• ঢাকা
  • শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল, ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১
প্রকাশিত: মার্চ ১, ২০২১, ০৬:৩৭ পিএম
সর্বশেষ আপডেট : মার্চ ১, ২০২১, ০৬:৩৭ পিএম

বেহারারা এখন কেবলই স্মৃতি

বেহারারা এখন কেবলই স্মৃতি

সেই প্রচীন কাল থেকে গ্রাম বাংলার একটি বাহন পালকি। যান্ত্রিকতার ভিড়ে চোখে পড়ে না বাহনটি। তাই এটি এখন শুধু রূপকথা। পালকির বাহকদের বলা হয় বেহারা। কোথাও বেড়াতে গেলেই ডাক পড়ত তাদের। এখন আর সেই দিন নেই। কেউ না ডাকায় বেহারাদের বেহাল অবস্থা।

পালি ভাষা পলাঙ্কো থেকে পালকি (বাংলা ও হিন্দি ) শব্দটি এসেছে। রামায়ণে উল্লেখ করা হয়েছে মানুষ ভেতরে রেখে অন্যরা কাঁধে করে বহন করা কাঠের তৈরি এই পালকির কথা। প্রাচীন এ বাহনটির সঙ্গে মিশে আছে বাংলার অতীত-ঐতিহ্য আর নানা লোকগাঁথা।

পারস্য পর্যটক ইবনে বতুতা পালকিতে চড়ে ভ্রমণে বের হতেন। সম্রাট আকবরের রাজত্বকালে পালকির ব্যাপক ব্যবহার ছিল। বাদ যাননি বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরও। কুষ্টিয়ার শিলাইদহে থাকাকালে পালকিতে চড়েই জমিদারি কাচারি পরিদর্শনে যেতেন তিনি।

গ্রামবাংলার এক সময়কার এই ঐতিহ্যবাহী বাহনটিই এখন হারিয়ে গেছে। সেই সঙ্গে হারিয়ে গেছে বেহারা পেশাও। এখন তা বিয়ের কার্ড বা ছবিতেই সীমাবন্ধ।

বাংলাদেশের বিভিন্ন স্থানে অবস্থিত রবিদাস পল্লী লোকজন এবং নিম্ন বর্ণের হিন্দুরা বেহারা পেশায় নিয়োজিত ছিলেন। তেমনি একটি এলাকা হল কিশোরগঞ্জের নিকলী উপজেলার উজানহাটি গ্রামের ঘোড়াউত্রা নদীর তীরে অবস্থিত কারপাশা রবিদাস পল্লী।

এই পল্লীর বাসিন্দা সুবল রবিদাসের পূর্বপুরুষদের জীবন কেটেছে পালকি বহন করে। তখন পল্লীতে শত শত পালকি ছিল। কিন্তু যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নতির ফলে এখন পালকির ব্যবহার নেই বললেই চলে। কয়েক দশক আগেও বিয়ে বা অন্য কোনো বিশেষ অনুষ্ঠানে ডাক পড়ত বেহারাদের। এখন তা কেবলই স্মৃতি।

সুবল রবিদাস বলেন, “পূর্বপুরুষদের পেশা ধরে রাখলেও নেই আগের মতো জৌলুস। অভাব-অনটনে পুরনো কাঠের পালকির মতোই জীর্ণতার দোলাচালে চলছে আমাদের জীবন। সমাজের চোখে আমরা অবহেলিত। আমাদের জীবন কীভাবে কাটছে সেই খবর রাখে না কেউ।”

জানা গেছে, কিশোরগঞ্জের ১৩ উপজেলায় সব মিলে দু’শ মতো রবিদাস সম্প্রদায়ের পরিবারের বাস। ব্রিটিশ আমল থেকেই ওই পল্লীগুলোতে বসবাস করে আসছেন তারা। এর মধ্যে বেহারা পেশা এখনও টিকে আছে কয়েক উপজেলার দশটি পরিবারে। দেশের সব মানুষের সামগ্রিক জীবনমানের উন্নতি হলেও চরম দারিদ্র্য সীমার নিচে বাস করছেন তারা। এসব মানুষের ভাগ্য পরিবর্তনে সরকারের নেই কোনো উল্লেখযোগ্য উদ্যোগ। বেহারা তাদের মূল পেশা হলেও এখন তারা জুতা সেলাই ও চুল কেটে জীবিকা নির্বাহের চেষ্টা করছেন। নারীরা মাটি কেটে ও অন্যের বাড়িতে কাজ করে সন্তানদের মুখে খাবার তুলে দিচ্ছেন।

জেলা পরিষদের চেয়ারমান অ্যাডভোকেট মো. জিল্লুর রহমান বলেন, “পালকির বেহারা বা রবিদাস সম্প্রদায়ের সার্বিক সহযোগিতার বিষয়টি মাথায় রেখে তাদের জন্য নতুন কিছু করার চিন্তা চলছে।” 

বাঙালির আদি সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যের অন্যতম অনুসঙ্গ এ পালকিকে সীমিত পরিসরে হলেও টিকিয়ে রাখা এবং বেহারাদের জীবনমান উন্নয়নে উদ্যোগ নেওয়া হবে এমনটাই মনে করছেন এ পেশায় জড়িতরা।