• ঢাকা
  • শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল, ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১
প্রকাশিত: নভেম্বর ১৯, ২০১৯, ০৩:১৫ পিএম
সর্বশেষ আপডেট : নভেম্বর ১৯, ২০১৯, ০৩:২৪ পিএম

ট্রাক-কাভার্ডভ্যান চালকদের কর্মবিরতি

রাজধানীসহ সারাদেশে নিরাপত্তা জোরদার

রাজধানীসহ সারাদেশে নিরাপত্তা জোরদার
নতুন সড়ক আইনের প্রতিবাদে রাজধানীর তেজগাঁও ট্রাকস্ট্যান্ডে ট্রাক কাভার্ডভ্যান চলাচল বন্ধ -ছবি : কাশেম হারুন

নতুন সড়ক আইন সংশোধনসহ ৯ দফা দাবিতে সারাদেশে ট্রাক-কাভার্ডভ্যান চালকদের কর্মবিরতি ঘিরে নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে। রাজধানীসহ দেশের প্রতিটি জেলা পুলিশ সুপারকে জেলা পর্যায়ে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নজরদারির নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। বিশেষ করে জেলা পুলিশ সুপার ও হাইওয়ে পুলিশ কর্মকর্তাকে সমন্বয় করে মহাসড়ক ও জেলার প্রাণকেন্দ্রের স্থাপনাগুলোতে বাড়তি নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিতে বলা হয়েছে।

মঙ্গলবার (১৯ নভেম্বর) বিকাল থেকে এ আদেশ কার্যকরের নির্দেশ দিয়েছে পুলিশ সদর দফতর। পুলিশ সদর দফতরের এআইজি মিডিয়া সোহেল রানা বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।

 গতকাল সোমবার বিকালে পুলিশ হেড কোয়াটার থেকে ক্ষুদে বার্তায় দেশের বিভাগীয় রেঞ্জ ডিআইজি ও প্রতিটি জেলার পুলিশ সুপারকে সতর্ক করা হয়েছে। পাশাপাশি রাজধানীর প্রবেশ পথ গুলোতে পুলিশ ও গোয়েন্দা এবং র‌্যাবের সতর্ক অবস্থান নেয়া হয়েছে। 

অপরদিকেসারাদেশে ট্রাক ও কাভার্ড ভ্যান কর্মবিরতির সময়ে নাশকতা বা অনাকাঙ্খিত ঘটনা এড়াতে রাজধানীর প্রবেশ পথ মহাসড়কের কাঁচপুর চিটাগাং রোড, টঙ্গী আবদুল্লাহপুর, পোস্তগোলা ও বাবুবাজার ব্রীজের পাশে কদমতলী, গাবতলী আমিনবাজারে নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে। 

সংশ্লিষ্ট প্রবেশপথ গুলোতে নিরাপত্তা চৌকি বসিয়ে ব্যাপক তল্লাশি করার নির্দেশ দিয়েছেন ডিএমপি কমিশনার  মো. শফিকুল ইসলাম। তিনি বলেন, ট্রাক ও কাভার্ড ভ্যান কর্মবিরতি চলাকালে রাজধানীতে কোন রকম অরাজকতা বরদাস্ত করা হবে না। অনাকাঙ্খিত ঘটনা এড়াতে নিরাপত্তার পাশাপাশি সব ধরনের ব্যবস্থা রাখা হচ্ছে। 
    
এদিকে সড়ক পরিবহন আইন-২০১৮ স্থগিত ও সংশোধনের দাবিসহ ৯ দফা দাবি নিয়ে কর্মবিরতিতে যাচ্ছে বাংলাদেশ  ট্রাক ও কাভার্ডভ্যান পণ্য পরিবহন মালিক-শ্রমিক ঐক্য পরিষদ। আজ মঙ্গলবার দুপুরে রাজধানীর তেজগাঁওয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে এসব দাবি উত্থাপন ও অনির্দিষ্টকালের জন্য কর্মবিরতির ঘোষণা দেয় সংগঠনটি।

এ সময় সংগঠনের আহ্বায়ক মো. রুস্তম আলী খান, সদস্য সচিব মো. তাজুল ইসলাম, যুগ্ম আহ্বায়ক মুকবুল আহমেদ ও যুগ্ম সচিব তালুকদার মো. মনির উপস্থিত ছিলেন।

