• ঢাকা
  • শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল, ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১
প্রকাশিত: জানুয়ারি ১৬, ২০২৩, ০৭:৪০ পিএম
সর্বশেষ আপডেট : জানুয়ারি ১৭, ২০২৩, ০২:০৩ এএম

যে কোনো প্রলোভনে ধর্মান্তরিত করা সব সমাজেই নিষিদ্ধ : ঢাবি ভিসি

যে কোনো প্রলোভনে ধর্মান্তরিত করা সব সমাজেই নিষিদ্ধ : ঢাবি ভিসি
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) উপাচার্য অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ আখতারুজ্জামান

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) উপাচার্য অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ আখতারুজ্জামান বলেছেন, বাংলাদেশে যুগে যুগে অশুভ শক্তির উত্থান হয়েছে, আবার তা প্রতিহতও হয়েছে। সমাজের মধ্য থেকেই স্বয়ংক্রিয়ভাবে প্রতিহত করার সেই শক্তির জন্ম হয় এবং সেসব অপশক্তিকে প্রতিহত করার জন্য কিছু মানুষেরও জন্ম হয়। এ অঞ্চলে যেমন জন্ম হয়েছিল বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের।

তিনি বলেন, ইতিহাসের দিকে তাকালে আমরা দেখি বিভিন্ন সময়ে পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে যে কোনো কারণে যখন মানুষ বিধ্বস্ত হয়, অসহায় হয়ে পড়ে, তখন কিছু ধর্মীয় গোষ্ঠী তাদের সহযোগিতার জন্য টাকা এবং ধর্মীয় গ্রন্থ নিয়ে এগিয়ে যায়। অর্থাৎ অসহায়তার সুযোগ নিয়ে তাদের ধর্মান্তরিতকরণের প্রচেষ্টার প্রবণতা সেসব জায়গায় দেখা যায়। কিন্তু মূল কথা হলো কোনো প্রলোভনে কোনো ধর্মান্তর প্রক্রিয়া পরিচালনা করা সম্ভবত সব সমাজেই আইনত নিষিদ্ধ। সেটা করা ঠিক নয়। তাতে ধর্মীয় সম্প্রীতি বিনষ্ট হয়।

আজ সোমবার সকাল ১০টায় সেন্টার ফর সাউথ এশিয়ান স্টাডিজের আয়োজনে ঢাবির মুজাফফর আহমেদ চৌধুরী মিলনায়তনে ‘মুক্তিযুদ্ধের আদর্শ ও সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির গুরুত্ব’ শীর্ষক সেমিনারে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।

সেমিনারে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক মহসীন হাবিব। অনুষ্ঠানটি সভাপতিত্ব করেন সেন্টার ফর সাউথ এশিয়ান স্টাডিজের পরিচালক অধ্যাপক ডক্টর অরুণ কুমার গোস্বামী। আলোচনায় অংশগ্রহণ করেন মুক্তিযোদ্ধা ও জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক অজয় দাশগুপ্ত, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক ড. জিনাত হুদা এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শান্তি ও সংঘর্ষ অধ্যায়ন বিভাগের অধ্যাপক ড. রফিকুল ইসলাম। অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন জাপান স্টাডিজ বিভাগের সহকারী অধ্যাপক শিবলি নোমান।

সেমিনারে প্রবন্ধ পাঠ করছেন জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক মহসীন হাবিব। 

সেমিনারে আখতারুজ্জামান আশাবাদ ব্যক্ত করেন, মুক্তিযুদ্ধের আলোকে দেশ চললে, অশুভ শক্তিরা মাঝেমধ্যে মাথাচাড়া দিলেও সব রকমের অশুভ শক্তির বিনাশ হবেই। দেশ এগিয়ে যাবে।

আগামীর বাংলাদেশ সম্প্রীতি ও মানবিকতার উল্লেখ করে অধ্যাপক ডক্টর জিনাত হুদা বলেন, বিজয়ী বাংলাদেশকে মেরামত করা যায় না। যারা মেরামত করতে চেয়েছেন, বাঙালি জাতীয়তাবাদ, অসাম্প্রদায়িকতা, সমাজতন্ত্র, গণতন্ত্রকে যারা শেষ করে দিতে চেয়েছেন, বাংলাদেশকে পাকিস্তানি কায়দায় নিয়ে যেতে চেয়েছেন, তারা কখনোই সফল হবে না।

একুশে পদকপ্রাপ্ত জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক অজয় দাশগুপ্ত বলেন, ধর্মীয় বিভাজন সৃষ্টি করে পৃথিবীর কোনো দেশ উন্নতি করতে পারেনি। বাংলাদেশ আজ নিজের পায়ে দাঁড়াচ্ছে। আজকের এই অবস্থানে আসার পেছনে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা, ধর্মীয় সম্প্রীতি, ধর্মনিরপেক্ষতার বিশাল ভূমিকা রয়েছে। ধর্মীয় বিভাজন দিয়ে কোনো দেশ উন্নতি করতে পারেনি। যার উদাহরণ পাকিস্তান। দেশটি অর্থনৈতিকভাবে খাদের কিনারায়। সুতরাং, কোনো ধর্মীয় বিভাজন ও অর্থনৈতিক বৈষম্য নয়, সবাই মিলে দেশ স্বাধীন করেছি, সবাই তার সুফল ভোগ করব। মিলেমিশে দেশটাকে গড়ে তুলব।

অধ্যাপক ডক্টর মোহাম্মদ রফিকুল ইসলাম বলেন, মহান মুক্তিযুদ্ধে প্রতিবেশী দেশ ভারত এক কোটির অধিক মানুষের মানবিক সহায়তা দিয়েছে এবং আমাদের যুদ্ধে প্রত্যক্ষ সহযোগিতা করেছে। সেই সঙ্গে দেশের সব ধর্ম-বর্ণ ও শ্রেণি-পেশার মানুষের অংশগ্রহণ ও বিশাল ত্যাগের বিনিময়ে যে দেশটির জন্ম হয়েছিল, তার পেছনের প্রধানতম মন্ত্র ছিল একটি অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ। স্বাধীনতার পর বঙ্গবন্ধু প্রণীত সংবিধানেও সেই চেতনারই প্রতিফলন দেখা যায়। আজ সেই দেশকে ধর্মীয় বেড়াজাল তৈরি করে যে অপশক্তি ক্ষতবিক্ষত করার চেষ্টা করছে তাদের প্রতিহত করতে হবে। বঙ্গবন্ধু যে চার মূলনীতিকে দেশ পরিচালনার প্রধান স্তম্ভ করেছিলেন, সেই চার নীতিকে আমাদের রক্ষা করতে হবে।

এর আগে আলোচনা অনুষ্ঠানের শুরুতে সেন্টার ফর সাউথ এশিয়ান স্টাডিজের পরিচালক অধ্যাপক ডক্টর অরুণ কুমার গোস্বামীর শুভেচ্ছা বক্তব্যের পর জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক মহসীন হাবিব তার মূল প্রবন্ধে উপমহাদেশের রাজনীতিতে ছোট্ট পরিসরে এ সংক্রান্ত সার্বিক চিত্র তুলে ধরেন এবং এ থেকে পরিত্রাণের উপায় হিসেবে তিনি বঙ্গবন্ধুর আদর্শিক রাজনীতির পুনর্জাগরণের ওপর জোর প্রদান করেন। 

 

এসকেএইচ//