• ঢাকা
  • শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল, ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১
প্রকাশিত: ডিসেম্বর ২৩, ২০২১, ০৪:০৮ পিএম
সর্বশেষ আপডেট : ডিসেম্বর ২৩, ২০২১, ০৪:০৮ পিএম

অডিও কথোপকথন ফাঁস, বিএনপি নেতা খসরুর বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র

অডিও কথোপকথন ফাঁস, বিএনপি নেতা খসরুর বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র
ফাইল ফটো।

নিরাপদ সড়কের দাবিতে ২০১৮ সালে শিক্ষার্থীদের আন্দোলন চলাকালে চট্টগ্রামে দায়ের হওয়া মামলায় বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরীর বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগপত্র জমা দিয়েছে পুলিশ।

বৃহস্পতিবার সকালে চট্টগ্রাম মহানগর পুলিশের উপকমিশনার ফারুক-উল-হক বলেন, কাউন্টার টেরোরিজম (সিটি) ইউনিটের উপপরিদর্শক (এসআই) সঞ্জয় গুহ বুধবার আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী এবং মিলহানুর রহমান নাওমীর বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র জমা দিয়েছেন।

এ ব্যাপারে ফারুক-উল-হক বলেন, বিশেষ ক্ষমতা আইনে দায়ের করা মামলায় অভিযোগপত্র জমা দেওয়া হয়েছে। তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি আইনে দায়ের করা মামলা তদন্ত শেষে পুলিশ চূড়ান্ত প্রতিবেদন জমা দিয়েছে। মামলার পরবর্তী তারিখে অভিযোগপত্রের বিষয়ে শুনানি হবে।

মামলার বিবরণে জানা যায়, গত ৪ আগস্ট সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে আমীর খসরু মাহমুদের একটি অডিও কথোপকথন ফাঁস হয়। ওই অডিওতে নিরাপদ সড়ক দাবিতে কিশোর শিক্ষার্থীদের আন্দোলনকে চাঙা করার বিষয়ে বিভিন্ন ধরনের বক্তব্য উঠে আসে। পরে ওই অডিওর ভিত্তিতে বিএনপি নেতার বিরুদ্ধে ঢাকা ও চট্টগ্রামে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি আইন এবং বিশেষ ক্ষমতা আইনে দুটি মামলা করা হয়। এরপর ২৭ আগস্ট দুই মামলায় হাজির হয়ে আমীর খসরু আগাম জামিন চাইলে হাইকোর্ট তা মঞ্জুর করেন। পরে ওই জামিনের মেয়াদ শেষে গত ২১ অক্টোবর তিনি চট্টগ্রামের আদালতে হাজিরা দেন।

চট্টগ্রামের কোতোয়ালি থানায় গত ৪ আগস্ট আমীর খসরু মাহমুদের বিরুদ্ধে তথ্য প্রযুক্তি আইনে মামলাটি করেন চট্টগ্রাম মহানগর ছাত্রলীগের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক জাকারিয়া দস্তগীর। মামলায় তার বিরুদ্ধে ইলেকট্রনিক ডিভাইস ব্যবহার করে রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে অন্তর্ঘাত ও ষড়যন্ত্রের চেষ্টার অভিযোগে তথ্যপ্রযুক্তি আইনের ৫৭ (২) ধারা ও বিশেষ ক্ষমতা আইনের ১৫/৩ ধারায় অভিযোগ আনা হয়।

১০১৮ সালের ২১ অক্টোবর এ মামলায় চট্টগ্রামের আদালতে হাজিরা দেন বিএনপি নেতা আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী। পরে ওই আদালত তাকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন। এরপর হাইকোর্টে জামিন আবেদন করেন তিনি। ওই বছরের ২৮ আগস্ট হাইকোর্ট বিভাগ থেকে আমীর খসরু ৬ সপ্তাহের আগাম জামিন নিয়েছিলেন। ২১ অক্টোবর আত্মসমর্পন করলে বিচারিক আদালত তার জামিন বাতিল করে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন। ১২ নভেম্বর তিনি জামিন পান।

