• ঢাকা
  • মঙ্গলবার, ১৪ মে, ২০২৪, ৩১ বৈশাখ ১৪৩১
প্রকাশিত: সেপ্টেম্বর ৫, ২০২০, ১১:৪০ পিএম
সর্বশেষ আপডেট : সেপ্টেম্বর ৫, ২০২০, ১১:৪১ পিএম

মসজিদে বিস্ফোরণ

মুয়াজ্জিনের পর মারা গেলেন ইমাম

মুয়াজ্জিনের পর মারা গেলেন ইমাম
একে একে বহন করে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে মৃতদেহ ● সংগৃহীত

নারায়ণগঞ্জে মসজিদে বিস্ফোরণে এবার মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়লেন ইমাম আবদুল মালেক আনসারী।

শনিবার (৫ সেপ্টেম্বর) রাত সাড়ে আটটার দিকে শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন ইনস্টিটিউটের প্রধান সমন্বয়ক ডা. সামন্তলাল সেন সময় সংবাদকে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

এর আগে দুপুরে ওই মসজিদের মুয়াজ্জিন দেলোয়ার হোসেন মারা যান। এ নিয়ে মৃতের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ২১ জনে।

শুক্রবার (৪ সেপ্টেম্বর) বিস্ফোরণের পর দগ্ধ ৩৭ জনকে শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন ইনস্টিটিউটে ভর্তি করা হয়। দগ্ধ বাকি ১৬ জনের অবস্থাও আশঙ্কাজনক। ডা. সামন্তলাল সেন জানান, তারাও রয়েছেন জীবন-মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে।

কেউ শোকে স্তব্ধ, কেউ চিৎকার করে কাঁদছেন, কারও চোখে জল টলমল। প্রিয়জনের মরদেহের জন্য অপেক্ষায় কেউ, কারও আবার সংকটাপন্ন স্বজনকে নিয়ে উৎকণ্ঠা। এর মধ্যে স্বামী ইব্রাহিম বিশ্বাসের মৃত্যুর খবর শুনে অচেতন হয়ে পড়লেন নাসরীন আক্তার। আরেক মা বিলাপ করছিলেন তার সাত বছরের ছেলে জুবায়ের ফরাজীর জন্য। টিভি দেখতে থাকা ছোট্ট ছেলেটিকে তিনি একরকম জোর করে স্বামীর সঙ্গে নামাজে পাঠান। ছেলে আর ফিরে আসেনি মায়ের বুকে, স্বামীও সংকটাপন্ন।

এমন অনেক বেদনাবিধুর দৃশ্য দেখা যায় শনিবার (৫ সেপ্টেম্বর) শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে। ৪ সেপ্টেম্বর (শুক্রবার) রাতে নারায়ণগঞ্জ শহরের তল্লা এলাকার মসজিদে ভয়াবহ বিস্ফোরণ ও অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় দগ্ধদের চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে এই হাসপাতালে।  

মসজিদে এমন মর্মান্তিক মৃত্যুর ঘটনা মেনে নিতে পারছেন না কেউ। ধর্মপ্রাণ মানুষেরা নামাজ পড়তে গিয়ে অগ্নিকাণ্ডে দগ্ধ হয়ে পাড়ি জমালেন পরপারে। স্বজনরা বলছেন, কিছু সময় পরই তাদের বাসায় ফেরার কথা ছিল। অনেকে বাসা থেকেই মসজিদে গিয়েছিলেন। আবার কেউ বাইরের কাজ সেরে যান মসজিদে। ফোনে স্বজনকে জানান, নামাজ পড়েই ফিরবেন বাসায়। তাদের আর ফেরা হয়নি। যন্ত্রণাক্লিষ্ট মৃত্যুর পর তাদের ঠাঁই হয়েছে কবরে।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সার্বক্ষণিক এ ঘটনার খবর রাখছেন এবং আহতদের সর্বোচ্চ সুচিকিৎসা নিশ্চিত করার নির্দেশ দিয়েছেন। তিনি নিহতদের আত্মার মাগফিরাত কামনা করেন ও তাদের পরিবারের সদস্যদের প্রতি গভীর সমবেদনা জানান।

