• ঢাকা
  • সোমবার, ০৬ মে, ২০২৪, ২৩ বৈশাখ ১৪৩১
প্রকাশিত: অক্টোবর ২০, ২০১৯, ০৬:২১ পিএম
সর্বশেষ আপডেট : অক্টোবর ২০, ২০১৯, ০৯:০৫ পিএম

ভোলার ঘটনায় দেশবাসীকে ধৈর্য্য ধরার আহ্বান প্রধানমন্ত্রীর

ভোলার ঘটনায় দেশবাসীকে ধৈর্য্য ধরার আহ্বান প্রধানমন্ত্রীর
শেখ হাসিনা - ফাইল ছবি
ভোলার ঘটনার সংবাদ প্রচারে সতর্কতা চান প্রধানমন্ত্রী

যুবলীগ নেতাদের সঙ্গে আওয়ামী সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বৈঠকের প্রারম্ভিক বক্তব্যে ভোলার ঘটনায় দেশবাসীকে ধৈর্য্য ধরার আহ্বান জানিয়েছেন। তিনি বলেছেন, ঘোলা পানিতে মাছ শিকারের চেষ্টা চলছে। অপরাধ করে কেউ পার পাবে না। 

‘যারাই অপরাধ করুক- তাদের কারো ক্ষমা নেই’ এমন হুঁশিয়ারি দিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভোলার পরিস্থিতি নিয়ে সতর্কতার সঙ্গে সংবাদ প্রচার করতে গণমাধ্যমের প্রতি আহ্বান জানান। তিনি বলেন, ভোলার পরিস্থিতি যেন অশান্ত না হয়, সেজন্য সতর্কতার প্রয়োজন। 

রোববার (২০ অক্টোবর) বিকালে যুবলীগের নেতাদের সঙ্গে প্রধানমন্ত্রীর বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। যুবলীগ সাধারণ সম্পাদক হারুনুর রশিদের নেতৃত্বে গণভবনে যান সংগঠনের শীর্ষ নেতারা। বৈঠকের শুরুতে এসব কথা বলেন প্রধানমন্ত্রী।

ভোলার অপ্রীতিকর ঘটনার নিন্দা জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ফেসবুক হ্যাকিং করে যারা নবী সম্পর্কে কটূক্তি করেছে তাদের বিরুদ্ধেও কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা যখন উন্নয়ন করে চলেছি তখন মাঝে-মাঝেই একেকটা ঘটনা ঘটে। আজও ভোলায় একটি ঘটনা ঘটেছে। সেখানে একটি হিন্দু ছেলের ফেসবুক হ্যাক করে সেখানে তার নামে কতগুলো মিথ্যাচার করা হয়েছে। ফেসবুক আইডি যে হ্যাক করেছিল, হ্যাকের পর আবার ফোন করে ২০ হাজার টাকা চেয়েছিল। টাকা না দিলে এমন সমস্ত কথা লিখবে যে, সেটা তার জন্য খুব ক্ষতির হবে। এ হুমকি পাওয়ার পরপরই ওই হিন্দু ছেলেটি পুলিশ স্টেশনে গেছে এবং সে সেখানে একটা জিডিও করেছে। জিডি করা সত্ত্বেও পুলিশ তাকে গ্রেফতার করে থানায় রেখে দিয়েছে। সাথে সাথে যে টেলিফোনটি করেছিল তাকেও গ্রেফতার করা হয়েছে। তা ছাড়া ফেসবুক আইডি হ্যাক হলে ফেসবুকের অথরিটি যারা তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করছি। সব তথ্যই আমরা সংগ্রহ করতে পারব।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, কিন্তু এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে সেখানে একটি অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা ঘটে গেছে। এখানে কিছু লোক আছে, মানে যারা ফেসবুক হ্যাক করে ওই হিন্দু ছেলেটির কাছে টাকা না পেয়ে তার নাম করে যে কথাগুলো লিখেছে সে তো একটা মুসলমান ছেলে। একটা মুসলমান ছেলে কীভাবে নবী করিম (সা.) এর নামে বাজে কথা লিখে আরেকজনকে জড়ানোর চেষ্টা করতে পারে। আর সেই কথা ধরে সেখানের কিছু লোক, একজন পীর সাহেব আছেন সে বেশ কিছু লোককে জড়ো করে। যখন পুলিশ তাদেরকে বোঝাচ্ছে যে আপনারা এসব করবেন না, আমরা দায়ীদের গ্রেফতার করেছি, আমরা ব্যবস্থা নিয়েছি, ব্যবস্থা নিচ্ছি- তখন পুলিশের উপর তারা চড়াও হয়। পুলিশের উপর চড়াও হলে পুলিশ নিজেদেরকে বাঁচাতে একটা ঘরে আশ্রয় নেয়। এরপর ঘরের দরজা ভেঙে পুলিশের উপর হামলা চালানো হয়। এমনকী একজন এসআইয়ের পায়ে গুলিও লাগে। 

