• ঢাকা
  • শনিবার, ২৭ এপ্রিল, ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১
প্রকাশিত: জুন ৬, ২০১৯, ০৫:৩৬ পিএম
সর্বশেষ আপডেট : জুন ৬, ২০১৯, ০৫:৪০ পিএম

ঈদ, ফাঁকা ঢাকা ও শেকড়ের টান

ঈদ, ফাঁকা ঢাকা ও শেকড়ের টান

ঈদের ছুটিতে ঢাকা, এক ভিন্ন শহর। একদম  ভিন্ন রকমের ঢাকা। সারা বছর দুই ঈদে এমন ঢাকা দেখার অপেক্ষায় থাকে অনেক মানুষ। বাস চোখে পড়ে খুব কম। বেশিরভাগ বাস চলে গেছে মফস্বলে ট্রিপ মারতে।  সিএনজি চালিত স্কুটার অনেক চোখে পড়ে তবে সবার চাওয়া ঈদ বোনাস ভিত্তিক। গণপরিবহন নেই বললেই চলে। তাই ইচ্ছা করলে কোথাও চলে যাওয়া যাবে এমন নয়। ঈদের পরদিন আজ বৃহস্পতিবার রাজধানীর রাস্তাঘাট পুরোটাই ফাঁকা। রাজধানীতে যারা রয়ে গেছেন বা যারা ঢাকাবাসী ,কোথাও বাইরে যাননি তারা উপভোগ করছেন জনমানবশুন্য ঢাকাকে। 

বিপণিবিতান গুলো এখনো যতোটা চোখে পড়েছে বন্ধ। গতকাল বুধবার রাত১০.৪৫ মিনিটে মোহাম্মদপুর এলাকার সব দোকানপাট বন্ধ ছিলো। ওষুধের দোকানও খোলা পাওয়া যায়নি। কলেজগেট এলাকায় কয়েকটা ওষুধের দোকান খোলা ছিলো। আজ বনানী সড়কে বেশ কয়েকটা প্রাইভেট কার , স্কুটার চোখে পড়লেও পাবলিক পরিবহনের মধ্যে কয়েকটা দূর পাল্লার গাড়ি ও একটা  ভুঁইয়া পরিবহন চোখে পড়েছিলো।  গুরুত্বপূর্ণ সড়কে অসহায় কর্মহীন পুলিশদের প্রহরা চোখে পড়েছে। নেই চিরচেনা সেই অসহনীয় যানজটে  শ্বাসরূদ্ধ প্রায় ঢাকা। বেশিরভাগ রাস্তায় ফাঁকা।

সুদীপ্তের বাসা মোহাম্মদপুর।তার অফিস বনানী। তিনি বললেন বনানীতে থেকে তার বাসা মোহাম্মদপুরে যেতে  প্রায় একঘন্টা লাগে প্রতিদিন। তারপরও অপেক্ষা কত সময় করত হবে তার গ্যারান্টি নেই। তবে এখন স্বস্তির সময় চলছে। মাত্র ১৮ মিনিটে সে কাল মোহাম্মদপুর পৌঁছেছে। ৮ মিনিটে মোহাম্মদপুর থেকে  সে কাওরানবাজার পৌঁছে গিয়েছে  লেগুনায় চড়ে ।

  রাজধানীর অধিকাংশ মানুষ গ্রাম থেকে এসেছে । সবার শিকড় গ্রামে। কার্যসূত্রে শহরবাসী হলেও অধিকাংশেরই মন পড়ে থাকে আপন বাস্তুভিটায় । বাব-মার কোমল সান্নিধ্য বা পারিবারিক কবরস্থানের শায়িত স্বজনের জন্য স্মৃতি কাতরতা-এটাও নিয়তির অমোঘ বিধান হলেও শেকড়ের প্রতি টানের এটাও একটা কারন।প্রতিবার ঈদে স্বজনদের সঙ্গে আনন্দ ভাগাভাগি করতে রাজধানীর বাসিন্দাদের একটি বড় অংশ গ্রামে যায়। গ্রামের স্মৃতিঘেরা অতীতে ফিরে যায় সবাই । আত্মীয় স্বজনের সাথে দেখা করে। শুভেচ্ছা বিনিময় হয়।  পাশের বাড়ির স্বজন-স্কুলের বন্ধু, খেলার সাথীর সাথে দেখা,স্মৃতি হাতড়ে বেড়ানো। আবার শৈশবে ফেরার এটাই সময়। সবাই ফিরে যায় পুরানো দিনে। উপভোগ করে মাটির সোঁদা গন্ধ। শিশুধানে বিস্তৃত মাঠ, বাউল বাতাসের উদ্বাহু নৃত্য , বাড়ির পুকুরে ডুব সাঁতার বা মাছ ধরা এ আনন্দ আর কোথায়? গ্রামে ফিরে যাওয়া মানুষটি যেন বাড়ি ফিরে আমূল বদলে যায়। এর নাম শেকড়ে ফেরা, এর নাম টান।

