• ঢাকা
  • শনিবার, ২৭ এপ্রিল, ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১
প্রকাশিত: জানুয়ারি ২৪, ২০২২, ১১:০৭ পিএম
সর্বশেষ আপডেট : জানুয়ারি ২৫, ২০২২, ০৫:১২ এএম

যুক্তরাষ্ট্রের মানবাধিকার অস্ত্র!

যুক্তরাষ্ট্রের মানবাধিকার অস্ত্র!
ছবি- জাগরণ গ্রাফিক্স ডেস্ক।

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের হাতে পারমানবিক অস্ত্রের পাশাপাশি রয়েছে ‘মানবাধিকার অস্ত্র’। ১৯৪৫ সালে যুক্তরাষ্ট্র জাপানের ওপর দু’বার পারমানবিক অস্ত্র নিক্ষেপ করে। আর মানবাধিকার অস্ত্রটি প্রয়োগ করে যত্রতত্র; বিভিন্ন দেশের ওপর। যে অপরাধে সে এই অস্ত্র প্রয়োগ করে থাকে, সেই অপরাধ তার চেয়ে বেশি পৃথিবীতে কেউ করে বলে মনে হয় না। যার কাছ থেকে যুক্তরাষ্ট্রের স্বার্থ উদ্ধার হবে না; যে তার দাসানুগত থাকবে না; তার ওপরই সে মানবাধিকার অস্ত্র প্রয়োগ করে থাকে। যুক্তরাষ্ট্র বা তার পক্ষভুক্ত কেউ মহা অপরাধ করলেও তাতে মানবাধিকার লংঘিত হয় না। এ প্রসঙ্গে একটু গল্প না বললেই নয়। একদিন রাজা মহাশয় ঘোষণা করছেন, মাকড় মারলে পাপ হয়। একজন রাজা মহাশয়কে জানালেন, আপনার ছেলেও যে মাকড় মারে, রাজা মশায়! তখন রাজা মহাশয় বললেন, মাকড় মারলে ধোকড় হয়। অর্থাৎ অন্যের জন্য যা দোষের সমাজপতির জন্য তা দোষ নয়।

যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষে থাকলে শত অপরাধ করলেও সে ভালো। আর বিপক্ষে থাকলে ভালো কাজ করলেও সে খারাপ। পাকিস্তান যতদিন আমেরিকার পক্ষে ছিল তার শত অপরাধও ততদিন মধুর ছিল। যেমন-

১. ১৯৫৪ সালে পূর্ব বাংলার প্রাদেশিক নির্বাচনে যুক্তফ্রন্ট ব্যাপক সংখ্যাগরিষ্ঠতা পায় এবং সরকার গঠন করে। পাকিস্তানের কেন্দ্রীয় সরকার দুই মাসের মাথায় সে সরকার ভেঙ্গে দিয়ে পূর্ব বাংলায় কেন্দ্রীয় শাসন জারি করে বাঙালি নেতা কর্মীদের ধর-পাকড় শুরু করে দেয়। পাকিস্তানের এই অগণতান্ত্রিক আচরণে কোনও মানবাধিকার লংঘিত হয়েছে বলে যুক্তরাষ্ট্রের কাছে মনে হয়নি।

২. ১৯৫৮ সালে পাকিস্তানের সেনা প্রধান জোর করে ক্ষমতা দখল করে দশ বছর স্বৈর শাসন চালিয়ে অসংখ্য ছাত্র-জনতাকে হত্যা করলেও যুক্তরাষ্ট্রের কাছে মানবাধিকার লংঘিত হয়েছে বলে মনে হয়নি।

৩. ১৯৬৯ সালে সেনা প্রধান ইয়াহিয়া খান ক্ষমতা দখল করলেও তাতে যুক্তরাষ্ট্র মানবাধিকার লংঘনের কোনও গন্ধ পায়নি।

