• ঢাকা
  • সোমবার, ২৯ এপ্রিল, ২০২৪, ১৫ বৈশাখ ১৪৩১
প্রকাশিত: ফেব্রুয়ারি ১২, ২০১৯, ০৭:২৪ পিএম

সংসদ অধিবেশন: কাটলো কোরাম সংকট

সংসদ অধিবেশন: কাটলো কোরাম সংকট


একাদশ জাতীয় সংসদের চলতি ও প্রথম অধিবেশনের শুরুর দিকে কোরাম সংকট থাকলেও বর্তমানে তা নেই। আজ মঙ্গলবার ও গত দুই দিনে সংসদ অধিবেশন চলাকালে কোন কোরাম সংকট দেখা যায়নি।

আজ মঙ্গলবার সন্ধ্যা ৭টার দিকে সংসদের চলতি অধিবেশনে ১১৭ জন সংসদ সদস্য উপস্থিত ছিলেন। ডেপুটি স্পিকার ফজলে রাব্বি মিয়ার সভাপতিত্বে অধিবেশন চলছিল। এ সময় সংসদ নেতা ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, সংসদ উপনেতা সাজেদা চৌধুরী ও বিরোধীদলীয় নেতা এইচ এম এরশাদ উপস্থিত ছিলেন না। তাছাড়া বিরোধীদলের জন্য রাখা প্রথম ১০ আসনের ৯টিই ফাঁকা ছিল।

গতকাল সোমবার মাগরিবের নামাজের বিরতির পর সন্ধ্যা ৬টা ৩১মিনিটে সংসদ অধিবেশন শুরু হয়। ডেপুটি স্পিকার ফজলে রাব্বি মিয়ার সভাপতিত্বে অধিবেশনে এ সময় ৭২ জন সংসদ সদস্য উপস্থিত ছিলেন। তবে এ সময় স্পিকারের বামদিকে সামনের সারিতে বিরোধীদলের প্রথম দশটি আসনই খালি ছিল।

রাত ৮টা ১০ মিনিটে উপস্থিত সংসদ সদস্যের সংখ্যা ছিল ৮৭ জন। এ সময়ও বিরোধীদলের প্রথম সারির দশটি আসনে কাজী ফিরোজ রশীদ ছাড়া আর কেউ উপস্থিত ছিলেন না। এসময় স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে সংসদ অধিবেশন চলছিল।

সংসদ অধিবেশনে গতকাল শেষ বক্তা ছিলেন টাঙ্গাইল–২ আসনের সংসদ সদস্য তানভীর হাসান মনির। সংসদ নেতা ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও এসময় সংসদে উপস্থিত ছিলেন। এছাড়া উপস্থিত ছিলেন ৯১ জন সংসদ সদস্য।

এর আগের দিন অর্থাৎ রোববার সন্ধ্যা পৌনে সাতটার দিকে সংসদ অধিবেশনে উপস্থিত সংসদ সদস্যের সংখ্যা ছিল শতাধিক। ঘণ্টাখানেক পর ৭টা ৪৯ মিনিটে শুরু হয় সংসদে রাষ্ট্রপতির ভাষণের জন্য ধন্যবাদ প্রস্তাবের ওপর আলোচনা। এ সময় উপস্থিত সংসদ সদস্যের সংখ্যা ছিল ৮১ জন।

প্রসঙ্গত, এর আগের দিন সংসদের চলতি অধিবেশনের কোরাম সংকটের চিত্র তুলে ধরে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয় দৈনিক জাগরণে। ‘রাষ্ট্রপতির ভাষণ নিয়ে আলোচনা পর্বেও কোরাম সংকট’ শিরোনামের ওই প্রতিবেদনে আগের দিনের (বৃহস্পতিবার) অধিবেশন চলাকালীন কয়েকটি সময়ের উপস্থিতির সংখ্যা তুলে ধরা হয়।

প্রতিবেদনে বলা হয়, গত বৃহস্পতিবার রাত ৮টা ৩৫ মিনিটে স্পিকার শিরীন শারমীন চৌধুরীর সভাপতিত্বে জাতীয় সংসদের অধিবেশন চলছিল। জাতীয় সংসদে রাষ্ট্রপতির দেয়া ভাষণের জন্য ধন্যবাদ প্রস্তাবের ওপর আলোচনা চলছিল ওই সময়। সে সময় অধিবেশনে উপস্থিত ছিলেন না সংসদ নেতা ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। অন্যদিকে বিরোধী দলের আসনের প্রথম সারি ছিল পুরোটাই ফাঁকা। অধিবেশনে তখন উপস্থিত ছিলেন ৫৮ জন সংসদ সদস্য। কার্যপ্রণালী বিধি অনুসারে ৬০ জনের কম সংসদ সদস্য উপস্থিত থাকা মানেই সংসদে কোরাম সংকট।

