• ঢাকা
  • সোমবার, ২৯ এপ্রিল, ২০২৪, ১৫ বৈশাখ ১৪৩১
প্রকাশিত: নভেম্বর ৪, ২০১৮, ০৮:১৩ পিএম

বিএনপির প্রবীণ নেতা তরিকুল ইসলাম আর নেই

বিএনপির প্রবীণ নেতা তরিকুল ইসলাম আর নেই

 

বিএনপি জাতীয় স্থায়ী কমিটির অন্যতম সদস্য ও সাবেক মন্ত্রী, বর্ষীয়ান রাজনীতিক জননেতা তরিকুল ইসলাম ইন্তেকাল করেছেন (ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন)। বিএনপির এই সিনিয়র নেতার মৃত্যুতে রাজনৈতিক অঙ্গনে নেমে এসেছে গভীর শোক। নেতাকর্মীরা প্রথমে হাসপাতালে ও পরে তার শান্তিনগরের বাসায় জড়ো হতে থাকেন।


বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব (দপ্তরের দায়িত্বে) রুহুল কবির রিজভী জানান, দলের সিনিয়র এই নেতার মৃত্যুতে আগামীকাল সোমবার শোকদিবস পালন করবে বিএনপি। শোকদিবসে দলের কার্যালয়ে কালো পতাকা ও নেতাকর্মীরা কালো ব্যাজ ধারণ করবে।


বিএনপি চেয়ারপারসনের প্রেস উইং সদস্য শায়রুল কবির দৈনিক জাগরণকে জানান, বিকাল ৫টা ৫ মিনিটে রাজধানীর এ্যাপোলো হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তরিকুল ইসলাম মারা যান। মৃত্যুকালে প্রবীণ এই নেতার বয়স হয়েছিল ৭৩ বছর। গত ১৩ অক্টোবর তরিকুল ইসলামকে এ্যাপোলো হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। তিনি বার্ধক্যজনিত বিভিন্ন রোগে ভুগছিলেন। এর আগে পুরান ঢাকার আজগর আলী হাসপাতালেও তাকে ভর্তি করা হয়। শারীরিক অবস্থার অবনতি ঘটলে তাকে করোনারি কেয়ার ইউনিটে (সিসিইউ) স্থানান্তর করা হয়। রাত ৮টায় এ রিপোর্ট লেখার সময় তরিকুলের মরদেহ তার শান্তিনগরের বাসভবনে নেয়া হচ্ছিল। রাতে তার মরদেহ শাহবাগে বারডেম হাসপাতালের হিমাগারে রাখা হবে।


দলটির সহদপ্তর সম্পাদক তাইফুল ইসলাম টিপু দৈনিক জাগরণকে জানান, বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য তরিকুল ইসলামের জানাজা সোমবার সকাল ১০ নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে, এরপর সোয়া এগারোটায় জাতীয় সংসদ ভবনের দক্ষিণ প্লাজায় অনুষ্ঠিত হবে। বিকাল ৪টায় যশোর ঈদগাঁ মাঠে জানাজা শেষে পারিবারিক কবরস্থানে তাকে দাফন করা হবে।

 
বিএনপি চেয়ারপারসনের প্রেস উইংয়ের সদস্য শায়রুল কবির খান জানান, বিগত চারদলীয় জোট সরকারের সময় তথ্য এবং পরিবেশ ও বনমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করা তরিকুল ইসলাম দীর্ঘদিন ধরে কিডনি জটিলতা, ডায়াবেটিস, শ্বাসকষ্টসহ বিভিন্ন স্বাস্থ্য সমস্যায় ভুগছিলেন। গত কয়েক বছরে একাধিকবার তিনি সিঙ্গাপুরে গিয়ে চিকিৎসা নেন। 


প্রবীণ এই নেতার মৃত্যুতে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান ও মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর শোক প্রকাশ করেছেন। একইসঙ্গে শোক প্রকাশ করেছেন জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের আহŸায়ক ড. কামাল হোসেন, এলডিপির চেয়ারম্যান কর্নেল (অব.) ড. অলি আহমদ, বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান আব্দুল্লাহ আল নোমানসহ অন্য নেতারা।

তরিকুল ইসলাম বাংলাদেশ সরকারের চার বার মন্ত্রিসভায় দায়িত্ব পালন করেন। রাজনৈতিক এই ব্যক্তিত্ব যশোর থেকে প্রকাশিত ‘দৈনিক লোকসমাজ’ পত্রিকার প্রকাশকও ছিলেন।

১৯৪৬ সালের ১৬ নভেম্বর যশোর শহরে জন্মগ্রহণ করেন তরিকুল ইসলাম। পিতা মরহুম আলহাজ আব্দুল আজিজ একজন ব্যবসায়ী ছিলেন। মাতা মৃত মোসাম্মৎ নূরজাহান বেগম ছিলেন একজন গৃহিণী। তরিকুল ইসলাম দুই পুত্র সন্তানের জনক। তার স্ত্রী নারগিশ ইসলাম ছিলেন কলেজের শিক্ষক। দুই সন্তানের মধ্যে বড় ছেলে অমিত ইসলাম বর্তমানে বিএনপির রাজনীতির সঙ্গে জড়িত। তিনি দলের  কেন্দ্রীয় কমিটির সহ সাংগঠনিক সম্পাদক। ছোট ছেলে সুমিত ইসলাম রাজনীতির পাশাপাশি ব্যবসা করেন।


বিএনপি তথা দেশের প্রবীণ এই রাজনীতিবিদ তরিকুল ইসলাম তার রাজনৈতিক জীবন শুরু করেন মজলুম জননেতা মওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানীর অনুসারী হিসেবে। মওলানা ভাসানীর ইন্তেকালের পর তিনি বাংলাদেশী জাতীয়তাবাদের প্রবক্তা শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের হাতে গড়া বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি)‘র রাজনীতির সঙ্গে যোগ দেন। দীর্ঘদিন তিনি বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব, ভারপ্রাপ্ত মহাসচিবের দায়িত্ব পালন শেষে দলটির সর্বোচ্চ নীতি নির্ধারণী ফোরাম জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করে আসছিলেন।


রাজনীতিবিদ তরিকুল ইসলাম এক সময় যশোর সরকারি সিটি কলেজে বাংলা বিভাগের উপাধ্যক্ষ পদে দায়িত্ব পালন করেন। তিনি এক সময় যশোর পৌরসভার নির্বাচিত মেয়রও ছিলেন। তরিকুল ইসলাম ১৯৫৩ সালে যশোর জিলা স্কুলে তৃতীয় শ্রেণিতে ভর্তি হন। ১৯৬১ সালে তিনি ওই স্কুল থেকে প্রবেশিকা পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন। ১৯৬৩ সালে তিনি যশোর মাইকেল মধুসূদন মহাবিদ্যালয় থেকে আইএ এবং ১৯৬৮ সালে একই কলেজ থেকে অর্থনীতিতে বিএ (অনার্স) ডিগ্রি লাভ করেন।


১৯৬৯ সালে তিনি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে অর্থনীতিতে এমএ ডিগ্রি লাভ করেন।