• ঢাকা
  • শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল, ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১
প্রকাশিত: জুলাই ২৬, ২০২২, ১২:২০ এএম
সর্বশেষ আপডেট : জুলাই ২৬, ২০২২, ১২:২০ এএম

নিনাদ হত্যা মামলা

রানীর হাতেই ছিল শিশু নিনাদ, আদালতে বীথির সাক্ষ্য

রানীর হাতেই ছিল শিশু নিনাদ, আদালতে বীথির সাক্ষ্য
খাদিজা আক্তার রানী ইনসেটে (সাফওয়ান নিনাদ)

রাজধানীর খিলগাঁওয়ের মেরাদিয়ার ভূঁইয়াপাড়ার স্বপন বেপারির আট বছরের শিশুসন্তান সাফওয়ান আল নিনাদ হত্যা মামলায় সাক্ষ্য দিয়েছেন বীথি আক্তার।  

সোমবার (২৫ জুলাই) ঢাকার দ্বিতীয় অতিরিক্ত মহানগর দায়রা জজ মোসাম্মৎ বিলকিছ আক্তারের আদালতে বীথির সাক্ষ্য নেয়া হয়। এ সময় বাদীপক্ষের আইনজীবী নীলাঞ্জনা রিফাত সুরভী ও অ্যাসিস্ট্যান্ট পাবলিক প্রসিকিউটর (এপিপি) অ্যাডভোকেট এ কে এম সফিকুর রহমান স্বপন উপস্থিত ছিলেন।

সাক্ষ্যগ্রহণকালে আসামি খাদিজা আক্তার রানী ও জহিরুল ইসলাম ওরফে লুড্ডু আদালতে হাজির ছিল।

বাদীপক্ষের আইনজীবী নীলাঞ্জনা রিফাত সুরভী জানান, বীথি আক্তার অভিযুক্ত খাদিজা আক্তার রানীর হাতে নিনাদকে দেখেছে বলে আদালতের বিচারকের কাছে সাক্ষ্য দিয়েছেন।

খাদিজা হলেন নিনাদের মায়ের মামি এবং ডিবি ও পিবিআইর অভিযোগপত্রের আসামি জহিরুল ইসলাম ওরফে লুড্ডুর স্ত্রী।

সিআইডির চার্জশিটে বলা হয়, তদন্তে প্রাপ্ত সাক্ষ্য-প্রমাণ, সাক্ষীর জবানবন্দি, সুরতহাল প্রতিবেদন ও অন্যান্য আলামত পর্যালোচনায় জহিরুল ইসলাম ওরফে লুড্ডু ও তার স্বাক্ষী খাদিজা আক্তার রানীর অপরাধ প্রমাণ পাওয়া গেছে।

নানা রকম জোরালো আলামতের ভিত্তিতেই লুড্ডুকে এক নম্বর ও তার স্ত্রী খাদিজা আক্তার রানীকে দুই নম্বর আসামি করা হয়েছে।

খিলগাঁওয়ের বনশ্রী ন্যাশনাল আইডিয়াল স্কুলের প্রথম শ্রেণির ছাত্র ছিল সাফওয়ান আল নিনাদ। ২০১৮ সালের ১৫ জুন ঈদের চাঁদরাতে বাসা থেকে বের হয়ে নিখোঁজ হয় সে। পরদিন ঈদের দিন (১৬ জুন) দুপুরে বাড়ির পাশে বেকারির পণ্যবাহী ভ্যানগাড়ির ভেতর নিনাদের লাশ দেখতে পায় অন্য শিশুরা। ওই দিনই অজ্ঞাতনামাদের আসামি করে খিলগাঁও থানায় হত্যা মামলা করেন নিনাদের বাবা স্বপন বেপারি। প্রথমে থানা পুলিশ এ মামলা তদন্ত করলেও হত্যাকাণ্ডের কোনও ক্লু বের করতে পারেনি। পরে মামলার তদন্তভার দেয়া হয় ডিবিকে। ডিবির তদন্তের পর ২০১৯ সালের ১১ মার্চ আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করেন তদন্ত কর্মকর্তা।

ওই অভিযোগপত্র থেকে জানা গেছে, গলায় প্যাঁচানো পলিথিনের সূত্র ধরে শুরু হয় রহস্য উদ্ঘাটন। ঘটনার রাতে পাশের দোকান থেকে একই রকম পলিথিন নেন নিনাদের মায়ের মামা লুড্ডু। লুড্ডু ও তার বড় বোন ছালেহা বেগমের মধ্যে দীর্ঘদিন ধরে পৈতৃক সম্পত্তি নিয়ে বিরোধ চলছিল। এ ঘটনার জের ধরে শিশু নিনাদকে লুড্ডু হত্যা করেছে বলে প্রাথমিকভাবে সত্যতা মেলায় তাকে ওই সময় গ্রেফতার করে গোয়েন্দা পুলিশ। কিন্তু মূল সন্দেহভাজনকে বাদ রেখে অভিযোগপত্র দেয়া হয়েছে বলে এ অভিযোগ তুলে আদালতে নারাজি দেন বাদী। আদালত পরে মামলাটি পিবিআইকে তদন্তের নির্দেশ দেন। পিবিআইও লুড্ডুকে আসামি করে ফের অভিযোগপত্র দেয়। ফের নারাজি দেন বাদী। তৃতীয়বারের মতো মামলার তদন্ত দায়িত্ব সিআইডিকে দেন আদালত। সিআইডি দুই মাস ধরে মামলাটি তদন্ত করে চূড়ান্ত চার্জশিট দেয়।

