• ঢাকা
  • বৃহস্পতিবার, ০২ মে, ২০২৪, ১৮ বৈশাখ ১৪৩১
প্রকাশিত: নভেম্বর ১৬, ২০১৮, ০১:০৮ পিএম

শুরু করা যায়নি রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন

শুরু করা যায়নি রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন
রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসন বিরোধী বিক্ষোভ

 

রোহিঙ্গারা স্বেচ্ছায় মিয়ানমারে যেতে রাজি না হওয়ায় ঝুলে গেল রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন। মিয়ানমারের পরিস্থিতি নিয়ে রোহিঙ্গাদের মনে আস্থা না ফেরায় প্রত্যাবাসন শুরু করা যায়নি।

বাংলাদেশ ও মিয়ানমার সরকারের পরিকল্পনা অনুযায়ী রোহিঙ্গাদের ১৫০ জনের ১ম দলটিকে নিতে বৃহস্পতিবার (১৫ নভেম্বর) সকাল থেকে টেকনাফের উনচিপ্রাং আশ্রয়কেন্দ্রে অপেক্ষায় ছিল ৬ টি বাস। বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ির ঘুমধুম সীমান্তের কাছে প্রস্তুত রাখা হয়েছিল ট্রানজিট ক্যাম্প। শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনের কর্মকর্তারাও অপেক্ষায় ছিলেন সারাদিন।

বৃহস্পতিবার ১ম দিন ১৬টি রোহিঙ্গা পরিবারের প্রত্যাবাসন করার কথা ছিল।  তালিকাভুক্ত রোহিঙ্গাদের উখিয়ার পার্শ্ববর্তী নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার ঘুমধুম সীমান্তের ট্রানজিট পয়েন্ট দিয়ে ফেরত পাঠানোর সকল প্রস্তুতি ছিল। তবে দুপুর সাড়ে ১২ টার দিকে সেখানে উপস্থিত রোহিঙ্গাদের জানানো হয়, তাদের জন্য অন্তত ৩ দিনের খাবার ও জরুরি প্রয়োজনীয় দ্রব্যাদিসহ বাসে করে মিয়ানমারে ফিরে যাওয়ার ব্যবস্থা করা হয়েছে। তাদের নিরাপত্তার বিষয়টিও নিশ্চিত করা হয়েছে। এরপর তাদের বাসে ওঠার আহ্বান জানালে তারা ‘ন যাইয়ুম, ন যাইয়ুম’ বলে চিৎকার করতে থাকে।

উনচিপ্রাং শরণার্থীর ক্যাম্পের খোলা জায়গায় জড়ো হয়ে বিভিন্ন বয়সের কয়েক হাজার রোহিঙ্গা বিক্ষোভ করেছে।
তারা বলছে, মিয়ানমারের পূর্ণ নাগরিকত্ব, নাগরিক হিসেবে সব মৌলিক অধিকার এবং জাতিসংঘের মাধ্যমে নিরাপত্তার নিশ্চয়তাসহ ৫ দফা দাবি পূরণ না হওয়া পর্যন্ত তারা ফিরতে চান না।
 
চট্টগ্রাম বিভাগীয় কমিশনার মোহাম্মদ আব্দুল মান্নান জানান, প্রত্যাবাসনের ব্যাপারে আমাদের সব ধরনের প্রস্তুতি ছিল। কিন্তু রোহিঙ্গারা প্রত্যাবাসনে সাড়া না দিয়ে উল্টো প্রত্যাবাসন বিরোধী সমাবেশ ও মিছিল করে একটি অস্থিতিশীল পরিবেশ সৃষ্টি করে।

শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার মো. আবুল কালাম বলেন, আমরা বিকাল পর্যন্ত চেষ্টা করেছি। মিয়ানমারেও ওরা গেট ওপেন রেখেছিল। কিন্তু রোহিঙ্গারা এখনও মিয়ানমারের পরিস্থিতি নিরাপদ বলে মনে করছে না। তারা আগ্রহী না হওয়ায় আজ কাউকে পাঠানো যায়নি। আমরা তো কাউকে জোর করে পাঠাতে পারি না।

কক্সবাজারে আশ্রয় নিয়ে থাকা শরণার্থীদের ইচ্ছার বিরুদ্ধে ফেরত না পাঠানোর প্রতিশ্রুতিতে অটল থাকায় বাংলাদেশ সরকারকে স্বাগত জানিয়েছে জাতিসংঘ।

এক প্রতিবেদনে রয়টার্স জানিয়েছে, রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন শুরু করতে না পারার জন্য বাংলাদেশকেই দায়ী করেছে মিয়ানমার সরকার ।

মিয়ানমারের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের স্থায়ী সচিব মিন্ট থু বৃহস্পতিবার নেপিদোতে এক ব্রিফিংয়ে বলেন, সত্যি কথা বলতে কি, দুই দেশের সম্মতিতে যে ফিজিক্যাল আরেঞ্জমেন্ট চূড়ান্ত করা হয়েছিল, তা বাস্তবায়নে বাংলাদেশ দুর্বলতা দেখিয়েছে।

তিনি আরো বলেন, দুই দেশের মধ্যে যে চুক্তি হয়েছে, সে অনুযায়ী তাদের ফেরত নিতে আমরা প্রস্তুত আছি। এখন তারা আসবে কি আসবে না, সেটা তাদের সিদ্ধান্তের বিষয়।   

তবে বাংলাদেশে জাতিসংঘের আবাসিক সমন্বয়ক মিয়া সেপ্পো বৃহস্পতিবার ঢাকায় ব্রিফিং শেষে সাংবাদিকদের বলেছেন, ফিরে যাওয়ার মত আস্থা যাতে রোহিঙ্গাদের মধ্যে তৈরি হয়, ফিরে গেলে আগের মত ভয়াবহ অভিজ্ঞতা আর হবে না- এই ভরসা যেন তারা করতে পারে, তা নিশ্চিত করা ছিল মিয়ানমারের দায়িত্ব। মিয়ানমারে ফিরে যাওয়ার উপযুক্ত পরিবেশ তৈরির বিষয়টি বাংলাদেশ সরকারের দায়িত্বের মধ্যে পড়ে না। এটা মিয়ানমার সরকারের দায়িত্ব।

তবে গত কিছু দিনে রাখাইনের পরিস্থিতির সামান্য যেটুকু উন্নতি মিয়ানমার দেখাতে পেরেছে, সে বিষয়টিকেও স্বাগত জানান মিয়া সেপ্পো।

তিনি আশা প্রকাশ করেন, আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় এই অগ্রগতির ধারা আরও এগিয়ে নিতে একযোগে কাজ করে যাবে, যাতে রোহিঙ্গারা তাদের নিজ ভূমিতে ফিরে যেতে পারে।

সাইসে/বিএস