• ঢাকা
  • শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল, ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১
প্রকাশিত: সেপ্টেম্বর ২০, ২০২০, ১২:৫৮ পিএম
সর্বশেষ আপডেট : সেপ্টেম্বর ২০, ২০২০, ০২:১০ পিএম

পেঁয়াজের বাজার

সরবরাহ স্থিতিশীল থাকার পরও কেন আচমকা মূল্যবৃদ্ধি

সরবরাহ স্থিতিশীল থাকার পরও কেন আচমকা মূল্যবৃদ্ধি
ফাইল ছবি

বাংলাদেশের বাজার ব্যবস্থাপনায় কৃষিপণ্যের মূল্যের অযৌক্তিক আচরণ নতুন নয়। আমরা এরকম আগেও দেখেছি চাল, কাঁচা চামড়া ও মরিচে। এখন তা দেখা যাচ্ছে পেঁয়াজের ক্ষেত্রে- যা এরই মধ্যে জনমনে অস্বস্তি তথা আতঙ্কের সৃষ্টি করেছে এবং দেশের খাদ্যের মূল্যস্ফীতিতে প্রভাব ফেলছে। প্রতি বছরই রমজান মাস শুরুর কয়েক মাস আগে থেকেই এর ভোগ বেড়ে যাওয়ার কারণে সারা বছরই মসলা জাতীয় এই শস্যটির একটি চাহিদা থাকে খাদ্য উপকরণে।

এই করোনা মহামারি কারণে মানুষজন এখন নানা দুর্ভোগে। এরপর দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি তাদের নতুন করে কষ্টে ফেলেছে। বিশেষ করে হঠাৎই পেঁয়াজের অস্বাভাবিক দাম বাড়ায় মানুষজন পড়েছে চরম বিপাকে। কী করবে মানুষ, তাদের তো আর কিছুই করার নেই। ভোগান্তি ছাড়া তাদের কপালে আর কী আছে? পবিত্র ঈদের সময় মূল্য বৃদ্ধিজনিত যাতনায় তারা ভোগে। বাজেটের সময় তারা ভোগে। সরবরাহে কোনো বিঘ্ন ঘটলেও তারা ভোগে। বন্যা, অতিবৃষ্টি হলে তারা ভোগে। ঠিক এবারও তার ব্যতিক্রম ঘটেনি। শাকসবজি, তরিতরকারি, মাছ, মাংস, দুধ, ডিম থেকে শুরু করে সব ভোগ্যপণ্যের দাম এখন ছয় মাস আগের চেয়ে বেশি। এ অবস্থায় সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিতে হবে। বাজারে ভ্রাম্যমান আদালতের মনিটরিংয়ে পণ্যমূল্য সবসময় স্বাভাবিক ও স্থিতিশীল রাখতে হবে। 
 
ভারতে পেঁয়াজের মূল্য বৃদ্ধির খবরে গত শুক্রবারই দেশে পেঁয়াজের দাম বাড়তে শুরু করে। দুইদিনের ব্যবধানে ৪০ টাকার পেঁয়াজের দাম উঠে ৬০ টাকায়। সপ্তাহের মাঝামাঝিতে ভারত পেঁয়াজ রপ্তানি বন্ধের খবরে ২৪ ঘণ্টার ব্যবধানে পাইকারি ও খুচরায় পেঁয়াজের দাম শতকের ঘর ছাড়িয়ে যায়। বাজার স্বাভাবিক রাখতে দ্রুত বিকল্প দেশ থেকে আমাদানির উদ্যোগ, এলসি মার্জিন সীমিতকরণ, আমদানি শুল্ক কমিয়ে আনাসহ বিভিন্ন পদক্ষেপ নেয় বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। পাশাপাশি গত ১৩ সেপ্টেম্বর থেকে টিসিবির মাধ্যমে ৩০ টাকা কেজিতে পেঁয়াজ বিক্রি শুরু হয়।

