• ঢাকা
  • শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল, ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১
প্রকাশিত: অক্টোবর ২৫, ২০১৯, ০২:৫৬ পিএম
সর্বশেষ আপডেট : অক্টোবর ২৫, ২০১৯, ০৭:০৫ পিএম

ন্যাম সম্মেলন শুরু, বিশ্বনেতাদের মাঝে শেখ হাসিনা

ন্যাম সম্মেলন শুরু, বিশ্বনেতাদের মাঝে শেখ হাসিনা
১৮তম ন্যাম সম্মেলনের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানস্থল বাকু কংগ্রেস সেন্টারে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে স্বাগত জানান আজারবাইজানের প্রেসিডেন্ট ইলহাম আলিয়েভ - পিএমও

ফোরামের চেতনা সমুন্নত রাখা এবং সদস্য রাষ্ট্রগুলোর মধ্যে পারস্পরিক সহযোগিতা জোরদারকরণের আহ্বানের মধ্যদিয়ে নিয়ে আজারবাইজানে শুক্রবার (২৫ অক্টোবর) শুরু হয়েছে জোট নিরপেক্ষ আন্দোলনের (ন্যাম) ১৮তম সম্মেলন। স্থানীয় বাকু কংগ্রেস সেন্টারে ১২০টি উন্নয়নশীল রাষ্ট্রের ফোরাম ‘ন্যাম’-এর দুদিনব্যাপী এই সম্মেলন উদ্বোধন করেন আজারবাইজানের প্রেসিডেন্ট ইলহাম এলিয়েভ। 

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা অন্যান্য সদস্য দেশের সরকার ও রাষ্ট্র প্রধান এবং সরকারি প্রতিনিধিদের সঙ্গে বাকু কংগ্রেস সেন্টারের প্ল্যানারি হলে সম্মেলনের উদ্বোধনী পর্বে যোগ দিয়েছেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা স্থানীয় সময় সকাল ১০টায় সম্মেলনেস্থলে এসে পৌঁছলে আজারবাইজানের প্রেসিডেন্ট তাকে স্বাগত জানান।সম্মেলনের পাশাপাশি প্রধানমন্ত্রী বিকেলে মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী ড. মাহাথীর মোহাম্মদের সঙ্গে সৌজন্য স্বাক্ষাৎ করেন।

১৮তম ন্যাম সম্মেলনের উদ্বোধনী পর্বে সদস্য দেশের সরকার ও রাষ্ট্র প্রধান এবং সরকারি প্রতিনিধিদের সঙ্গে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা  - ছবি : পিএমও

সম্মেলনে আরো যোগ দিয়েছেন- ইরানের প্রেসিডেন্ট হাসান রুহনী, কিউবার প্রেসিডেন্ট মিগুয়েল ডিয়াজ-ক্যানেল, মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী ড. মাহাথির মোহাম্মদ, জিবুতির প্রেসিডেন্ট ইসমাইল ওমর, ঘানার প্রেসিডেন্ট নানা আকুফো-আড্ডো, নেপালের প্রধানমন্ত্রী কেপি শার্মা ওলী, পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী আরিফ আলভী, ভারতের ভাইস প্রেসিডেন্ট এম. ভেনকাইয়া নাইডু, তুর্কমেনিস্তানের প্রেসিডেন্ট গুরবাংগুলি বেরদিমুহামেদো, চেয়ারম্যান অব দ্য প্রেসিডেন্সি অব বসনিয়া অ্যান্ড হার্জগোভিনার বাকির ইজতেবেগোভিচ, আফগানিস্তানের প্রেসিডেন্ট আশরাফ গণি এবং লিবিয়ার প্রধানমন্ত্রী ফায়েজ মুস্তাফা আল-সারাজ।

ভেনেজুয়েলার প্রেসিডেন্ট এবং ন্যামের বর্তমান চেয়ারপার্সন নিকোলাস মাদুরো সম্মেলনের উদ্বোধনী পর্বে স্বাগত ভাষণ দেন। তার ভাষণের পরই আজারবাইজানের প্রেসিডেন্ট ইলহাম এলিয়েভ সর্বসম্মতিক্রমে আগামী তিন বছরের জন্য ন্যাম চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন। চেয়ারম্যান নির্বাচিত হওয়ার পরই প্রদত্ত ভাষণে তিনি ন্যামকে বাংডুং আদর্শের ভিত্তিতে গড়ে তোলার অঙ্গীকার ব্যক্ত করেন।

জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের ৭৪তম অধিবেশনের সভাপতি তিজানি মুহাম্মাদ-বান্দে উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বক্তৃতা করেন।

পূর্ব ইউরোপ এবং পশ্চিম এশিয়ার সংযোগস্থলে এই সম্মেলনের আয়োজক দেশ আজারবাইজানের ভৌগলিক অবস্থান এবং এর জনসংখ্যা প্রায় এক কোটি। বহু জাতিগত এবং এবং ধর্মাবলম্বীদের এই দেশের শতকরা ৯৬ জন নাগরিকই ইসলাম ধর্মের অনুসারী।

সম্মেলনের শুরুতেই ২০১৬ সালে ভেনেজুয়েলায় অনুষ্ঠিত ১৭তম ন্যাম সম্মেলনের পর থেকে এ পর্যন্ত মৃত্যুবরণকারী ন্যাম নেতৃবৃন্দের সম্মানে এক মিনিট নীরবতা পালন করা হয়।