কী আছে অডিও কথোপকথনে  
অডিওতে নওমি নামে এক যুবকের সঙ্গে আমীর খসরুর কথোপকথন রয়েছে বলে দাবি করা হয়। এতে আমীর খসরু নিরাপদ সড়ক আন্দোলনে ওই যুবককে বন্ধুবান্ধব নিয়ে যোগ দেওয়ার পরামর্শ দেন। জবাবে ওই যুবক বলেন, তারা ইতিমধ্যে কুমিল্লায় আন্দোলনে যোগ দিয়েছেন। আমীর খসরু বলেন, ঢাকায় এসে যোগ দিতে। 

এদিকে আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী কথিত অডিওকে 'বানোয়াট' অভিহিত করে এটাকে মিথ্যা প্রচারণা হিসেবে বর্ণনা করেন। এ নিয়ে তিনি গণমাধ্যমকে জানিয়েছিলেন, এসব ছড়ানোর উদ্দেশ্য কিশোর-কিশোরী শিক্ষার্থীদের চলমান আন্দোলনকে স্তিমিত করা। এ জন্য তার নামে এই বানোয়াট অডিও তৈরি করা হয়েছে। সরকারের অপকর্মের কৌশল জনগণ বুঝে গেছে। অতীতেও সরকার এ রকম বানোয়াট অডিও তৈরি করে বিএনপি নেতাদের বিরুদ্ধে দোষারোপ করেছে। বিএনপি দায়িত্বশীল রাজনৈতিক দল হিসেবে শিক্ষার্থীদের এই ন্যায়সঙ্গত আন্দোলনকে সমর্থন দিয়েছে। এখন একে ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করতে সরকার যে ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হয়েছে, তাতে কোনো লাভ হবে না।

এদিকে পুলিশ জানিয়েছে, তারাও অডিও পেয়েছে। আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরীর কণ্ঠ বিষয়ে তারা নিশ্চিত। অন্য প্রান্তের ছেলেটির পরিচয় জানার চেষ্টা চলছে। 

অডিওতে শোনা যায়, নওমি নামের ওই যুবক আমীর খসরুকে আংকেল বলে সম্বোধন করেন। কুশলাদি বিনিময় শেষে আমীর খসরু জানতে চান- 'তোমরা কি একটু ইনভলভ টিনভল্‌ভ হচ্ছো এগুলোতে? তোমাদের মানুষজন সব নামায় দেও না।' 

জবাবে নওমি বলেন, 'হ্যাঁ.. হ্যাঁ.. হ্যাঁ... কুমিল্লা হাইওয়েতে নামছিল।' 

তখন আমীর খসরু বলেন, 'মানুষজন নামায় দাও, হাইওয়েতে-টাইওয়েতে অসুবিধা নাই। ঢাকায় মানুষজন নামায় দাও ভালো করে। বুজছো? তোমাদের তো আর চেনে না। তোমাদের বন্ধুবান্ধব নিয়ে তোমরা সব নেমে পড়ো না ঢাকায়...।' 

নওমি বলেন, 'জি...জি..জি..., কনটাক্ট করতেছি সবার সঙ্গে।' 

তখন আমীর খসরু বলেন, '...কখন আর কন্টাক্ট করবা? এখনই তো টাইম। আর কবে? এখন নামতে না পারলে তো আবার ডাউন করে যাবে। তুমরা নাইমা যাও না একটু বন্ধুবান্ধব নিয়ে...।'

নওমি বলেন, 'হ্যাঁ.. হ্যাঁ.. হাইওয়েতে নামছিল তো, ঢাকা-চিটাগাংয়ে। এখানে এসপি সাহেব ঝাড়ি দিছে সবাইকে। সবাইকে উঠায়ে দিছে...।' 

তখন আমীর খসরু বলেন, '...ঢাকায় নামায় দাও। ঢাকা হলে সারা দেশে এমনিই হবে। তোমরা ঢাকায় এসে... তোমাদের বন্ধুবান্ধব নিয়ে ২০০-৫০০ জন ওদের সাথে জয়েন করে যাও।' 

নওমি তখন সবাই সংগঠিত হচ্ছে বলে উল্লেখ করলে আমীর খসরু আন্দোলনের বিষয়গুলো ফেসবুকে পোস্ট দেওয়ার পরামর্শ দেন। 

 

এসকেএইচ//