এর মধ্যেই রাষ্ট্রপতিকে ধন্যবাদ দিতে আনা প্রস্তাবের ওপর আলোচনার সুযোগ পান খুলনা–৬ আসনের সংসদ সদস্য মোহাম্মদ আক্তারুজ্জামান। যিনি এবারই প্রথম সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছেন। 

অধিবেশন কক্ষের সর্বশেষ সারিতে বসা এই নতুন সংসদ সদস্যের সামনের আসনগুলোও ছিল ফাঁকা। সাধারণত সামনের সারিগুলোতে বসেন জ্যেষ্ঠ সংসদ সদস্যরা।

এ সময় অধিবেশন কক্ষের সামনের সারির ২৯টি আসনের ২২টিই ছিল ফাঁকা। এই সারিতে স্পিকারের সর্বডানের আসনে বসেন সংসদ নেতা আর সর্ববামের আসনে বিরোধী দলীয় নেতা। বিরোধী দলীয় নেতার আসন থেকে ডানদিকে ১০টি আসনই ছিল ফাঁকা। অধিবেশন কক্ষের সামনের সারিতে সব মিলিয়ে ২৯টির মধ্যে উপস্থিত ছিলেন মাত্র ৭ জন সংসদ সদস্য।

পরের সারি অর্থাৎ সংসদ নেতা ও বিরোধী দলীয় নেতার আসনের পেছনের সারিতে ছিলেন ৪ জন। তার পেছনের সারির ৩৯টি আসনের মধ্যে ফাঁকা ছিল ৩২টিই। এর পরের সারিতে ৪৬টি আসনের মধ্যে ৯ জন সংসদ সদস্য উপস্থিত ছিলেন। বাকি ৩৭টি আসন ছিল ফাঁকা। 

রাত যখন ৮টা বেজে ৪০ মিনিট। তার আগেই অধিবেশন কক্ষে উপস্থিত হয়েছিলেন সংসদ নেতা ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। কয়েকজন সংসদ সদস্যও উপস্থিত হন অধিবেশন কক্ষে এ সময়। সেই সুবাদে কোরাম সংকট কাটানোর সর্বনিম্ন সংখ্যা ৬০ জন ছাড়িয়ে একটুখানি এগিয়ে উপস্থিত সংসদ সদস্যের সংখ্যা হলো ৬৪। তবে জ্যেষ্ঠ সংসদ সদস্যের সংখ্যা ছিল খুবই কম। বিরোধী দলের সামনের আসনগুলো তখনও ছিল ফাঁকা। 

সংসদের কার্যবিধির ৩০৪-এ কোরাম প্রসঙ্গে বলা হয়েছে, ‘‘সংসদের বৈঠক চলাকালে কোন সময় যদি এই মর্মে স্পিকারের দৃষ্টি আকর্ষণ করা হয় যে, ষাটজনের কম সদস্য উপস্থিত রহিয়াছেন, তাহা হইলে তিনি সংসদের বৈঠক মুলতবি করিবেন অথবা স্থগিত রাখিয়া পাঁচ মিনিট ধরিয়া ঘণ্টা বাজাইতে বলিবেন; কিন্তু ঘণ্টা ধ্বনি বন্ধ হইবার পরও কোরাম না হইলে তিনি মুলতবি করিবেন।’’

গত বছর ১৭ মে ট্রান্সপারেন্সি ইণ্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি) ‘দশম জাতীয় সংসদের পার্লামেন্ট ওয়াচ’ শীর্ষক একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করে। তাতে বলা হয়, ২০১৭ সালে জাতীয় সংসদ অধিবেশনে প্রতি কার্যদিবসে গড়ে ৩০ মিনিট কোরাম সংকটের কারণে অপচয় হয়েছে। এর প্রতি মিনিটে গড় অর্থমূল্য ৬৩ হাজার ৬৮৬ টাকা। এই হিসাবে ২০১৭ সালে কোরাম সংকটের সময়ের অর্থমূল্য ৩৭ কোটি ৩৬ লাখ ৯৫ হাজার ১৩৮ টাকা। প্রতিবেদনে দশম সংসদে কোরাম সংকটের অর্থমূল্য  উল্লেখ করা হয়েছিল ১২৫ কোটি টাকা।

গত দশম জাতীয় সংসদের ১৪তম থেকে ১৮তম অধিবেশন পর্যন্ত (জানুয়ারি-ডিসেম্বর) অনুষ্ঠিত অধিবেশন নিয়ে ওই গবেষণা করা হয়।

মা আ/আরআই