• ঢাকা
  • শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল, ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১
প্রকাশিত: জানুয়ারি ৩১, ২০২১, ০২:২৪ পিএম
সর্বশেষ আপডেট : জানুয়ারি ৩১, ২০২১, ০২:২৪ পিএম

গেম অন

অতৃপ্তির অবসরে রাজ্জাকের নয়া অভিষেক

অতৃপ্তির অবসরে রাজ্জাকের নয়া অভিষেক

অবসরোত্তর জীবনে আপনার পরিকল্পনা কী? এই প্রশ্নের উত্তরে লেখককে জ্যোতিষীর ভূমিকায় নামতে হবে!

কিন্তু কোন ক্রিকেট-লিখিয়ে কিংবা সুপার এক্সক্লুসিভ রিপোর্ট করা কোন সাংবাদিকও কখনো তার কাছে জানতে চেয়েছেন প্রশ্নটা? চেয়েছেন, কিন্তু জানা যায়নি তিনি নিজে কী ভাবছেন ক্রিকেট ক্যারিয়ারে দাড়ি টানার ব্যাপারে। আসলে অঘোষিতভাবেই ক্রিকেট ক্যারিয়ারে দাঁড়ি পড়ে গেলো আব্দুর রাজ্জাক রাজের। তারপর যা ঘটলো তার জন্য ধন্যবাদ দিতে হবে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডকে। বাইশগজের বাইরে রাজ্জাকের মগজাস্ত্রকে কাজে লাগাতে চাইছেন তারা। বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের নির্বাচক কমিটিতে জায়গা করে দিয়েছেন তারা রাজ্জাককে। এরপর সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে অনেকের আবেগমথিত স্ট্যাটাস। অভিনন্দন। শুভেচ্ছা।

আসলে এটা ক্রিকেটীয় সৌজন্যতা। তবে ক্রিকেট র্বোডকে ধন্যবাদ অন্য একটা কারণে দিতে হয়। নির্বাচক প্যানেলের সদস্য মনোনীত করার পর তার বাক স্বাধীনতা কেড়ে না নেয়ার জন্য। যে কারণে রাজ্জাক নির্বাচক হিসেবে তার ভবিষৎ পরিকল্পনার কথা দুই একটা গণমাধ্যমে বলতে পেরেছেন। পাঠক হিসেবে আমরা সেটা পড়তে পেরেছি।

তবে দুঃখ হয় দেয়ালের লিখিনটা রাজ্জাক পড়তে পারেননি অন্য অনেকের মতো! আন্তর্জাতিক ক্রিকেট থেকে রাজকীয় বিদায়ের সুযোগ তিনি পেয়েছিলেন। দীর্ঘ অপেক্ষার পর শ্রীলংকার বিপক্ষে ওরকম রাজকীয় প্রত্যাবর্তনের পর মাঠ থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে অবসরের ঘোষণা তিনি দিতে পারতেন। দিলে তাতে তার ক্রিকেটীয় শেষযাত্রার বর্নণাটা অনেক বর্ণিল হতো। গল্পটাও ভিন্ন হতো!  কিন্তু বিসিবি তাকে নির্বাচক বানিয়ে বিলেটেড বার্থডে উপহারের মত বিলেটেড রিটার্য়াডমেন্ট দেয়া হলো! তাই আনুষ্ঠানিকভাবে অবসর নিতে না পারার জন্য আক্ষেপ আর হতাশা নিয়ে বিসিবিকে অভিযুক্ত করতে পারবেন না রাজ্জাক।

 অথচ রাজার মতো সরে যাওয়ার মঞ্চ তৈরি হয়েছিল রাজ্জাকের জন্য। সেটা হঠাৎ। আচমকা। ২০১৪ সালের পর দীর্ঘ অপেক্ষা ছিল ফের জাতাীয় দলে ডাক পাওয়ার। সেই অপেক্ষার অবসান হলো ২০১৮ সালে ঘরের মাঠে শ্রীলংকা সিরিজে। শের-ই বাংলায় তার প্রত্যাবর্তন হলো। ক্যারিয়ার সেরা বোলিং করলেন এই বাহাতি। ৬৪ রানে ৪ উইকেট নিলেন। ম্যাচে ৫ উইকেট। এরপর সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে যা বলেছিলেন রাজ্জাক, তাতে কথা আর কন্ঠস্বরে স্পষ্ট ছিল, জাতীয় দলে ফেরার আশা প্রায় ছেড়েই দিয়েছিলেন। যতদূর মনে পড়ে তার বক্তব্য ছিল—আমাদের ক্রিকেটের যে অবস্থা (ইতিবাচক অর্থে) তাতে  বিসিবি আমাকে আবার ডেকেছে, আমার ওপর আস্থা রেখেছে সে জন্য আমি বিসিবিকে ধন্যবাদ জানাই। কিন্তু বিসিবির পরের ডেলিভারিটা কী হবে সেটা বুঝতে পারেননি তিনি। চট্টগ্রাম টেস্টে একাদশের বাইরে! তারপর জাতীয় দলের ড্রেসিংরুমের দরোজা আবার তার জন্য বন্ধ।

