• ঢাকা
  • শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল, ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১
প্রকাশিত: এপ্রিল ১৪, ২০২১, ০৪:২১ পিএম
সর্বশেষ আপডেট : এপ্রিল ১৪, ২০২১, ০৪:৩৫ পিএম

‘ধর্মীয় মৌলবাদ চোখ রাঙাচ্ছে বাঙালির অসাম্প্রদায়িক চেতনাকে’

‘ধর্মীয় মৌলবাদ চোখ রাঙাচ্ছে বাঙালির অসাম্প্রদায়িক চেতনাকে’

ছায়ানটের সভাপতি সন্‌জীদা খাতুন বলেন, “অসংখ্য প্রাণের আত্মদানের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশ স্বাধীন হয়েছে। সংস্কৃতির যাত্রাপথ নির্বিঘ্ন হয়েছে বলা যায়। অর্ধশতবর্ষ পরে ধ্বংসস্তূপ থেকে জেগে ওঠা বাংলাদেশ অর্থনৈতিক ও সামাজিক সূচকে ঈর্ষণীয় সাফল্যের দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে। এটি আমাদের আশাবাদী করে তোলে। তবে এই সময়েও ধর্মীয় মৌলবাদ চোখ রাঙাচ্ছে বাঙালির অসাম্প্রদায়িক চেতনাকে।”

সন্‌জীদা খাতুন আরও বলেন, “ধর্মের মর্মবাণীকে উপেক্ষা করে নতুন অবয়বে উত্থিত ধর্ম বিদ্বেষ সম্প্রীতির সমাজকে বিনষ্ট করতে সচেষ্ট। লোভের বিস্তার বৈষম্য সৃষ্টি করছে। খণ্ডবিচ্ছিন্নভাবে আত্মপ্রকাশ করছে সামাজিক অবক্ষয়ের। দেশের অগ্রযাত্রাকে অক্ষুণ্ণ রেখে নেতিবাচক প্রবণতাকে রোধ করবার জন্যে অতীতের মতো বাঙালি সংস্কৃতির চর্চার প্রসার মানবিক সমাজ গঠনে এক অবলম্বন হয়ে উঠতে পারে।”

করোনা মহামারিকালে পয়লা বৈশাখের প্রথম প্রভাতে ছায়ানটের শিল্পীরা গাইলেন উজ্জীবনী গান, “আমি ভয় করব না, ভয় করব না। দু’বেলা মরার আগে মরব না ভাই, মরব না।” এ সময়  আশার বাণী শুনিয়ে ছায়ানট সভাপতি সন্‌জীদা খাতুন বলেন, “আমরা আশা করছি, অন্ধকারের উৎস থেকে আলো উৎসারিত হবেই। নতুন বছর বয়ে আনবে সর্বজনের জন্য মঙ্গলবার্তা। আলো আসবেই।”

বুধবার ছায়ানটের বর্ষবরণের ডিজিটাল আয়োজনে গান, আবৃত্তিতে মানুষের মঙ্গল কামনা ছাড়াও স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উপলক্ষে ছিল দেশাত্মবোধক গানের পরিবেশনা।

সকাল ৭টায় বাংলাদেশ টেলিভিশনে সম্প্রচার করা হয় বর্ষবরণের এই আয়োজন। ডিজিটাল মাধ্যমে সম্প্রচারিত অনুষ্ঠানটি সাজানো হয়েছে রমনার বটমূলের পুরোনো আয়োজন ও নতুন রেকর্ড করা পরিবেশনার সমন্বয়ে।

হতাশার সুরে সন্‌জীদা খাতুন বলেন, “উৎসবের আমেজ নেই। স্বজন হারানোর বেদনা আর সংক্রমণের শঙ্কা আজ সর্বজনের অন্তরে।”

ছায়ানট সভাপতি আরও বলেন, “পয়লা বৈশাখ বাঙালির জীবনে নিছক নববর্ষ উদযাপন নয়, আত্মপরিচয়ের সন্ধানে বাঙালি যে পথ পরিক্রমায় অংশ নিয়েছে, সে পথ কখনই মসৃণ ছিল না।”

করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ঠেকাতে এবার বাংলা নতুন বছরের প্রথম দিন ভোর থেকেই দেশে ‘কঠোর লকডাউন’ শুরু হয়েছে। করোনা পরিস্থিতির অবনতি হওয়ায় এর আগেই জনসমাগম করে বাংলা নববর্ষ উদযাপন না করে ভার্চুয়ালি অনুষ্ঠান আয়োজনের অনুরোধ জানিয়েছিল সংস্কৃতিবিষয়ক মন্ত্রণালয়। তাই বাঙালির বর্ষবরণ অনুষ্ঠানের প্রতীক হয়ে ওঠা রমনা বটমূলের সংগীত আয়োজন টানা দ্বিতীয়বার বাতিল করা হয়। গত বছরের মতো এবারও ডিজিটাল মাধ্যমে বর্ষবরণের অনুষ্ঠানের আয়োজন করে ছায়ানট।

১৯৬৭ সাল থেকে নতুন সূর্যোদয়ের সাথে সাথে রমনার বটমূলে ছায়ানট যে প্রভাতী আয়োজন করে আসছে, বিশ্ব বাঙালির কাছে তা নতুন বছরকে বরণ করার প্রতীক হয়ে উঠেছে। এর আগে ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের বছর ছাড়া নানা প্রতিকূল পরিস্থিতিতেও প্রতিবছরই এই পরিবেশনা হয়েছে। কিন্তু গত বছর তাতে করোনা মহামারির কারণে সেটি আর সম্ভব হয়নি। তারই ধারাবাহিকতায় এবারও ডিজিটাল আয়োজনে সেটি পালন করে ছায়ানট।