তিনি বলেন, এ পরিস্থিতি থেকে পুলিশকে বাঁচাতে ডিসি-এসপি সেখানে পৌঁছে যায়। ওখানে সাধারণ মানুষ যারা ছিল তাদেরকে সবাই বোঝাতে যায়। এরপরও পুলিশের উপর হামলা হলে আত্মরক্ষার্থে চালানো পুলিশের গুলিতে কয়েকজন আহত হয়। এর মধ্যে ৩ জনের মৃত্যু কনফার্ম এবং আরেকজনের অবস্থা মুমূর্ষু। এভাবে কয়েকজন মানুষের জীবন ঝরে যায়। সবচেয়ে দুর্ভাগ্য, যে আইডিটা হ্যাকিং করলো, তারপর এ ধরনের ঘটনা ঘটালো, এটাকে কেন্দ্র করে কী উদ্দেশ্যে তারা সমবেত হলো, পুলিশের উপর আক্রমণ করলো, তাদের উদ্দেশ্যটা কী ছিল- সেটাই বড় কথা। এর পরবর্তীতে ফেসবুকে নানা ধরনের অপপ্রচার ছড়ানো হচ্ছে অশান্ত পরিবেশ সৃষ্টি করার জন্য। তাহলে এরা কারা, এদের উদ্দেশ্য কী? আর কেউ যদি সত্যি ইসলাম ধর্মে বিশ্বাস করে, যদি তাদের নবী করিম (সা.)-এর উপর এতটুকু সম্মান থাকে তাহলে তারা এটা করতে পারত না।  

যুবলীগ প্রতিষ্ঠার উদ্দেশ্য সম্পর্কে বলতে গিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, দেশ গড়ার কাজে লাগবে যুবশক্তি- এ উপলব্ধি থেকেই যুবলীগের জন্ম। আর এই সংগঠনের শুরুটা হয় শেখ ফজলুল হক মণির হাত ধরে। 

প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা দেশকে যখন এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছি। সন্ত্রাস, মাদক ও দুর্নীতির বিরুদ্ধে অভিযান অব্যাহত রাখছি তখনই সমস্যা সৃষ্টি হচ্ছে। এই ক্ষেত্রে যারাই অপরাধী হবে তাদের কোনো ক্ষমা নেই। তাদের বিরুদ্ধে আমরা ব্যবস্থা নেব। কারণ আমরা যখন দেশকে উন্নয়নের পথে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছি, স্বাভাবিকভাবে কিছু মানুষের ভেতরে একটা লোভের সৃষ্টি হয় আর তার ফলাফল হিসেবে সমাজটা ধ্বংসের দিকে যায়। কাজেই এই ধরনের অন্যায় অবিচার কখনো বরদাশত করবো না।

