• ঢাকা
  • শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল, ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১
প্রকাশিত: মে ৬, ২০২১, ১১:৩৮ এএম
সর্বশেষ আপডেট : মে ৬, ২০২১, ১১:৫৫ এএম

২২ দিন পর রাস্তায় গণপরিবহন, স্বস্তিতে যাত্রীরা

দীর্ঘ ২২ দিন বন্ধ থাকার পর ফের শুরু হয়েছে গণপরিবহন চলাচল। এতে অনেকটা ভোগান্তি কমেছে যাত্রীদের। পুনরায় কাজে ফিরতে পেরে স্বস্তি প্রকাশ করেছেন পরিবহন শ্রমিকরাও।

চলমান ‘কঠোর বিধিনিষেধের’ মধ্যেই বৃহস্পতিবার (৬ মে) ভোর থেকে সারাদেশে ধারণ ক্ষমতার অর্ধেক যাত্রী নিয়ে গণপরিবহন চলাচল শুরু হয়। তবে দূরপাল্লার কোনো বাস চলাচল করছে না। আগের মতোই বন্ধ রয়েছে যাত্রীবাহী ট্রেন ও লঞ্চ।

সকালে রাজধানীর বিভিন্ন সড়ক ঘুরে দেখা যায়, দুই আসনে একজন যাত্রী নিয়ে বাসগুলো চলাচল করছে। চালক-হেলপার থেকে শুরু করে যাত্রী সবাই মোটামুটি মাস্ক পরিধান করছেন। কিছু কিছু বাসের হেলপারের কাছে হ্যান্ড স্যানিটাইজারের স্প্রে বোতলও দেখা যায়। তবে যাত্রীদের সেটি তেমন একটা ব্যবহার করতে দেখা যায়নি।

গণপরিবহন চলাচল শুরু করায় চেনা রূপে ফিরেছে রাজধানী ঢাকা। আগের মতোই সড়কগুলোতে দেখা দিয়েছে তীব্র যানজট। রাস্তায় মোড়ে মোড়ে বাসের জন্য অপেক্ষা করছেন যাত্রীরা। তবে গণপরিবহন চলাচল শুরু করায় ভোগান্তি অনেকটা কমেছে বলে জানিয়েছেন তারা।

বিআরটিসির দোতলা বাসে করে কর্মস্থলে যাচ্ছিলেন একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা মহসিন। তিনি বলেন, “গণপরিবহন চলাচল শুরু করায় আমাদের ভোগান্তি অনেকটা কমেছে। ‘লকডাউনে’ গণপরিবহন বন্ধ থাকায় আমাদের পকেট একেবারে খালি হয়ে গিয়েছিল। প্রতিদিন অফিস যেতে ৪০০-৫০০ টাকা করে লাগতো। এখন খরচ অনেক কমবে।”

বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের চাকরিজীবী রোকসানা আক্তার আনু বলেন, “গণপরিবহন বন্ধের সময় ছেলেরা একজন আরেকজনের সাথে সিএনজি, রিকশা বা মোটরসাইকেলে ভাগাভাগি করে যেতো পারতো। কিন্তু আমাদের (নারী) অনেক সমস্যা হতো। চাইলেই আমারা ভাগাভাগি করে যেতে পারতাম না। একদিন অফিস গেলে, আরেকদিন যেতে পারতাম না। কারণ আমাদের মধ্যবিত্ত পরিবারের মানুষদের এত ভাড়া দিয়ে যাতায়াত করা সম্ভব না। এখন গণপরিবহন চলাচল শুরু করায় কষ্ট অনেকটা লাঘব হবে।”

ইদ্রিস মোল্লা নামের এক ব্যবসায়ী বলেন, “বাসে সবাই মাস্ক পরছে। দুই সিটে একজন করে বসছে। এতে সংক্রমণের ঝুঁকিও এড়িয়েই চলাচল করা যাবে।”

বাসের জন্য কারওয়ান বাজার মোড়ে অপেক্ষা করছিলেন স্বপ্ন সুপার শপের কর্মী শিউলি। তিনি বলেন, “অর্ধেক যাত্রী পরিবহন করায় বাস পেতে একটু সমস্যা হচ্ছে। তবে বর্তমান করোনা পরিস্থিতি বিবেচনায় স্বাস্থ্যঝুঁকির কথা চিন্তা করে সেটা মেনে নিতে হবে।”

গণপরিবহন চলাচল করায় শুরু যাত্রীদের ভোগান্তি কমেনি, গত কয়দিন ধরে বেকার বসে থাকা পরিবহন শ্রমিকদেরও ভোগান্তি কমেছে। লাব্বাইক বাসের চালক নিজাম বলেন, “এতদিন কাজ ছাড়া বসে ছিলাম। আয় রোজগার ছিল না। এখন গণপরিবহন চলাচল করায় আমাদের সুবিধা হয়েছে। আমারা প্রতি আসনে একজন করে যাত্রী নিচ্ছি এবং স্বাস্থ্যবিধি মেনে যাত্রী পরিবহন করছি।”

বিআরটিসি বাসের হেলপার সাজ্জাদ বলেন, “মাস্ক ছাড়া কাউকে বাসে উঠতে দেওয়া হচ্ছে না। যাত্রীদের জন্য হ্যান্ড স্যানিটাইজারের ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। দুই আসনে একজন করে যাত্রী নেওয়া হচ্ছে।”

তেজগাঁও ট্রাফিক বিভাগের সার্জেন্ট আরিফ বলেন, “আমরা চেকপোস্টগুলোতে পরীক্ষা করেছি দেখছি স্বাস্থ্যবিধি মেনেই পরিবহনগুলো চলাচল করছে। আসন একটি ফাঁকা রেখে যাত্রীরা বসছেন। পরিবহন শ্রমিকদের কাছে হ্যান্ড স্যানিটাইজার আছে। সবাই মাস্ক ব্যবহার করছেন। তারপরও কোনো যাত্রী স্বাস্থ্যবিধি না মানলে অনুরোধ করা হচ্ছে মাস্ক ব্যবহার করার জন্য। তবে পরিবহন শ্রমিকদের কেউ স্বাস্থ্যবিধি না মানলে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হচ্ছে।”

করোনাভাইরাসের সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণ গত ৩১ মার্চ থেকে ধারণ ক্ষমতার অর্ধেক যাত্রী নিয়ে চলাচল করে গণপরিবহন। এজন্য ভাড়াও বৃদ্ধি করা হয় ৬০ শতাংশ। পরে গত ৫ এপ্রিল সরকার ‌‘কঠোর বিধিনিষেধ’ জারি করলে বন্ধ করে দেওয়া হয় গণপরিবহন। কিন্তু অফিস ও শিল্পকারখানা খোলা থাকায় দুইদিন পরেই সিটি কর্পোরেশন এলাকায় শর্তসাপেক্ষে গণপরিবহন চলাচলের অনুমতি দেওয়া হয়। এরপর গত ১৪ এপ্রিল থেকে ‘সর্বাত্মক লকডাউন’ জারি হলে গণপরিবহন চলাচল পুরোপুরি বন্ধ ঘোষণা করা হয়। সর্বশেষ বুধবার (৫ মে)  জেলার অভ্যন্তরে গণপরিবহন চলাচলের অনুমতি দিয়ে প্রজ্ঞাপন জারি করে সরকার। তবে আন্তঃজেলা বাস, যাত্রীবাহী ট্রেন ও লঞ্চ চলাচল আগের মতোই বন্ধ রাখার নির্দেশ দেওয়া হয়।