মূলত বীথি আক্তারের জবানবন্দিতেই নিনাদ হত্যারহস্যের জট খুলেছে। এ মামলার অন্যতম হোতা খাদিজা। খাদিজার বাসায় ভাড়াটিয়া ছিল বীথি আক্তার ও তার পরিবার। ঈদের আগের রাতে সে খাদিজার ঘরে বেড়াতে গিয়েছিল। ওই সময় নিনাদকে নিয়ে ঘরে ঢোকেন খাদিজা। আতশবাজি ও চকোলেট দেয়ার কথা বলে খাদিজা কৌশলে নিনাদকে তার বাসায় ডেকে আনেন। বীথি তা দেখেছে।

সোমবার আদালতকে এসব জানান বীথি। পরে বীথি গণমাধ্যমকে বলেন, ‘ঈদের আগের রাতে রানী কাকির ঘরে গিয়েছিলাম। তার মেয়ে জান্নাতের সঙ্গে বসাছিলাম। এ সময় নিনাদকে নিয়ে কাকিকে ঘরে আসতে দেখছি। কিছুক্ষণ পর ১০০ টাকা দিয়ে আমাকে ও জান্নাতকে বেলুন কিনতে বাইরে পাঠান। বেলুন কিনে বাসায় ফেরার পর নিনাদ কোথায় জানতে চাইলে কাকি বলেন, তার বাসায় ফিরে গেছে। এরপর আঙ্কেলকে (খাদিজার স্বামী) কোল বালিশের মতো কিছু একটা নিয়ে নামতে দেখি। এগুলো কী জান্নাত, এটা জানতে চাইলে কাকি জবাব দেন পুরোনো কাপড়। পরদিনই শুনি নিনাদের লাশ পাওয়া গেছে।’

বীথি আদালতকে আরও জানান, নিনাদকে খাদিজার সঙ্গে দেখার পর সে প্রশ্ন করে, পরিবারের সঙ্গে ঝগড়া থাকলেও কেন নিনাদকে বাসায় এনেছে? জবাবে খাদিজা জানান, চকোলেটসহ ওকে নানা কিছু কিনে দেয়া হবে। এর পরই বীথি ও জান্নাতকে বাইরে পাঠিয়ে নিনাদকে নিয়ে ছাদে যান খাদিজা ও তার স্বামী জহিরুল ইসলাম লুড্ডু।

নিনাদ হত্যা মামলায় এখন পর্যন্ত দুইজন আদালতে সাক্ষ্য দিয়েছেন।

আগামী ১৯ সেপ্টেম্বর (সোমবার) পরবর্তী সাক্ষ্যগ্রহণের তারিখ ধার্য্য করে দিয়েছেন ঢাকার দ্বিতীয় অতিরিক্ত মহানগর দায়রা জজ মোসাম্মৎ বিলকিছ আক্তার। ওই দিন সাক্ষ্য দেবেন দোকানি সাদেকুজ্জামান সাদেক। তার দোকান থেকে লুড্ডু একটি লম্বা পলিথিন চেয়ে নিয়েছিলেন। নিনাদের গলায় একই ধরনের লম্বা পলিথিন প্যাঁচানো ছিল। সেই লম্বা পলিথিন শনাক্ত করেছেন সাদেক। তার দেয়া প্রাথমিক তথ্যে এ মামলার প্রথম সন্দেহভাজন হিসেবে জহিরুল ইসলাম ওরফে লুড্ডুকে গ্রেফতার করেছিল থানা পুলিশ।

ঘটনার দিন বীথি যা দেখেছিল তা আরেক ভাড়াটিয়া মাকসুদা বেগমকে বলেছিল। তিনিও আদালতে সাক্ষ্য দিয়েছেন। তার সাক্ষ্য গ্রহণের মধ্য দিয়ে এই মামলার কার্যক্রম শুরু হয়।

নিনাদের বাবা মামলার বাদী স্বপন বেপারি বলেন, ‘দীর্ঘ চার বছর পর মামলার কার্যক্রম শুরু হয়েছে। সেজন্য আল্লাহর কাছে শুকরিয়া জানাই। আশা করছি দ্রুত সময়ের মধ্যে সুবিচার পাব।’

জাগরণ/অপরাধ/এসএসকে/এমএ