• ঢাকা
  • মঙ্গলবার, ৩০ এপ্রিল, ২০২৪, ১৭ বৈশাখ ১৪৩১
প্রকাশিত: জুন ২৮, ২০২১, ০১:৫০ এএম
সর্বশেষ আপডেট : জুন ২৮, ২০২১, ০১:৫০ এএম

মগবাজার ট্র্যাজিডির সর্বশেষ পরিস্থিতি

মগবাজার ট্র্যাজিডির সর্বশেষ পরিস্থিতি
ছবি : গণমাধ্যমের সঙ্গে আলাপকালে ফায়ার সার্ভিসের মহাপরিচালক বিগ্রেডিয়ার জেনারেল সাজ্জাদ হোসেন

রাজধানীর মগবাজার ওয়্যারলেস মোড়ে ঘটে যাওয়া বিস্ফোরণে ‘সৃষ্ট ব্লাস্ট ও সাউন্ড ওয়েবে’ আশপাশের ভবন ও তিনটি বাস ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বলে জানিয়েছেন ফায়ার সার্ভিসের মহাপরিচালক বিগ্রেডিয়ার জেনারেল সাজ্জাদ হোসেন।

রোববার (২৭ জুন) ঘটনাস্থলে এসে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে তিনি এমন মন্তব্য করেন। সাজ্জাদ হোসেন বলেন, গ্যাস জাতীয় কিছু থেকে বিস্ফোরণ হতে পারে। ৩৯ জন বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। এছাড়া শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে ভর্তি হয়েছেন ১৭ জন। মোট আহত হয়েছেন ৬০ জনেরও বেশি মানুষ। চার সদস্যের একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে। তারা সাত কর্মদিবসের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন দেবেন। তখন বিস্তারিত জানা যাবে।

তিনি বলেন, বিস্ফোরণের কারণে ব্লাস্ট ওয়েভ ও সাউন্ড ওয়েভ সৃষ্টি হয়। এতে আশপাশের ভবনগুলো ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। মূল ভবনের সমস্ত পিলার ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। আমি এখনই বলতে পারি ভবনটি বসবাসের অনুপযুক্ত হয়ে গেছে।

• মগবাজার বিস্ফোরণে নিহত ৭ : ডিএমপি কমিশনার

এর আগে ঢাকা মহানগর পুলিশ কমিশনার মুহা. শফিকুল ইসলাম ঘটনাস্থল পরিদর্শন শেষে উপস্থিত সাংবাদিকদের বলেন, মগবাজারে ভয়াবহ বিস্ফোরণের ঘটনায় সাতজন নিহত হয়েছেন। তিনি বলেন, ‘ফায়ার সার্ভিসের সঙ্গে কথা বলে আমরা যেটা জেনেছি, এখানে যে সরমা হাউজ ছিল মূলত সেখান থেকেই বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে। সেখানে খুব সম্ভবত গ্যাস জমেছিল এবং এ গ্যাস বিস্ফোরণের কারণে আশপাশের সাতটা বিল্ডিং ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। দুইটা বাস বিধ্বস্তের মতো হয়েছে। এখন পর্যন্ত আমরা সাতজন মারা গেছে বলে খবর পেয়েছি।’

এ ঘটনায় কারও গাফিলতি আছে কি না— এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ফায়ার সার্ভিস থেকে এ বিষয়ে তদন্ত কমিটি গঠন করা হবে। সেখানে পুলিশের প্রতিনিধি চাইলে আমরা দেব। তবে এ বিষয়ে এক্সপার্ট ফায়ার সার্ভিস। তারাই তদন্ত করবেন, তারাই মতামত দেবেন।

এ ধরনের সরমা হাউজের নিরাপত্তার বিষয়ে পুলিশের ভূমিকা কী, তদারকির বিষয়টি তো পুলিশের ওপর বর্তায়— এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, আসলে এখানে দায় তো আমাদের না। গ্যাসের সংযোগটা বৈধভাবে নেওয়া হয়েছে কি না, গ্যাসের লাইনটা সাইনটিফিক্যালি লিক-প্রুফ ছিল কি না, সেটার এক্সপার্ট তো আমি না। এজন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ আছে। তারা এটা দেখভাল করবে। এরপর ব্যবস্থা গ্রহণের সময় যদি বাধা দেওয়া হয়, আমরা দেখব।

এটা নাশকতা কি না— এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, নাশকতা না। নাশকতা হলে বোমা বিস্ফোরণ হতো। সেখানে স্প্লিন্টার পাওয়া যেত। স্প্লিন্টারের আঘাতে মানুষ ক্ষতবিক্ষত হতো। আশপাশে আপনারা ক্ষতিগ্রস্ত বাস দেখেছেন। বাসে কোনো স্প্লিন্টারের কণা পাওয়া যায়নি। অতএব নিশ্চিতভাবে বলা যায় বোমার কোনো ঘটনা এখানে নাই। গ্যাস থেকেই বিস্ফোরণ ঘটেছে।