৪. ১৯৭০ সালে পাকিস্তানে প্রথমবারের মতো জাতীয় পরিষদে সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। সেই নির্বাচনে বঙ্গবন্ধু ও তাঁর দল আওয়ামী লীগ নিরংকুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা পায়। পাকিস্তানের সামরিক সরকার নির্বাচনে বিজয়ীদের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তর না করে বিজয়ীপক্ষ অর্থাৎ বাঙালিদের ওপর অসম যুদ্ধ চাপিয়ে দেয়, ৩০ লক্ষ বাঙালিকে হত্যা করে, ৪ লক্ষ নারীকে নিপীড়ন ও ধর্ষণ করে, এক কোটি বাঙালিকে দেশ ছাড়তে বাধ্য করে। আমেরিকার কাছে তাতে কোনও মানবাধিকার লংঘিত হয়নি। যুক্তরাষ্ট্র এর নিন্দাও কখনও করেনি। বরং যুক্তরাষ্ট্র পাকিস্তানকে এই সব অপকর্মে উৎসাহিত ও সাহায্য করেছে। পাকিস্তানকে সহযোগিতা করতে সে সপ্তম নৌবহর পাঠায়। সোভিয়েত ইউনিয়নের বাধায় তা ফিরে যায়।

৫. ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট বাংলাদেশের স্থপতি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সপরিবারে কতিপয় বিপথগামী সেনার হাতে নিহত হন। যুক্তরাষ্ট্র এ হত্যাকাণ্ডের নিন্দা করেনি। বরং এ হত্যাকাণ্ডের পেছনে যুক্তরাষ্ট্রের হাত ছিল। তাই যুক্তরাষ্ট্র হত্যাকারীদের পরামর্শ, আশ্রয়-প্রশ্রয় দিয়েছে; এখনো দিচ্ছে।  কারণ, যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের স্বাধীনতাকে ভালোভাবে মেনে নিতে পারেনি। ১৯৭১ সালে স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে বাংলাদেশের জন্ম ছিল মার্কিন প্রেসিডেন্ট রিচার্ড নিক্সন, বিশেষ করে হেনরি কিসিঞ্জারের একটি বড় পরাজয়, ভুট্টো ও পাকিস্তানের সামরিক এস্টাবলিশমেন্টের জন্য চপেটাঘাত। তারা এ পরাজয়ের প্রতিশোধের অপেক্ষায় ছিলেন। তখন চলছিল স্নায়ু যুদ্ধ, বিশ্ব ছিল দুইভাগে বিভক্ত। এক ভাগে ছিল আমেরিকার নেতৃত্বে পুঁজিবাদী ব্লক। আরেকভাগে ছিল সোভিয়েত ইউনিয়নের নেতৃত্বে সমাজতান্ত্রিক ব্লক। বাংলাদেশ ছিল জোটনিরপেক্ষ গ্রুপে; তবে সোভিয়েত ঘেঁষা। কেননা,  বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধে ভারত ও সোভিয়েত ইউনিয়নের ভূমিকা ছিল অনন্য। ভারতও ছিল সোভিয়েত ঘেঁষা। দক্ষিণ এশিয়ায় সোভিয়েত ইউনিয়ন ও বামদের একচ্ছত্র প্রভাব মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কাম্য ছিল না। এজন্য মার্কিন প্রশাসন বঙ্গবন্ধুর ওপর ছিল চরম ক্ষিপ্ত। বঙ্গবন্ধু সরকারকে উৎখাত করতে ষড়যন্ত্রে মেতে উঠে। দেশের অভ্যন্তরে সেনাবাহিনীর মধ্যেও ছিল একটি প্রতিক্রিয়াশীল চক্র। দৈনিক প্রথম আলোর যুগ্ম সম্পাদক মিজানুর রহমান খান তাঁর ‘মার্কিন দলিলে মুজিব হত্যাকাণ্ড’ গ্রন্থে উল্লেখ করেছেন যে, মেজর ফারুক, রশিদ ১৯৭২ সাল থেকে ঢাকাস্থ মার্কিন দূতাবাসের সাথে বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করার ষড়যন্ত্র করতে থাকে। তারা ১৯৭২, ১৯৭৩ ও ১৯৭৪ সালে মার্কিন দূতাবাসে গিয়ে সরাসরি শেখ মুজিবুর রহমানের সরকারকে উৎখাত করতে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সহায়তা চান। 

বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডে সিআইএ জড়িত ছিল। মার্কিন সাংবাদিক লরেন্স লিফশুলজও তাঁর প্রণীত গ্রন্থ ’Bangladesh : The Unfinished Revolution’ এ শেখ মুজিব হত্যায় সিআইএ এর জড়িত থাকার কথা বলেন। মার্কিন আরেক সাংবাদিক ক্রিস্টোফার এরিক হিচেন্স তাঁর ‘The Trial of Henry Kissinger’ গ্রন্থে লরেন্স লিফশুলজের বরাত দিয়ে মুজিব হত্যাকাণ্ডে সিআইএ এর জড়িত থাকার বিষয়টি সমর্থন করেন। তিনি তাঁর এ গ্রন্থে নথিপত্র দিয়ে প্রমাণ করেছেন যে, হেনরি কিসিঞ্জার বাংলাদেশ সফরের সময় ঢাকার মার্কিন দূতাবাসে বসেই ১৫ আগস্টের পরিকল্পনা বাস্তবায়নে এগিয়ে যাও-(Go Ahead) সিগনাল দেন। এছাড়া, তিনি কিসিঞ্জারকে একজন অসাধারণ স্মৃতিশক্তিসম্পন্ন এক বিচিত্র মিথ্যাবাদী ও যুদ্ধাপরাধী হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন। তিনি ২০০১ সালের মার্চে ‘হারপারস’ নামক এক ম্যাগাজিনে একটি নিবন্ধ লিখেন। তাতে তিনি লিখেছেন, “বিভিন্ন ঘটনা থেকে আমরা দেখতে পাই যে, কিসিঞ্জার রাজনীতির বিষয়টাকে একটি নিতান্ত ‘ব্যক্তিগত’ ব্যাপার হিসেবে গ্রহণের প্রবণতা দেখিয়েছেন। তাঁর কারণে হাজার হাজার মানুষ প্রাণ দিয়েছে। তাঁর জন্য অসুবিধাজনক কতিপয় ব্যক্তির কথাও আমরা জানি। যাঁদের মধ্যে রয়েছেন সালভাদর আলেন্দে, আর্চ বিশপ ম্যাকারিওস ও শেখ মুজিবুর রহমান। হ্যারল্ড স্যান্ডার্স ছিলেন দূরপ্রাচ্য ও দক্ষিণ এশিয়া বিষয়ক মার্কিন উপসহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী। তিনি ১৯৭৫ সালের ২০ আগস্ট ওয়াশিংটনের সময় সন্ধ্যা ৬টা ১১ মিনিটে মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী হেনরি কিসিঞ্জারের সঙ্গে টেলিফোনে কথা বলেন। স্যান্ডার্স কিসিঞ্জারকে বলেন, “ঢাকা থেকে একটা বার্তা পেলাম। ঢাকার মোশতাক সরকার আমাদের স্বীকৃতি ও নৈতিক সমর্থন চাইছে। আমরা কি একটা বন্ধুত্বপূর্ণ উত্তর দিতে পারি?” জবাবে কিসিঞ্জার বলেন, “আমরা মোশতাক সরকারকে স্বীকৃতি দিতে পেরে ধন্য মনে করছি। বাংলাদেশের নতুন সরকারের কাছে বার্তা পৌঁছে দাও, যাতে তারা ভরসা পায় যে, আমরা তাদের চাহিদার প্রতি সহানুভূতিশীল থাকব।” কিসিঞ্জারের এ বক্তব্য হতে ধারণা করা যায় যে, মার্কিন প্রশাসন বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের ষড়যন্ত্রের সঙ্গে জড়িত ছিল। যারা হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত থাকে, তাদের মুখে মানবাধিকারের কথা মানায় না।

৬. কারাগার হচ্ছে নিরাপদ ও সুরক্ষিত স্থান। ১৯৭৫ সালের ৩ নভেম্বর অবৈধ প্রেসিডেন্ট খন্দকার মোশতাকের অনুমতিক্রমে বঙ্গবন্ধুর হত্যাকারীরা ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে বন্দি চার জাতীয় নেতা তাজউদ্দিন আহমেদ, সৈয়দ নজরুল ইসলাম, ক্যাপ্টেন মনসুর আলী ও এ এইচ এম কামরুজ্জামানকে নির্মমভাবে হত্যা করে। এ ঘটনায় যুক্তরাষ্ট্র নিন্দা না করে হত্যাকারীদের আশ্রয়-প্রশ্রয় দেয়। যুক্তরাষ্ট্র হচ্ছে হত্যাকারী ও অপরাধীদের আশ্রয়স্থল। আবার তারাই বলে মানবাধিকারের কথা!

