• ঢাকা
  • শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল, ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১
প্রকাশিত: জানুয়ারি ২০, ২০১৯, ০৮:৪৮ এএম

আজ অগ্নিঝরা ২০ জানুয়ারি, শহীদ আসাদ দিবস 

আজ অগ্নিঝরা ২০ জানুয়ারি, শহীদ আসাদ দিবস 
শহীদ আসাদ

 

আজ রক্তরাঙা এবং অগ্নিঝরা সূর্য দীপ্তিতে ভাস্বর ২০শে জানুয়ারি। এদেশের গণতান্ত্রিক আন্দোলনের ইতিহাসে একটি স্মরণীয় দিন।  ঐতিহাসিক ১১দফা আন্দোলনের প্রথম শহীদ ছাত্রনেতা আসাদুজ্জামানের ৫০তম মৃত্যুবার্ষিকী। ’৬৯-এর এই তারিখে তৎকালীন স্বৈরাচারী আইয়ুব সরকারের বিরুদ্ধে ঢাকা ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের হরতাল চলাকালে পাকিস্তান পুলিশ এবং ইপিআর বাহিনীর বুলেটের আঘাতে নিহত হন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র আসাদুজ্জামান আসাদ। তাঁর মৃত্যুতে ৬৯-এর গণআন্দোলন চূড়ান্ত রূপ নেয় এবং  আইয়ুব খানের শাসন ও নিপীড়নমূলক ব্যবস্থার বিরুদ্ধে গণঅভ্যুত্থানে পরিণত হয়।

সারা বাংলায় ছড়িয়ে পড়ে একটি জনপ্রিয় শ্লোগান,- ‘আসাদ ভাইয়ের মন্ত্র, জনগণতন্ত্র’। পাকিস্তানি দখলদারিত্ব থেকে জাতিকে মুক্ত করা এবং শোষনমুক্ত সমাজ প্রতিষ্ঠা ছিল আসাদের স্বপ্ন। গণঅভ্যুত্থানের মহান জাগরণ এ অঞ্চলের জনগোষ্ঠীকে স্বাধীন বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার জন্য এক উর্বর ক্ষেত্র তৈরি করে এবং ৭১-এর মহান মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে বাংলাদেশ একটি স্বাধীন সার্বভৌম দেশ হিসেবে প্রতিষ্ঠা লাভ করে। রক্তে আঁকা যে নতুন ইতিহাস আমরা রচনা করেছি সেই ইতিহাসের সোপান শ্রেণী অতিক্রম করে এক অসমাপ্ত সংগ্রামকে সাফল্যের দুয়ারে পৌছে দেয়ার ইস্পাতদৃঢ় আহ্বাণ নিয়ে প্রতিবছর এই দিনটি আমাদের মাঝে ফিরে আসে। এই দিনে শহীদ আসাদের চেতনার সঙ্গে মিলেমিশে একাকার হয়ে যায় শোষিত, লাঞ্ছিত, নিপীড়িত মানব সত্তা। অধিকার বঞ্চিত মানুষ নতুন করে গণতান্ত্রিক সংগ্রামের অগ্নিমন্ত্রে উজ্জীবিত হয়ে ওঠে। আসাদের মন্ত্র আমাদেরকে নতুন করে বাঁচার শপথে বলীয়ান করে তোলে। তাই শোষন বঞ্চনা আর দু:শাসনের শৃঙ্খল হতে দেশকে মুক্ত করার এক লৌহকঠিন শপথ গ্রহণের দিন এই ২০শে জানুয়ারি। 