সরকারের দাবি, দেশে প্রতি মাসে প্রায় দুই লাখ টন চাহিদার বিপরীতে এখনও প্রায় পাঁচ লাখ টন পেঁয়াজ মজুদ রয়েছে। এরপরও সুযোগকে কাজে লাগিয়ে কিছু ব্যবসায়ী ও মজুদদার সিন্ডিকেট বাজার অস্থিতিশীল করার চেষ্টা করছে। মিশর, তুরস্কসহ বিকল্প দেশগুলো থেকে আমদানি শুরু হলে কৃত্রিম সঙ্কট টিকবেনা বলে মনে করেছেন বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি। এবার টিসিবির মাধ্যমে পেঁয়াজ আমদানি করে অনলাইনে সুলভ মূল্যে বিক্রির উদ্যোগও সরকার নিয়েছে।

চলমান করোনাভাইরাস (কোভিড-১৯) মহামারি ও বর্তমান বন্যা পরিস্থিতিতে ভোক্তাদের জন্য সাশ্রয়ী মূল্যে সারাদেশে তিনটি পণ্য বিক্রি করছে ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশ (টিসিবি)। ভ্রাম্যমাণ ট্রাকে পেঁয়াজের পাশাপাশি চিনি, মসুর ডাল ও সয়াবিন তেল বিক্রি করা শুরু করে টিসিবি। টিসিবির ট্রাক থেকে প্রতি কেজি পেঁয়াজ পাওয়া যাবে ৩০ টাকায়, যা একজন ক্রেতা সর্বোচ্চ দুই কেজি কিনতে পারবেন। এছাড়া প্রতি কেজি চিনি পাওয়া যাবে ৫০ টাকায়, যা একজন ক্রেতা সর্বোচ্চ দুই কেজি কিনতে পারবেন। মসুর ডাল ৫০ টাকা কেজিতে একজন ক্রেতা সার্বোচ্চ দুই কেজি নিতে পারবেন। এছাড়াও সয়াবিন তেল ৮০ টাকা লিটারে একজন ক্রেতা দুই থেকে সর্বোচ্চ পাঁচ লিটার নিতে পারবেন।

পেঁয়াজের দাম বৃদ্ধি নিয়ে নানা মানুষ নানান কথা বলে। কেউ কেউ কারসাজি না বলে বলছেন কৃত্রিম সংকট তৈরির কথা। কারসাজি, কৃত্রিম সংকট, সিন্ডিকেটের কাজ- এসব অভিযোগ শুধু খবরের কাগজে নয়, খোদ সরকারেরও। সাধারণ মানুষ এর শিকার। কারসাজি না হলে বাজারে সরবরাহ স্থিতিশীল থাকার পরও কেন এ আচমকা মূল্যবৃদ্ধি। একশ্রেণির ব্যবসায়ী এ মহাদুর্যোগেও মানুষকে, ভোক্তাকে রেহাই দিচ্ছে না। মানুষের রোজগার নেই, হাজার হাজার লোক চাকরিচ্যুত, ব্যবসাচ্যুত ও বেকার। চূড়ান্ত অস্বাভাবিক ও দুঃস্বপ্নে দিন যাচ্ছে মানুষের করোনা মহামারীর কারণে। এ সময়ে ব্যবসায়ীদের একটি শ্রেণি যে অসামাজিক, অনৈতিক কাজটি করছে, তা তারা না করলেই কি পারত না? তাদের তো উচিত ছিল এই দুর্দিনে, অনিশ্চিত জীবনে মানুষকে একটু রেহাই দেওয়া। না, তা হয়নি এবং হচ্ছে না। অসাধু ব্যবসায়ীদের কারণেই যে পেঁয়াজের এই অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধি একমাত্র হাতিয়ার তা বলাই বাহুল্য। যে কোনো উসিলায় দাম বাড়ানোর ক্ষেত্রে আইন-কানুন নীতি-নৈতিকতার কোনো বালাই নেই এখানে। বাজারে নজরদারি বাড়ানো এবং সিন্ডিকেটধারীদের বিরুদ্ধে কঠোর শাস্তিমূলক ব্যবস্থার কোনো বিকল্প নেই। অবিলম্বে পেঁয়াজের মূল্য জনসাধারণের নাগালের মধ্যে নিয়ে আসতে যার যা করণীয় রয়েছে সেটি করতে হবে। এজন্য সরকার-ব্যবসায়ী সব পক্ষকেই এগিয়ে আসতে হবে। ত্যাগ করতে হবে মুনাফালোভী মানসিকতা।

জাগরণ/এমএইচ
 

আরও পড়ুন