 ৭. ১৯৭৮ সালের ১০ ফেব্রুয়ারি ওয়াশিংটন পোস্ট পত্রিকায় ‘Bangladesh Execution : A Discrepancy’ শিরোনামে একটি নিবন্ধ ছাপা হয়। এতে তথ্য দেয়া হয় যে, আগের বছরের ২ অক্টোবর এক ব্যর্থ অভ্যুত্থানের ঘটনায় ২১৭ জনের প্রাণদণ্ড কার্যকর করা হয়। ১৯৭৮ সালের ১৯ জানুয়ারি ঢাকার চার্জ দ্য অ্যাফেয়ার্স আলফ-ই- বার্গেসেন এ বিষয়ে মার্কিন পররাষ্ট্র দফতরে একটি গোপন বার্তা পাঠান। কিন্তু পররাষ্ট্র দফতরের সূত্র এটি মিডিয়ায় ফাঁস করে দেয়। এ বার্তা থেকে জানা যায়, যে ২১৭ জনের মৃত্যুদণ্ড দেয়া হয় তার মধ্যে প্রায় ৩০-৩৪ জনের মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয় আনুষ্ঠানিক বিচার প্রক্রিয়া সম্পন্ন করার পূর্বেই। এ গণপ্রাণদণ্ডের চার মাস পরে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মানবাধিকার সংগঠন 'Human Rights Watch' এক প্রতিবেদন প্রকাশ করে বলে যে, বাংলাদেশে মানবাধিকার পরিস্থিতির উন্নতি ঘটেছে। ১৯৭৮ সালের ১১ ফেব্রয়ারি তারিখ ‘বাংলাদেশ টাইমস’ পত্রিকায় শিরোনাম দিয়ে মানবাধিকারের এ তথ্য প্রকাশ করে।

৮. ১৯৭১ সালের মানবতাবিরোধী অপরাধে অপরাধীদের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইবুনাল বিচার করলে যুক্তরাষ্ট্র তার বিরোধিতা করে। এ আদালত বেসরকারি আদালত। এখানে আসামিদের আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ আছে, আপিলের সুযোগ আছে, আইনজীবী নিযুক্তির সুযোগ আছে। এটা প্রকাশ্য বিচার, গোপনীয় নয়। অথচ জিয়াউর রহমানের আমলে সামরিক আদালত, যা ছিল গোপনীয়, যেখানে আত্মপক্ষ সমর্থন ও আপিলের কোনও সুযোগ ছিল না। তাছাড়া বিচার শুরুর আগে মৃত্যুদণ্ড কার্যকর হলেও তাতে মানবাধিকার লংঘিত হয় না। কত মহান যুক্তরাষ্ট্রের মানবাধিকার সংগঠন! কেননা, ১৯৭১ সালে এই দেশের রাজাকার, আলবদর, আলশামস ও শান্তি কমিটির সদস্যরা যা করেছে তা ছিল যুক্তরাষ্ট্রের ইচ্ছার প্রতিফলন। তাই তারা অপরাধ করলে মানবাধিকার লংঘিত হয় না। মানবাধিকার লংঘিত হয় তাদের বিচার করলে।

৯. সাবেক সেনা প্রধান জেনারেল আজিজ আহমদ, সাবেক র‌্যাব প্রধান ও বর্তমান পুলিশ প্রধান বেনজির আহমদসহ ৭ কর্মকর্তার আমেরিকা প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা নিয়ে আলোচনা-সমালোচনা চলছে। সরকার নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারে লবিস্ট নিয়োগ করতে যাচ্ছে। কারণ, সরকারবিরোধী পক্ষ লবিস্ট নিয়োগ করে এ নিষেধাজ্ঞা আরোপ করতে সক্ষম হয়েছে। আমেরিকায় না গেলে সমস্যা কী তা আমার বোধগম্য নয়। পৃথিবীতে আর কোনও দেশ নেই? বাংলাদেশ ছেড়ে অন্য দেশে যাওয়ার দরকার কী? জেনারেল আজিজ আহমদ কী অপরাধ করেছে জানি না। তাঁর ভাইদের বিরুদ্ধে কিছু শুনেছি। ভাইয়ের অপরাধে তাঁর ওপর নিষেধাজ্ঞা কেন? বাংলাদেশে দুই জন সেনা প্রধান ক্যু করে ক্ষমতা দখল করল, কত মায়ের পুতের প্রাণ কেড়ে নিল, তাতে তো তাদের ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি হল না।