• ‘রুম গ্যাস চেম্বার’ হয়ে গিয়েছিল, ধারণা পুলিশের

মগবাজারের ভয়াবহ বিস্ফোরণের ঘটনা এখনও রহস্যজনক। ঠিক কী কারণে এত বড় বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটল তা নিয়ে দিশেহারা অবস্থা স্বয়ং আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর। ফায়ার সার্ভিসের পাশাপাশি ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছে ঢাকা মহানগর পুলিশের বিভিন্ন ইউনিটের সদস্যরা। বোম্ব ডিসপোজাল ইউনিটও এলাকাটি পরিদর্শন করে।

পুলিশের রমনা বিভাগের ডিসি সাজ্জাদুর রহমান এ সময় সাংবাদিকদের বলেন, এখানে কোনো আশঙ্কাই উড়িয়ে দেওয়া যাচ্ছে না। কী কারণে বিস্ফোরণ হয়েছে তা আমরা খতিয়ে দেখার চেষ্টা করছি। আমাদের অনেকগুলো টিম কাজ করছে। নাশকতার আশঙ্কা থেকে বোম্ব ডিসপোজাল ইউনিটও এখানে এসেছে। তারা তাদের এঙ্গেল থেকে কাজ করছে।

তিনি বলেন, ‘আমার অভিজ্ঞতার আলোকে বলতে পারি, এখানে ব্যাপকতাটা অনেক বেশি। সেক্ষেত্রে সুর্নিদিষ্ট করে কোনোভাবেই বলা যাবে না যে, এটা গ্যাস চেম্বার থেকে হয়েছে বা রুম গ্যাস চেম্বার হয়ে গিয়েছিল। এমনও হতে পারে যে এখানে বিরাট... সেটা গ্যাস চেম্বার হয়ে গেছে। এক্সপ্লোসিভও হতে পারে। একটু সময় দিতে হবে। ফায়ার সার্ভিসের লোকজন আছেন, কোথাও কোনো আলামত বা বিস্ফোরণের গন্ধ পাওয়া যায় নাকি। কিছু সময় পর এটা উদঘাটিত হয়ে যাবে।’ 

• দগ্ধ তিনজনের অবস্থা আশঙ্কাজনক : সামন্ত লাল

মগবাজারে ভয়াবহ বিস্ফোরণের ঘটনায় দুজনকে মৃত অবস্থায় শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে নেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন ইনস্টিটিউটের প্রধান সমন্বয়ক সামন্ত লাল সেন। রোববার (২৭ জুন) রাতে গণমাধ্যমকে তিনি বলেন, মর্মান্তিক এ  দুর্ঘটনায় মোট ১৭ জনকে আমাদের এখানে আনা হয়েছে। তাদের মধ্যে দুজনকে আমরা মৃত অবস্থায় পাই। তিনজন ছিলেন দগ্ধ। এর মধ্যে দুজনকে আইসিইউতে, একজনকে এসডিইউতে রাখা হয়েছে।

তিনি আরও বলেন, দগ্ধ তিনজনের অবস্থা খুবই খারাপ। নাইনটি পারসেন্ট বার্ন। তাদের সম্পর্কে এখন কিছু বলা যাচ্ছে না। বাকি আহতরা যারা আছেন, তাদের কারও পা কাটা গেছে, কারও পা ভেঙে গেছে।


 
কী কারণে তারা দগ্ধ হয়েছে— জানতে চাইলে তিনি বলেন, সেটা এখন বলা যাচ্ছে না।

মগবাজারের এ বিস্ফোরণের ঘটনায় অর্ধশতাধিক ব্যক্তি আহত ও দগ্ধ হয়েছেন। তাদের মধ্যে ১৫ জনের অবস্থা আশঙ্কাজনক। আহতদের ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, শেখ হাসিনা বার্ন ইনস্টিটিউট এবং পাশের ঢাকা কমিউনিটি ক্লিনিক ও আদ্ব-দীন হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। কেবল ঢাকা মেডিকেলের জরুরি বিভাগেই নেওয়া হয়েছে ৩৯ জনকে।

রোববার (২৭ জুন) সন্ধ্যা সাড়ে ৭টায় মগবাজার ওয়্যারলেস গেট এলাকায় বিস্ফোরণের এ ঘটনা ঘটে। তবে বিস্ফোরণটি কীভাবে ঘটল, সে বিষয়ে কোনো তথ্য জানা যায়নি।

জাগরণ /এসকে