 পাখির কলকাকলিতে মূখরিত এক শান্ত জনপদ। গাড়ি ,অফিস সব কিছুর বাইরে ব্যস্ততাহীন এক শান্ত সময়।   ঈদের সময় ঢাকাকে  যেভাবে দেখেন এভাবে ঢাকাকে কি রাখা যায় না? প্রশ্ন করে সিএনজিচালক এনায়েত হোসেন। আসলে রাষ্ট্র ইচ্ছা করলে কি না পারে? এত লোক ঢাকা থেকে গেছে তাদের যদি বাড়ির কাছে কাজের সুযোগ থাকতো তাহলে হয়তো তারা আসতো না। আমরা যখোন ঢাকায় এসেছি তখন যদি আমার এলাকায় বিশ্ববিদ্যালয়, ভালো কলেজ বা কাজের ক্ষেত্র থাকতো তাহলে ঢাকায় থাকতে  আসতাম? নিজেকে প্রশ্ন করে উত্তর পাই ,না । এভাবে হয়তো থাকতে আসতাম না। বাড়িতে থাকতাম।

 চাকরির স্থলে চাকরি করে আবার কাজ শেষে উন্নত যানবাহনের চড়ে বাড়ি যেতাম। একথা আমার একার না, ঢাকাবাসী অযুত মানুষের।আমি কোলকাতায় দেখেছি কত দূরে কাজ করে বাসা থেকে আসে যায়। মানে ১০০/১৫০ কি.মি অতিক্রম করে অফিস করে বাসায় ফিরে আসে মানুষ। ঢাকার কথাই যদি বলি, দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি, বাসা ভাড়া বৃদ্ধি জীবন জটিলতা কাটাতে নরসিংদী ,মানিকগঞ্জ, নারায়নগঞ্জ, গাজীপুর ময়মনসিংহ, ব্রাক্ষণবাড়িয়ার অনেক লোকজন ঢাকা থেকে বাড়ি চলে গেছে। এসব মানুষদের অধিকাংশ রেল যোগাযোগের মধ্যে আছে বলে তারা পারে। এমনটা দেশের সবখানে হলে ঢাকা শহরের উপর চাপ অনেক কমে যেত।

ঈদ শেষ হলেও এখনো গ্রামের দিকে ছুটছে অনেক মানুষ। এ যেন গ্রামে ফেরার মৌসুম। এখন দ্রুত গ্রামে পৌঁছেতে পারবে। তাছাড়া এসময় যত মানুষজনের সাথে দেখা হবে সারা বছরেও এ মুখগুলো দেখা যাবে না। ঈদে ঢাকা থেকে যত লোক গ্রামে যায় তারেপরে মনে হয়ঢাক শহর হাফ ছেড়ে বেঁচেছে। তার কারন ঈদে শুধু ঢাকা খালি হয় তা নয়। সাথে চলে যায় অজস্র পরিবহন। বাস,ট্রাক, প্রাইভেট কার থেকে গণপরিবহন সব। এখন ১০ মিনিটে মীরপুর, এয়ারপোর্ট । সবখানে যাওয়া সম্ভব।

আজিমপুর থেকে উত্তরা রুটে চলাচলকারী বাস মিরপুর লিংকের চালক মো. খলিলুল্লাহ বলেন, রাস্তার  যানজট একদম নেই। কোনো সিগন্যালেই দাঁড়াতে হচ্ছে না। শনিবার থেকে  হয়তো ঢাকায় মানুষ ঢুকতে শুরু করবে। এমনটাই ভাবছেন অনেকে। তবে ঢাকা ভরপুর হতে হতে আরো এক সপ্তাহ লাগবে।ফাঁকা হয়ে যাওয়া ঢাকানগরবাসীর এই শূন্য ঢাকায় বাস যেন অর্থবহ হয়ে যায়। যারা যারা ঈদে ঢাকায় আছেন তাঁদের কাছে নগরের ঈদ যেন ভিন্ন মাত্রা পায় জনমানব কম থাকে বলে। ধূলিময়-যানজটমুক্ত শহরে ঘুরে বেড়ানোতেই যেন সব আনন্দ  নিহিত। মানুষ ভিড়ের মধ্যে থেকে যেম শেকড়ে ফিরতে চায়, আবার একা হতেও চায়। শেকড়ে টানে ফেরা মানুষ আবার চলে আসবে শহরে। আবার যাবে  ঈদে , এইতো নিয়ম ।  শনিবার পর্যন্ত ঢাকা যানজটমুক্ত থাকবে বলে মনে করছেন ঢাকাবাসী। এই যে ফাঁকা হয়ে থাকা ঢাকা শহর এটুকুই যেন ঈদ। ঢাকাবাসী রাস্তায় ঘুরছে। বুক ভরে নিঃশ্বাস নিচ্ছে।


 দুই ঈদেই কেবল শহরটা চলাচলের উপযোগী থাকে। তখন  অজস্র পরিবারের সবাই মিলে খালি ঢাকায় ঘুরে বেড়ায়। ঢাকায় ঘুরছে যারা সবাই খুব খুশী। এটাই যেন তাদের সেরা আনন্দ। এটাই যেন তাদের ঈদ। ঢাকায় গনপরিবহনের সংকটের কথা বার বার শোনা গেলেও একটা পরিসংখ্যান আমাদের সামনে রয়েছে। তাহলো ঢাকায় পরিবহন সংকট কতোটা? ঢাকায় যত মানুষ আছে এখন তাদের জন্য গনপরিহন নেই বললেই চলে। এটা পূরণ করলে মনে হয় গণপরিহন সংকট কমে যাবে। এ শিক্ষা ফাঁকা ঢাকা শহরের। সবাই ঢাকায় ফিরুক,বিপদমুক্ত হোক ফেরা এ প্রত্যাশা আমাদের।


লেখক: সাংবাদিক