১০. যুক্তরাষ্ট্রের আয়তন বাংলাদেশের আয়তনের ৭০ গুণ। তাদের জনসংখ্যা ৩২ কোটি। বাংলাদেশের ২০ কোটি। ক্ষুদ্র দেশে অধিক জনসংখ্যা হলে সেখানে আইন শৃঙ্খলা রক্ষা করা কঠিন। তাই শৃঙ্খলা রক্ষার্থে সন্ত্রাসীদের সাথে অনেক সময় আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর সংঘাত ঘটে এবং তাতে কিছু সন্ত্রাসী মারা গেছে। তাতে তো বাংলাদেশের সাধারণ মানুষ খুশি। এতে যুক্তরাষ্ট্রের সমস্যা কোথায়? খোদ আমেরিকায় কি বিনা বিচারে পুলিশের হাতে বাংলাদেশের চেয়ে কম মানুষ প্রাণ হারান? সেখানে কি কম মানুষ গুম হয়? যে দেশটি বিশ্বব্যাপী মানবাধিকার লংঘন করে বেড়ায়, সে দেশটি যুক্তরাষ্ট্র ব্যতীত আর কেউ নয়। যুক্তরাষ্ট্র চিলি, ভিয়েতনাম, ইন্দোচীন, ইরাক, আফগানিস্তানে প্রত্যক্ষভাবে, বাংলাদেশ, পূর্ব তিমুর, আর্জেন্টিনা, ফিলিস্তিনে পরোক্ষভাবে মানবতাবিরোধী অপরাধ করেছে। যুক্তরাষ্ট্র সারা পৃথিবীতে মৌলবাদী জঙ্গি সংগঠনসমূহ ‍সৃষ্টি করে, আবার দমন করে। সাপুড়ে যেমন সাপ নিয়ে খেলে, তেমনি যুক্তরাষ্ট্রও জঙ্গি নিয়ে খেলে।

১১. বিশ্বের সবচেয়ে বড় অপরাধী হলেন আমেরিকার সাবেক নিরাপত্তা উদেষ্টা ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী জনাব হেনরি কিসিঞ্জার। যার নেশা পেশা ছিল রক্ত, যুদ্ধ, গণহত্যা। মানুষ হত্যার সংবাদে তিনি উল্লসিত হতেন, শান্তি পেতেন আর শান্তিতে  তার অশান্তি বোধ হতো। তার মানবতাবিরোধী কাজকে বৈধতা দেয়ার জন্য তাকে ১৯৭৩ সালে শান্তিতে নোবেল পুরস্কার দেয়া হয়। হিটলার ও কিসিঞ্জার এই দুইজনের মধ্যে মৌলিক পার্থক্য নেই। একজন ইহুদি হত্যা করেছেন, আরেকজন মানুষ হত্যা করেছেন। দুইজনের জন্মও একই দেশে। জার্মানি। ক্রিস্টোফার হিচেন্স তাঁর `The Trial of Henry Kissenger’ গ্রন্থে বলেন, “Kissinger is a thug, a crook, a liar and a murderer”। তার অপরাধ ছিল বিশ্বব্যাপী। কিসিঞ্জারের মানবতাবিরোধী অপরাধ বিচার করলে কয়েকশত বার তার ফাঁসি হয়। জার্মানি হিটলার নীতি ত্যাগ করলেও যুক্তরাষ্ট্র কিসিঞ্জার নীতি ত্যাগ করেনি। মানবাধিকার লংঘনের দায়ে যুক্তরাষ্ট্রের বিচার হওয়া উচিত। মানবতাবিরোধীর মুখে মানবাধিকারের কথা! কবি গুরুর ভাষায় বলতে হয়,

'আমি শুনে হাসি আখি জলে ভাসি এই ছিল মোর ঘটে
তুমি মহারাজ সাধু হলে আজ আমি আজ চোর বটে।' 

 

লেখক•সহযোগী অধ্যাপক, ইতিহাস বিভাগ, সরকারি রাজেন্দ্র কলেজ, ফরিদপুর।

 

এসকেএইচ//