• ঢাকা
  • রবিবার, ২৮ এপ্রিল, ২০২৪, ১৫ বৈশাখ ১৪৩১
প্রকাশিত: ডিসেম্বর ১২, ২০১৯, ০৯:৫৯ এএম
সর্বশেষ আপডেট : ডিসেম্বর ১২, ২০১৯, ১০:১১ এএম

ঢামেকে আহাজারি

দগ্ধদের চিকিৎসায় ১২ সদস্যের মেডিকেল বোর্ড 

দগ্ধদের চিকিৎসায় ১২ সদস্যের মেডিকেল বোর্ড 

ঢাকা মেডিকেল কলেজে (ঢামেক) হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে চিকিৎসাধীন দগ্ধ সকলেই শ্রমিক। তাদের আহাজারিতে ভারী হয়ে উঠেছে বাতাস। যন্ত্রনায় শুধু চিৎকারই নয়, কেউ আবার বিপদের সময় স্বজনদের কাছে না পেয়ে বিলাপ করছেন বিছানায় শুয়ে। তাদের চিকিৎসার নেই কোন সামর্থ। শ্বাসনালী পুড়ে যাওয়ায় মনে চাইলেও খেতে পারছেন না তারা। চলছে ব্যবস্থাপত্র অনুযায়ী ওষুধ ও স্যালাইন। মুখমন্ডল পুড়ে যাওয়ায় অনেকের অবয়ব পরিবর্তন হয়ে গেছে। চেনাই কঠিন বলে মন্তব্য করছেন অনেকে। 

বুধবার (১১ ডিসেম্বর) দিবাগত রাত সাড়ে ১১টায় বার্ন ইউনিটে সরেজমিনে ঘুরে দগ্ধ ব্যক্তিদের এভাবে আর্তনাদ করতে দেখা গেছে। যন্ত্রণায় তারা বলছে ভাই আমাকে বাঁচান, আমি পুড়ে শেষ হয়ে যাচ্ছি, একটু পানি দেন। বুকের ভেতরের সব পুড়ে গেল। কেউ আবার বলছেন, আমার স্ত্রী সন্তানদের চোখে দেখতে পাচ্ছি না। তাদের এই আর্তনাদে চোখে পানি চলে আসে ঢামেক হাসপাতালের বার্ন ইউনিটের চিকিৎসক নার্স ও কর্মচারিদের। একসঙ্গে এত রোগী আসায় প্রশাসনের নির্দেশক্রমে তাদের সেবায় হাসপাতালের অন্যান্য বিভাগ থেকেও ছুটে আসছেন চিকিৎসক ও নার্সরা। সহায়তা করছেন ওয়ার্ড বয় থেকে শুরু করে অন্যান্য সরকারি-বেসরকারি কর্মকর্তারা।

রাজধানীর পার্শ্ববর্তী কেরানীগঞ্জের হিজলতলায় প্লাষ্টিক কারখানায় আগুনে দগ্ধদের চিকিৎসায় ১২ সদস্যের একটি মেডিকেল টিম গঠন করা হয়েছে। এ বোর্ডের প্রধান হচ্ছেন ডা. সামন্ত লাল সেন। আজ বৃহস্পতিবার সকাল থেকে বোর্ডের চিকিৎসকরা দগ্ধদের পরীক্ষা নিরীক্ষাসহ সব ধরনের চিকিৎসা দিচ্ছেন।

এছাড়া হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে গতকাল বুধবার রাত ১১টা পর্যন্ত সর্বমোট ৩১ জন দগ্ধ রোগী কেরানীগঞ্জ থেকে এসেছেন। তাদের চিকিৎসার বিষয়ে বার্ন অ্যান্ড প্লাষ্টিক সার্জারী ইউনিটের সার্জন পার্থ শংকর পাল বলেছেন, এ সকল রোগীর সিংহভাগের শ্বাসনালী পুড়ে গেছে। তাদের সকলেই বিপদজনক অবস্থায় রয়েছেন। তাদের জন্য প্রয়োজন রক্তের। ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের রক্ত পরিসঞ্চালন বিভাগে রক্ত সংকট দেখা দেয়। এসময় রোগীর খোঁজ খবর নিতে এসে হাসপাতাল পরিচালক বলেন, রক্ত সংকট গোচাতে আপনারা সকলেই ব্লাড ব্যাংকে গিয়ে রক্ত দান করুন। এ লোকগুলোকে বাঁচাতে এগিয়ে আসুন। রক্ত দিয়ে জীবন বাঁচান। এছাড়া সকল ওষুধ এবং ড্রেসিং উপকরণ হাসপাতাল থেকে সরবরাহ করা হচ্ছে বলে পরিচালক জানান।
    
এদিকে কেরানীগঞ্জের চুনকুটিয়া এলাকায় প্রাইম পেট অ্যান্ড প্লাস্টিক ইন্ডাষ্ট্রিজ লিমিটেড নামে কারখানায় অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় একজনের মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। এছাড়া এ ঘটনায় দগ্ধ ৩১ জনকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইউনিটে ভর্তি করা হয়েছে। তাদের সবার অবস্থা আশঙ্কাজনক বলে জানিয়েছেন এ ইউনিটের জাতীয় সমন্বয়ক সামন্ত লাল সেন। তিনি জানান, এই ব্যক্তিদের সর্বনিম্ন ৩০ শতাংশ পুড়ে গেছে। তাদের সবারই শ্বাসনালি পুড়ে গেছে। 
এদিকে সন্ধ্যার পর ঢাকা মেডিকেলে রোগীদের দেখতে আসেন বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ। তিনি সাংবাদিকদের বলেন, ওই কারখানার কোনো অনুমোদন ছিলো না। কারখানাটি কীভাবে সেখানে হলো, সে ব্যাপারে তদন্ত করা হচ্ছে। ঢাকা মেডিকেলে আসার আগে তিনি দুর্ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন।

অগ্নিদগ্ধ হয়ে বার্ন ইউনিটে চিকিৎসাধীন রয়েছেন-  আসাদ (১৪), মফিজ (৪৫), শাহাজুল (১৯), বাবলু (২৬), সুমন (২২), খালেক (৩২), মোস্তাকিম (২২), জাহাঙ্গীর (৫২), ফয়সাল (২৯), সালাউদ্দিন (৩২), রায়হান (১৬), রাজ্জাক (৪৫), আসলাম (১৯), সোহাগ (২৫), জিসান (১৬), লালমিয়া (৪২), সাখাওয়াত (২৬), সোহাগ (১৮), দুর্জয় (১৪), সিরাজ (৫০), বসির (১৮), ফিরোজ (৩৯), সুজন (১৯), সাজিদ (২৯), আবু সাঊদ (১৬), ইমরান (১৮), মেহেদী (২০), জাকির (২৪), ফারুক (৩২), জিয়ারুল ইসলাম (৩২) ও আলম (৩৫)। 

এইচ এম/বিএস