শহীদ আসাদের জন্ম ১৯৪২ সালের ১০জুন নরসিংদীর শিবপুর থানার ধুনুয়া গ্রামে। বাবার নাম আলহাজ্ব মোহাম্মদ আবু তাহের। তিনি ১৯৬০ সালে মেট্রিক এবং ১৯৬৩ সালে ইন্টারমিডিয়েট পাশ করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হন। তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে থেকে ইতিহাসে সম্মানসহ এমএ পাশ করেন। পরে সিটি ল’ কলেজে এলএলবিতে ভর্তি হন এবং ল’র ছাত্রাবস্থায় তিনি শহীদ হন। আসাদ ছিলেন তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তান ছাত্র ইউনিয়ন (মেনন গ্রুপ)-এর ঢাকা হল শাখার সভাপতি এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্যতম প্রধান সংগঠক। ১৭ জানুয়ারি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বটতলার সমাবেশ থেকে ১১ দফার বাস্তবায়ন এবং ছাত্র-জনতার ওপর পুলিশ ও ই.পি.আর বাহিনী কর্তৃক নির্যাতন ও বিশ্ববিদ্যালয়ের পবিত্রতা লঙ্ঘনের প্রতিবাদে কেন্দ্রীয় ছাত্র সংগ্রাম কমিটি ২০ জানুয়ারি গোটা পূর্ব পাকিস্তানের সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পূর্ণ ধর্মঘট পালনের আহবান জানিয়েছিল। এ ধর্মঘট মোকাবিলার জন্য প্রশাসনের পক্ষ থেকে জারি করা হয় ১৪৪ ধারা। তথাপি বিভিন্ন কলেজের ছাত্ররা বিশ্ববিদ্যালয় প্রাঙ্গনে সমবেত হয় এবং বেলা ১২টার দিকে বটতলায় এক সংক্ষিপ্ত সভা শেষে প্রায় দশহাজার ছাত্রের একটি বিশাল মিছিল ১৪৪ ধারা ভেঙ্গে রাজপথে পা বাড়ায়। মিছিলটি চাঁনখা’র পুলের নিকটে তখনকার পোস্ট গ্রাজুয়েট মেডিক্যাল কলেজের কাছাকাছি এলে পুলিশ হামলা চালায়। প্রায় ঘন্টাখানেক সংঘর্ষ চলার পর আসাদসহ কয়েকজন ছাত্রনেতা মিছিলটিকে ঢাকা হলের পাশ দিয়ে শহরের কেন্দ্রস্থলের দিকে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করলে একজন পুলিশ কর্মকর্তা খুব কাছ থেকে রিভলবারের গুলি ছুঁড়ে আসাদকে হত্যা করে।

হাজার হাজার ছাত্রছাত্রী মেডিক্যাল কলেজের দিকে ছুটে আসে। বেলা তিনটায় কোনো রকম প্রস্তুতি ছাড়াই স্বতঃস্ফূর্তভাবে বের হয় একটি বিরাট শোক মিছিল। মেয়েদের নেতৃত্বে এ মিছিল অগ্রসর হতে থাকলে সাধারণ জনগণও এতে যোগ দেয়। আসাদের মুত্যুর প্রতিক্রিয়ায় তাৎক্ষণিকভাবে বের হওয়া প্রায় দুমাইল দীর্ঘ মিছিলটি শহরের বিভিন্ন রাস্তা প্রদক্ষিণ করে শহীদ মিনারে এসে শেষ হয়।

আসাদের মৃত্যুতে কেন্দ্রীয় ছাত্র সংগ্রাম কমিটি গোটা পূর্ব পাকিস্তানে তিনদিনব্যাপী শোক ঘোষণা করে। এ ছাড়া কমিটি ঢাকা শহরে হরতাল এবং পরবর্তী চার দিন প্রতিবাদ মিছিলসহ নানা কর্মসূচি পালন করে। ২৪ তারিখে হরতালে গুলি চললে ঢাকার পরিস্থিতি গভর্নর মোনেম খানের নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যায়। সরকারের দমন নীতি জনতাকে দাবিয়ে রাখতে পারেনি এবং শেষাবধি প্রেসিডেন্ট আইয়ুবের পতন ঘটে।

বস্ত্তত, আসাদের মৃত্যুতে ঊনসত্তরের গণআন্দোলন গণঅভ্যুত্থানে রূপ নেয়। অনেক জায়গায় জনতা স্বতঃস্ফূর্তভাবে আইয়ুবের নামফলক নামিয়ে আসাদের নাম উৎকীর্ণ করে। এভাবে ‘আইয়ুব গেট’ হয়ে যায় ‘আসাদ গেট’, ‘আইয়ুব এভিনিউ’ নামান্তরিত হয়ে হয় ‘আসাদ এভিনিউ’। তখন থেকে আসাদের নাম হয়ে ওঠে নিপীড়নের বিরুদ্ধে সংগ্রামের মূর্ত প্রতীক।

জাহো