• ঢাকা
  • শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল, ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১
প্রকাশিত: অক্টোবর ১৭, ২০২১, ০৯:৫৫ এএম
সর্বশেষ আপডেট : অক্টোবর ১৭, ২০২১, ০৯:৫৫ এএম

ক্ষমা করো বাংলাদেশ

ক্ষমা করো বাংলাদেশ
জাগরণ গ্রাফিক্স ডেস্ক।

চারিদিকে বিষাক্ত বাতাস, কোথাও যেনো সুখ নেই। অস্থির সময়ের এই নির্মম কষাঘাতে অসহায় মানুষের কান্নার ধ্বনি বাতাসের চির প্রবাহমান ধারাকে ভারি করে তুলেছে। পূর্বপুরুষের ভিটেমাটির অহংকার আর সহস্র বছরের ধর্মীয় সম্প্রীতি নিয়ে বাঙালির মধ্যে যে চিরায়ত গর্ব ছিলো এতো দিন, সেই গর্ব ও সম্প্রীতির বন্ধনে আঘাত এসেছে। সাম্প্রদায়িক মৌলবাদীদের আস্ফালন, ধর্মীয় উগ্র উন্মাদনায় গত কয়েকদিনে সনাতন ধর্মের বেশকিছু মন্দির ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এসব ঘটনায় নেপথ্যে কারা আছে এবং এদের রাজনৈতিক পরিচয় কি? এমনতর ভাবনা খুব স্বাভাবিকভাবেই উঠতে পারে। আর এসব ঘটনার কারণ উৎঘাটন করাও জরুরি বৈকি।

বাংলাদেশ নামক ভূ-খণ্ডে সকল ধর্মের, সকল বর্ণের, সকল পেশার এবং সকল লিঙ্গের মানুষের অধিকারকে সমানভাবে সংবিধানে বিবেচনা করা হয়েছে। কিন্ত সকল সরকারই এমন সব ঘটনায় সংবেদনশীল পরিচয় বহনে ব্যর্থ হচ্ছে- এটার কারণ আবিষ্কার করা সবচেয়ে জরুরি।

আমরা লক্ষ্য করেছি সরকারের নীতি নির্ধারক, আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী এবং স্থানীয় আওয়ামী লীগের নেতাকর্মী কেউ কিন্ত এ ধরনের ঘটনার আগাম পূর্বাভাসকে সতর্কতা দিয়ে বিচার করেননি। বরং তারা দায়িত্বশীল ভূমিকায় অবতীর্ণ হতে ব্যর্থ হয়েছেন। বাংলাদেশ নামক ভূ-খণ্ডে সকল ধর্মের, সকল বর্ণের, সকল পেশার এবং সকল লিঙ্গের মানুষের অধিকারকে সমানভাবে সংবিধানে বিবেচনা করা হয়েছে। কিন্ত সকল সরকারই এমন সব ঘটনায় সংবেদনশীল পরিচয় বহনে ব্যর্থ হচ্ছে- এটার কারণ আবিষ্কার করা সবচেয়ে জরুরি।

বাংলাদেশে গত কয়েক বছরে যে সব সাম্প্রদায়িক ঘটনার প্রকাশ আমাদের দেখতে হয়েছে এর মধ্যে হেফাজত এবং মামুন গং-এর উত্থান এবং সরাসরি মৌলবাদী মধ্যযুগীয় কার্যক্রমের ঘোষণা একটি উল্লেখযোগ্য বিষয়। দেশের বুদ্ধিজীবী, প্রগতিবাদী ও মুক্তমনা মানুষেরা এই মৌলবাদী চক্রের উত্থান এবং তাদের আস্ফালনে অত্যন্ত মর্মাহত হয়ে নানাভাবে সরকারকে সতর্ক করেছেন। কিন্ত সরকারের নীতিনির্ধারক মহলের কর্ণে সেই সতর্ক বার্তাটি গুরুত্বপূর্ণ বার্তা হিসেবে প্রবেশ করেনি। যদি তারা সতর্ক হতেন, মৌলবাদী চক্রের উত্থানকে প্রতিহত করতে অগ্রনী ভূমিকা রাখতেন, তাহলে হয়তো আজ মন্দিরে আক্রমণের মতো ঘটনা ঘটতো না।