এবারকার ১৮তম ন্যাম সম্মেলনের সাধারণ বিতর্কের বিষয়বস্তু হচ্ছে- ‘সকলের সম্মিলিত এবং পর্যাপ্ত সাড়া প্রদানের মাধ্যমে বর্তমান বিশ্বের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে বাংডং নীতিমালা সমুন্নত করা।’

রাষ্ট্র এবং সরকার প্রধানসহ বিভিন্ন দেশের প্রতিনিধি দলের প্রধানদের সম্মানে সম্মেলন উপলক্ষে আয়োজিত ওয়ার্কিং লাঞ্চিয়ন এবং প্লানারি সেশনেও যোগ দেবেন প্রধানমন্ত্রী। বিকালে হায়দার এলিয়েভ সেন্টারে অনুষ্ঠেয় আজারাইজানের প্রেসিডেন্ট আয়োজিত আনুষ্ঠানিক সংবর্ধনাতেও তিনি যোগদান করবেন।

এর আগে বৃহস্পতিবার (২৪ অক্টোবর) বিকাল ৪টায় বাকুর উদ্দেশে ঢাকার হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর ত্যাগ করেন শেখ হাসিনা। প্রধানমন্ত্রী ও তার সফরসঙ্গীদের বহনকারী বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের একটি বিশেষ ফ্লাইট স্থানীয় সময় রাত ৯টা ১০ মিনিটে বাকু হায়দার আলিয়েভ ইন্টারন্যাশনাল এয়ারপোর্টে অবতরণ করে। পরে প্রধানমন্ত্রীকে আনুষ্ঠানিক মোটর শোভাযাত্রা সহকারে বাকুর হোটেল হিল্টনে নিয়ে যাওয়া হয়। আজারবাইজান সফরকালে তিনি এখানেই অবস্থান করবেন।

ফটোসেশনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও আজারবাইজানের প্রেসিডেন্ট ইলহাম আলিয়েভ   - পিএমও

৪ দিনের সফর শেষে রোববার (২৭ অক্টোবর) স্থানীয় সময় বেলা ১১টায় বাকু হেইদার আলিয়েভ আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসের একটি বিশেষ ফ্লাইটে দেশের উদ্দেশে রওনা হওয়ার কথা রয়েছে প্রধানমন্ত্রীর।

ন্যাম বিশ্বের ১২০টি উন্নয়নশীল রাষ্ট্র নিয়ে গঠিত একটি ফোরাম, যা বড় কোনো পাওয়ার ব্লকের সঙ্গে বা বিপক্ষে আনুষ্ঠানিকভাবে সংযুক্ত নয়। জাতিসংঘের পর এটি বিশ্বব্যাপী রাষ্ট্রগুলোর বৃহত্তম গ্রুপিং। এতে ১৭টি পর্যবেক্ষক রাষ্ট্র এবং ১০টি পর্যবেক্ষণ সংস্থা রয়েছে। এটি জাতিসংঘের পর দ্বিতীয় বৃহত্তম সংগঠন, বর্তমান বিশ্বের প্রায় ৫৫ শতাংশ জনগণ এই ন্যামের সদস্য রাষ্ট্রগুলোর অধিবাসী। এই দেশগুলোয় বিশ্বের তেলের ৭৫ শতাংশেরও বেশি মজুদ এবং ৫০ শতাংশেরও বেশি গ্যাস মজুদ রয়েছে, পাশাপাশি বৃহত্তম মানব ও প্রাকৃতিক সম্পদ রয়েছে।

ভারতের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী জওহরলাল নেহেরু ও সাবেক যুগোস্লাভিয়ার প্রেসিডেন্ট জোসেপ ব্রোজ টিটোর উদ্যোগে ১৯৫৫ সালে বাংডং সম্মেলনে সম্মত নীতিমালা প্রণয়নের পর ১৯৬১ সালে যুগোস্লাভিয়া বেলগ্রেডে ন্যাম প্রতিষ্ঠিত হয়। ভেনেজুয়েলার মারগারিটা দ্বীপে ২০১৬ সালে ১৭তম ন্যাম সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়।

ঔপনিবেশিক শাসন ব্যবস্থার পতন এবং আফ্রিকা, এশিয়া, লাতিন আমেরিকাসহ বিশ্বের অন্যান্য অঞ্চলে স্বাধীনতা সংগ্রাম এবং পরাশক্তির মধ্যকার স্নায়ু যুদ্ধ চলাকালে ন্যাম প্রতিষ্ঠা করা হয়। 

ঐতিহাসিকভাবেই ন্যাম বিশ্বশান্তি এবং নিরাপত্তা বজায় রাখার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে আসছে। তিনটি প্রধান করণীয়কে কেন্দ্র করে ন্যামের চেয়ারম্যানশিপ গঠিত হবে, যার মধ্যে আন্দোলনের কার্যকারিতা বাড়ানো এবং বৈশ্বিক পর্যায়ে সংগঠনের সুনাম বৃদ্ধির বিষয়টি রয়েছে। এছাড়া, বাংডং নীতি সমুন্নতকরণ এবং আন্দোলকারীদের মধ্যে সংহতি জোরদারকরণের বিষয়টি রয়েছে। সূত্র : বাসস

জেডএইচ/ বিএস/ এফসি

আরও পড়ুন