিমের নামও রয়েছে আলোচনায়। 

ঢাকা মহানগর দক্ষিণ যুবলীগের আলোচনায় রয়েছেন-  যুবলীগ মহানগের দক্ষিণের সহ-সভাপতি আনোয়ার ইকবাল সান্টু। তার নাম সভাপতি পদের জন্য শোনাযাচ্ছে। আলোচনায় রয়েছেন যুবলীগ ঢাকা মহানগর দক্ষিণের স্বাস্থ্য ও জনসংখ্যা বিষয়ক সম্পাদক সৈয়দ মুরশিদ শুভ ও দফতর সম্পাদক এমদাদুল হক এমদাদের নামও। এর বাইরে যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক জাফর ইকবাল রানা ও জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ছাত্রলীগ নেতা শৈকত-বিন আকবরের নামও আলোচনায় রয়েছে। সৈয়দ মুরশিদ শুভ ঢাকা মহানগর দক্ষিণ যুবলীগের বহিষ্কৃত সভাপতি ইসমাঈল চৌধুরী সম্রাটের ‘মাই ম্যান’ হিসেবে পরিচিত বলে যুবলীগের একটি সূত্র জানিয়েছে।    

উল্লেখ্য, যুবলীগের মধ্যে চলমান ‘শুদ্ধি অভিযানের’ মধ্যেই গত ২ অক্টোবর সন্ধ্যায় গণভবনে আওয়ামী লীগ কেন্দ্রীয় নেতাদের সঙ্গে এক অনির্ধারিত বৈঠকে দলীয় প্রধান শেখ হাসিনা জাতীয় সম্মেলনের আগেই দলের অন্য তিন সহযোগী-ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠনের সঙ্গে যুবলীগের সম্মেলনও করার নির্দেশনা দেন। সর্বশেষ ২০১২ সালের ১৪ জুলাই যুবলীগের ষষ্ঠ জাতীয় কাউন্সিল হয়। ওই কাউন্সিলে সংগঠনের চেয়ারম্যান হন ওমর ফারুক চৌধুরী ও সাধারণ সম্পাদক হন হারুন-অর-রশিদ।

এএইচএস/বিএস/আরআইএস 

আরও পড়ুন