শ্রমিকদের ৯ দফা দাবি হচ্ছে, সড়ক পরিবহন আইন-২০১৮ স্থগিত করে মালিক-শ্রমিকদের আয়ের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ জরিমানার বিধান ও দণ্ড উল্লেখপূর্বক সংশোধন করে একটি যুগোপযোগী বাস্তবসম্মত ও বিজ্ঞানভিত্তিক সঠিক আইন প্রণয়ন করতে হবে। বাংলাদেশ ট্রাক-কাভার্ডভ্যান পণ্য পরিবহন মালিক-শ্রমিক ঐক্য পরিষদের পক্ষ থেকে সড়ক পরিবহন উপদেষ্টা কমিটি, সড়ক পরিবহন আইনশৃঙ্খলা কমিটি এবং সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয় কর্তৃক গঠিত যেকোনো পণ্য পরিবহন সংশ্লিষ্ট কমিটিতে প্রতিনিধি হিসেবে অংশ গ্রহণের জন্য অর্ন্তভুক্ত করতে হবে। সড়ক দুর্ঘটনায় চালককে এককভাবে দায়ী করা যাবে না। সড়ক দুর্ঘটনাজনিত কোনো মামলায় চালক আসামি হলে তা অবশ্যই জামিনযোগ্য ধারায় হতে হবে। তদন্ত সাপেক্ষে প্রকৃত দোষী নির্ণয় করতে মালিক-শ্রমিক প্রতিনিধিদের সংযুক্ত করে তদন্ত কমিটি গঠনপূর্বক সঠিক তদন্ত সাপেক্ষে ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। সড়ক দুর্ঘটনার মামলায় কোনো গাড়ির মালিককে গ্রেফতার বা হয়রানি করা যাবে না। বিআরটিএ কর্তৃক রেজিস্ট্রেশনপ্রাপ্ত নভেম্বর-২০১৯ এর পূর্ব পর্যন্ত যে সকল পণ্য পরিবহন গাড়ি রফতানিযোগ্য পণ্য পরিবহনের সুবিধার্থে দৈর্ঘ্য, প্রস্থ, উচ্চতা নির্ধারণপূর্বক তৈরি করা হয়েছে সে সকল গাড়ির মডেল থাকাকালীন অবস্থায় চলাচলের অনুমতি দিতে হবে। সড়ক-মহাসড়ক ও হাইওয়েতে গাড়ির কাগজপত্র চেকিংয়ের নামে পুলিশি হয়রানি বন্ধ করতে হবে। সকল জেলা টার্মিনাল ও ট্রাকস্ট্যান্ডে অথবা লোডিং পয়েন্টে গাড়ির কাগজপত্র ও ড্রাইভিং লাইসেন্স চেকিং করতে হবে। বিআরটিএ কর্তৃক গাড়ির কাগজপত্র হালনাগাদ ও ড্রাইভিং লাইসেন্স থাকলে অযথা বিভিন্ন অজুহাতে পুলিশ কর্তৃক মামলা করা যাবে না। সহজ শর্তে স্বল্প সময়ের মধ্যে ড্রাইভিং লাইসেন্স দিতে হবে। যে সকল চালক যে সমস্ত গাড়ি চালনায় পারদর্শী সে সকল চালককে সে রকম লাইসেন্স প্রদান করতে হবে। বর্তমানে হালকা পেশাদার লাইসেন্স দিয়ে ভারী যানবাহন চালানোর অনুমতি দিতে হবে। জরিমানা মওকুফ করে গাড়ির কাগজপত্র হালনাগাদ করার ন্যুনতম ছয় মাস সময় দিতে হবে। বিগত পণ্য পরিবহন আন্দোলনে ও ধর্মঘটে যে সকল মালিক-শ্রমিকের বিরুদ্ধে মামলা রয়েছে তা অবিলম্বে প্রত্যাহার করতে হবে। সকল জেলা শহর ও হাইওয়ে মহাসড়কের পাশে, সিটি করপোরেশন, পৌরসভার ও গুরুত্বপূর্ণ ব্যবসায়িক স্থানে পর্যাপ্ত সুযোগ-সুবিধাসহ টার্মিনাল, স্ট্যান্ড নির্মাণ করতে হবে। টার্মিনাল নির্মাণের আগে রং পার্কিংয়ের মামলা দেয়া বা গাড়ি রেকারিং করা যাবে না। সমগ্র বাংলাদেশে একই নিয়মে একই ওজনে ওভারলোডিং নিয়ন্ত্রণ করতে হবে, মোটরযানের শ্রেণিবিন্যাস অনুযায়ী একটি বাস্তবসম্মত বোঝাইকৃত ওজনের হার নির্দিষ্ট করে ওভারলোডিং সম্পূণ রুপে বন্ধ করতে হবে। সড়ক-মহাসড়কে ৩০ মিটারের মধ্যে কোনো স্থাপনা থাকা যাবে না। প্রতি ১০০ কিলোমিটার পরপর পর্যাপ্ত সুযোগ-সুবিধাপূর্ণ বিশ্রামাগারসহ গাড়ি পার্কিংয়ের ব্যবস্থা রাখতে হবে। জনসাধারণের চলাচলের সুবিধার্থে পর্যাপ্ত পরিমাণ ফুটপাত, ওভারব্রিজ, আন্ডারপাস, জেব্রাক্রসিং ব্যবহার নিশ্চিত করতে হবে। ধীরগতির যানবাহন চলাচলের জন্য ভিন্ন লেন বা রাস্তা তৈরি করতে হবে। নসিমন, করিমন ও ভটভটিসহ সকল রেজিস্ট্রেশনবিহীন যান হাইওয়েতে চলাচল নিষিদ্ধ করতে হবে।

এইচএম/একেএস

আরও পড়ুন