তিনি বলেন, সকলে মিলে অর্থনৈতিকভাবে স্বচ্ছল থাকুক, সেটা আমরা চাই। কিন্তু অন্যায়ভাবে যদি কেউ কিছু করে তার বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা নেয়া, এটা একান্তভাবে অপরিহার্য বলে আমি মনে করি। কারণ সমাজে যখন একটা পরিবর্তন আসে তখন স্বাভাবিকভাবে দেখা যায় কিছু কিছু মানুষ রাতারাতি আঙুল ফুলে কলা গাছ হয়ে যায়। সমাজের সর্বস্তরের তৃণমূল মানুষের সার্বিক অর্থনৈতিক উন্নয়ন যেন বজায় থাকে আমরা সেদিকে লক্ষ্য রেখেই কাজ করে যাচ্ছি।

তিনি বলেন, আওয়ামী লীগের যেসব সহযোগী সংগঠন আছে আমরা একে একে সবগুলো সংগঠনের কাউন্সিল করার পদক্ষেপ নিয়েছি, তারিখ নির্ধারণ করে দিয়েছি। আওয়ামী লীগের সম্মেলনেও ডিসেম্বরের মধ্যে করে ফেলার চেষ্টা করছি।

যুবলীগের আসন্ন ৭ম জাতীয় কংগ্রেস নিয়ে প্রধানমন্ত্রী যুবলীগ নেতাদের দিক-নির্দেশনা দেন। রাত ৮টায় এ প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত গণভবনে যুবলীগ নেতাদের সঙ্গে প্রধানমন্ত্রীর বৈঠক চলছিল।

যুবলীগ সাধারণ সম্পাদক মো. হারুনুর রশীদের নেতৃত্বে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে এ বৈঠকে উপস্থিত আছেন প্রেসিডিয়াম সদস্য শেখ শামসুল আবেদীন, শহিদ সেরনিয়াবাত, মজিবুর রহমান চৌধুরী, মো. ফারুক হোসেন, মাহবুবুর রহমান হিরন, আবদুস সাত্তার মাসুদ, মো. আতাউর রহমান, অ্যাডভোকেট বেলাল হোসাইন, আলতাব হোসেন বাচ্চু, মো. সিরাজুল ইসলাম মোল্লা, আবুল বাশার, মোহাম্মদ আলী খোকন, অধ্যাপক এবিএম আমজাদ হোসেন, আনোয়ারুল ইসলাম, ইঞ্জিনিয়ার নিখিল গুহ, শাহজাহান ভুঁইয়া মাখন, অ্যাডভোকেট মোতাহার হোসেন সাজু, ডা. মোখলেছুজ্জামান হিরু, যুগ্ম সম্পাদক মহিউদ্দিন আহম্মেদ মহি, সুব্রত পাল, মনজুর আলম শাহীন, নাসরিন জাহান চৌধুরী শেফালী, সাংগঠনিক সম্পাদক এস এম জাহিদ, আমির হোসেন গাজী, মুহা. বদিউল আলম, ফজলুল হক আতিক, আবু আহম্মেদ নাসিম পাভেল, আসাদুল হক, এমরান হোসেন খান, আজহার উদ্দিন ও ফারুক হাসান তুহিন উপস্থিত আছেন।

বৈঠকে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের এবং আওয়ামী লীগের উপদেষ্টামণ্ডলীর সদস্য আমির হোসেন আমু, তোফায়েল আহমেদ উপস্থিত আছেন।

যুবলীগের প্রেসিডিয়াম, সাধারণ সম্পাদক, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও সাংগঠনিক সম্পাদকদের সঙ্গে প্রধানমন্ত্রীর এ বৈঠকে যুবলীগের চেয়ারম্যান ওমর ফারুক চৌধুরী, প্রেসিডিয়াম সদস্য নুরুন্নবী চৌধুরী শাওন এমপি, শেখ ফজলুর রহমান মারুফ ও শেখ আতিয়ার রহমান দিপু উপস্থিত নেই। তাদের বিরুদ্ধে দুর্নীতি-অনিয়মের সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগ ওঠায় বৈঠকে তাদের বাদ দেয়া হয়েছে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে।

এএইচএস / এফসি

আরও পড়ুন