সম্প্রতি বাংলাদেশে আর একটি মৌলবাদী চক্রের উত্থান হয়েছে। এরা সবাই প্রযুক্তিনির্ভর মৌলবাদী, ধর্মকে রাজনৈতিক ফায়দায় ব্যবহার করে এরা ইসলাম প্রতিষ্ঠার নামে ইউটিউবে ক্রমাগত মিথ্যে তথ্য দিয়ে গুজব সৃষ্টি করে চলেছে। এরা হিন্দু-মুসলমানের মধ্যে সংঘাত সৃষ্টি করে বস্তুত একটি অপশক্তির উত্থানকে তরান্বিত করতে চায়। ভিন্ন ভিন্ন রাজনীতির সমর্থক হয়েও এরা অভিন্ন একটি মতবাদে বাংলাদেশকে চালিত করার মিশন-ভিশন নিয়ে অগ্রসর হচ্ছে। একাত্তরের স্বাধীনতাবিরোধী জামাত, মুসলিম লীগ এবং হেফাজত, মামুন গং ও এদের এজেন্টেরা সম্মলিত হয়ে নতুন যে খেলাটা শুরু করেছে এর পরিণতি যে কত ভয়ঙ্কর হবে তা আঁচ করতে আমাদের খুব বেগ পেতে হয় না। এসব মৌলবাদীদের দুষ্কর্মের খতিয়ান সরকারের কাছে নেই এমন কথা দুগ্ধ পানরত শিশুও মানবে না। তাই সরকারের অনেক আগে থেকেই সতর্ক হওয়া উচিৎ ছিল। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে যারা সংবিধানকে অবমাননা করে বক্তব্য দেয়, ৭২-এর সংবিধান মানি না বলে দম্ভ দেখায় এবং কথায় কথায় সরকারকে কটাক্ষ করার দু:সাহস দেখায়- আর যায় হোক এরা তো ভেতরে ভেতরে ভীষণ শক্তিশালী এটা অনুধাবন করি।

এখন কি শুধুই অশ্রুপাত করবে সরকার? না কি মৌলবাদীদের দমনে এগিয়ে আসবে? এসব সিদ্ধান্ত এককভাবেই এখন সরকারের।

আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে গুণগত কিছু পরিবর্তন সাধিত হয়েছে। অবাধে অন্য দলের নেতা-কর্মী এবং বিত্তবানদের প্রবেশ উদ্বেগজনক হারে বৃদ্ধি পেয়েছে। মৌলবাদী, স্বাধীনতাবিরোধী শক্তির অসংখ্য লোকজন আওয়ামী লীগে যোগ দিয়েছে। আওয়ামী লীগ কিন্ত এসব আবর্জনাদের অনুপ্রবেশ ঠেকাতে পারেনি। হতাশ হবার মতো সত্য সংবাদ হলো এই চক্রের অনেকেই আসন্ন স্থানীয় সরকার নির্বাচনে অংশগ্রহণের জন্য নৌকার মাঝি হয়েছে। নৌকাকে বাঁচাতে ত্যাগী নেতাদের আজ ঘরে ঘরে যেতে হচ্ছে অনুপ্রবেশকারী এসব নেতাদের পক্ষে সাফাই গায়তে। একজন ত্যাগী নেতা বা কর্মীর জীবনে এর চেয়ে বেদনাদায়ক ঘটনা আর কি হতে পারে! অসুস্থ রাজনীতির এই নিষ্ঠুর খেলার জন্য আওয়ামী লীগকে একদিন চরম মূল্য দিতে হবে। সেদিন খুব দূরে নেই।

সমাজে যার যার ধর্ম নিয়ে এবং নিজস্ব ধর্মীয় আচার-আচরণ নিয়ে জীবন ধারণের অধিকার যদি বিনষ্ট হয়, তাহলে সেই সমাজ পতনের মুখে পতিত হতে থাকে। সমাজে মধ্যযুগীয় বর্বরতা দেখা দেয়। রাষ্ট্র তখন অসহায় হয়ে সকল বর্বরতাকে অবলোকন করে শুধুই অশ্রুপাত করে। কিছুই করার থাকে না। উদ্ভূত ঘটনাগুলোর ক্ষেত্রে সরকারের মধ্যে ঘাপটি মেরে থাকা মৌলবাদীদের নিয়ে সরকার গভীর এক জালে আবদ্ধ হয়ে পড়েছে। কে তাদের উদ্ধার করবে? এখন কি শুধুই অশ্রুপাত করবে সরকার? না কি মৌলবাদীদের দমনে এগিয়ে আসবে? এসব সিদ্ধান্ত এককভাবেই এখন সরকারের। দায়মুক্তির অজুহাতে মূল্যবোধ হারানো এই দানবীয় সময় হয়তো কাউকেই ক্ষমা করবে না। তবুও ক্ষমা চাই বাংলাদেশ। দশ বছরের শিশু ধর্ষণ ও হত্যায় যুক্ত যারা তাদের বিচার করুণাময়ের কাছেই নিবেদন করলাম। অসভ্য বর্বর জালেম এইসব কুৎসিৎদের মুখে ঘৃণা নিক্ষেপ করে বলি, বাংলাদেশ তুমি আমাকে ক্ষমা করো। দাউ দাউ করে জ্বলছে আমার সর্বাঙ্গ- প্রভু তুমি আমাকে আর একবার একাত্তরের শক্তি দাও। সাহস দাও।

জয় বাংলা॥

 

লেখক ● সাংবাদিক, গবেষক ও সংস্কৃতি কর্মী।। 

 

দ্রষ্টব্যঃ- প্রকাশিত লেখাটি লেখকের একান্ত নিজস্ব মতামত এবং এর দায়-দায়িত্বও লেখকের একান্ত নিজস্ব।  

 

জাগরণ/এসকেএইচ