মৃতদের মধ্যে রয়েছেন নারায়ণগঞ্জের তল্লার বাসিন্দা নূর উদ্দিনের বড় ছেলে সাব্বির (২১) ও মেজো ছেলে তুলারাম ডিগ্রি কলেজের উচ্চ মাধ্যমিকের ছাত্র জোবায়ের (১৮), পশ্চিম তল্লা বায়তুস সালাত জামে মসজিদের মুয়াজ্জিন দেলোয়ার হোসেন (৪৫) ও তার ছেলে কুমিল্লার নাঙ্গলকোটের বাসিন্দা জুনায়েদ হোসেন (১৬), মুন্সীগঞ্জের লৌহজং উপজেলার হাটবুকদিয়া গ্রামের কুদ্দুস ব্যাপারী (৭২), চাঁদপুর সদর উপজেলার করিম মিজির ছেলে মোস্তফা কামাল (৩৪), নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লার পোশাক শ্রমিক জুলহাস ফরাজীর ছেলে জুবায়ের ফরাজী (৭), পটুয়াখালীর গলাচিপার আবদুল খালেক হাওলাদারের ছেলে পোশাক শ্রমিক মো. রাশেদ (৩০), পশ্চিম তল্লার বাসিন্দা হুমায়ুন কবির (৭২), পটুয়াখালীর রাঙ্গাবালী উপজেলার কাউখালী গ্রামের জামাল আবেদিন (৪০), পোশাক শ্রমিক ইব্রাহিম বিশ্বাস (৪৩), নারায়ণগঞ্জ কলেজের উচ্চ মাধ্যমিকের শিক্ষার্থী রিফাত (১৮), চাঁদপুরের ফরিদগঞ্জ উপজেলার পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থী মাইন উদ্দিন (১২), নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লার মো. জয়নাল (৩৮), লালমনিরহাটের আদিতমারী উপজেলার তালুকপলাশী গ্রামের মেহের আলীর ছেলে পোশাক শ্রমিক মো. নয়ন (২৭), ফতুল্লার ওয়ার্কশপের শ্রমিক কাঞ্চন হাওলাদার (৫০), শ্রমিক মো. রাসেল (৩৪), বাহার উদ্দিন (৫৫), ইমাম আবদুল মালেক (৬০) ও নিজাম ওরফে মিজান (৪০)। 

শুক্রবার (৪ সেপ্টেম্বর) রাত পৌনে ৯টার দিকে নারায়ণগঞ্জ শহরের পশ্চিম তল্লা এলাকার বাইতুস সালাত জামে মসজিদে এশার নামাজ শেষ হওয়ার পর ঘটে গ্যাস-বিস্ফোরণ ও অগ্নিকাণ্ড। এতে মসজিদে নামাজ আদায়রত সবাই দগ্ধ হন। তাদের উদ্ধার করে ঢাকার শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে পাঠানো হয়।

নারায়ণগঞ্জ ফায়ার সার্ভিস অ্যান্ড সিভিল ডিফেন্সের কর্মকর্তারা জানান, মসজিদটির নিচ দিয়ে গ্যাস সরবরাহের পাইপ ছিল। সেই পাইপের ছিদ্র থেকে কয়েকদিন ধরেই গ্যাস নির্গত হচ্ছিল। মসজিদ শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত হওয়ায় সব জানালা বন্ধ থাকত। এ কারণে গ্যাস বাইরে যেতে পারেনি। এর মধ্যেই শুক্রবার রাতে মসজিদের এসি বা ফ্যানের সুইচ বন্ধ করার সময় সৃষ্ট ছোট্ট স্ফুলিঙ্গ থেকেই আগুনের সূত্রপাত হয় বলে ধারণা করা হচ্ছে।

মোহাম্মদ রাসেল নামে এক প্রত্যক্ষদর্শী শনিবার (৫ সেপ্টেম্বর) বার্ন ইনস্টিটিউটে জানান, ৪ সেপ্টেম্বর (শুক্রবার) মসজিদে মুসল্লির উপস্থিতি ছিল কম। কারণ মসজিদের সামনে পানি জমে থাকায় যাতায়াত কষ্টকর ছিল। তবু তিনি মসজিদে যান। নামাজ পড়ে মসজিদের সামনে এসে দাঁড়ান। তখনই হঠাৎ বিস্ম্ফোরণের মতো শব্দ ও আগুনের হলকা দেখতে পান। প্রথমে বুঝতে পারেননি কী ঘটেছে। পরে মুসল্লিদের চিৎকার শুনে তিনি ও আশপাশের লোকজন এগিয়ে যান এবং উদ্ধার তৎপরতা চালান।

কেএপি

আরও পড়ুন