বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির (সিপিবি) সভাপতি মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম বলেন, শহীদ কমরেড তাজুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়ের সর্বোচ্চ ডিগ্রী নিয়ে ব্যক্তিগত ভোগ বিলাস পরিত্যাগ করে এদেশের শ্রমজীবী মানুষের মুক্তির জন্য নিজেকে নিবেদিত রেখেছিলেন। মজুরি শ্রমিক হিসেবে আদমজী পাটকলে শ্রমিকদের সংগঠিত করেছিলেন। এরশাদ স্বৈরাচারের দোসররা তাঁকে নিষ্ঠুরভাবে হত্যা করেছে।  তাজুল নিজের মতাদর্শগত চেতনায় এবং পার্টির নির্দেশে স্বৈরাচারবিরোধী হরতাল সফল করতে গিয়ে জীবন দিয়েছিলেন। তাঁর মৃত্যু এক মহান মৃত্যু। কিন্তু তাঁর জীবন সংগ্রাম আরো মহান।

শুক্রবার (১ মার্চ) ৩৫তম শহীদ তাজুল দিবসে স্বৈরাচারবিরোধী গণআন্দোলনের মহান শহীদ তাজুল ইসলামের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদনকালে এসব কথা বলেন তিনি। আরো বক্তব্য রাখেন- সিপিবির সাধারণ সম্পাদক মো. শাহ আলম, বাসদ সাধারণ সম্পাদক খালেকুজ্জামান। অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন শ্রমিকনেতা আসলাম খান।

এ সময় বিভিন্ন রাজনৈতিক দল, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠনের পুষ্পার্ঘ্য নিবেদনের মধ্য দিয়ে শহীদ তাজুলের স্মরণে নির্মিত অস্থায়ী বেদি ফুলে ফুলে ভরে যায়। প্রথমে সিপিবির সভাপতি মুজাহিদুল ইসলাম সেলিমের নেতৃত্বে সিপিবির কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দ পুষ্পার্ঘ্য অর্পণ করেন। এরপর একে একে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন আনিসুর রহমান মল্লিকের নেতৃত্বে বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টি, খালেকুজ্জামান নেতৃত্বে বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দল (বাসদ), পার্থ সারথি চক্রবর্তীর নেতৃত্বে ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি (ন্যাপ), অ্যাড. এস এম এ সবুরের নেতৃত্বে ঐক্য ন্যাপসহ অন্যান্য নেতৃবৃন্দ, সিপিবি-ঢাকা কমিটি ও শাখাসমূহ, বাংলাদেশ ট্রেড ইউনিয়ন কেন্দ্র (টিইউসি), সমাজতান্ত্রিক শ্রমিক ফ্রন্ট, জাতীয় শ্রমিক ফেডারেশন, গার্মেন্ট শ্রমিক ফ্রন্ট, গার্মেন্ট শ্রমিক কর্মচারী ঐক্য পরিষদ, বাংলাদেশ ক্ষেতমজুর সমিতি, বাংলাদেশ কৃষক সমিতি, গার্মেন্ট শ্রমিক ট্রেড ইউনিয়ন কেন্দ্র, বাংলাদেশ উদীচী শিল্পীগোষ্ঠী, লতিফ বাওয়ানী জুট মিলস্ শ্রমিক ইউনিয়ন, বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়ন, বাংলাদেশ যুব ইউনিয়ন, হকার্স ইউনিয়ন, প্রাইভেট কার ড্রাইভার্স ইউনিয়ন, গণতান্ত্রিক আইনজীবী সমিতি, রিকশা-ভ্যান শ্রমিক ইউনিয়ন, সিপিবি’র নারী সেল, সাপ্তাহিক একতাসহ বিভিন্ন দল, সংগঠনের পক্ষ থেকে শ্রদ্ধা নিবেদন করা হয়।

তাজুল ইসলাম ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে অর্থনীতিতে স্নাতকোত্তর শ্রেণিতে পাঠ শেষে ১৯৭৪ সালে বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির (সিপিবি) সিদ্ধান্ত অনুসারে শ্রমিক শ্রেণির মুক্তির সংগ্রামকে অগ্রসর করার মহান ব্রত নিয়ে আদমজী মিলে বদলি শ্রমিকের চাকরি নেন। আদমজীতে ট্রেড ইউনিয়ন আন্দোলন ও সংগঠন গড়ে তোলার কাজে তিনি আত্মনিয়োগ করেন। তিনি ছিলেন সিপিবির আদমজী শাখার সম্পাদক ও আদমজী মজদুর ট্রেড ইউনিয়নের নেতা।

১৯৮৪ সালের ১ মার্চ দেশব্যাপী আহূত শিল্প ধর্মঘট ও হরতালের সমর্থনে আগের দিন মধ্যরাতে আদমজী জুটমিল এলাকায় কমরেড তাজুলের নেতৃত্বে শ্রমিকরা প্রচার মিছিল বের করলে, তৎকালীন স্বৈরশাসক এরশাদ সরকারের গুণ্ডাবাহিনীর হামলায় তাজুল ইসলামসহ কয়েকজন শ্রমিক মারাত্মক আহত হন। ১ মার্চ ভোরবেলা গুরুতর আহত অবস্থায় তাজুলকে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তির কিছুক্ষণ পরে তিনি মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েন।

জাহো/টিএফ