এবারও তিনি বিসিবিকে ধন্যবাদ দিয়েছেন। তবে কামব্যাকের জন্য নয়। তাকে নতুন দায়িত্ব দেয়ার জন্য। আব্দুর রাজ্জাক রাজ বিসিবির নির্বাচক প্যানেলের তিন নম্বর সদস্য হয়েছেন। নিজের ক্রিকেট মস্তিস্ক আর অভিজ্ঞতা দিয়ে দল নির্বাচনে ভুমিকা রাখতে শুরু করলেন। নিজের ক্যারিয়ার নিয়ে বাঁ হাতি এই স্পিনারের খুব একটা হোম ওয়ার্ক ছিল বলে মনে হয় না। থাকলে অবসরের আগে প্লেডঅন হতে না। বরং হাততালি কুড়িয়ে মাঠ থেকে বিদায় নিতে পারতেন।

সাংবাদিক-লেখকরা যতোই অতীতমুখী হন না কেন, রাজ্জাক নিশ্চয়ই এখন তাকিয়ে সামনের দিকে। একটা খবরের কাগজে দেখলাম তিনি বলেছেন, বিসিবির সাথে কথা বলবেন, আনুষ্ঠানিক অবসরের আর কোন সুযোগ আছে কি না! হয়তো আছে। হয়তো নেই। তবে তিনি যদি আবার ফুলের মালা গলায় নিয়ে বিদায়ের জন্য মাঠে নামেন, সেটা হবে তাকে নিয়ে যেটুকু যা ক্রিকেট আবেগ অবশিষ্ট ছিল, তা নিজের হাতে গলা টিপে হত্যা করা! হ্যাঁ, একজন ক্রিকেটার কখন কীভাবে অবসর নেবেন সে সিদ্ধান্ত নেয়ার অধিকার তারই থাকা উচিৎ। তবে সেটা ক্যারিয়ারের প্রান্তিক স্টেশনে এসে নয়। তখন অন্যরা ঠেলাঠ্যালি করে নামিয়ে দেন।

তবে হ্যাঁ, রাজ্জাক ছিলেন এদেশে বাঁহাতি স্পিনারদের যে সাফল্যগাঁথা তার অন্যতম উত্তরাধিকারী। স্বাধীনতা উত্তর বাংলাদেশে যে ট্রেন্ড সেট করেছিলেন প্রয়াত রামচাঁদ গোয়ালা। তারপর সেই ঐতিহ্যের ব্যাটনটা বয়ে বেড়িয়েছেন এনামুল হক মনি, মোহাম্মদ রফিক, রাজ্জাক থেকে আজকের সাকিব। এক যুগের ক্যারিয়ারে ১৬ টেস্টে ২৮ উইকেট নিয়ে থেমে যেতে হয়েছে রাজ্জাককে, তাতে হতাশার কিছু নেই। এখন হয়তো বছর দুয়েকের আর্ন্তজাতিক ক্যারিয়ারে অনেকে ওর চেয়ে বেশি টেস্ট খেলার সুযোগ পাচ্ছেন। পাচ্ছেন কারণ রাজ্জাকরা অনেক সীমাব্ধতার মধ্যে দিয়ে বাংলাদেশ ক্রিকেটকে ঐ পর্যন্ত এগিয়ে দিয়ে গেছেন বলে।

অভ্যুথান-পতন-প্রস্থান সবই হলো রাজ্জাকের ক্যারিয়ারে। আবার ক্রিকেট সার্কিটে প্রত্যাবর্তন। সেটা নতুন ভূমিকায়। তবে সেটাকে মহাঅভ্যুত্থান বলা যাবে না। কিন্তু অভিনন্দন তাকে জানাতেই হবে, নির্বাচকদের হট চেয়ারে বসতে তিনি রাজি হয়েছেন। নির্বাচক হিসেবে নতুনদের আর্ন্তজাতিক ক্রিকেটে তুলে আনা যেমন তার দায়িত্ব হবে, তেমনি সিনিয়রদের যোগ্য সম্মান নিয়ে বিদায় নেয়ার রাস্তাটাও করে দিতে হবে। সিনিয়রদের বলার মত সৎসাহস তিনি দেখাতে পারবেন কি? দেয়ালের লিখন পড়ার দরকার নেই। নিজেরাই ঠিক করে নাও কখন সরে যেতে চাও। যদি পারেন, তাহলে তার মত ক্যারিয়ার সেরা বোলিংয়ের পর জাতীয় দলের ড্রেসিংরুমের দরোজা বন্ধ হবে না অনেকের জন্য। জয়ধ্বনিতে তৃপ্তির অবসরেই যেতে পারবেন তারা।

 

লেখক: সিনিয়র জার্নালিস্ট ও কলাম লেখক।